সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

বরকতময় নিমন্ত্রণ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ০৪/১০/২০১৮


বরকতময় নিমন্ত্রণ
 
খন্দক যুদ্ধে পরিখা খননের কাজে রাসূলুল্লাহ সা. সশরীরে অংশ নিয়ে ছিলেন। সে-সময় সাহাবায়ে কেরাম রা.এর মধ্যে অভাব-অনটন লেগেই থাকত। কোনো কোনো সময় পুরো দিন অনাহারে কাটাতে হত। তা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম খুবই আগ্রহ ও উৎসাহ নিয়ে পরিখা খনন করছেন। 
.
মাটি তুলে তুলে তারা পরিখার কিনারাগুলোকে মজবুত করছেন আর কাজকে প্রাণময় করার জন্য রজয তথা বিশেষ ছন্দযুক্ত আরবি কবিতা আবৃত্তি করছেন। আবদুল্লাহ ইবনু রওয়াহা রা.এর সুন্দর ও সুমধুর কন্ঠে উচ্চস্বরে ভেসে আসছে:
اللهم لو لا أنت ما اهتدينا  -  ولا تصدقنا ولا صلينا
“হে আল্লাহ! তুমি যদি আমাদের হেদায়েত না দিতে তা হলে আমরা দান-সদকাও করতাম না, নামাযও পড়তাম না।”
.
কিছু কবিতা লম্বা করে করে পড়ছিলেন।  এতে সাথীদের মধ্যে জোশ ও উদ্দীপনা আরো বেড়ে গেল। তারা আগ বাড়িয়ে মাটি খনন করছেন।
হঠাৎ আরেকজন সাহাবি উচ্চস্বরে কবিতা আবৃত্তি করলে অন্যান্যরাও তার কন্ঠে কন্ঠ মিলান। পরিখার আকাশ-বাতাস গুঞ্জরিত হয়:
نحن الذين بايعوا محمدا  -  على الإسلام ما بقينا أبدا
“আমরা তো সেই লোক যারা মুহাম্মদ সা.এর হাতে বাইয়াত করেছি এমর্মে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রাণ আছে দেহে ইসলামের উপর অটল থাকবো।”
সাহাবায়ে কেরাম কখনো ইসলাম শব্দের স্থানে জিহাদ শব্দও বলেছেন।
.
আল্লাহর রাসূল সা. তাদের জবাবে বলছেন:
اللهم! لا عيش إلا عيش الآخرة  - فأكرم الأنصار والمهاجرة
“হে আল্লাহ! আসল জীবন তো আখিরাতের জীবন। আনসার ও মুহাজিরদেরকে ক্ষমা করে দিন।”
সাহাবায়ে কেরাম তাদের ‘কমান্ডার ইন চীফ’, প্রিয় রাসূল সা.এর পবিত্র মুখ নিঃসৃত এসব বাক্য, সুসংবাদবিশিষ্ট দুআসূচক কবিতা শুনে আরো উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত হয়ে যান। 
.
খননের সময় মাঝে মধ্যে শিলাও চলে আসত। কারণ পুরো জমিনই ছিল পাথুরে। ছোট-খাটো শিলা হলে তো সাহাবায়ে কেরাম নিজেরাই ভেঙ্গে ফেলতেন। কিন্তু একদিন খননের সময় একটি ভারি শিলা বেরিয়ে আসে। সাহাবায়ে কেরাম সেটাকে ভাঙ্গার চেষ্টা করেন। কিন্তু তা কোনো মতেই ভাঙ্গা যাচ্ছিল না। খননকাজ কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেল। সাহাবায়ে কেরাম সবাই মিলে চেষ্টা করছেন। কিন্তু শিলাটি খুবই শক্ত ছিল। 
.
সম্মানিত পাঠক! আপনারা তো জানেন, যুদ্ধের ময়দানে যখন কোনো সমস্যা বা অন্তরায় সৃষ্টি হলে তখন সর্বোচ্চ কমান্ডারের শরণাপন্ন হতে হয়। এখানে তো সর্বোচ্চ কমান্ডার ধারাবাহিকভাবে স্পটেই উপস্থিত রয়েছেন। সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সা.এর খেদমতে উপস্থিত হন। 
-হে আল্লাহর রাসূল সা.! অমুক জায়গায় একটি শিলা বেরিয়ে এসেছে যা খননকাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। 
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
 (أنا نازل) 
-“তা ভাঙ্গার জন্য আমি নিজেই নিচে আসছি।” 
.
জাবের ইবনু আবদুল্লাহ আনসারি রা. যিনি ওই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন, বলেন:
- আমি দেখছি, ক্ষুধার কারণে রাসূলুল্লাহ সা.এর পেটে পাথর বাঁধা রয়েছে। তিনদিন ধরে আমরাও কোনো কিছু খাইনি। আল্লাহর রাসূল সা. শাবল হাতে নিলেন। বিসমিল্লাহ পড়ে শিলার উপর আঘাত করেন। সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙ্গে বালির স্তুপে পরিণত হয়।
.
এদিকে জাবের ইবনু আবদুল্লাহ রা. মনে মনে একটি চমৎকার পরিকল্পনা করছিলেন।  উল্লেখ্য, খন্দকে অংশ নেয়া সাহাবায়ে কেরামের জন্য বাড়ি যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কারো যদি কঠিন কোনো অপারগতা চলে আসে তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সা.এর খেদমতে উপস্থিত হতেন এবং নিজের প্রয়োজন কিংবা অপারগতা বর্ণনা করতেন। তখনই তাকে অনুমতি দেয়া হত। 
.
জাবের রা.ও রাসূলুল্লাহ সা.এর দরবারে উপস্থিত হন। বলেন, 
-হে আল্লাহর রাসূল সা.! একটি জরুরি কাজে আমার একটু ঘরে যেতে হই। অনুমতি চাচ্ছি। 
রাসূলুল্লাহ সা. অনুমতি প্রদান করলে জাবের রা. তার ঘরে যান।  জাবের রা. তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 
-আমি রাসূলুল্লাহ সা.এর যে অবস্থা দেখেছি তা আমি সহ্য করতে পারছি না। জানি না, কত দিন ধরে তিনি কিছু খাননি। ক্ষুধার জ্বালায় পেটে পাথর বাঁধা হয়েছে। প্রিয় সহধর্মিণী! বলো, ঘরে কি কিছু আছে খাওয়ার উপযোগী?
.
স্ত্রী বলেন, 
-হ্যাঁ। ঘরে সামান্য যব আর একটি ছাগলছানা আছে। ছাগলছানাটি যবেহ করে তার গোস্ত রান্না করা যেতে পারে।
জাবের রা. ছাগলছানাটি যবেহ করেন। তার স্ত্রী যবগুলো দ্রুত ঢেঁকিতে পিষা আরম্ভ করেন। আটা তৈরি হয়ে গেলে তা মাখা শুরু করেন। জাবের রা. ও তার স্ত্রী গোস্ত পরিস্কার করে হাঁড়িতে ঢালেন। চুলায় আগুন জ্বালিয়ে গোস্তগুলো সিদ্ধ হবার জন্য ছেড়ে দিলেন।
.
আটা মাখা শেষ। তবে এখনো রুটি বানানো শুরু করেননি। ভাবলেন, আল্লাহর রাসূল সা. যখন তাশরিফ আনবেন তখন গরম গরম রুটি বানিয়ে পরিবেশন করবেন। জাবের রা.এর স্ত্রী খুবই মহব্বত ও যত্ন সহকারে খাবার তৈরি করছেন।  তিনি আজ দারুণ খুশি।  আল্লাহর রাসূল সা. তাদের ঘরে তাশরিফ আনবেন- এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে! তার জন্য ঘর-দুয়ার পরিস্কার করা হচ্ছে। 
.
জাবের রা. খন্দকে ফিরে গেলেন। মূল জায়াগায় পৌঁছার পর আল্লাহর রাসূল সা.এর খেদমতে উপস্থিত হন। নিচু স্বরে আরজ করেন, 
-হে আল্লাহর রাসূল! ঘরে সামান্য খাবার তৈরি করিয়েছি। ব্যাস, দুইজন সাথী সঙ্গে নিয়ে নিন।  আমাদের ঘরকে আপনার চরণধুলি দিয়ে ধন্য করুন।
রাসূলুল্লাহ সা. জিজ্ঞাসা করেন,
 (كم هو؟) 
-“খাবার কি পরিমাণ?” 
আমি বলার পর ইরশাদ করেন, 
(كثير طيب)
 -“অনেক, উত্তম।”
.
সুপ্রিয় পাঠক! রাসূলুল্লাহ সা.এর উন্নত চরিত্র লক্ষ করুন, তিনি সেই দাওয়াতকে একলা গ্রহণ করেননি। কেবলমাত্র কয়েকজন সাথীকেও সাথে নেননি; বরং পরিখা খননের কাজে উপস্থিত সবার জন্য ঘোষণা করা হয়:
(قوموا.....)
- উঠো। জাবেরের ঘরে চলো। সে তোমাদের দাওয়াত করেছে।
(يا أهل الخندق إن جابرا قد صنع لكم سورا فحيهلا بكم)
-“হে খন্দকবাসী! জাবের ইবনু আবদুল্লাহ তোমাদের জন্য খাবার রান্না করেছে। এসো সবাই তার ঘরে যাই।”
.
জাবের রা. বলেন, 
-রাসূলুল্লাহ সা.এর মুখে দাওয়াতের ঘোষণা শুনে আমি বেকায়দায় পড়ে গেলাম। ঘরের খাবার তো তিন-চারজন লোকের সমপরিমাণ। কিন্তু খন্দকবাসীদের সংখ্যা তো এক হাজার।  হায়, হায়, কী হবে?!
তবে এখানে যে নেতার নেতৃত্বে খননকাজ চলছে তিনি তো অন্যদের খাওয়ানোর মানুষ। এখানে লোকজনের পেটে পাথর বাঁধা থাকলে, মহান নেতার পেটেও বাঁধা রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম দাওয়াতের পয়গাম শুনে সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন। সারিবদ্ধ হয়ে জাবের রা.এর ঘরে দিকে রওয়ানা হয়ে যান।
.
এদিকে জাবের রা. অনেকটা দৌড়ে মুসলিম বাহিনীর আগে ঘর পৌঁছে যান। তার স্ত্রী আল্লাহর রাসূল সা.কে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। স্ত্রীকে বলেন, 
-আমি তো আল্লাহর রাসূল সা. এবং তাঁর কয়েকজন সাথীকে দাওয়াত করেছিলাম। কিন্তু আল্লাহর রাসূল সা. তো গোটা বাহিনীকে দাওয়াত দিয়ে ফেলেছেন। জাবের রা.এর স্ত্রী অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত মহিলা ছিলেন। বললেন, 
-তাহলে আপনি কি জন্য পেরেশান হচ্ছেন? (الله ورسوله أعلم)
এধরনের অবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.ই ভালো জানেন, কী করা উচিৎ। অর্থাৎ পুরো বাহিনীকে তো দাওয়াত তিনিই দিয়েছেন।
.
এদিকে রাসূলুল্লাহ সা. মূল বাহিনী আসার পূর্বেই জাবের রা.এর ঘরের দিকে রওয়ানা হয়ে যান। জাবের রা.কে আগেই এই নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন যে, তুমি তোমার স্ত্রীকে বলবে, 
-“আমি না আসা পর্যন্ত চুলার উপর থেকে যেন হাঁড়ি না নামায় এবং রুটিও যেন তন্দুর থেকে বের না করে।”
আল্লাহর রাসূল সা. যখন তাশরিফ আনেন তখন গোস্তের হাঁড়ি প্রস্তুত। তিনি বিসমিল্লাহ পড়েন এবং লোকজনকে বলেন,
 (ادخلوا ولا تضاغطوا) 
-“হে লোকজন! ভিতরে প্রবেশ করো, ধাক্কাধাক্কি করো না।” 
.
নবী করিম সা. রুটি তুলে তার মধ্যে গোস্ত রেখে রেখে লোকজনকে দিচ্ছেন। জাবের রা কে বললেন, 
-দশজন দশজন করে লোক পাঠাও। তারা এসে খাবার নিয়ে যাক। 
হাঁড়ি ও তন্দুর থেকে কিছু নেয়ার পর আবার ঢেকে দিতেন।
দলে দলে মানুষ আসতে থাকে। খাবার গ্রহণ করতে থাকে। আল্লাহর রাসূল সা. তাদের মাঝে খাবার বন্টন করে চলেছেন। লোকজন পরিতৃপ্ত হয়ে খাচ্ছেন। রাসূলুল্লাহ সা.এর চারিত্রিক মাহাত্ম্য ও মাধুর্য দেখুন, পুরো বাহিনী যখন খাবার খেয়ে ফেলেছেন তখনই তিনি খেয়েছেন। 
.
বাহিনীর একহাজার লোক পেট ভরে যখন খেয়ে ফেলেন তখন জাবের রা.কে বললেন, 
(با جابر الآن بقي أهل المدينة) 
- “এখন মদিনাবাসীরাই অবশিষ্ট রয়েছে।” তোমরা খেয়ে নিলে, অবশিষ্ট খাবারগুলো তোমার প্রতিবেশী ও অন্যান্য মদিনাবাসীর মাঝে বন্টন করে দিও।
জাবের রা. বলেন, 
-আমরা গোস্ত ও রুটি আমাদের প্রতিবেশী ও মদিনাবাসীদের মাঝেও বন্টন করেছি। তিনি বলেন,
(والله! ما أمسى بيت في المدينة إلا وفيه لحم وشعير من ذاك اللحم والشعير)
-“আল্লাহর কসম! রাত পর্যন্ত মদিনার কোনো ঘরই বাকি ছিল না যেখানে এই গোস্ত ও যবের তৈরি রুটির অংশ পৌঁছে নি।”
.
বন্ধুরা ! সিঃসন্দেহে এটা আল্লাহর রাসূল সা.এর মু‘জিযা। তবে এই ঘটনা রাসূলুল্লাহ সা.এর উন্নত চরিত্রের মাইলফলকও। তিনি তাঁর সাথীদের কত মহব্বত করতেন! কত ভালোবাসতেন।! তাদের কষ্ট কী গভীরভাবে অনুভব করতেন ! - তা এই ঘটনা থেকে সহজেই অনুমেয়।

১৪৫৪

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭