সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করুন
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : সোমবার ০৮/১০/২০১৮

মজলুমের বদদোয়াকে ভয় করুন

মু‘আয ইবন জবল রা. যখন ইসলাম কবুল করেন তখন তার বয়স ছিল মাত্র এগারো বছর। অত্যন্ত সুন্দর, লম্বাকৃতির যুবক ছিলেন তিনি। চোখগুলো বড় ও মোটা, দাঁতগুলো চমৎকার সুন্দর, গায়ের রঙ ফর্সা এবং মাথার চুল ছিল কুকড়ানো। তিনি আনসারের প্রসিদ্ধ গোত্র খাযরাযের শাখা বনি সালমার অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। 
.
মু‘আয রা. কেবলমাত্র বাহ্যিক দিক দিয়ে সুন্দর ও সুশ্রী ছিলেন তা নয়; বরং মনের দিক দিয়েও অত্যন্ত আলোকিত ছিলেন। স্বীয় গোত্র বনি সালমার শীর্ষস্থানীয় লোকদের মধ্যে গণ্য করা হতো তাঁকে। নেহায়েত প্রতিভাবান, মেধাবী, মনের দিক দিয়ে সতেজপ্রাণ ছিলেন তিনি। 
.
আল্লাহর রাসূল সা.কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাঁর মজলিশে বসেই থাকতেন। কুরআন শিখতেন এবং আত্মস্থ করতেন। খুব দ্রুত তিনি কুরআন করিম মুখস্থ করে ফেলেছিলেন। তিনি সেসব সাহাবায়ে কেরামের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন যারা সম্পূর্ণ কুরআন করিম আত্মস্থ করে ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সা.ও তাকে খুব মহ্ববত করতেন।

মু‘আযের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা ঘটে যায়। তার ঘর ছিল সানিয়্যাতুল বিদার নিকট যেখানে বর্তমান মসজিদ ক্বিবলাতাইন অবস্থিত। সেখানকার লোকজন সব নামাযের জন্য তো মসজিদে নববিতে আসতে পারত না। তাই বনি সালমা সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করেছিল। সেই মসজিদের ইমাম ছিলেন মু‘আয ইবন জবল রা.।
.
একদা তিনি নিয়ম অনুসারে লোকজনকে নিয়ে এশার নামায পড়ানোর জন্য দাঁড়িয়ে যান। নামাযে সুরা ফাতিহার পর সুরা বাকারা আরম্ভ করে দিলেন। মুক্তাদিদের মধ্যে এমন এক যুবকও ছিল যে সারাদিন মেহনত-মজদুরি করে সেখানে এসেছিল। সে তো গোটা দিন বাগান ও ক্ষেতে পানি সেচের কাজ করেছে। কেরাআত দীর্ঘ হয়ে গেলে কিছুক্ষণ সেই যুবকটি সবর করে। অত:পর ধীরে ধীরে সারি থেকে বেরিয়ে আসে। একাকী নামায পড়ে উটের লাগাম ধরে সোজা ঘরে চলে যায়।
.
মু‘আয রা. নামায সমাপ্ত করলে উপস্থিত লোকজন তাকে সেই যুবকের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করে। এ ছিল এক বিরল ঘটনা। মু‘আয রা. বলেন, এই ব্যক্তি তো মুনাফিক। পরের দিন যুবকটিও জানতে পারে, মু‘আয রা. তাকে মুনাফিক আখ্যায়িত করেছেন। সে নালিশ নিয়ে আল্লাহর রাসূল সা.এর খেদমতে গিয়ে হাজির। 
.
এবার দেখুন আরাহর রাসূল সা.এর উন্নত চরিত্র। সে ছিল এক সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাকেও আল্লাহর রাসুল সা. কত গুরুত্ব দিচেছন। কাকতালীয় বলা যায়, যুবকটি যখন মসজিদে নববিতে রাসূলুল্লাহ সা.এর নিকট পৌঁছে, তখন মু‘আযও সেখানে ছিলেন।
.
যুবকটি আরজ করল,
- হে আল্লাহর রাসূল সা.! আমরা মেহনতি-মজদুর মানুষ। নিজের ক্ষেতে সারাদিন পানি দিতে হয়। কঠোর পরিশ্রম করতে হয় আমাদের। মু‘আয আমাদের নিয়ে দীর্ঘ নামায পড়ান। গতকাল তিনি নামাযে সুরা বাকারা পড়েন। আমি ক্লান্ত ছিলাম। তাই আমি জামাত থেকে আলাদা হয়ে নামায পড়ে নিই এবং বাড়ি চলে যাই। এখন তার ধারণা হচ্ছে, আমি মুনাফিক।
.
সম্মানিত পাঠক! আল্লাহর রাসূল সা. পূর্ণ মনযোগ দিয়ে তাঁর এই সাহাবির কথাগুলো শুনেন। তারপর মু‘আয যাকে তিনি অত্যন্ত মহব্বত করতেন, তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
(أفتان أنت, أفتان أنت, أفتان أنت؟) 
-“তুমি কি লোকজনকে ফিতনায় লিপ্ত করতে চাও? তুমি কি লোকজনকে ফিতনায় লিপ্ত করতে চাও? তুমি কি লোকজনকে ফিতনায় লিপ্ত করতে চাও?”
তোমরা যখন লোকজনকে নিয়ে ইমামতি কর তখন সুরা والشمس, سبح اسم ربك الأعلى ও والليل إذا يغشى এর ন্যায় ছোট ছোট সুরাগুলো পড়বে। তোমাদের পিছনে যারা নামাযে অংশ নেয় তাদের মধ্যে বৃদ্ধ, দুর্বল ও প্রয়োজনের শিকার বিভিন্ন ধরনের লোকজন থাকে। (তাদের প্রতি নজর রেখো।)
.
বন্ধুরা, এ ছিল রাসূলুল্লাহ সা.এর চরিত্র। তিনি নামায পড়ানোর সময়ও সব ধরনের লোকের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন। অত:পর আনসারি যুবককে সম্বোধন করে ইরশাদ করেন:
(كيف تصنع يا ابن أخي إذا صليت) 
-“ভাতিজা! তুমি যখন নামায পড়ো তখন তুমি কি করো, বলো তো একটু?
সে বলল, 
-আমি সুরা ফাতেহা পড়ি। যখন তাশা’হুদে বসি তখন আমি আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দুআ করি এভাবে: (اللهم إني أسألك الجنة وأعوذ بك من النار) “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট জান্নাত প্রার্থনা করি এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য তোমার আশ্রয় চাই।”
.
তারপর যুবকটি একদম সাধারণ কথ্যভাষায় বলল, 
(أما والله ما أحسن دندنتك ولا دندنة معاذ) 
-“আল্লাহর কসম! মূলকথা হচ্ছে, আমি তো আপনার এবং মু‘আযের মত লম্বা লম্বা দুআ এবং আল্লাহর সাথে ফিসফিসানি করতে পারি না।”
.
প্রিয় পাঠক! আল্লাহর রাসূল সা. স্বীয় উম্মতের প্রতি কত দয়ালু ও মেহেরবান! সত্যকথা যদি বলি, আমার মত কত লোক আছে যারা নিজের ভাষায় যেসব দুআ আসে তা দিয়েই প্রার্থনা করি। এবার দেখুন আল্লাহর রাসূল সা.এর উন্নত চরিত্র। তিনি সেই যুবক আনসারি সাহাবিকে কেমন ভাষায় সান্ত¡না দিচ্ছেন। ইরশাদ করেন:
(حولها ندندن) “চিন্তা করো না। আমি আর মু‘আযও এরকমই দুআ করে থাকি।”
.
একদিন আল্লাহর রাসূল সা. গাধায় সওয়ার হয়ে কোথাও তাশরিফ নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর পিছনে বসে ছিলেন ওই সুদর্শন মেধাবী প্রতিভাবান ও শিক্ষিত মু‘আয ইবন জবল রা.
.
সম্মানিত পাঠক! একটু ভেবে দেখুন রাসূলুল্লাহ সা.এর বিনয় ও বিনম্রতাকে। তিনি সা. গাধার উপর সওয়ার হতে লজ্জা অনুভব করতেন না। অথচ তিনি সা. মদিনার বসতি ও এর আশপাশের শাসক ছিলেন। আর কতই না সৌভাগ্য মু‘আযের! রাসূলুল্লাহ সা.এর পিঠ মোবারকের সাথে তার সিনা স্পর্শ করছিল। 
.
সামনে একটু অগ্রসর হলে আল্লাহর রাসূল সা. বললেন: 
(يا معاذ بن جبل!) 
মু‘আয আরজ করেন:
 (لبيك يا رسول الله وسعديك)
-“আল্লাহর রাসূল! আমি হাজির, উপস্থিত এবং আমার এই উপস্থিতি আমার  জন্য সৌভাগ্যের।” 
আল্লাহর রাসূল সা. কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। অত:পর বললেন: 
(يا معاذ بن جبل!) 
-মু‘আয তাৎক্ষণাৎ আরজ করেন: (لبيك يا رسول الله وسعديك) আরো একবার আল্লাহর রাসূল সা. কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, কিছুই বললেন না।
.
সুপ্রিয় পাঠক! লক্ষবার কুরবান হোন সেই মানবতার শিক্ষকের উপর। তিনি নিজ সাথীকে শিখানোর জন্য কেমন বিরল ও প্রিয় পন্থা অলম্বন করেছেন। সওয়ারির উপর দুইজনই সওয়ার। দুইজনের মধ্যে কোনো আড়াল নেই, কোনো পর্দা নেই। ইরশাদ করছেন এভাবে যেন কেউ দূর থেকে ডাক দিয়ে কথা বলছে। 
.
ফের তৃতীয়বার ইরশাদ করেন:
 (يا معاذ بن جبل!) 
-মু‘আয রা. নিঃসন্দেহে রাসূলুল্লাহ সা.এর আদেশ শোনার জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। আমার শিক্ষক, আমার পথপ্রদর্শনক ও আমার নির্দেশক... কি পয়গাম দিতে চাচ্ছেন। কী কথা বলতে চাচেছন আমাকে।?! শিষ্য অত্যন্ত দ্রুতগতিতে জবাব দেন: 
(لبيك يا رسول الله وسعديك)
- আল্লাহর রাসূল সা.! আমি হাজির।  ইরশাদ করুন। 
.
আরাহর রাসুল সা. ইরশাদ করেন,
 (أتدري ما حق الله على العباد؟) 
“মু‘আয তুমি কি জানো, বান্দাদের উপর আল্লাহর কি অধিকার?”
মু‘আয জবাবে আরজ করেন, (الله ورسوله أعلم) 
-“আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।” 
আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, 
(إن حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئا) 
-স্বীয় বান্দাদের উপর আল্লাহর হক ও অধিকার হচ্ছে, বান্দা তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।”
.
নিঃসন্দেহে মু‘আয রা. এই শিক্ষাকে অন্তরে ধারন করে নিয়েছেন। এর মধ্যে কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেল। সামনে আরেকটু অগ্রসর হলে আল্লাহর রাসূল সা. ফের ইরশাদ করেন, 
(يا معاذ بن جبل!) 
মু‘আয আরজ করেন: 
(لبيك يا رسول الله وسعديك) 
-অল্লাহর রাসূল সা. পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন:
- (أتدري ما حق العباد على الله إذا فعلوا ذلك؟) “তুমি কি জানো, আল্লাহর উপর বান্দাদের কি হক,  তারা যদি তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে?” 
.
শাগরেদও ফের জবাব দিলেন, 
-আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। 
আল্লাহর রাসূল সা. নিজ শাগরেদকে বলেন ও শিক্ষা দিলেন, 
-বান্দা যদি আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করে তাহলে আল্লাহর উপর তাদের হক হচ্ছে,
(أن لا يعذبهم) 
-“তিনি তাদেরকে যেন আযাব না দেন।” 
(ويغفر لهم) 
-“এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।” 
(ويدخلهم الجنة) 
-“তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” অত:পর বললেন, 
“যে ব্যক্তি সাচ্ছা মনে (لا إله إلا الله محمد رسول الله) এর স্বীকার করবে (إلا حرمه الله على النار)
- “আল্লাহ তা‘আলা তার উপর জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন।”
.
সম্মাানিত পাঠক! এই সুসংবাদটা সাধারণ কোনো সুসংবাদ ছিল না। আমাদের মত সাধারণ মানুষের জন্য, পাপীদের জন্য এর চাইতে সুসংবাদ আর কিছু ছিল না। তাই মু‘আয রা. আরজ করেন, হে আল্লাহর রাসূল ! 
(أفلا أبشر به الناس)
- “আমি কি এই সুসংবাদটি লোকজনদের দিতে পারি না?” 
আল্লাহর রাসূল সা. বলেন, 
-“নাহ্, আমার ভয় হচেছ, লোকজন শুনলে এর উপর ভরষা করে বসে থাকবে।” উদ্দেশ্য হচেছ, তারা তখন কোনো আমল করবে না।
.
কিছুদিন পর মু‘আয রা.কে আল্লাহর রাসূল সা. নিজের পক্ষ থেকে দায়ি, প্রতিনিধি ও গভর্নর বানিয়ে ইয়েমেন পাঠান। বিদায় বেলায় তাঁর শেষ ওসিয়ত ছিল এই, 
(اتق دعوة المظلوم فإنه ليس بينها وبين الله حجاب) 
-“মজলুমের বদদুআকে ভয় করো। কারণ তার এবং আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।”
.
মু‘আয রা.এর ইয়েমেন যাবার একটি কারণ এটাও ছিল যে, তিনি নেহায়েত উদার ও অতিথিপরায়ণ ছিলেন। প্রাণ খুলে খরচ করতেন তিনি। নিজ গোত্রের শীর্ষস্থানীয় লোক হওয়ার সুবাদেও তাকে খুব খচর করতে হত। নিজের কাছে অর্থ না থাকলে ধার নিতেন। একারণে যথেষ্ট পরিমাণে ঋণগ্রস্তও হয়ে যেতেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার নেকনিয়তির দরুন তার সব ঋণ শোধের ব্যবস্থা করে দিতেন।

৪৯৪

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭