শূন্যহাতেও তিনি নির্ভিক
যে ঘটনাটি আপনারা পড়তে যাচেছন তার বর্ণনাকারী জাবের ইবনু আবদুল্লাহ আনসারি রা.। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সা.এর সমভিব্যহারে আমরা একবার এক যুদ্ধে বের হয়েছিলাম মদিনার উত্তর-পূর্বে। সঙ্গে ছিলেন চারশত সাহাবি। গন্তব্য বনি গাতফানের এলাকা।
.
ওই সফরে ছয়জন সাহাবা একটি উটের উপর পালা করে করে সওয়ার হচ্ছিলেন। যুদ্ধটির নাম ছিল ‘যাতুর রিকা’। আরবদের উপর বনি গাতফানের বড় প্রভাব ছিল। আল্লাহর রাসূল সা. তাদের উপর আক্রমণের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলেন। কারণ তারা গাযওয়ায়ে আহযাবের সময় মদিনা অবরোধ করেছিল এবং খায়বার যুদ্ধে ইহুদিদের সাহায্য করেছিল। এখন তারা মদিনায় আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
.
এমতাবস্থায় আল্লাহর রাসূল সা. সপ্তম হিজরিতে খায়বার যুদ্ধের অব্যবহিত পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অগ্রসর হন। আল্লাহ তা‘আলা বনি গাতফানের উপর তাঁর রাসূলের প্রভাব বিস্তার করে দিয়েছিরেন। ফলে বনি গাতফানের অধ্বস্তন গোত্রসমূহ যেমন বনি মুহারিব ও বনি ছা‘লাবার লোকেরা মুসলমানদের আগমনের সংবাদ পেয়ে দিগি¦দিক ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল।
.
মুসলিম সেনাদল সামরিক লক্ষ্য অর্জনের পর যখন মদিনায় প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন সাহাবায়ে কেরাম বড়ই স্বস্তি বোধ করছিলেন। সফরে নিমগ্ন সেনাদল এক জায়গায় যাত্রাবিরতি করে। মুজাহিদগণ বিস্তৃত উপত্যাকায় এদিক-ওদিক ছড়িয়ে বিভিন্ন গাছের নিচে শুয়ে পড়লেন। খুব দ্রুত প্রায় সবলোক নিদ্রামগ্ন হয়ে গেল।
.
নবী করিম সা.ও একটি গাছের নিচে অবস্থান নেন এবং নিজ তরবারিটা গাছের ডালে লটকানো অবস্থায় রেখে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। ওসব গোত্রের মধ্য থেকেই জনৈক বেদুইন তার গোত্রের লোকজনকে বলল,
-তোমরা নিশ্চিন্ত থাক। গোপনে আমি মুসলিম সেনার মধ্যে প্রবেশ করে মুসলমানদের নবীকে (নাউজুবিল্লাহ) হত্যা করে ফিরে আসছি।
.
সে তার অপবিত্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বেরিয়ে গেল। মুসলমানরা জানতেন না, কোনো ব্যক্তি এমন কুমতলব নিয়ে তাদের দিকে আসছে। গউরস ইবনু হারেস নামক ওই মুশরিক মুসলমান এবং বিশেষ করে আল্লাহর রাসূল সা.এর সন্ধান করছিল আর ভাবছিল, কখন সে সুযোগ পাবে এবং সে তার লক্ষ্য অর্জন করবে।
.
আল্লাহর রাসূল সা. যখন শুয়ে গেলেন, ওই বেদুইন মুশরিক ধীরে ধীরে প্রথমে রাসূলুল্লাহ সা. এর লটকানো তরবারিটার উপর কব্জা করে নিল। তরবারি খাপমুক্ত করে শূন্যে একটু নাড়াচাড়া করল। অত:পর সে আল্লাহর রাসূল সা.এর মাথার নিকট এসে তরবারিটা উপরে তুলে উচ্চস্বরে ডাক দিল:
-(أتخافني يا محمد؟)
- “হে মুহাম্মদ! তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো?”
.
রাসূলুল্লাহ সা.কে হত্যা করে বনি গাতফানের এক উচ্চ মর্যাদা হাসিলের সুযোগ তার হাতের নাগালেই ছিল। কিন্তু সে জানত না, যে লোকটাকে শেষ করার জন্য এসেছে তিনি কোনো সাধারণ লোক নন; বরং তিনি আল্লাহর সর্বশেষ রাসূল। যাকে রক্ষা করার অঙ্গিকার স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন করেছেন।
(والله يعصمك من الناس)
আল্লাহর রাসূল সা. একটুও ভীত হননি।
তাঁর অন্তরেও কোনো ধরনের ভয়ের সৃষ্টি হয়নি। তিনি পূর্ণ আস্থার সঙ্গে নিশ্চিন্তে বললেন, (لا) “একদমও নয়।”
.
বেদুইনটি অবাক ও পেরেশান হয়ে গেল। কী ব্যাপার! তরবারি তো তার হাতে। রাসূলে কারিম সা.তো শূন্যহাত। আত্মরক্ষার জন্য তাঁর হাতে কিছুই নেই। কিন্তু তারপরও তিনি নির্ভিক ও নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বেদুইন বলল,
-(من يمنعك مني)
“আপনাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে?”
সঙ্গে সঙ্গে সে তরবারি রাসূলুল্লাহ সা.এর মাথার নিকট উপর করে ধরে। আল্লাহর রাসূল সা. দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে বললেন,
-(الله)
- “তোমার কাছ থেকে আমাকে আল্লাহই রক্ষা করবেন।”
.
রাসূলুল্লাহ সা.এর পবিত্র মুখ থেকে যখনই আল্লাহ তা‘আলার মোবারক নাম উচ্চারিত হল, ওই কাফির ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে গেল। ভয়ে তার শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগল।
.
সম্মানিত পাঠক! সামনে অগ্রসর হবার পূর্বে আপনাদেরকে রাসূলুল্লাহ সা.এর একটি মহান বৈশিষ্ট্য স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তিনি সা. ইরশাদ করেছিলেন,
(نصرت بالرعب)
-“ভয় দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে।”
তাঁকে দেখলে শত্রু ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে যেত।
(فسقط السيف من يده)
- “মুশরিকের হাত থেকে তরবারিটা নিচে পড়ে গেল।” তখন আল্লাহর রাসূল সা. সেই তরবারি নিজ হাতে উঠিয়ে নিলেন। তার দিকে বাড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “বলো, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করবে?”
.
মুশরিক লোকটি তো প্রাণ হারানোর ভয়ে একেবারে কাহিল। সে এটাও বলতে পারছে না যে, আল্লাহ। তার মিথ্যা উপাস্যদেরও নাম নিতে পারছে না। কেঁপে কেঁপে বলল,
- কেউই না। তরবারি তো আপনার হাতে। চাহে তো আপনি আমাকে হত্যা করতে পারেন।
সঙ্গে সঙ্গে বলল,
-আপনি যদি আমাকে হত্যা না করেন এবং ক্ষমা করে দেন তাহলে,
(أعاهدك أن لا أقاتلك أبدا)
- “আপনার সামনে আমি অঙ্গিকার করছি, কখনো আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করবো না।” (ولاأكون مع قوم يقاتلونك) এবং এমন লোকের সঙ্গও দেব না কখনো যারা আপনার বিরুদ্ধে লড়াই করে।”
.
সুপ্রিয় বন্ধুরা! আমাদের প্রিয় রাসূল সা. এর চরিত্র লক্ষ করুন। তিনি তার উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান ছিলেন। তাকে তিনি হত্যা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ক্ষমার আশ্রয় নিয়েছেন। বললেন,
-“ইসলাম কবুল করে নাও।”
সে বলল,
-“আমি তো ইসলাম কবুল করবো না।” অস্বীকার করা সত্ত্বেও আল্লাহর রাসূল সা. তাকে ক্ষমা করে দিলেন। অত:পর সে তার গোত্রে যখন ফিরে গেল, লোকজনকে বলতে লাগল,
-(قد جئتكم من عند خير الناس)
“আমি তোমাদের কাছে সবচেয়ে উত্তম লোকটির নিকট থেকে এসেছি।”
.
কতিপয় সীরাতপ্রণেতা যাদের মধ্যে ইবন ইসহাক ও ওয়াকিদিও রয়েছেন, বর্ণনা করেন, ওই লোকটি মুসলমান হয়ে যায়। তার গোত্রে ফিরে গিয়ে ইসলামের তাবলিগ করে। ফলে অনেক লোক মুসলমান হয়ে যায় তার মাধ্যমে।
৪৩০
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
দক্ষতার গল্প কোনো ব্যক্তিত্বের উন্নত চরিত্র সম্পর্কে জানতে চান? তা......
মালিক-শ্রমিক ভাই ভাই মোহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী মজুরের মর্যাদা ও অধিকার......
চুল কাটার জন্য সেলুনে বসে আছি। ভদ্রোচিত চেহারার এক লোক......
আদর্শ শিক্ষক সাহাবিরা বসে আছেন মসজিদে। আবু হুরায়রা রা. আনাস......
দক্ষতার গল্প আনাস ইবনু মালেক রা.। রাসূলুল্লাহ সা.এর বিশেষ খাদেম......
ব্যক্তির সম্মুখে তার প্রশংসা করলে তার সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ......
যে কোন বিষয় যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিন يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْۤا......
এক রাজার দক্ষতা ও সফলতা এক দেশের রাজা ইন্তিকাল করার......
প্রিয় নবীজীর ভালোবাসার পরীক্ষা নবীজীর কাছে তাঁর ৪ বিবি বসা......
খুব সংক্ষেপে বলি, জন্মেছিলেন এক বৌদ্ধ(এবং Chinese) পরিবারে। ছোট বেলা......