সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

খাবারের রীতিনীতি
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : শনিবার ২৯/০৯/২০১৮

‌‌‌ খাবার গ্রহণের ৫০ টি সুন্নত ও আদব

আল্লাহ পাক বলেন- 
كلوا واشربوا ولا تسرفوا انه لا المسرفين. الاعراف.
খাও ও পান কর এবং অপব্যয় কর না। তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। 

১. খাবার গ্রহণের আগে ও পরে দুই হাত ক্ববজি পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নত। যদি কেহ খাবার খাওয়ার জন্য মুখ মন্ডল ধৌত না করে তাহলে এটা বলা যাবে না যে, সে সুন্নত বর্জন করেছে। (বাহারে শরীআত) । 

২. খাবার খাওয়ার পূর্বে হাত ধৌত করে মুছে ফেলবে না। তবে খাবার শেষে হাত ধৌত করে মুছে ফেলতে পারবে। 

৩. খানা খাওয়ার সময় বাম পা বিছায়ে দিবে এবং ডান পা খাড়া রাখবে, অথবা দুই হাটু খাড়া রেখে কিংবা দুই হাটু ফেলে দুই পায়ের উপর বসবে। এই তিনটা থেকে যে কোন এক নিয়মে বসা সুন্নত। 

৪. প্রথম লুকমায় بسم الله দ্বিতীয় লুকমায় بسم الله الرحمن তৃতীয় গ্রাসে بسم الله الرحمن الرحيم বলবে। 
(কিমিয়ায়ে সা'য়াদত) 

৫. بسم الله উচ্চ স্বরে পাঠ করবে যাতে অন্যান্যদের স্মরণ হয়ে যায়। 

৬. পানাহার করার পূর্বে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করলে খাদ্য ও পানীয়ে বিষ থাকলেও বিষে কাজ করবে না। দোয়া: 
بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شئ في الارض ولا في السماء يا حي يا قيوم.

৭. খাদ্য গ্রহণের শুরুতে بسم الله বলতে ভুলে গেলে, যদি খাবারের মাঝখানে মনে পড়ে, তখন বলবে - 
بسم الله اوله واخره

৮. তরকারীর বাটি রুটি, ভাত তথা খাদ্যের উপর না রাখা। 

৯. হাত, চামচ ও ছুরি খাবার বা রুটি দিয়ে না মুছা। 

১০. বিছানায় দস্তরখানা বিছায়ে খাওয়া সুন্নত। হেলান দিয়ে, নগ্ন মাথা, হাতের উপর ভার দিয়ে, জুতা পায়ে বা শুয়ে শুয়ে খানা খাবে না। 


হাদিস শরীফ
عن ابن عمر رضي الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لا يأكلن احدكم بشماله ولا يشربن بها، فان الشيطان يأكل بشماله ويشرب بها.
رواه مسلم، مشكوة، ص: ٣٦٣.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা বলেছেন তোমাদের কেউ যেন কখনো বাম হাতে খাবার না খাই ও বাম হাত দিয়ে কোনো কিছু পান না করে। কেননা শয়তানই বাম হাতে পানাহার করে। সহীহ মুসলিম॥ 

১১. রুটি/ খাবার যদি দস্তরখানায় উপস্থিত হলে সালনের অপেক্ষা করা ছাড়া খানা শুরু করবে। 

১২. খাবারের আগে ও পরে লবন খাওয়া। ইহাতে ৭০ টি রুগ চলে যায়। 

১৩. এক হাতে রুটি না ছিড়া। কেননা এটি অহংকারীদের পদ্ধতি। 

১৪. বাম হাতে রুটি ধরে ডান হাতে ছিড়া । এটি সুন্নত। 

১৫. ডান হাতে খাওয়া ও পান করা। বাম হাতে পানাহার না করা। কারণ এটি শয়তানের কাজ। 

১৬. তিন আঙ্গুলে (মধ্যমা, বৃদ্ধা ও শাহাদাত) রুটি খাবার /খাওয়া। কেননা এটি সকল নবী আ: এর সুন্নত। উজর ছাড়া চার / পাঁচ আঙ্গুলে না খাওয়া। 

১৭. রুটির টুকরো/ খাবার গ্রাস/শশ্য দানা ইত্যাদি পড়ে গেলে সেটা তুলে নিয়ে পরিস্কার করে খেয়ে নেয়া। এতে গুণাহ মা'ফের সু সংবাদ রয়েছে। 

ইমাম গাজালী রহ: বলেন- রুটির টুকরো ও ছিলকাগুলো তুলে নাও। হাদিস শরীফ এ বর্ণিত হয়েছে যে, যারা এরকম করবে তাদের জীবন যাপনে আল্লাহ পাক প্রশস্ততা ওয়সাআত দান করবেন। তাদের বাচ্চাগুলো সুস্থ, নিরাপদ ও ত্রুটি মুক্ত থাকবে। এবং ঐ রুটির টুকরো গুলো জন্নাতী হুরগণের মহর স্বরুপ হবে। 
(কিমিয়ায়ে সা'য়াদত) 

১৮. পড়ে যাওয়া রুটি খাবার তুলে নিয়ে চুমা খাওয়া যায়েজ। (اسوأ حسنه) 

দস্তরখানায় যা কিছু থাকে উহা মুরগী, বিড়াল, গরু, ছাগল ইত্যাদি কে খাওয়ানো যায়েজ। ডাসবিনে ময়লার স্তুপে বা রাস্তায় নিক্ষেপ করবে না। 

১৯. খাবারের দূষ বর্ণনা না করা। যেমন লবনাক্ত,আলুনী, পানসা ইত্যাদি। ইচ্ছা হলে খাবে বা খাবে ন। 

২০. বর্তনের মাজখান থেকে খাবার শুরু করবে না । নিজের পার্শ্ব থেকেই খাবে। চার দিকে হাত মারবে না। 

২১. তবে থালার মধ্যে বিভিন্ন রকমের খাবার থাকলে, তা নিতে অসুবিধা নাই। 
'
হাদিস শরীফ
عن جابر قال ان النبي صلى الله عليه وسلم امر بلعق الاصابع والصحف ة وقال انكم لا تدرون في اية البركة . 
رواه مسلم، مشكوة، ص: ٣٦٣.

হযরত জাবের রা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সা খাবারের পর আঙ্গুল ও প্লেট চেটে খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এ সময় তিনি আরো বলেছেন খাদ্যের কোন অংশে বরকত নিহিত আছে তা তোমরা কেউ জানো না। 
সহীহ মুসলিম॥ মিশকাত ৩৬৩। 

২২. বেশী গরম খাবার না খাওয়া, খাদ্যের মধ্যে ফুখ না দেয়া এবং শুখিয়ে না চাওয়া। 

২৩. খাবারের সময় ভালো ভালো কথা বলা যায়। জেনে বুঝে খাদ্য গ্রহণ করা উত্তম। চুপ থাকা অগ্নি পুজারীদের পন্থা। 

২৪. তবে খানা খাওয়ার সময় এমন কথা বলা অনুচিত, যার দ্বারা মানূষের শক বা ঘৃণা জাগে। যেমন جلاب (দেহাপসারনী) پیچش (আমাশয় রোগ) قیے (বুমি)  ইত্যাদি। 

২৫. খানা শেষে ভাল করে আঙ্গুল চেটে খাওয়া। চাটার সময় আঙ্গুল জোট না করা। অন্যতাই শয়তান আঙ্গুল চুষে নিবে। 

২৬. প্রথম মধ্যমা আঙ্গুল, তারপর শাহাদাত আঙ্গুল, এরপর বৃদ্ধাঙ্গুল ও অন্যান্য আঙ্গুল এবং বর্তনও চেটে নিবে। 

হাদিস শরীফে বর্ণিত রয়েছে, খাবার শেষে যে ব্যক্তি বর্তন চেটে খাবে, তাহলে সেই প্লেট ঐ ব্যক্তির জন্য দোয়া করে এবং বলে আল্লাহ পাক তোমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিন যেভাবে তুমি আমাকে শয়তান থেকে স্বাধীন রেখেছ। 

عن نبيشة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من اكل في قصعة ثم لحسها تقول له القصعة اعتقك الله من النار كما اعتقتنئ من الشيطان. رواه رزين.

অপর বর্ণনায় আছে প্লেট তার জন্য গুণাহ মাফ চাই استغفار করে। 

عن نبيشة عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من اكل في قصعة فلحسها استغفرت له القصعة .
رواه احمد والترمذي وابن ماجه والدارمي، مشكوة، ص: ٣٦٦.

অর্থাৎ রাসূল সা বলেছেন যে যদি কেহ কোনো পেয়ালা তথা পাত্রের মধ্যে খাবার খেয়ে পাত্রটি লেহন করে / চেটে খাই, তাহলে পাত্রটি তার জন্য আল্লাহর কাছে গুণাহ মা'ফ চাই। 

২৭. খাবারের পর দাঁত খেলাল করে নিয়া সুন্নত। 

২৮. খাবার পর নিম্নোক্ত দোয়া পড়া 
الحمد لله الذي اطعمنا وسقانا وجعلنا من المسلمين. 

২৯. কোন ব্যক্তি খানা খাওয়ালে নিম্নের দোয়া পড়বে: 
اللهم اطعم من اطعمني واسق من سقاني.

৩০. খাবার শেষে এই দোয়াও পড়া যায়: 

اللهم بارك لنا فيه واطعمنا خيرا منه.

৩১. দুধ পান করার পর এই দোয়া পাঠ করবে। 

اللهم بارك لنا فيه وزدنا منه، ابن ماجه. 

৩২. যে থালা বা পাত্রের মধ্যে খানা খাওয়া হয়, যদি উহাকে ধৌত করে পান করা হয়, তবে একটা গোলাম আজাদ করার সাওয়াব হয়। نزهة المجالس গ্রন্থে লেখা হয় যে, চল্লিশ জন আরবি গোলাম আজাদের সাওয়াব পাবে। 

عن المقداد بن معد يكرب قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: ما ملأ ادمي وعاء شرا من بطن، بحسب ابن ادم اكلات يقمن صلبه فان كان لا محالة : فثلث طعام وثلث شراب وثلث لنفسه. 

رواه الترمذي وابن ماجة، مشكوة، ص: ٤٤٢. 
'
৩৩. ছোট ছোট লোকমা ধরবে এবং ভালো করে চর্বন করে খেতে হবে। তবে চর্বনের সময় যেন চপ্পড় চপ্পড় আওয়াজ না হয়। 

৩৪. এক লোকমা খাওয়া শেষে আর এক লোকমা গ্রহণ করবে। তাড়াতাড়ি করে লোকমা নিবে না। 

৩৫. মাটির বর্তনের খাওয়া উত্তম। হাদিস শরীফ এ বর্ণিত হয়েছে যে ব্যক্তি তার ঘরের মধ্যে মাটির বাসন প্রস্তুত রাখে, সেই ঘর জিয়ারতের জন্য ফেরেশতা আসে। (احكام شريعت ) 

৩৬. রাসুল সা মিষ্টি, মধু, সিরকা, খেজুর, তরমুজ, শশা, কদু/লাউ বেশি পছন্দ করতেন। 

৩৭. বাহু, ঘাড় এবং কোমরের গোশত বেশ পছন্দনীয়। 

৩৮. রাসুল সা কখনো কখনো তরমুজ এবং খেজুর বা শশা ও খেজুর অথবা রুটি ও খেজুর মিলিয়ে খেতেন। 

৩৯. শশা লবন দিয়ে খাওয়াও সুন্নত। 

৪০. মিষ্টি রাসূল সা এর কাছে খুবই পছন্দ ছিল। 

৪১. সারীদ( ثرید ) তরকারীর ঝোলের মধ্যে ভিজানো রুটির টুকরো প্রিয় রাসুল সা এর নিকট পছন্দের খাবার ছিল। 

৪২. এক আঙ্গুলে খাওয়া শয়তানের কাজ, দুই আঙ্গুল দিয়ে খাওয়া অহংকারীদের স্বভাব এবং তিন আঙ্গুল দ্বারা খাবার গ্রহণ সকল পয়গম্বর আ: এর সুন্নত। 

৪৩. ক্ষুধাকে তিন ভাগ করা উত্তম। এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি এবং এক ভাগ শ্বাস - প্রশ্বাস এর জন্য। তবে পেট ভর্তি করে খাওয়াও মুবাহ কোন গোনাহ নাই।

(فیضان سنت) 
'
৪৪. দুপুরের খাবারের পর কিছু সময় কায়লুলা করবে, রাতের খাবারের পর কমপক্ষে ১০০ কদম হাটাচলা করবে। 

دوپھرکے وقت لیٹنے کو قیلولہ کہتے ہیں اور یہ خصوصا رات کے عبادت کرنے والوں کیلئے سنت ھے۔ کہ اس سے رات کی عبادت میں اسانی ھو جاتیھے۔

شام کے کھانی کے بعد مطلقا ٹھلنا بھتر ھے۔ اور یہ سو قدم چلنے کا قول اطباء کا ھے۔ و اللہ اعلم ۔ 

৪৫. পানাহার করে কমপক্ষে আবশ্যক ভাবে الحمد لله বলবে। 

৪৬. খাবারের পর মিসওয়াক করা দুটি অল্প বয়স্ক গোলাম আজাদের চেয়ে বেশী সাওয়াব। 

৪৭. খাবারের পর ভালোভাবে হাত ধুয়ে মুছে ফেলবে। এতে সাবানও ব্যবহার করা যাবে। 

৪৮. কাগজ দ্বারা হাত মুছা নিষেধ। 

৪৯. টাওয়েল দ্বারা হাত মুছবে, পরিধেয় পোষাক দ্বারা হাত মুখ মুছবে না, কেননা এতে স্মরণ শক্তি দুর্বল হয়ে যায়। 

৫০. খাবার গ্রহণের সময় বাড়ীওয়লার বাচ্চা এসে গেলে মেহমান বাড়ির খাদেম ও বাচ্চাকে ঐ খাবার থেকে দিবে না। (عالمگیری).

اے ھمارے پیارے اللہ! عز وجل ھمیں سنت کی مطابق کھانے اور پینے کی توفیق عطا فرما- 
آمین، بجاہ النبی الامین۔ صلں اللہ تعالی علیہ وآلہ وسلم۔

(فیضان سنت۔) 
হতে সংগৃহীত 

মাহমুদুল হক
পদুয়া আইনুল উলুম দারুচ্ছুন্নাহ কামিল মাদরাসা 
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। 

৭১৯৯

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭