সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ইসলামে বাল্য বিবাহ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ১৫/০৬/২০১৭

দেশে বাল্যবিবাহের আইন ও তার প্রয়োগের দড়ি-টানাটানি চলছে তো চলছেই। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে মানবাধিকারকর্মীদের আন্দোলন, অন্যদিকে এর পক্ষে বেশিরভাগ ইমাম-আলেমদের অবস্থান। তাদের প্রধান যুক্তি সহি বুখারির হাদিস:

“রাসুল (সা.) বিবি আয়েশাকে (রা.) বিয়ে করিয়াছিলেন ছয় বছর বয়সে, নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন নয় বছর বয়সে।”

(বুখারি ৭ম খণ্ড-৬৪, ৫ম খণ্ড-২৩৪, ২৩৬)

অথচ ছয় বছরে বিয়ে হয়েছে এটা নির্ভরযোগ্য নয় তাঁর নিজের কথাতেই:

“বিবি আয়েশা (রা.) বলছেন, বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল সাত বছর।” (সহি মুসলিম ৮-৩৩১১)

এক বছরের তফাৎ বেশি না মনে হতে পারে, কিন্তু এ থেকে প্রমাণ হয় বুখারির ওই ছয় বছর, নয় বছরের দলিল প্রশ্নাতীত নয়।

বাল্যবিবাহের বিপক্ষে অন্য যেসব দলিল আছে তা উপেক্ষা করে এই একটা মাত্র ঘটনার ওপরে নির্ভর করে বাল্যবিবাহ চলে আসছে। অথচ ড. জাকির নায়েকসহ বহু ইসলামি বিশেষজ্ঞ এই ‘ছয় বছর-নয় বছর’-এর বিরুদ্ধে চিরকাল প্রতিবাদ করেছেন। কিসের ভিত্তিতে করেছেন সেটাই আমরা দেখব, কিন্তু প্রথমে দেখা যাক এ ঘটনার ভিত্তিতে ইসলামবিরোধীরা রাসুলকে (সা.) ‘শিশু-ধর্ষক’ বলে যে অপবাদ দিয়ে থাকে সেটা কেন ভিত্তিহীন।

শিশু নিপীড়ন মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত পুরুষ কম বয়সের শিশুদের সঙ্গে যৌনসংসর্গ করতে সর্বক্ষণ সুযোগ খুঁজতে থাকে। মনে রাখতে হবে সেই সময়ে সমাজ, পরিবার, অর্থনীতি, রাজনীতি, যুদ্ধনীতি এমনকি প্রতিটি মানুষের মনোজগতের ওপর রাসুলের (সা.) সর্বগ্রাসী নিয়ন্ত্রণ ছিল। লক্ষ অনুসারীরা তাঁর জন্য নিজেদের ‘পিতামাতা উৎসর্গ’ করার কথা সর্বক্ষণ বলতেন; তিনি চাইলে অনায়াসে শত শত নয়, বরং হাজার হাজার শিশুর সঙ্গে যৌন সংসর্গ করতে পারতেন। অথচ তেমন কিছুর কোনো দলিল নেই। বরং তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র আয়েশা (রা.) ছিলেন কুমারী, বাকিরা প্রাপ্তবয়স্কা বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা, কেউ কেউ আবার তেমন সুন্দরীও ছিলেন না। কাজেই ‘শিশু নিপীড়ন’ তত্ত্বটা তাঁর বেলায় একেবারেই খাটে না।

২৫ বছরের দুরন্ত যৌবনে তাঁর প্রথম বিয়েই ছিল ৪০ বছরের বিধবা বিবি খাদিজার সঙ্গে এবং তিনি বিবি খাদিজার (রা.) মৃত্যুর আগে দ্বিতীয় বিবাহ করেননি।

‘ছয় বছর-নয় বছর’:

• মনে রাখতে হবে ১০০ বছর আগেও যেখানে কেউ দিন-ক্ষণ-বছরের দলিল রাখত না, সেখানে আমরা এক হাজার ৪০০ বছর আগের কথা বলছি। অতীতে অনেক দেশে (এমনকি বর্তমানেও কিছু অনুন্নত এলাকায়) সময় এবং বয়স মনে রাখার কোনো বৈজ্ঞানিক প্রথা চালু ছিল না। তখন তারা কোনো বিশেষ ঘটনার সাহায্যে, যেমন যুদ্ধ, খরা, অথবা অন্য কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভিত্তিতে বছর মনে রাখত। এমনকি ইতিহাসের পাতায় সভ্যতার শীর্ষে যে রোমান জাতি, তাদের মধ্যেও এই প্রথা চালু ছিল।

নবীর (সা.) জন্মের বছরে ইয়েমেনের রাজা আবরাহা তার হাতির বহর নিয়ে মক্কা আক্রমণ করে। তাই সেই বছরকে বোঝাতে মক্কার লোকেরা ‘হস্তীর বৎসর’ উল্লেখ করত। এই প্রথা স্মৃতির ওপর নির্ভরশীল, তাই বয়সের ও সময়ের হিসাবে অনিচ্ছাকৃত ভুল ইতিহাসে ধরা পড়ে। তারপরও, যে দলিলগুলো আমাদের হাতে আছে তার ভিত্তিতে কয়েকটা সংখ্যা দেখা যাক।

• রাসুল (সা.) নবুয়ত পেয়েছিলেন ৬১০ সালে;
• রাসুল (সা.) মদীনায় হিজরত করেছিলেন ৬২২ সালে;
• রাসুল (সা.) আয়েশাকে (রা.) ঘরে তুলেছিলেন ৬২২ সালে;
• বদর যুদ্ধ হয় ৬২৪ সালে এবং
• ওহুদ যুদ্ধ হয় ৬২৫ সালে।

অংক:

• ইবনে ওমর বলেন: “রাসুল (সা.) আমাকে (৬২৫ সালে) ওহুদ যুদ্ধে যোগ দিতে দেননি, কারণ তখন আমার বয়স ছিল ১৪। কিন্তু খন্দক যুদ্ধে আমি যোগ দিতে পেরেছিলাম, কারণ তখন আমার বয়স ১৫ ছিল।”

(বুখারি ৩-৮৩২ ও তফসির ইবনে কাথির ৪-২৮৬)

• ৬২৫ সালে বিবি আয়েশা (রা.) বদর যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। (বুখারি ৪-১৩১) কাজেই বিয়ের সময় ৬১৯ সালে তাঁর বয়স ছিল কমপক্ষে ৯ বছর এবং ৬২২ সালে ‘ঘরে তোলার’ সময় তাঁর বয়স অবশ্যই ১২ বছরের বেশি ছিল।

• ৬১৫ সালে পিতা হজরত আবু বকর (রা.) এক লোকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক করেছিলেন। কন্যাশিশুর বিয়ে প্রস্তাব করা কোনো পিতার পক্ষে সম্ভব হলেও ব্যতিক্রম মাত্র। তাই ৬১৫ সালে তিনি প্রাপ্তবয়স্কা ছিলেন সে সম্ভাবনাই বেশি। সে হিসাবে চার বছর পর রাসুলের (সা.) সঙ্গে ৬১৯ সালে বিয়ের সময় তাঁর প্রাপ্তবয়স্কা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

• ৬১২ সালের দিকে কোরআনের ৫৪তম অধ্যায় সুরা ক্বামার নাজিলকালে বিবি আয়েশা (রা.) একজন কিশোরী (জারিয়াহ) ছিলেন এবং তিনি আয়াত মুখস্থ বলতে পারতেন। (বুখারি ৬-৫১৫) সে হিসাবে তাঁর বয়স তখন ছয়ের বেশি হওয়াই সম্ভব এবং ৬২২ সালে ‘ঘরে তোলার’ সময় তাঁর বয়স অন্তত ১৬ বছর।

• ইবনে হিশাম/ইসহাকের বিখ্যাত ‘সিরাত’ কেতাবে আমরা দেখি তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন ৬১০ সালে। ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য ভালো-মন্দ বোঝার কিছুটা ক্ষমতা থাকবে বলেই আশা করা যায়। ৬১০ সালে যদি তাঁর বয়স তিন বছরও (খুব সম্ভব তার চেয়ে বেশি) হয়ে থাকে, তবে ৬২২ সালে ‘ঘরে তোলার’ সময় তাঁর বয়স অন্তত ১৫ বছর।

• ১৪০০ বছর আগে নয় বছরের বালিকার বিয়ে স্বাভাবিক ধরা হত। তখনকার সামাজিক ব্যবস্থা, জীবনযাপন প্রণালী, প্রাকৃতিক অবস্থা এবং রূঢ় আবহাওয়া এর কারণ হতে পারে। বাইবেলেও এর ইঙ্গিত আমরা পাই। ইসলামের শত্রুপক্ষের লোকেরা রাসুলের (সা.) অনেক সমালোচনা করেছে, কিন্তু এ বিষয়ে কখনও কোনো কটু মন্তব্য করেনি।

• ৬১৫ সালে হজরত আবু বকর (রা.) মুত’আমের পুত্রের সঙ্গে আয়েশার (রা.) বিবাহের চিন্তা করেছিলেন। মুত’আম তার পুত্রের এই বিবাহে রাজি হয়নি, কারণ তখন হজরত আবু বকর (রা.) ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তখন অবশ্যই বিবি আয়েশার (রা.) বয়স দুইও হয়ে থাকে সেই হিসাবে ৬২২ সালে তাঁর বয়স অবশ্যই নয়ের বেশি ছিল।

• হজরত আবু বকরের (রা.) চার সন্তানেরই জন্ম হয়েছিল আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে, যখন ইসলাম প্রচার শুরু হয়নি। এই যুগের পরিসমাপ্তি হয় ৬১০ সালে। সেই সূত্রে ৬২২ সালে বিবি আয়েশার (রা.) বয়স ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ছিল।

• বিবি ফাতেমা (রা.) বিবি আয়েশার (রা.) পাঁচ বছরের বড় ছিলেন। মুহাম্মদের (সা.) বয়স যখন ৩৫ বৎসর তখন ফাতেমার (রা.) জন্ম হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী বিবি আয়েশা (রা.) রাসুলাল্লার (সা.) চেয়ে ৪০ বছরের ছোট ছিলেন, অর্থাৎ বিয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ১২।

• দলিল আরও অনেক আছে, যা কখনও পরস্পরবিরোধী, তাই তা থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন।

কোরান:

“এতিমদের প্রতি বিশেষ নজর রাখবে যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে। যদি তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার, তবে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পন করতে পার।” (সুরা নিসা আয়াত ৬)

কী মনে হয়? “যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের বয়সে পৌঁছে….তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ আঁচ করতে পার”— এর অর্থ বিয়ের একটা বয়স আছে সেটা তখনই হবে যখন তাদের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনার উন্মেষ হবে। কথাটা নাবালিকাদের ক্ষেত্রে খাটে না, বাল্যবিবাহ ওখানেই সুস্পষ্ট ভাষায় নাকচ করেছে কোরান।

বাস্তবতা:

যারা বাল্যবিবাহ সমর্থন করেন, তারা কি ওই কচি মেয়েটার মুখের দিলে তাকিয়েছেন একবার? বিশ-পঁচিশ বছরের তরুণের দেহে দুর্দান্ত খেলা করে প্রচণ্ড যৌবন, আর ওদিকে ওই বাচ্চা মেয়েটার না শরীর তৈরি, না মন। সেখানে প্রতিদিন ওই বাচ্চাটাকে কি দোজখের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তার শরীরের ওপর কি মর্মান্তিক অত্যাচার হয়, তা কি বাল্যবিবাহ সমর্থনকারীরা ভেবেছেন একবারও?

অন্ধের মতো হাদিস অনুসরণ করার উদগ্র বাসনা এভাবেই জীবন ধ্বংস করে, ইসলামেরও বদনাম হয়। তার ওপর আছে ওই কচি শরীরে সময়ের আগেই মাতৃত্বের চাপ।

২১২৪

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭