সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা আল্লাহর নির্দেশ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : সোমবার ২৭/০৮/২০১৮

দীর্ঘ দিন সীমাহীন কষ্ট ও অবর্ণনীয় যাতনা সহ্য করে মা সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন। মায়ের পেটে সন্তান যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে তার কষ্টের মাত্রা ততই বাড়তে থাকে। মৃত্যুযন্ত্রনা পার হয়ে যখন সন্তান ভূমিষ্ট হয় তখন এ নবজাতককে ঘিরে মায়ের সব প্রত্যশা এবং স্বপ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে। এই নবজাতকের ভিতর সে দেখতে পায় জীবনের সব রূপ এবং সৌন্দর্য। যার ফলে দুনিয়ার প্রতি তার আগ্রহ এবং সম্পর্ক আরো গভীরতর হয়। পরম আদর-যত্নে সে শিশুর প্রতিপালনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নিজের শরীরের নির্যাস দিয়ে তার খাবারের ব্যবস্থা করে। নিজে কষ্ট করে তাকে সুখ দেয়। নিজে ক্ষুর্ধাত থেকে তাকে খাওয়ায়। নিজে নির্ঘুম রাত কাটায় সন্তানের ঘুমের জন্য। মা পরম আদর আর সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে সন্তানকে ঘিরে রাখে সর্বক্ষণ। সন্তান কোথাও গেলে আল্লাহর নিকট দুআ করে যেন তার সন্তান নিরাপদে ঘরে ফিরে আসে। সন্তানও যে কোন বিপদে ছুটে আসে মায়ের কোলে। পরম নির্ভরতায় ভরে থাকে তার বুক। যত বিপদই আসুক না কেন মা যদি বুকের সাথে চেপে ধরে কিংবা স্নেহ মাখা দৃষ্টিতে একবার তাকায় তাহলে সব কষ্ট যেন নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। এই হল মা।

আর পিতা? তাকে তো সন্তানের মুখে এক লোকমা আহার তুলে দেয়ার জন্য করতে হয় অক্লান্ত পরিশ্রম। মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। সহ্য করতে হয় কতধরণের কষ্ট এবং ক্লেশ। সন্তানের জন্যই তো তাকে কখনো কখনো কৃপনতা করতে হয়। কখনো বা ভীরুতার পরিচয় দিতে হয়। সন্তান কাছে গেলে হাসি মুখে তাকে বুকে টেনে নেয়। তার নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য সে যে কোন ধরণের বিপদের সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। ইত্যাদি কারণে আমাদের অস্তিতের প্রতিটি কোণা পিতা-মাতার নিকট ঋণী। আর তাই তো আল কুরআনে আল্লাহ তা’আলার ইবাদতের পরই পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণ করার কথা উচ্চারিত হয়েছে বার বার। ইরশাদ হচ্ছেঃ

وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاهُمَا فَلا تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلا تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيماً

❝তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলেও আদেরকে বিরক্তি সূচক কিছু বলো না। এবং তাদেরকে ভর্র্ৎসনা করো না; তাদের সাথে কথা বলো সম্মান সূচক নম্র কথা।❞ [সূরা বনী ইসরাঈলঃ ২৩]

আল কুরআনের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার, প্রখ্যাত সাহাবী অবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ আল কুরআনে এমন তিনটি আয়াত আছে যেখানে তিনটি জিনিস তিনটি জিনিসের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অন্যটি অগ্রহণযোগ্য। সে তিনটি আয়াত হলঃ

১) আল্লাহ তাআলা বলেন,

❝হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর তার রাসূলের। এবং (তাদের বিরুদ্ধাচারণ করে) নিজেদের আমল বিনষ্ট কর না।❞ [সূরা মুহাম্মাদ: ৩৩]

কেউ যদি আল্লাহর আনুগত্য করে কিন্তু রাসূলের আনুগত্য না করে তাহলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

২) আল্লাহ তায়ালা বলেন,

❝এবং তোমরা সালাত (নামায) আদায় কর এবং যাকাত দাও।❞ [সূরা বাক্বারাঃ ৪৩]

কেউ যদি নামায পড়ে কিন্তু যাকাত দিতে রাজী নয় তাহলে তাও আল্লাহর দরবারে গ্রহণীয় নয়।

৩) আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

❝আমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় কর।❞ [সূরা লোকমানঃ ১৪]

কেউ যদি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে কিন্তু পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় না করে তবে তা আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত।

সে কারণেই মহাগ্রন্থ আল কুরআনে একাধিকবার আল্লাহর আনুগত্যের নির্দেশের সাথে সাথে পিতা-মাতার আনুগত্য করার প্রতি নির্দেশ এসেছে। ধ্বনীত হয়েছে তাদের সাথে খারাপ আচরণ করার প্রতি কঠিন হুশিয়ারী। তা যে কোন কারণেই হোক না কেন। ইরশাদ হচ্ছেঃ

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَاناً

❝তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। এবং তার সাথে কাউকে শরীক কর না আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর।❞ [সূরা নিসাঃ ৩৬]

আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেনঃ

وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْناً

❝আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে।❞ [সূরা আনকাবূতঃ ৮]

তিনি আরও বলেনঃ

وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حَمَلَتْهُ أُمُّهُ وَهْناً عَلَى وَهْنٍ وَفِصَالُهُ فِي عَامَيْنِ أَنِ اشْكُرْ لِي وَلِوَالِدَيْكَ إِلَيَّ الْمَصِيرُ

❝আর আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে গর্ভে ধারণ করে এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই নিকট।❞ [সূরা লোকমানঃ ১৪]

উল্লেখিত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে পিতা-মাতার মর্যাদা এবং তাদের প্রতি সন্তানদের অধিকারের প্রমান বহন করছে।

প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস থেকেঃ নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস থেকেও এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়ঃ

 

১) পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টিঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

❝পিতা-মাতার সন্তুষ্টির উপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা-মাতার অসন্তষ্টির উপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি নির্ভর করছে।❞ (ত্ববারানী কাবীর-সহীহ)

২) ফিরে যাও, তাদের মুখে হাঁসি ফোটাওঃ আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত,

জনৈক সাহাবী নবী করীম (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বললেন, আমি আপনার কাছে এসেছি হিজরত করার জন্য শপথ করতে। আমি যখন আসি আমার পিতা-মাতা কাঁদছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ❝তাদের কাছে ফিরে যাও, এবং যেমন তাদেরকে কাঁদিয়েছিলে এখন তাদেরকে গিয়ে হাঁসাও।❞ (আবু দাউদ, নাসাঈ,ইবন মাজাহ-সহীহ) 

৩) তার পা ধর, ওখানেই তোমার জান্নাতঃ মুয়া’বিয়া ইবন জাহাম সুহামী নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বললেন, ❝যাও, তোমার আম্মার সেবা কর।❞ কিন্তু তিনি জিহাদে যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ জানাতে থাকলে তিনি বললেন, “হায় আফসোস! তোমার মার পা ধরে থাক। ওখানেই তোমার জান্নাত।❞ (মুসনাদ আহমাদও ইবন মাজাহ্)

৪) পিতার তুলনায় মার অধিকার তিনগুণ বেশীঃ সর্বাধিক হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত,

একলোক রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার উত্তম সংশ্রব পাওয়ার জন্য কে সবচেয়ে বেশী উপযুক্ত? তিনি বললেন, ❝তোমার মা❞। লোকটি আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, ❝তোমার মা❞। সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, ❝তোমার মা❞। সে আবার প্রশ্ন করল, তারপর কে? তিনি বললেন, ❝তোমার পিতা❞। (বুখারী-মুসলিম)

অত্র হাদীস প্রমাণ বহন করে, পিতার তুলনায় মা তিনগুণ সদাচারণ পাওয়ার অধিকারী। কারণ, গর্ভে ধারণ, ভুমিষ্ট ও দুগ্ধদানের ক্ষেত্রে কেবল মাকেই অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করতে হয়। পিতা কেবল সন্তান প্রতিপালনে স্ত্রীর সাথে অংশ গ্রহণ করে। এদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনঃ

وَوَصَّيْنَا الْأِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ إِحْسَاناً حَمَلَتْهُ أُمُّهُ كُرْهاً وَوَضَعَتْهُ كُرْهاً وَحَمْلُهُ وَفِصَالُهُ ثَلاثُونَ شَهْراً

❝আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দিয়েছি। তার জননী তাকে (সন্তানকে) গর্ভে ধারণ করেছে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করেছে কষ্টের সাথে। তাকে গর্ভে ধারতে ও তার স্তন ছাড়াতে সময় লাগে ত্রিশ মাস।❞ [আহক্বাফঃ ১৫]

৫) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের প্রতি আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন তাকাবেন নাঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ

তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ তা’আলা তাকাবেন না। তাদের মধ্যে একজন হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান। (সহীহ-নাসঈ, আহমাদ, হাকেম)

 

৬) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে নাঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেনঃ

তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তাদের মধ্যে একজন হল, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান। (সহীহ-নাসঈ, আহমাদ, হাকেম)

৭) তবুও অবাধ্যতা নয়ঃ মু’য়ায (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দিয়ে গেছেন। তা হলো, আল্লাহর সাথে শিরক করবে না যদিও তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে দেয়া হয় এবং আগুনে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়া হয়। এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না যদিও তারা তোমাকে তোমার পরিবার, এবং সম্পদ ছেড়ে চলে যেতে বলে…। (মুসনাদ আহমাদ)

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর মাঃ

পিতা-মাতার সাথে কিরূপ আচরণ করতে হবে সে ব্যাপারে ইতোপূর্বে প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর একাধিক হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। এখন দেখব নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার মা-জননীর প্রতি বাস্তব জীবনে আমাদের জন্য কী আদর্শ রেখে গেছেন।
 

সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, হুদায়বিয়া সন্ধির সময় প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের সাথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সাথে আছে এক হাযার ঘোড় সাওয়ার। মক্কা ও মদীনার মাঝে আবওয়া নামক স্থানে তাঁর প্রাণ প্রিয় মা-জননী চির নিদ্রায় শায়িত আছেন। সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি যাত্রা বিরতী করে তাঁর মা’র কবর যিয়ারত করতে গেলেন। কবরের কাছে গিয়ে তিনি কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। তার চর্তুদিকে দাঁড়িয়ে থাকা সাহাবীগণও কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি আল্লাহর দরবারে আমার মা’র জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চেয়েছিলাম কিন্তু অনুমতি দেয়া হয়নি। কিন্তু তার কবর যিয়ারতের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে তিনি তাতে অনুমতি দেন। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর। কারণ, কবর যিয়ারত করলে পরকালের কথা স্মরণ হয়।”(সহীহ মুসলিম)
 

ইবরাহীম (আঃ) এবং তার পিতা-মাতাঃ

ইবরাহীম (আঃ) এর পিতা-মাতা কাফের ছিল। তারপরও তিনি তাদের সাথে অত্যন- বিনয় ও ভদ্রতা সুলোভ আচরণ করতেন। তিনি তার পিতাকে শিরক পরিত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদত করার জন্য আহবান জানাচ্ছেনঃ

يَا أَبَتِ لِمَ تَعْبُدُ مَا لا يَسْمَعُ وَلا يُبْصِرُ وَلا يُغْنِي عَنْكَ شَيْئاً

আব্বাজান, আপনি কেন এমন জিনিসের ইবাদত করছেন যা শুনে না, দেখে না এবং আপনার কোন উপকারও করতে পারে না? কিন্তু সে তা শুধু প্রত্যাখ্যানই করল না বরং তাকে মেরে-পিটে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিল। তখন তিনি শুধু এতটুকুই বলেছিলেনঃ

قَالَ سَلامٌ عَلَيْكَ سَأَسْتَغْفِرُ لَكَ رَبِّي إِنَّهُ كَانَ بِي حَفِيّاً

❝আপনাকে সালাম। আমি আপনার জন্য আল্লাহর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব।❞ [সূরা মারইয়ামঃ ৪৭]

ইয়াহয়া (আঃ): আল্লাহ তা’আলা তার প্রশংসা করে বলেনঃ

❝সে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচারী ছিল।❞ [সূরা মারইয়ামঃ ১৪]

এভাবে অনেক নবীর কথা আল কুরআনে উল্লেখ করে আল্লাহ তা’আলা বিশ্ববাসীর সামনে অনুকরণীয় আদর্শ উপস্থাপন করেছেন।

আমাদের পূর্ব পুরুষগণ পিতা-মাতার সাথে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। এসমস্ত মহামনিষীদের মধ্যে আবু হুরাইরা (রাঃ), আবদুল্লাহ্ ইবন্ মাসঊদ (রাঃ), ইবন্ হাসান তামীমী (রহঃ), ইবন আউন মুযানী (রহঃ) প্রমুখের নাম ইতিহাসখ্যাত।

 

পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপঃ পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপ হতে পারে যা হয়ত অনেক মানুষের কাছেই অজানা।

১) পিতা-মাতার উপর নিজেকে বড় মনে করা। অর্থ-সম্পদ, শিক্ষা-দীক্ষা, সম্মান-প্রতিপত্তিতে পিতা-মাতার চেয়ে বেশী অথবা অন্য যে কোন কারণেই হোক না কেন নিজেকে বড় বড় মনে করা।

২) পিতা-মাতাকে পিতা-মাতাকে সহায়-সম্বলহীন এবং নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রাখা এবং যার কারণে তারা মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে বাধ্য হয়।

৩) বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-পুত্র বা অন্য কাউকে, এমনকি নিজের প্রয়োজনকেও পিতা-মাতার উপর অগ্রাধিকার দেয়া তাদের নাফরমানীর অন্তর্ভূক্ত।

৪) পিতা-মাতাকে শুধু নাম ধরে বা এমন শব্দ প্রয়োগে ডাকা যা তাদের অসম্মান ও মর্যাদাহানীর ইঙ্গিত দেয়।

৫) পিতা-মাতার সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে ধমকের সাথে কথা বলা।

৬) তাদের সেবা-শশ্রুসা না করা এবং শারিরীক বা মানষিক দিকের প্রতি লক্ষ না রাখা। বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে বা রোগ-ব্যধিতে তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা।

 

পরিশেষেঃ প্রতিটি জ্ঞানবান মানুষের আছে আহবান জানাবো, আসুন, পিতা-মাতার ব্যাপারে অবহেলা করার ব্যাপারে সাবধানত হই। তাদের প্রতি প্রর্দশন করি সর্বোচ্চ সম্মান জনক আচরণ। কারণ এর মাধ্যমেই আমাদের পার্থিব জীবন সুন্দর হবে। গুনাহ-খাতা মাফ হবে। পরকালে মিলবে চির সুখের নিবাস জান্নাত।

 

মহিমাময় আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানাই হে পরওয়ারদেগার, আমাদেরকে আমাদের পিতা-মাতার সাথে চির শান্তির নীড় জান্নাতে একত্রিত করিও। এটাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা।

২৪২৯

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭