সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

কোরআন হাদিসের আলোকে "" রোজা নস্ট ও মাক্রুহ "" হওয়ার কারণ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : সোমবার ২৮/০৫/২০১৮

সিয়াম বা রোজা ভংগের কারনসমূহ
••••••••••••••••••••••••••••••••••••

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ তা‘আলা সর্বোচ্চ হিকমাহ’র আলোকে শারী‘আতে সাওম পালনের বিধান রেখেছেন।

তিনি সাওম পালনকারীকে এমন মধ্যম পন্থায় সাওম পালন করতে বলেছেন; যাতে সে সিয়াম পালনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় আবার এমন কিছুও গ্রহণ না করে যা সিয়ামের বিপরীত।

তাই সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ দু ধরণের :

(এক.) কিছু সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় রয়েছে যা শরীর থেকে নির্গত হয় এমন ধরণের যেমন-যৌন মিলন, ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা, মাসিক ঋতুস্রাব, শিঙ্গা ইত্যাদি ক্ষেত্রে যা শরীর থেকে বের হয় ও তা শরীরকে দুর্বল করে দেয়। তাই আল্লাহ তা‘আলা এগুলোকে সিয়াম বিনষ্টকারী বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন; যাতে করে সাওম পালনের দুর্বলতা এসব বস্তু নির্গত হওয়ার কারণে সৃষ্ট দুর্বলতার সাথে যোগ হওয়ার ফলশ্রুতিতে একজন সাওম পালনকারী ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; ফলে সাওম তার স্বাভাবিক মধ্যম পন্থার সীমারেখা অতিক্রম করে।

(দুই.) কিছু সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় রয়েছে যা (শরীরে) প্রবেশ করে এমন ধরণের যেমন-খাওয়া, পান করা ইত্যাদি। একজন সাওম পালনকারী যদি কিছু খায় বা পান করে, তবে সিয়াম পালনের মাধ্যমে উদ্দিষ্ট হিকমাহ অর্জিত হয় না। [মাজমূ‘উল ফাত্‌ওয়া (২৫/২৪৮)]

আর আল্লাহ তা‘আলা মূল সিয়াম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহকে একসাথে উল্লেখ করেছেন তাঁর এই বাণীতে :

﴿فَٱلۡـَٰٔنَ بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبۡتَغُواْ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَ ٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ﴾ [البقرة: ١٨٧]

সুতরাং এখন (রমযানের রাতে) তোমরা তাদের (তোমাদের স্ত্রীদের) সাথে মিলন কর, আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন তার খোঁজ কর, আর খাও ও পান কর যতক্ষণ পর্যন্ত না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত (যার প্রারম্ভ সূর্য) পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর।” [আল-বাকারাহ: ১৮৭]

আল্লাহ তা‘আলা এই সম্মানিত আয়াতে মূল সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ উল্লেখ করেছেন। আর তা হল-(১) খাওয়া (২) পান করা ও (৩) যৌন মিলন।

আর সিয়াম বিনষ্টকারী যাবতীয় বিষয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুন্নাহতে ব্যাখ্যা করেছেন।

সিয়াম বিনষ্টকারী বিষয়সমূহ সাতটি, আর তা হল :

১. যৌন মিলন
২. ইসতিমনা’ (নিজস্ব ক্রিয়া/হস্তমৈথুন)
৩. খাওয়া ও পান করা
৪. যা খাওয়া ও পান করার অর্থে পড়ে
৫. হিজামাহ বা শিঙ্গা ইত্যাদির মাধ্যমে রক্ত বের করা
৬. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা
৭. একজন নারীর (শরীর) থেকে হায়েয (মাসিক) ও নিফাস (প্রসব পরবর্তী রক্তপাত) –এর রক্ত বের হওয়া।

(এক.) সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের প্রথমটি হল : যৌন মিলন

এটি সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের মাঝে সবচেয়ে মারাত্মক ও সবচেয়ে গুনাহের যোগ্য।
যে রমযান মাসে দিনের বেলা ইচ্ছাকৃতভাবে যৌন মিলন করে, যাতে করে দুই (পুরুষ ও নারীর) খিতান (খাতনা করা স্থানসমূহ) একত্রিত হয় এবং দুই গুপ্তাঙ্গের যে কোন একটির হাইমেন লুপ্ত হয় (পড়ে যায়), তবে সে তার সাওম নষ্ট করল, বীর্যপাত ঘটাক বা নাই ঘটাক, এক্ষেত্রে

(১) তার তাওবাহ করতে হবে
(২) সেদিনের বাকি অংশ ( সাওম রেখে) পূর্ণ করতে হবে
(৩) সেদিনের সাওম কাযা করতে হবে
(৪) বড় কাফফারাহ আদায় করতে হবে।

এর প্রমাণ হচ্ছে, আবূ হুরাইরাহ -রাদিয়াল্লাহু আনহু- থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেছেন :

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : هَلَكْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ: وَمَا أَهْلَكَكَ ؟ قَالَ : وَقَعْتُ عَلَى امْرَأَتِي فِي رَمَضَانَ . قَالَ : هَلْ تَجِدُ مَا تُعْتِقُ رَقَبَةً ؟ قَالَ : لا . قَالَ : فَهَلْ تَسْتَطِيعُ أَنْ تَصُومَ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ ؟ قَالَ : لا . قَالَ : فَهَلْ تَجِدُ مَا تُطْعِمُ سِتِّينَ مِسْكِينًا ؟ قَالَ : لا .. . الحديث رواه البخاري (1936) ومسلم (1111)

এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বললেন, ‘আমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছি হে রাসূলুল্লাহ! তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন, ‘আর কিসে আপনাকে ধ্বংস করল? সে ব্যক্তি বললেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর সাথে রমযানে (দিনের বেলা যৌন) মিলন করেছি।’ তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন, ‘আপনি কি একজন দাস মুক্ত করতে পারেন?’ তিনি (সে ব্যক্তি) বললেন, ‘না’। তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন, ‘তবে কি আপনি একাধারে দুই মাস সাওম পালন করতে পারেন?’ তিনি (সে ব্যক্তি) বললেন, ‘না’। তিনি (রাসূলুল্লাহ) বললেন, ‘তবে কি আপনার কিছু আছে যা দিয়ে ষাটজন মিসকীন খাওয়াতে পারেন?’ তিনি (সে ব্যক্তি) বললেন, ‘না’।........ [বুখারী (১৯৩৬) ও মুসলিম (১১১১)]

যৌন মিলন ছাড়া অন্য কোনো সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়ের ক্ষেত্রে কাফফারাহ ওয়াজিব হয় না।

(দুই.) সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের দ্বিতীয়টি হল-নিজস্ব ক্রিয়া বা হস্তমৈথুন। আর তা হল হাত বা ইত্যাদি দিয়ে বীর্য বের করা। হস্তমৈথুন যে সিয়াম ভঙ্গকারী তার দলীল হচ্ছে, হাদীসে কুদসীতে সাওম পালনকারী সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

«يَتْرُكُ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي» رواه البخاري (1894) ومسلم (1151) .

যে তার খাবার, পানীয় ও কামনা বাসনা আমার জন্য ত্যাগ করে” [বুখারী (১৮৯৪) ও মুসলিম (১১৫১)]
আর বীর্য নির্গত করা কামনা বাসনার মাঝে পড়ে যা একজন সাওম পালনকারীকে পরিত্যাগ করতে হবে।

যে রমযান মাসের দিনের বেলা হস্তমৈথুন করে, তার উপর ওয়াজিব হল
(১) আল্লাহর কাছে তাওবা করা,
(২) দিনের বাকি অংশ সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকা এবং
(৩) সেদিনের সাওমের কাযা করা।

যদি সে হস্তমৈথুন শুরু করে থেমে যায় এবং বীর্যপাত না ঘটায়, তবে তাকে তাওবাহ করতে হবে, আর তার সাওম শুদ্ধ হবে, বীর্যপাত না ঘটানোর জন্য তাকে সাওম কাযা করতে হবে না। একজন সাওম পালনকারী কামভাব উদ্রেককারী সকল বিষয় থেকে দূরে থাকা উচিৎ এবং খারাপ চিন্তা-ভাবনা রোধ করা উচিৎ।

আর মাযী এর ক্ষেত্রে শক্তিশালী মতটি হল এতে সাওম ভঙ্গ হয় না।

(তিন.) সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের তৃতীয়টি হল খাওয়া ও পান করা, আর তা হল মুখের মাধ্যমে খাদ্য ও পানীয় পাকস্থলীতে পৌঁছানো। একইভাবে যদি নাক দিয়ে পাকস্থলীতে কোনো কিছু প্রবেশ করানো হয় তবে তা খাওয়া ও পান করারই সমতূল্য।

তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

«وَبَالِغْ فِي الاسْتِنْشَاقِ إِلا أَنْ تَكُونَ صَائِمًا » رواه الترمذي (788) . وصححه الألباني في صحيح الترمذي ( 631 )

ওযুর সময় নাকে পানি গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করাও যদি না তুমি সাওম পালনকারী হও।” [তিরমিযী (৭৮৮) আলবানী ‘সহীহ আত-তিরমিযী’(৬৩১) গ্রন্থে একে সহীহ বলেছেন]

যদি নাকের মাধ্যমে পানি পাকস্থলীতে প্রবেশ করা সাওমের উপর প্রভাব না ফেলত, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকে ওযুর সময় গভীরভাবে পানি প্রবেশ করাতে নিষেধ করতেন না।

(চার.) সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের চতুর্থটি হল, যা খাওয়া ও পান করার অর্থে পড়ে। আর এর মাঝে দুটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত :

ক) সাওম পালনকারীর শরীরে ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত প্রবেশ করানো, যেমন, সে যদি রক্তপাতের শিকার হয় তবে ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্ত প্রবিষ্ট করা হলে তার সাওম ভেঙ্গে যাবে; কারণ খাদ্য ও পানীয়ের দ্বারা খাবার গ্রহণেল সর্বশেষ অবস্থা হচ্ছে রক্ত তৈরী হওয়া।

খ) খাদ্য ও পানীয়ের স্থলাভিষিক্ত হয় এমন খাবার জাতীয় ইনজেকশন; কারণ তা খাদ্য ও পানীয়ের অন্তর্ভুক্ত।

[আশ-শাইখ ইবনু ‘উসাইমীনের ‘মাজালিস শাহর রমযান’ এ (পৃ. ৭০) ]

তবে যেসব ইনজেকশন যা খাদ্য ও পানীয়ের বদলে ব্যবহৃত হয় না, তবে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যেমন –পেনসিলিন, ইনসুলিন ইত্যাদি অথবা শরীরকে তৎপর করার জন্য বা ভ্যাকসিনের জন্য পেশীর মাধ্যমে যে ইনজেকশন দেওয়া হয়, তা সিয়ামের ক্ষতি করে না। [ফাত্‌ওয়া মুহাম্মাদ ইবন ইবরাহীম (৪/১৮৯)]

তবে বেশি সাবধানতা হল এসব রাতের বেলা হওয়া।

আর কিডনী ডায়ালাইসিস, যার জন্য তা পরিষ্কার করতে রক্ত বের করে তা কেমিক্যাল পদার্থ, পুষ্টি দানকারী উপাদান যেমন – চিনি, লবণ ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে আবারো তাতে (কিডনীতে) প্রবেশ করানো হয়, তা সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় বলে গণ্য হবে।

[ফাত্‌ওয়া আল-লাজ্‌নাহ আদ-দা’ইমাহ (১০/১৯)]

(পাঁচ.) সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয়সমূহের পঞ্চমটি হল- শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করা।

এর দলীল হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী :

«أَفْطَرَ الْحَاجِمُ وَالْمَحْجُومُ» رواه أبو داود (2367) وصححه الألباني في صحيح أبي داود (2047)

হাজিম বা শিঙ্গা প্রদানকারী (যে রক্ত বের করে) এবং মাহজূম বা শিঙ্গা গ্রহণকারী (যার রক্ত বের করা হয়) উভয়ই সাওম ভঙ্গ করল।” [আবূ দাঊদ (২৩৬৭) এবং আল-আলবানী ‘সহীহ আবী দাঊদ’ এ (২০৪৭) একে সহীহ বলেছেন]

আর রক্ত দান করা, হিজামাহ বা শিঙ্গার মাধ্যমে রক্ত বের করার অর্থে পড়ে; কারণ তা শিঙ্গার মতই শরীরের উপর প্রভাব ফেলে।

আর তাই একজন সাওম পালনকারীর রক্ত দান করা জায়েয নয়; যদি না একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়ে, একান্ত প্রয়োজন হলে তার জন্য রক্ত দান করা জায়েয। এক্ষেত্রে রক্ত দানকারীর সাওম ভঙ্গ হয় এবং তাকে সে দিনের কাযা করতে হবে।

[ইবনু ‘উসাইমীনের ‘মাজালিস শাহর রমযান’ (পৃঃ৭১)]

আর যার রক্তপাত হয়েছে, তার সিয়াম শুদ্ধ হবে কারণ সে তা ইচ্ছাকৃতভাবে করে নি। [ফাত্‌ওয়া আল-লাজ্‌নাহ আদ-দায়েমাহ (১০/২৬৪)]

আর দাঁত তোলা বা ক্ষতস্থান ড্রেসিং বা রক্ত পরীক্ষা ইত্যাদির জন্য রক্ত বের হলে তা সাওম ভঙ্গ করে না; কারণ তা হিজামাহ বা শিঙ্গা লাগানো নয়, এর অর্থেও পড়ে না। কারণ তা হিজামাহ বা শিঙ্গা লাগানোর ন্যায় শরীরের উপর প্রভাব ফেলে না।

(ছয়.) ষষ্ঠ সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা। এর দলীল হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী :

«مَنْ ذَرَعَهُ الْقَيْءُ فَلَيْسَ عَلَيْهِ قَضَاءٌ ، وَمَنْ اسْتَقَاءَ عَمْدًا فَلْيَقْضِ». رواه الترمذي (720) صححه الألباني في صحيح الترمذي (577)

যার অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি আসে, তাকে কাযা করতে হবে না; আর যে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, সে যাতে কাযা করে।”

[আত-তিরমিযী (৭২০) এবং আল-আলবানী ‘সহীহ আত তিরমিযী’-(৫৭৭) তে একে সহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন ]

আর ইবনুল মুনযির বলেছেন :

“‘আলিমগণের মাঝে এ ব্যাপারে ইজমা‘ (ঐকমত্য) রয়েছে যে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা সাওম বাতিল করে।” [আল-মুগনী (৪/৩৬৮)]

সুতরাং যে মুখে আঙ্গুল দিয়ে বা পেট চেপে বা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন দুর্গন্ধ শুঁকে বা বমি আসে এমন কিছুর দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করল, তাকে কাযা করতে হবে।

যদি তার পাকস্থলী ফেঁপে বমি আসে তবে তার বমি রোধ করা বাধ্যতামূলক নয় কারণ তা তার ক্ষতির কারণ হবে।

[ ইবন ‘উসাইমীনের ‘মাজালিস শাহর রমযান’ (পৃঃ৭১)]

(সাত.) সপ্তম সিয়াম ভঙ্গকারী বিষয় হল: হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) ও নিফাস (প্রসব পরবর্তী রক্তপাত) –এর রক্ত বের হওয়া। এর দলীল হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী :

«أَلَيْسَ إِذَا حَاضَتْ لَمْ تُصَلِّ وَلَمْ تَصُمْ» . رواه البخاري (304)

একজন নারীর হায়েয (মাসিক) হলে সে কি সালাত ও সাওম ত্যাগ করে না?” [বুখারী (৩০৪)]

তাই যখনই কোনো নারী হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) বা নিফাস (প্রসব পরবর্তী রক্তপাত) –এর রক্ত দেখে, তখনই তার সাওম ফাসিদ (বিনষ্ট) হয়ে যায়, তা সূর্যাস্তের এক মুহূর্ত আগেও হোক না কেন।

যদি কোনো নারী হায়েযের (মাসিক ঋতুস্রাব) রক্ত চলাচল অনুভব করে আর তা সূর্যাস্ত পর্যন্ত বের না হয়, তবে তার সাওম শুদ্ধ হবে এবং তার সেদিনের জন্য যথেষ্ট হবে।

একজন হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব ওয়ালী) বা নুফাসা (প্রসব পরবর্তী রক্তপাত ওয়ালী) নারীর যদি রাতে রক্ত পড়া বন্ধ হয় ও সে সিয়াম পালনের নিয়্যাত করে এবং তার গোসল করার আগেই সূর্য উদিত হয়, তবে সকল ‘আলেম’ এর মতেই তার সে সাওম শুদ্ধ হবে। [আল-ফাতহ (৪/১৪৮)]

একজন হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব ওয়ালী) নারীর জন্য উত্তম হল তার স্বভাবজাত প্রকৃতির উপর থাকা, আল্লাহ তার জন্য যা লিখে রেখেছেন তার উপর সন্তুষ্ট থাকা, রক্ত বন্ধ করে এমন কিছু গ্রহণ না করা এবং হায়েয তথা হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) এর সময় সাওম ভঙ্গ করা ও পরে তা কাযা করার যে বিধান আল্লাহ তার জন্য প্রদান করেছেন, তা গ্রহণ করা। এমনই ছিলেন উম্মুল মুমিনীনগণ, পরবর্তী সাহাবী ও তাবি‘ঈগণের নারীরা।

[ফাত্‌ওয়া আল-লাজ্‌নাহ আদ-দা’ইমাহ (১০/১৫১)]

এছাড়া উল্লেখযোগ্য যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে রক্তপাত রোধকারী উপাদান সমূহের বহুমুখী ক্ষতি প্রমাণিত হয়েছে এবং অসংখ্য নারী এর ফলশ্রুতিতে অনিয়মিত হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) হওয়া জনিত বিপদের শিকার হয়েছে। তবে কোনো নারী যদি তা করে ও এমন কিছু গ্রহণ করে যা তার রক্তপাত বন্ধ করে এবং পবিত্র অবস্থায় সাওম পালন করে, তবে তার সেদিনের সাওম যথেষ্ট (শুদ্ধ) হবে।

এগুলো হল সাওম ফাসিদকারী (বিনষ্টকারী) বিষয়সমূহ। এগুলোর কারণে - হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) ও নিফাস (প্রসব পরবর্তী রক্তপাত) ব্যতীত - একজন সাওম পালনকারীর সাওম ভঙ্গ হয় না যদি না তার মাঝে তিনটি শর্ত পাওয়া যায় :

(১) সে যদি এ ব্যাপারে জেনে থাকে অর্থাৎ অজ্ঞ না হয়।
(২) তার যদি এ ব্যাপারে স্মরণ থাকে অর্থাৎ ভুলে না যায়।
(৩) সে যদি এ ব্যাপার ইচ্ছাকৃতভাবে করে অর্থাৎ বাধ্য হয়ে না করে।

আর আমাদের আরও জানা উচিৎ কিছু বিষয় যা সাওম ভঙ্গ করে না:

১। এনেমাস, চোখের ড্রপ, কানের ড্রপ, দাঁত তোলা, ক্ষতস্থান ড্রেসিং করা এসব সাওম ভঙ্গ করে না। [মাজমূ ফাত্‌ওয়া শাইখুল-ইসলাম (২৫/২৩৩), (২৫/২৪৫)]

২।এজমা (শ্বাসকষ্ট) চিকিৎসায় যে ঔষধ জাতীয় ট্যাবলেট বা এ জাতীয় বস্তু জিভের নিচে রাখা হয় তা সাওম ভঙ্গ করে না; যদি না গিলে ফেলা হয়।

৩। ভ্যাজাইনাতে সাপোসিটরী, লোশন, দুরবিক্ষণ যন্ত্র, ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য যে আঙ্গুল প্রবেশ করানো হয়, তা সাওম ভঙ্গ করে না।

৪। মাতৃগর্ভে স্পেকুলাম ইত্যাদি প্রবেশ করানো বা আই.ইউ.ডি (I.U.D) সাওম ভঙ্গ করে না।

৫।পুরুষ ও নারীর ইউরিনারী ট্র্যাক্টে যে ক্যাথেটার, স্কোপ বা অপাকিউ ডাই প্রবেশ করানো হয়, এক্স-রে এর জন্য এবং ব্লাডার ধৌতকরণে যে ঔষধ বা মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়, তা সাওম ভঙ্গ করে না।

৬। দাঁত ফিলিং, উঠানো, পরিষ্কার করা বা মিসওয়াক, টুথব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজা সাওম ভঙ্গ করে না যদি না গলায় পৌঁছে এমন কিছু গিলে ফেলা হয়।

৭। কুলি করা, গরগরা করা, চিকিৎসার্থে মুখ দিয়ে স্প্রে গ্রহণ সাওম ভঙ্গ করে না, যদি না গলায় পৌঁছে এমন কিছু গিলে ফেলা হয়।

৮। অক্সিজেন বা এনেসথেসিয়ার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস সাওম ভঙ্গ করে না যদি না রোগীকে পুষ্টি দানকারী তরল দেয়া হয়।

৯। ক্রিম, মলম বা চিকিৎসার্থে চামড়ায় ব্যবহৃত প্লাস্টার যাতে ওষুধ বা কেমিক্যাল পদার্থ থাকে ইত্যাদির কোন কিছু শরীরের চামড়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হলে, তা সাওম ভঙ্গ করে না।

১০। শিরায়, হার্টের কোনো অংশে বা অন্য কোনো অঙ্গে চিকিৎসার্থে ডায়গোনোস্টিক ছবি নেওয়ার জন্য ক্যাথেটার (চিকন টিউব) প্রবেশ করানো হলে, তা সাওম ভঙ্গ করে না।

১১। পেটের প্রাচীর দিয়ে ইনটেসটাইন পরীক্ষার বা সার্জিকাল অপারেশন পরিচালনার জন্য স্কোপ প্রবেশ করানো হলে তা সাওম ভঙ্গ করে না।

১২। লিভারের বা অন্য কোনো অঙ্গের বায়োপসি করা যদি কোনো রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত তরলের সাথে না হয় তবে তা সাওম ভঙ্গ করে না।

১৩। এন্ডোসকপি করা হলে এর সাথে যদি কোন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রিত তরল প্রবেশ করানো না হয় তবে তা সাওম ভঙ্গ করে না।

১৪। ব্রেইন বা স্পাইনাল কার্ড এ কোনো ইন্সট্রুমেন্ট বা ওষুধ জাতীয় পদার্থ প্রবেশ করানো হয় তবে তা সাওম ভঙ্গ করে না

 

 

 

 

 

যেসব কারণে সওম মাকরূহ হয়ে যায় .

সিয়াম অবস্থায় নিম্ন বর্ণিত যে কোন কাজ করলে সিয়াম মাকরূহ হয়ে যায় :

(১) অযুর সময় গড়গড়া করে কুলি করা, জোড় দিয়ে নাকে পানি টানা। এতে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যায়।

(২) বিনা প্রয়োজনে খাদ্যের স্বাদ দেখা। তবে প্রয়োজন হলে দেখতে পারে।

(৩) থুথু কফ মুখে জমিয়ে গিলে ফেলা। অল্প অল্প থুথু গিলে ফেললে কোন অসুবিধা নেই।

(৪) যৌন অনুভূতি নিয়ে স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করা, বারবার তার দিকে তাকানো, বারবার সহবাসের কল্পনা করা। কারণ এসব কার্যক্রমে বীর্যপাত ঘটা বা সহবাসে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

৪৫৭

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭