সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

শিক্ষণীয় দক্ষতার গল্প
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ২২/০২/২০১৮

শিক্ষণীয় দক্ষতার গল্প 

ইকরিমা ইবন আবি জেহেল ছিল বনি মাখযূম বংশের। সে ওই পিতার সন্তান যাকে রাসূলুল্লাহ সা. এ উম্মতের ফিরাউন বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। আবু জেহেল ইবন হিশাম মাখযূমি। ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ সা.এর সবচেয়ে বড় শত্রু। সে আল্লাহর রাসূল সা.কে কেমন কষ্ট দিয়েছে এবং তাঁর দাওয়াতি পথে কিভাবে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে তা কারো কাছে গোপন নয়। 
.
পিতা যেমন ইসলামের দুশমন ছিল, তার সন্তানও কারো থেকে কোনো অংশে কম ছিল না। বদরের উদ্দেশ্যে কুরাইশ-বাহিনী যখন বের হয় তখন ইকরিমাও কুরাইশ বাহিনীর অগ্রভাগে ছিল। 
.
আরবের প্রসিদ্ধ ঘোড়সওয়ার ছিল ইকরিমা। খালিদ ইবন ওয়ালিদের বাল্যকালের ঘনিষ্ট বন্ধু। অত্যন্ত সাহসী মানুষ ছিল। বদরের রণাঙ্গনে আপন পিতার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ইকরিমা তার প্রতিরক্ষা করেছে। মুআব্বিজ ও মা‘আজ রা. যখন আবু জেহেলের উপর আক্রমণ চালায় তখন এই ইকরিমাই সামনে বেড়ে মা‘আজের কাঁধে এমন জোরে তরবারির আঘাত হেনে ছিল, মা‘আজের বাহু কাঁধ থেকে পৃথক হয়ে যায়। শুধুমাত্র অল্প মাংস ঝুলে ছিল। 
.
বদর যুদ্ধে পরাজয়ের পর ইসলামের প্রতি ইকরিমার শত্রুতা আরো বেড়ে যায়। উহুদ যুদ্ধে একাই আসেনি; বরং তার স্ত্রী উম্মে হাকিমকেও সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। কুরাইশ তার বাহিনীর ডানপার্শ্বে খালিদ ইবন ওয়ালিদকে আর বামপার্শ্বে তাকেই নিযুক্ত করেছিল। উহুদ যুদ্ধে মুসলমানদের যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তার পেছনে ইকরিমার বুদ্ধি, মেধা ও সামরিক যোগ্যতার বিশেষ দখল ছিল।
.
পরিখা যুদ্ধেও ইকরিমা কেবল উপস্থিত ছিল না; কুরাইশের কমান্ডার ছিল। সে ছিল কাফিরদের সেসব হাতেগুণা বীরদের অন্যতম যারা সেদিন পরিখা পর্যন্ত পার হয়ে গিয়েছিল একদিক দিয়ে। কিন্তু মুসলমানদের পক্ষ থেকে যথাযথ পাল্টা আক্রমণের কারণে তারা সেখান থেকে পালাতে বাধ্য হয়।
.
মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য কতিপয় দুর্বৃত্ত সামনে অগ্রসর হয়। তাদের মধ্যে ইকরিমাও ছিল। খান্দামা এলাকায় ছাফওয়ান ইবন উমাইয়্যা ও সুহাইল ইবন ্আমরের সঙ্গে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু খালিদ ইবন ওয়ালিদ রা.এর নেতৃত্বাধীন টহলবাহিনী তাদের উপর হামলে পড়ে। ফলে তারা কিছু লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। 
.
সেই ফেরারিদের মধ্যে ইকরিমাও ছিল। আল্লাহর রাসুল সা. যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত কয়েকজন অপরাধী সম্পর্কে হুকুম জারি করলেন, এরা যদি বায়তুল্লাহর গেলাফও আকড়ে ধরে থাকে তারপরও তাদের  হত্যা করা হোক। সেসব অপরাধীদের মধ্যে ইকরিমা ইবন আবি জেহেলও অন্তর্ভূক্ত ছিল। জান বাঁচাতে ইকরিমা তায়েফের পথ ধরে ইয়েমেন পালিয়ে যায়।
.
কিছুদিন পর হিন্দ বিনতে উতবার সাথে ইকরিমার স্ত্রী উম্মে হাকিম আল্লাহর রাসূল সা.এর দরবারে উপস্থিত হয় এবং কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করে। এই মহিলা ছিল অত্যন্ত বুদ্ধিমতি, চালাক ও মেধাবী। রাসূলুল্লাহ সা.এর দরবারে হাজির হয়ে বললেন,
- হে আল্লাহর রাসূল! ইকরিমা আপনার ভয়ে পালিয়ে ইয়েমেন চলে গেছে। তার আশংকা, তাকে হত্যা করা হবে। দয়া করে আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। নিরাপত্তা প্রদান করুন তাকে।
আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করেন,
(هو آمن)
- “আমাদের পক্ষ থেকে সে নিরাপদ।” 
.
রাসূলুল্লাহ সা.এর কাছ থেকে নিরাপত্তা হাসিল করার পর উম্মে হাকিম রা. স্বামীর সন্ধানে ইয়েমেনের দিকে রওয়ানা হয়ে যান। যাবার সময় নিজের রূমি গোলামটাকেও নিয়ে গেলেন সঙ্গে করে। এই দুষ্ট গোলাম পথিমধ্যে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে চেয়ে ছিল। যেহেতু তিনি অভিজাত ঘরের মহিলা ছিলেন। মুসলমানও হয়ে গিয়েছিলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন। বিভিন্ন ছুতো ধরে কোনো মতে তাকে ‘আক’এ বসবাসরত এক গোত্র পর্যন্ত নিয়ে আসেন। সেখানে এসে তিনি গোত্রের লোকজনের কাছে এই গোলামের বিরুদ্ধে সাহায্য প্রার্থনা করলে তারা তাকে আটক করে বেঁধে রাখে। তিনি বললেন, 
-ইকরিমা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। তার ব্যাপারে সে-ই সিদ্ধান্ত নিবে।
.
উম্মে হাকিম রা. তেহামার তীরে এসে ইকরিমাকে খুঁজে বের করলেন। নৌকায় আরোহণ করেছিল ইকরিমা। ফিরে আসার জন্য ইকরিমাকে বারবার অনুরোধ করেন উম্মে হাকিম রা.। কিন্তু ইকরিমা অনড়। সে আসতে চায় না। ভয় পাচ্ছিল। পরিণাম নিয়ে সে ভীত সন্ত্রস্ত। ভাবছে, মক্কায় তাকে যদি খুন করা হয়।
উম্মে হাকিম রা. নেহায়েতই প্রাজ্ঞ ও বুদ্ধিমতি নারী ছিলেন।
.
তিনি নিজ স্বামীকে অত্যন্ত প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে বোঝালেন।
-হে আমার চাচাতো জ্ঞাতি! আমি এমন এক ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে আসছি যিনি সবার চেয়ে নেককার, সৎ, আত্মীয়তা রক্ষাকারী এবং সবচেয়ে ভালো মানুষ। কেন নিজেকে তুমি ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছো? 
.
অত:পর বিস্তারিতভাবে উম্মে হাকিম রা. ইকরিমাকে বলতে লাগলেন, কিভাবে তিনি রাসূলুল্লাহ সা.এর কাছ থেকে তার নিরাপত্তা হাসিল করতে সক্ষম হয়েছেন। বিস্মিত হয়ে ইকরিমা জিজ্ঞাসা করল, 
-আসলেই কি তুমি আমার জন্য নিরাপত্তা হাসিল করেছ? 
উম্মে হাকিম রা. নিজের স্বামীকে আশ্বস্ত করেন।... 
-আমি নিজেই নবী করিম সা. এর নিকট তোমার নিরাপত্তার জন্য দরখাস্ত করেছি। তখন তিনি তোমাকে ক্ষমার করার ঘোষণা দিয়েছেন। তোমার পূর্বেকার সকল ভুল-ত্রুটি মার্জনা করেছেন। আমার সাথে তুমি মক্কা চল। কেউ তোমার ক্ষতি করবে না। 
.
অবশেষে ইকরিমার বিশ্বাস হয়, তার স্ত্রী সত্যিই বলছে। রাজি হয়ে গেল মক্কা ফিরে আসার জন্য। পথিমধ্যে উম্মে হাকিম রা. রূমি গোলামের দুস্কৃতির কথা আলোচনা করেন। সব খুলে বললেন, কিভাবে সে তাকে ধোকায় ফেলতে চেয়েছিল। শোনার পর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এই মাখযূমি সর্দার ধৈর্য ধরে রাখতে পারেনি। 
.
মক্কা যাবার এবং ইসলাম কবুল করার পূর্বেই সেই বস্তিতে গেল যেখানে ওই গোলাম বসে নিজের পরিণামের জন্য অপেক্ষা করছিল। রূমি গোলামকে দেখতেই ইকরিমা রাগে-ক্ষোভে অগ্নিশর্মা হয়ে যায়। তরবারির এক আঘাতেই দুষ্টটাকে পরপারে পাঠিয়ে দেয়। 
.
ইকরিমা ও তার স্ত্রী দুইজনই কুরাইশের শাখা বনি মাখযূমের সম্মানিত ব্যক্তি ছিল। তাদের মক্কায় পৌঁছার সংবাদ আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সা. এর চরিত্র দেখুন, কিভাবে তিনি এই সর্দারকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন?
রাসূলুল্লাহ সা. ওই সর্দারকে সুস্বাগতম জানাতে এমনভাবে অগ্রসর হন যে, তাঁর চাদর কাঁধের উপর থেকে পড়ে যায়। এক বর্ণনায় এসেছে, এমন দ্রুতভাবে তিনি সামনে বাড়েন যে, চাদর তাঁর কাঁধ থেকে নিচে পড়ে গেল। 
.
আরেক বর্ণনা মতে তিনি এমন ক্ষিপ্রগতিতে আগে অগ্রসর হলেন যে, চাদর পরিধান করারও পরওয়া করেননি। তাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, 
(مرحبا بالراكب المهاجر) 
-“স্বাগতম! মুহাজির হয়ে আগত হে আরোহী ।”
উম্মে হাকিম রা.ও নেকাব পরিহিতা অবস্থায় সেই মজলিশে উপস্থিত ছিলেন। এমন উঞ্চ অভ্যর্থনা দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না ইকরিমার। এত বড় অপরাধী! ইসলামের পথে কত যে বাঁধা সৃষ্টি করেছি আমি। আমি তো বেহিসাব অর্থ ব্যয় করেছি কুফরের সাহায্যে। এতকিছুর পরও আমার এমন অভ্যর্থনা! অবিশ্বাসের জগতেই নিজ স্ত্রীর দিকে ইঙ্গিত করে বলল,
- এ (উম্মে হাকিম) বলছে, আপনি নাকি আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন?
ইরশাদ করলেন, 
(صدقت فأنت آمن)
- “সে সত্য বলেছে। তুমি নিরাপদ।”
.
ইকরিমার ভুল বোঝাবুঝি দূরিভূত হল। আর এ বিপ্লব ঘটিয়েছে তার জীবনে তার বুদ্ধিমতি স্ত্রী.. উম্মে হাকিম। এখন সে জিজ্ঞাসা করছে, 
-আপনি কিসের দাওয়াত দেন, বলুন তো? 
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, 
(أدعوك إلى أن تشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله)
-“আমি তোমাকে দাওয়াত দিচ্ছি এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার প্রতি যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য মা‘বুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল।”
.
রাসূলুল্লাহ সা. ইকরিমাকে ইসলামের মূল ভিত্তিসমূহ বাতলে দিলেন। ইসলামের নির্বাচিত কিছু হুকুম-আহকাম ও আদব-কায়দা আলোচনা করলেন।
ইকরিমার চোখের উপর থেকে গোঁড়ামির পর্দা সরে গেছে ততক্ষণে। রাসূলুল্লাহ সা. এর উন্নত চরিত্র, সদাচার এবং তাঁর ক্ষমা-মার্জনা ইত্যাদি সম্পর্কে যেসব কথা পূর্বে শুনেছিলেন আজ সচক্ষে দেখে নিলেন। সে তাঁর আচরণে ভীষণভাবে প্রভাবিত। সঙ্গে সঙ্গে সে রাসূলুল্লাহ সা. এর মুখোমুখি হয়ে কালিমায়ে তাওহিদ পড়েন এবং শাহাদাত পাঠ করেন।
.
ইকরিমা রা. এখন রাসূলুল্লাহ সা.এর সাহাবি হয়ে গেলেন। আল্লাহর রাসূল সা.ও অত্যন্ত খুশি। যে কোনো নেতার জন্য এর চেয়ে বড় সাফল্য ও কৃতীত্ব আর কী হতে পারে যে, তার সবচেয়ে বড় শত্রু এবং সবচেয়ে বড় শত্রুর ছেলে তার সামনে মাথানত করে আছে। নবী করিম সা. যথাসম্ভব চেষ্টা করতেন যাতে তাঁর মাধ্যমে যে ব্যক্তিই জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পারে তাকে যেন বাঁচিয়ে নেয়া হয়। 
.
ইকরিমা তার বিগত সব পাপ ও কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত। আরজ করেন,
-হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে আপনি এমন কিছু কালিমা বা শব্দ বলুন যা আমি পড়তে পারি। 
ইরশাদ করেন, 
-তুমি এটাই পড়তে থাকো: 
(أشهد أن لا إله إلا الله وأني رسول الله)
তিনি পুনরায় আরজ করেন, 
-আরো কী পড়তে পারি? 
ইরশাদ করলেন, 
-“তুমি বল, আমি আল্লাহ তা‘আলা ও উপস্থিত সবাইকে সাক্ষী বানিয়ে বলছি, আমি মুসলমান, মুহাজির ও মুজাহিদ।”
.
ইকরিমা রা. আল্লাহর রাসূল সা.এর নিকট অনুরোধ করলেন, 
-আপনি আমার অসংখ্য গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করুন।
সম্মানিত পাঠক! জানেন, ইকরিমার উপর রাসূলুল্লাহ সা.এর এই চরিত্রের কী প্রভাব পড়েছে! তিনি তখন আল্লাহর নিকট অঙ্গিকার করেন:
হে আমার স্রষ্টা ও মালিক! ইসলামের পথে বাঁধা সৃষ্টি করার জন্য আমি যতটুকু ব্যয় করেছি তার দ্বিগুণ আমি তোমার রাস্তায় ব্যয় করব। তোমার দ্বীনকে বাঁধা দেয়ার জন্য যত না আমি লড়াই করেছি, এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ জিহাদ করব তোমার পথে।

৪২৮

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭