সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

নির্দিষ্ট দিনে মসজিদে তালিমী জলসা কি বিদআত?
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ১৫/০২/২০১৮

প্রশ্নঃ

আমার মহল্লার এক মসজিদে প্রতি বৃহস্পতিবার কিছু লোক তালিমি জলসা / জিকিরের হালকা করে এ বিষয় এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে বলেছে যে, রাসূল (স) থেকে মুসলিম শরীফে একটি হাদীস আছে, যাতে বলা হয়েছে-

“জুমআর রাতে তথা বৃহস্পতি ও শুক্রবারের মাঝের রাতকে ইবাদতের জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন।” {সহীহ মুসলিম}

সুতরাং আপনার কাছে প্রশ্ন-

১- প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে সবাই মসজিদে কেন একত্র হয়?

২- রাসূল (স) এর নির্দেশের বিরুদ্ধে লোকদের দাঁড় করানো হচ্ছে না?

৩- তারা তো বলে বেড়ায় যে, তারা লোকদের নবীজী সাঃ এর আনুগত্বের দিকে আহবান করে, রাসূল সাঃ এর নির্দেশ অমান্য করার নাম কি তাঁর আনুগত্বের দিকে আহবান?

৪- আপনিই বলুন, কর্মপদ্ধতিটি কি সঠিক?

উত্তরঃ

بسم الله الرحمن الرحيم

রাসূল সাঃ এর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে,

عَنْ عَلِيِّ بْنِ حُسَيْنٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ الْمَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ

অনুবাদ- হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল (স) ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ইসলামের সৌন্দর্যের মাঝে এটিও একটি যে, অযথা বিষয়কে উপেক্ষা করা।

{সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৩৯৭৬, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৩১৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৩৭}

কিন্তু যেহেতু এমন অহেতুক বিষয় নিয়েও মুসলিম জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্ত ছড়ানো হচ্ছে । তাই বাধ্য হয়ে এর জবাব লিখছি। আসলে চূড়ান্ত অজ্ঞতা আর মূর্খতার দরূন এমন প্রশ্ন উদিত হয়েছে ভাইটির মনে। আসুন আমরা আগে হাদীসটি দেখে নেই-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَا تَخْتَصُّوا لَيْلَةَ الْجُمُعَةِ بِقِيَامٍ مِنْ بَيْنِ اللَّيَالِي، وَلَا تَخُصُّوا يَوْمَ الْجُمُعَةِ بِصِيَامٍ مِنْ بَيْنِ الْأَيَّامِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي صَوْمٍ يَصُومُهُ أَحَدُكُمْ»

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, 

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, রাতসমূহের মাঝে তোমরা জুমআর রাতকে নামাযের জন্য বিশেষভাবে খাস করো না। আর দিনসমূহের মাঝে জুমআর দিনকে রোযা রাখার জন্য বিশেষভাবে খাস করো না। তবে যদি তোমাদের রোযা রাখার মাঝে এদিন এসে যায়, তাহলে ভিন্ন কথা। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১১৪৪}

স্রেফ অনুবাদের দিকে খেয়াল করলেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতকে রাসূল (স) বিশেষভাবে নামায পড়ার জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন। আর পরদিন তথা জুমআর দিনকে বিশেষভাবে রোজার জন্য খাস করতে নিষেধ করেছেন।

আর আমাদের কি জানা নেই যে! মসজিদে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সবাই একত্র হয় বেশি বেশি করে নামায পড়ার জন্য? বা পরদিন রোযা রাখার জন্য? না দ্বীনী কথা শুনে দ্বীনী বিষয় শিখে দ্বীন পালনের জজবা আনয়নের জন্য?

একথা তালিম সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন যে, নির্দিষ্ট রাতে তারা মসজিদে একত্র হন, দ্বীনী বয়ান শুনে দ্বীনী বিষয় শিখে নিজের ঈমানকে তাজা করার জন্য একত্র হন। বেশি বেশি করে সে রাতে ইবাদত করা পরদিন রোযা রাখা ইত্যাদি উদ্দেশ্য হয় না। তাহলে মুসলিম শরীফের উল্লেখিত হাদীস তালিমের বিরুদ্ধে দলীল হল কিভাবে? এটাতো পুরোপুরোই হাদীস সম্পর্কে অজ্ঞতাসূচক মনোভাব ছাড়া আর কিছুই নয়। পক্ষান্তরে বৃহস্পতিবারে দ্বীন বয়ান, দ্বীনী মুযাকারা ও দ্বীনী কথা শুনার জন্য মসজিদে একত্রি হওয়ার বর্ণনা রাসূল (স) এর নিকটতম সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) থেকে প্রমাণিত। হাদীসে এসেছে-

عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: كَانَ عَبْدُ اللَّهِ يُذَكِّرُ النَّاسَ فِي كُلِّ خَمِيسٍ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ لَوَدِدْتُ أَنَّكَ ذَكَّرْتَنَا كُلَّ يَوْمٍ؟ قَالَ: أَمَا إِنَّهُ يَمْنَعُنِي مِنْ ذَلِكَ أَنِّي أَكْرَهُ أَنْ أُمِلَّكُمْ، وَإِنِّي أَتَخَوَّلُكُمْ بِالْمَوْعِظَةِ، كَمَا كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَخَوَّلُنَا بِهَا، مَخَافَةَ السَّآمَةِ عَلَيْنَا “

হযরত ওয়াইল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনে মাসউদ (রা) প্রতি বৃহস্পতিবার লোকদের ওয়াজ নসীহত করতেন। তাঁকে একজন বলল, হে আবূ আব্দুর রহমান! আমার মন চায়, যেন আপনি প্রতিদিন আমাদের নসীহ করেন। তিনি বললেন, এ কাজ থেকে আমাকে যা বিরত রাখে তা হল, আমি তোমাদের ক্লান্ত করতে পছন্দ করি না। আর আমি নসীহত করার ব্যাপারে তোমাদের [অবস্থার] প্রতি লক্ষ্য রাখি, যেমন রাসূল (স) আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন আমাদের ক্লান্তির আশংকায়। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭০}

ইমাম বুখারী (রহ) যে পরিচ্ছেদে এ হাদীস এনেছেন, তার শিরোনাম দিয়েছেন-

بَابُ مَنْ جَعَلَ لِأَهْلِ العِلْمِ أَيَّامًا مَعْلُومَةً তথা ইলম শিক্ষার্থীর জন্য দিন নির্দিষ্ট করা। বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, بعض النصوص المبينة والضابطة لحكم توقيت الوعظ، তথা কতিপয় সুষ্পষ্ট ইবারত ও মূলনীতি ওয়াজ-নসীহতের জন্য সময় নির্ধারণের নির্দেশ দেয়। {ফাতহুল বারী}

উল্লেখিত হাদীস এবং ইবনে হাজার আসকালানী (রহ) এর ব্যাখ্যা দ্বারা একথা সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত হল যে, ওয়াজ-নসীহতের জন্য সময় নির্ধারণ করা এটি শরীয়ত সম্মত। এবং খোদ সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা) নিজেই প্রতি বৃৃহস্পতিবার ওয়াজ ও নসীহত করতেন।

তাহলে তালিমী জলসার বয়ান ও নসীহতের জন্য একত্র হওয়া কিভাবে বিদআত হয়?

আল্লাহ তায়ালা আমাদের মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমীন!

والله اعلم بالصواب

৪৫৬

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭