সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ঈমানদারদের করনীয়
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বুধবার ২৫/০৪/২০১৮

দৈনন্দিন জীবনে মানুষের কথাবার্তায় শিষ্টাচারিতা রক্ষায় পরিবেশ পরিস্থিতি ও অবস্থাভেদে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলার ধরন, প্রকার ও বিন্যাস বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। মানুষ সবাক প্রাণী। তার বাগ্যন্ত্র ও মাতৃভাষার ব্যবহার যত মধুময়, সুন্দর ও যথার্থ হবে; ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা ততই পরিলক্ষিত হবে। এ জন্য বেহুদা কথা বলার সময় সবার সজাগ-সচেতন থাকা দরকার। সর্বাবস্থায় একজন মুসলমানকে অটুট বিশ্বাস নিয়ে মনে রাখতে হবে যে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দের জন্য তাকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি যদি উত্তম কিছু বলেন এ জন্য পুরস্কৃত হবেন। আর যদি মন্দ কথা বলেন, সে জন্য অবধারিতভাবে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তাই বলা হয়েছে, ‘কথায় কে উত্তম ওই ব্যক্তি অপেক্ষা যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করে, সৎ কর্ম সম্পাদন করে এবং বলে, “আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত।”’ (সূরা হা-মীম আস-সাজদা, আয়াত: ৫)


মানুষের সঙ্গে পারস্পরিক আলোচনায় যেসব কথা বলা হবে, তা উত্তম ও জ্ঞানসমৃদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কথা যেন জনকল্যাণকামী ও চমকপ্রদ হয়, ভাষার দ্বারা নিজের ও অন্যের উপকার হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিনম্রকণ্ঠে কথা সবারই প্রিয়। ইসলামে নরম স্বরে ও সহজ-সরল ভাষায় কথা বলার সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। জনসমাবেশে বা মজলিশে উপবিষ্ট হয়ে এমন ভাষায় কথা বলা যাবে না, যাতে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা অন্যের তিরস্কার প্রচ্ছন্ন থাকে এবং যা মানুষের মর্যাদার জন্য হানিকর। কথাবার্তা, বক্তৃতা বা বিবৃতি দ্বারা কোনো সময় গর্ব, অহমিকা, বাহাদুরি, শ্রেষ্ঠত্ব ও আত্মপ্রচার করা যাবে না। কখনো বক্তব্য দ্বারা মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। অথচ লোকেরা অকারণে বক্তৃতাকে দীর্ঘায়িত করে এবং মাত্রাতিরিক্ত কথা বলে। ওই দীর্ঘভাষী বক্তৃতাকারীকে কেউ পছন্দ করে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাহুল্য কথাবার্তা পছন্দ করতেন না। ‘মুখের কথা খুবই বিপজ্জনক’ বলে নবী করিম (সা.) মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, ‘বান্দা অনেক সময় এমন কথা বলে, যাতে সে গুরুত্ব দেয় না অথচ সেই কথা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। 

মানুষের কথাবার্তা এমন হৃদয়গ্রাহী ও মনোমুগ্ধকর হওয়া উচিত, যা সঠিক, মার্জিত, রুচিসম্মত ও ভারসাম্যপূর্ণ। ন্যায়সংগত কথা বলুন আর তর্ক-বিতর্ক যা-ই করুন, তা করতে হবে উত্তম পন্থায়। এতে যেন কারও ক্ষতি না হয়, মানসিকভাবে কেউ আঘাত না পায়, কাউকে খাটো করা না হয় বা মানুষের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ প্রকাশ না পায়। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের অধিকাংশ সদস্য যদি সত্য কথা বলার দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখেন, তাহলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, দলমত-নির্বিশেষে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ, ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ, পরচর্চা-পরনিন্দা ও প্রতিশোধপ্রবণতা বহুলাংশে লোপ পাবে এবং মানুষের মধ্যে অযথা শত্রুতা সৃষ্টি হবে না। পবিত্র কোরআনে মানুষকে সুন্দরভাবে কথা বলার শুভ শিক্ষা দিয়ে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। তাহলে তিনি তোমাদের কর্মকে ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন।’ (সূরা আল-আহজাব, আয়াত: ৭০-৭১)

দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে নর-নারীদের কথা বলতে হয়, বাক্যালাপ করতে হয়। মানুষের উচিত নরম, বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রাণস্পর্শী কথা বলা। মাতৃভাষায় বাক্যালাপের মাধ্যমে স্বজাতির সঙ্গে নর-নারীর ভাবের আদান-প্রদান হয়। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নার প্রতিটি মুহূর্ত ভাগাভাগি করা যায়। তাই মানুষ যখন কথা বলবে, তখন আস্তে-ধীরে প্রয়োজনীয় কথা বলবে। অনাবশ্যক চিৎকার করে বেহুদা কথা বলা নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। পবিত্র কোরআনে সাবধান করা হয়েছে, ‘তুমি পদক্ষেপ করবে সংযতভাবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর নিচু করবে, কেননা স্বরের মধ্যে গর্দভের স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।’ (সূরা লুকমান, আয়াত: ১৯) অনাবশ্যক কথাবর্তা ও বাচালতা পরিহার করা সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। মুসলমানদের মধ্যে এমন গুণাবলির সমাবেশ ঘটানো একান্ত প্রয়োজন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই সফলকাম হয়েছে মুমিনগণ, যারা বিনয়-নম্র নিজেদের সালাতে। যারা অসার ক্রিয়াকলাপ বা নিরর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকে।’ (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত: ১-৩)

বস্তুত মানুষ যে কথাই মুখ থেকে বের করে, এর ওপর আল্লাহর ফেরেশতাগণ সাক্ষী থাকেন। মানুষ যখন একটি মিথ্যা কথা মুখে উচ্চারণ করে, তখন তার কাঁধের ফেরেশতাদ্বয় তার কাছ থেকে দূরে সরে যান। পবিত্র কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার কাছেই রয়েছেন।’ (সূরা কাফ, আয়াত: ১৮) তাই প্রত্যেক মানুষের মুখ থেকে বেফাঁস কোনো কথা বের করার আগে এর পূর্বাপর সব দিক চিন্তাভাবনা করা উচিত। এ জন্য প্রথমে কথাবার্তার উদ্দেশ্য ও মর্মার্থ নির্ণয় করা এবং যথার্থতা প্রতিপন্ন করার পর উত্তম ও উপযোগী পন্থায় মনোভাব প্রকাশ করা দরকার। এটাই হচ্ছে নিরর্থক কথা ও মিথ্যা বাক্যালাপ থেকে বেঁচে থাকার সহজ উপায়। সুতরাং প্রয়োজন না হলে বাগ্মিতা পরিহার করুন এবং মানুষকে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কিছু বলা থেকে বিরত থাকুন! কেননা, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিরর্থক কথাবার্তা খুব অপছন্দ করে বলেছেন, ‘যাদের আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি এবং যারা কিয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে, তারা হলো সেসব ব্যক্তি, যারা অনর্থক কথা বলে এবং যারা অন্যকে ছোট করে এবং যারা কথা বলার সময় নিজেদের (পাণ্ডিত্য) জাহির করে।’ (তিরমিজি)

বর্তমান সমাজে দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মানুষের কথাবার্তায় অহেতুক মিথ্যাচার, অপবাদ, দোষারোপ, কলঙ্ক রটানো, অসাক্ষাতে নিন্দা ও প্রতারণামূলক অন্যায় কার্যকলাপ কমবেশি প্রায়ই ঘটছে। বাক্যালাপে সদাচার ও মিথ্যাচার উভয়ই মানুষের ভেতর তথা মনোভাব ও অভিব্যক্তির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর এগুলো মানুষের কথাবার্তা, কাজকর্ম, ব্যবহার ও আচার-আচরণে প্রকাশ পায়। তাই মুসলমানদের বাক্যালাপে প্রকাশ্যে বা গোপনে কথাবার্তায়, কাজেকর্মে শিষ্টাচারিতা রক্ষায় ভারসাম্যপূর্ণ সাবলীল ভাষা ব্যবহার ও প্রাঞ্জল বক্তব্য প্রয়োগে সামঞ্জস্য থাকা উচিত।
 

৩৬৫

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

  • ঈমানদারদের করনীয়

    দৈনন্দিন জীবনে মানুষের কথাবার্তায় শিষ্টাচারিতা রক্ষায় পরিবেশ পরিস্থিতি ও অবস্থাভেদে......

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭