চুল কাটার জন্য সেলুনে বসে আছি। ভদ্রোচিত চেহারার এক লোক এসে আমার পাশে বসলেন। সাথে তাঁর দুই ছেলে। ছেলে দুটোর বয়স ৬-৮ এর মধ্যে। ছেলে দুটো দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তাদের কথা বলার ধরণটাও। সেলুনে ঢোকামাত্রই তাদের একজন হালকা থোতলানো গলায় বলতে শুরু করলো, 'আমি নেইমার কাট দিবো', আর অন্যজন বলতে লাগলো, 'আমি মেসি কাট দিবো'।
তাদের এমন আবদার আর আকাঙ্ক্ষার বায়না দেখে দোকানসুদ্ধ লোক বেশ আনন্দ পেলো। দেখলাম ছেলেদুটোর পিতামশাই নিজেও এতে খুব আনন্দিত এবং উৎফুল্ল। ছেলেরা এই বয়সেই বিশ্বসেরা দুজন এথলেটকে চিনতে পেরেছে- এই খুশি তাদের বাবা ঠিক কোথায় রাখবেন?
যে ছেলেগুলো মেসি-নেইমারকে চিনতে পারে, তারা অবশ্যই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলকেও চিনে। ঠিক কয়টি রঙের কম্বিনেশনে আর্জেন্টিনার পতাকা তৈরি হয়, ব্রাজিলের পতাকায় কি কি রঙ আছে- এসবকিছুও নিশ্চয়ই তাদের নখদপর্ণে। হয়তো তারা তাদের বাসার ছাদে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকাও উড়িয়েছে। পতপত করে উড়তে থাকা সেই পতাকা নিয়ে তাদের কত্তোগুলো স্বপ্ন!
দোকানশুদ্ধ লোকগুলো যখন বিশ্বকাপের আলাপে বিভোর, আমি তখন ভাবছি অন্যকথা। ভীষণরকম মর্মপীড়া থেকে ভাবতে লাগলাম আমাদের পিতা-মাতাদের কর্তব্যের কথা, তাদের দায়িত্বের কথা।
ছোট্ট বাচ্চা দুটোর ঠিক এই বয়সটাতে তো মেসি-নেইমারকে চেনার কথা ছিলোনা। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ফ্যান্টাসিতে ভোগার কথা ছিলোনা। মেসি-নেইমারের লাইফস্টাইল অনুকরণ করার কথাও নয়। কথা ছিলো এই বয়সে তারা কোরাস সহকারে কুরআন পড়বে, তাজবিদ সহকারে কুরআন শিখবে।
আমাদের বাবা-মা'রা তাদের দায়িত্ব থেকে কিরকম গাফেলটাই না হয়ে আছে। তারা ছেলেদের সামনে ম্যারাডোনার সেই 'ঐশ্বরিক' গোলের গল্প করে, পেলের দূর্দান্ত ফিনিশিং, রোনালদিনহোর মোহ জাগানিয়া ড্রিবলিং আর মেসির জাদুমাখা পায়ের গল্প করে। তাদের আলাপে লং বাউন্ডারিতে রিকি পন্টিংয়ের ছক্কার গল্প থাকে, স্ট্যাম্পের পেছনে কুমার সাঙ্গাকারার দানবীয় কায়দা-কানুন থাকে, থাকে হালের বিরাট কোহলীর অতি মানবীয় ইনিংসয়ের গল্পও। কিন্তু, তাদের আলাপজুড়ে কোথাও দ্বীনের কথা নেই, ধর্মের কথা নেই।
এই ছেলেগুলো মেসি-নেইমার-পেলে-ম্যারাডোনাদের জানতে জানতে বড় হয়। অথচ, এরা কখনো ওমর ইবনুল খাত্তাবের গল্প শুনেনা। এরা ফিলিস্তিনের জন্য দান করা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অনুদানের খোঁজ রাখে, অথচ রাসূলের আহ্বানে ঘরের চুলার ছাঁই পর্যন্ত দান করে দেওয়া সেই মহামতি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর গল্প এরা জানেনা। খেলায় জাদুকরী কান্ড ঘটিয়ে ম্যাচ বের করে নিয়ে আসা মেসি কিংবা ইব্রাহিমোভিচের গল্প আমাদের বাচ্চারা ঠিকই জানে। কিন্তু, বুদ্ধিদীপ্ত আর চৌকস কৌশলের অধিকারী, খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননের বুদ্ধি যার মাথা থেকে এসেছিলো- সেই সালমান ফারসির গল্প কি আমাদের বাচ্চারা জানে?
সন্তান-সন্তনী আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা বিশাল নিয়ামত। আপনার চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, কতো মহিলা 'মা' হবার স্বাদ পায়না। কতো পুরুষ জীবনে 'বাবা' ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত। আপনাকে যখন আল্লাহ সুবনাহু ওয়া'তায়ালা অনুগ্রহ করে 'মা' হবার কিংবা 'বাবা' হবার তাওফিক দান করেছেন, তখন আপনার দায়িত্ব আরো কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এরা নিছক আপনাদের জৈবিক ক্রিয়ার ফসল নয়। এরা আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার জন্য আমানত। আপনার জন্য পরীক্ষা। কিয়ামতের মাঠে এই সন্তানদের কি শিখিয়েছেন, কি শিক্ষা দিয়েছেন, কিভাবে বড় করেছেন সেই ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহুর জীবনে মা-ই ছিলেন উনার প্রথম এবং সর্বপ্রধান শিক্ষক। উনার জীবনী থেকে জানা যায়, উনার মা উনাকে প্রতিদিন ফজরের সালাতেরও কিছু আগে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন। ছেলেকে জাগাবার আগে তিনি ছেলের জন্য চুলোয় পানি গরম করতেন। এরপর ইমাম আহমাদকে জাগিয়ে দিয়ে মা-ছেলে দু'জন কিয়ামুল লাইল পড়তেন। যখন মসজিদে ফজরের আযান হতো, তখন উনার মা উনাকে মসজিদের পথে অনেকটা আগিয়ে দিয়ে আসতেন, কারণ- মসজিদ ছিলো খানিকটা দূরে আর রাস্তায় থাকতো ঘুটঘুটে অন্ধকার। সেই ছোট্টবেলা থেকে ইমাম আহমাদকে উনার মা ঠিক কীভাবে গড়ে তুলেছেন ভাবুন তো? সেই ইমাম আহমাদ উম্মাহর জন্য কি সম্পদ হয়েছিলো তা তো সবার জানা। উনাকে বলা হয় 'সুন্নাহর ইমাম'।
আর, আমাদের মায়েরা কি করে? রাত জেগে হিন্দী সিরিয়াল দেখে আর দিনভর নাক ডেকে ঘুমায়। তাহলে, সেই মায়েদের পেট থেকে কেনো ঐশীরা বেরুবে না? আর্জেন্টিনা হারলে কিংবা স্টার জলসা দেখতে না দিলে কেনোই বা সেই মায়েদের সন্তানেরা আত্মহত্যা করবেনা? পাখি ড্রেসের জন্য কেনোই বা তারা গলায় ফাঁস দিবেনা?
আল্লাহর রাসূল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, - মৃত্যুর পর মানুষের আমলনামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু, এরপরও তিনটি জায়গা থেকে সাদকায়ে জারিয়া তাঁর আমলনামাতে যুক্ত হতে থাকে। সেই তিনটি কাজের একটি হলো- নেককার সন্তানের পিতা-মাতার জন্য করা দোয়া।
আহা! আজকে যেসব মুসলিম পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের মেসি-নেইমারদের অনুকরণ, অনুসরণ করতে শিখাচ্ছে, আধুনিকতার নামে একটি নৈতিক অবক্ষয় সমৃদ্ধ প্রজন্ম গড়ে তুলছে, তারা যদি বুঝতো তাদের মৃত্যুর পর সন্তান কতো বড় সম্পদে পরিণত হতে পারে! আহা!
৪৫৩
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
একটি কিডনীর ওয়েট কত? একটি কিডনীর ওয়েট কত? সর্বোচ্চ ২০০......
অসাধারণ গল্প উহুদের যুদ্ধে ৭০ জন শহীদ হয়েছে! একেক জনের......
দক্ষতার শিক্ষণীয় গল্প রেষ্টুরেন্টে বসে এক হুজুর নাস্তা করছেন। হাত......
চাঁদ নেমেছে আজ আমার ঘরে আল্লাহর রাসূল সা.এর ঘরে কয়েকদিন......
একটি শিক্ষণীয় ইসলামিক গল্প , অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে রাহাত......
রাজা কে? খলিফা মামুনুর রশীদের পিতা হারুনুর রশীদের রাজত্বকালে বাক্কায়......
শিশুকালীন যৌন হয়রানি রোধে মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ১.......
দক্ষতার গল্প তিনি ছিলেন মানবতার সর্দার। জগতের সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ......
আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম যেদিন অফিস করে স্বাগত বক্তব্য......
শিক্ষনিয় ঘটনা নামায বিষয়ে বাগদাদ শহরের এক মসজিদের একজন ইমামের......