সকল হামদ ও প্রশংসা আল্লাহর। দরূদ ও সালাম নবীজী ‘পরে যার ‘উসওয়ায়ে হাসানায়’ অভিষিক্ত হয়ে হিদায়াতের আলোয় স্নাত হয়েছিল পৃথিবী, পেয়েছিল শান্তির মহা সোপান।
মানব জীবনের সার্র্বিক শান্তি কোন পথে সম্ভব এ নিয়ে পৃথিবীব্যাপী চিন্তা-গবেষণার অন্ত নেই। যুগ যুগ ধরে মানুষ স্ব স্ব মেধার ভিত্তিতে অনেক দুর্গম পথ অতিক্রম করেছে শান্তির সন্ধানে। পৃথিবীর সুকঠিন বিয়াবান প্রকম্পিত হয়েছে শান্তিবিলাসী মহাশক্তিধরদের দীপ্ত পদভারে। কিন্তু সবকিছুই অদৃশ্য অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে, ব্যর্থ হয়েছে অনন্তকালের গবেষণা, সুখের পায়রার সন্ধান কেউ করতে পারেনি আজও।
ইতিহাস সাক্ষী-চরিত্র ও নৈতিকতার মাধ্যমে বিশ্বকে জয় করা যায়, অস্ত্র বলে নয়, পদাধিকার শক্তির চেয়ে মানুষের চরিত্রবল ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ। তাই নিষ্কলুষ চরিত্র ও উন্নত আদর্শের অনুসারীরাই একমাত্র এ সঙ্ঘাতময় বিশ্বে শান্তি স্থাপন করতে পারে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহান জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি আবির্ভূত হয়েই একত্ববাদের ভিত্তিতে চরিত্র গঠনের দিকে আহ্বান করেন। তিনি বলেন, ‘সৎচরিত্র গঠন এবং তার পূর্ণতা সাধনই আমার আগমনের উদ্দেশ্য’। তাঁর অনুপম আদর্শ ও পূতঃচরিত্রের জিয়নকাঠির ছোঁয়াতেই সেই উষর মরু-হিজাযের বর্বর বেদুইনদের জীবন চরিত্রে সাধিত হয়েছিল অবিশ্বাস্য পরিবর্তন। পূর্বের ব্যভিচারী নারী আপন সতীত্ব রক্ষায় হয়েছিল নিবেদিতা প্রাণ। মদ্যপায়ী মাদক নিবারণে হয়েছিল সবচেয়ে অগ্রণী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উন্নত চরিত্র মাধুরী, অতুলনীয় ও অনন্য সাধারণ কৃতিত্বের দরুণই কুরআনের ভাষায় তিনি ‘উসওয়াতুন হাসান’ বা সর্বোত্তম আদর্শ।
কিন্তু বর্তমান তথাকথিত মানব সভ্যতার চরম উন্নতির যুগে মানুষ সার্বিকভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘উসওয়াতুন হানসানা’র অনুসরণ ভুলে গিয়ে পার্থিব জীবনে এক মহা সঙ্কটের সম্মুখীন। স্বকীয় চিন্তাধারাকে প্রাধান্য দিয়ে বস্তুবাদী পথ অবলম্বন করার মাধ্যমে অন্তহীন শান্তি সুখের বাসনায় গোটা পৃথিবীর মানুষ জ্বলছে আর পুড়ছে। এহেন পরিস্থিতিতে মানব জাতিকে নিজের অস্তিত্বরক্ষার খাতিরে বাধ্য হয়েই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ তথা উন্নত আদর্শের অনুসরণ করতে হবে, জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়িত করতে হবে তাঁর বাতলে দেয়া জীবন পদ্ধতি। এখনো যদি এ আত্মভোলা সমাজ তার সঠিক জীবন পদ্ধতি নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়, তবে এ অন্ধ সমাজের ভাগ্যে অন্তহীন নৈরাজ্যও বিশৃঙ্খলা বৈ শান্তি প্রগতির আশা সুদুর পরাহত। বর্তমান বিবদমান সমাজ এই মহান বাস্তবতাকে উপলব্ধি ও অনুধাবন করার মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাফেলায় এগিয়ে আসবে রবিউল আউয়ালের শুভলগ্নে আমাদের এটাই কামনা।
লেখক : ঐতিহাসিক শোলাকিয়ার গ্র্যান্ড ইমাম ও জামিআ ইকরার বাংলাদেশের মহাপরিচালক-শাইখুল হাদীস।
২৩৯৭
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
সকল হামদ ও প্রশংসা আল্লাহর। দরূদ ও সালাম নবীজী ‘পরে......