সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

বদরের প্রান্তরে একদিন
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : রবিবার ১০/০৬/২০১৮

ফেরদৌস ফয়সাল

আজ ১৭ রমজান। এই দিনে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ বদরের যুদ্ধ হয়েছিল। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণে বদর নামক স্থানে অবিশ্বাসী কুরাইশ বাহিনীর সঙ্গে ইসলামের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইসলামের প্রথম সমর অভিযান ‘বদর যুদ্ধ’। এ যুদ্ধ জয়ের ফলে ইসলাম ও মুসলমানদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। মদিনার শক্তি ও ভিত্তির স্বীকৃতি অর্জিত হয়।

মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার পুরোনো রাস্তায় গেলে বদরের প্রান্তর পড়ে। নতুন রাস্তা হওয়ায় অনেক কম দূরত্বে, কম সময়ে মদিনায় পৌঁছানো যায়। চাইলেও হজযাত্রীরা বদরের প্রান্তরে যেতে পারেন না। বেশ কয়েকবার হজ করার সুবাদে মক্কায় বসবাসরত প্রবাসীদের সঙ্গে রওনা দিলাম বদরের প্রান্তরের উদ্দেশে। সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন তৎকালীন হজ কনসাল জাফর উল্লাহ খান, অনুবাদক মুসা হেলালী, মক্কার উম্মুল কোরআ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন বাংলাদেশি ছাত্র—মুতাসিম বিল্লাহ, ছফি উল্লাহ, আবদুল বারী ও শোয়াইব রশীদ। চলার পথে আবদুল বারী জানান, ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটাই মুসলমান আর কাফিরদের মধ্যে প্রথম সংঘর্ষ। মনে মনে গর্ব বোধ করছিলাম এই ভেবে যে ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটা জায়গায় যাচ্ছি। বদরের যুদ্ধ সম্পর্কে গাড়িতে বসে আমরা নিজেদের মধ্যে অনেক আলাপ করছিলাম।

মক্কা থেকে মদিনা যাওয়ার রাস্তা পুরোটাই মরুভূমি; বালু আর বালু। নির্জন। হঠাৎ দু-একটা গাড়ি সাঁই সাঁই করে চলে যায়। আশপাশে কোনো জনবসতি নেই। মদিনার রাস্তায় একটা জিনিস ভালো লাগে—জনমানবশূন্য হলেও কয়েক মাইল পরপর পেট্রলপাম্প, আর পাম্পের সঙ্গে লাগোয়া ডিপার্টমেন্ট স্টোর। প্রতিটি পাম্পে বাথরুম ও নামাজের ব্যবস্থা আছে। আরেকটি জিনিস লক্ষ করলাম, কয়েক মাইল পরপর একটা করে মসজিদ। মসজিদগুলো ছোট। কোথাও কোথাও আবার বড় মসজিদও রয়েছে।

চলার পথে এশার নামাজ পড়ার জন্য নামলাম। হজের পর কিছুটা শীত শীত লাগছিল। নিজেরা জামাত করে নামাজ পড়লাম। আবার যাত্রা শুরু হলো, গন্তব্য বদরের প্রান্তর।

পথে সৌদি পুলিশ আমাদের গাড়ি থামাল। জানতে চাইল কোথায় যাচ্ছি, গাড়িতে কারা ইত্যাদি। সৌদি আরবে বসবাস করার বৈধ পরিচয়পত্রকে আরবিতে ‘ইকামা’ বলে। ইকামা যাঁরা দিতে পারেন, তাঁদের কফিল বলে। অর্থাৎ ইকামাধারীর কোথাও চলাচল করতে কফিলের অনুমতি লাগে। আমরা হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। হজ শেষে বদরের প্রান্তর দেখতে যাচ্ছি ইত্যাদি বোঝালেন অনুবাদক মুসা হেলালী। সৌদি পুলিশের অনুমতি মিলল সামনে যাওয়ার।

মক্কা থেকে মদিনার পথ অনেক দীর্ঘ। প্রায় ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগে (যদিও জিএমসি গাড়িতে সাড়ে তিন ঘণ্টায় মদিনায় যাওয়া যায়)। দ্রুতগতিতে চালালে হাজিদের ঝাঁকি বা কষ্ট হতে পারে—এ জন্য গাড়ি দ্রুত চালানো যায় না। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে থাকার পর আমরা পথে কয়েক জায়গায় যাত্রাবিরতি করলাম। ফজরের আজানের সময় আমরা বদর এলাকায় এসে পৌঁছালাম। তখনো অন্ধকার। অনেকগুলো পুরোনো বাড়ি। কোনোটির দরজা আছে, ছাদ নেই। আবার কোনোটির ছাদ আছে তো দরজা নেই। মনে মনে ভাবলাম এটাই কি বদরের প্রান্তর? এরপর চোখে পড়ল বড় একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যাতে শহীদদের নাম লেখা আছে। পাশেই রাস্তা। রাস্তার পাশে দেয়ালঘেরা ঐতিহাসিক বদরের প্রান্তর। মক্কার উম্মুল কোরআ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুতাসিম বিল্লাহ জানালেন, এটা সেই জায়গা—মদিনা থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বদর উপত্যকা। মুসলিম বাহিনীর সঙ্গে কুরাইশদের সংঘর্ষ হয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) স্বয়ং যুদ্ধ পরিচালনা করেন। আল আরিমা পাহাড়ের পাদদেশে মুসলিম বাহিনীর শিবির স্থাপন করা হয়েছিল। ফলে পানির কূপগুলো তাদের আয়ত্তে ছিল। আর নবী করিম (সা.) সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটি জায়গাই বেছে নেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধ হলে কোনো মুসলমান সৈন্যের চোখে সূর্যের কিরণ পড়বে না। প্রাচীন আরবের রেওয়াজ অনুযায়ী প্রথমে মল্লযুদ্ধ হয়।

মহানবী (সা.) এর নির্দেশে আমির হামজা, আলী, আবু উবায়দা মল্লযুদ্ধে অংশ নেন। মাত্র ৩১৩ জন মুসলমান অসামান্য রণ-নৈপুণ্য ও নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বদরের যুদ্ধে বিজয় লাভ করেন। এ যুদ্ধে মাত্র ১৪ জন মুসলিম সৈন্য শাহাদাত বরণ করেন। কুরাইশ-বীর আবু জাহেল এই যুদ্ধে নিহত হন। এসব বর্ণনা শুনে আর বাস্তবে বদরের প্রান্তর দেখে আমরা হারিয়ে যাই সেই সময়ে।

যদিও বদরের যুদ্ধের বছর অর্থাৎ ৬২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে মুসলিম ও কুরাইশ বাহিনীর মধ্যে বহু খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়; তথাপিও বদরের যুদ্ধ ইসলাম, মুসলমান এবং মদিনার ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে।

বদরের যুদ্ধের কিছু তথ্য—

l মুসলিম বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা: ৩১৩ জন। মুহাজির ছিলেন ৮২ জন। আর সবাই আনসার। আওস গোত্রের ৬১ জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন। সেনাপতি: হজরত মুহাম্মদ (সা.)। মুসলিমদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে: ৭০টি ও ২টি। মুসলিম বাহিনীর শহীদ হন: ১৪ জন। বদরের যুদ্ধে আবু জাহেলকে হত্যা করেন ২ ভাই : হজরত মুআজ (রা.) ও হজরত মুআওয়েজ (রা.)।

l কুরাইশ বাহিনী: অমুসলিম সৈন্য সংখ্যা ১০০০ জন। কুরাইশ বাহিনীর ছিল অসংখ্য উট। ১০০টি ঘোড়া এবং ৬০০ লৌহবর্ম।

অমুসলিম সেনাপতি: ওতবা বিন রবিআ। অমুসলিম নিহত ৭০ জন এবং বন্দীও হয় ৭০ জন। বদরের যুদ্ধে কুরাইশদের প্রায় গোত্র অংশগ্রহণ করলেও বনু আদি গোত্রের কেউ এই যুদ্ধে অংশ নেননি।

যুদ্ধের ফলাফল: ইসলামের এ প্রথম সামরিক যুদ্ধে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।

বদরের যুদ্ধের প্রভাব: ইসলামের ইতিহাসে বদরের যুদ্ধ সুদূরপ্রসারী প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে মদিনাকে অন্য আরব গোত্রগুলো মুসলিমদের নতুন শক্তি হিসেবে দেখতে শুরু করে। বদরের যুদ্ধের পর মদিনার শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। মুসলিম উম্মাহর কাছে 
বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবাগণ অনেক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।

ফেরদৌস ফয়সাল: সাংবাদিক

[email protected]

সূত্র: প্রথম আলো

১৩৫১

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭