সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

নারীর অধিকার : প্রসঙ্গ মোহর
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বুধবার ১৪/০৬/২০১৭

ইসলামের যে বিধানগুলো আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে তার অন্যতম হলো স্ত্রীর মোহর। বিয়ের কারণে নারীর সতীত্ব রার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের খাতিরে ইসলাম স্বামীর উপর যে আর্থিক যিম্মাদারী আরোপ করেছেন তারই নাম মোহর। কুরআন হাদীসে কোথাও একে ‘সিদাক’ শব্দে উল্লেখ করা হয়েছে, কোথাও অন্য শব্দে। বিবাহ বন্ধন, বিবাহ বিচ্ছেদ, ঈমানদার ব্যক্তি ও সমাজের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে এবং এভাবে জাহেলী সমাজের বর্বরতারোধে আল্লাহ তাআলা এই বিধানটি বর্ণনা করেছেন। মোটকথা, পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে অনেকভাবে মোহরের বিবরণ এসেছে। এই মোহর আদায় করা স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য এবং বিয়েতে স্ত্রীর জন্য মোহর নির্ধারণ এবং তাতে নারীর পূর্ণ মালিকানা প্রদান ইসলামি বিধানের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। তবে একথা ঠিক যে, একজন নারী মোহর বাবদ যে সম্পদ লাভ করেন তা দাম্পত্য জীবনে তার নিঃস্বার্থ সেবার প্রকৃত বিনিময় হতে পারে না।

মোহরের প্রচলিত রূপ
মুসলমানের নৈতিক অবয় ও দ্বীনদারীর অধঃপতনের এ যুগে মোহর মূলত দাম্পত্য রার বা নিরাপত্তার একটি হুমকিমূলক প্যাঁচানো ও কাগুজে পদ্ধতি ও প্রথাগত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে যার কোন কার্যকারিতা নেই। বর কনে উভয় পরে সম্মতিতে স্বামীর আদায়ের সামর্থ্যরে বাইরে মোটা অংকের মোহর নির্ধারণ মুসলিম পরিবারগুলোর একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মোহর যে স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার এবং স্বামীর অবশ্য পালনীয় কর্তব্য তার কোন চিন্তা বা গরজ কারোর ভিতরই থাকে না। মাটা অংকের মোহর নির্ধারণের অর্থ স্বামী এটাই  বোঝে যে, কখনও দাম্পত্য জীবন শেষ করতে চাইলে এই বিশাল অংকের মোহর তার পরিশোধ করতে হবে। অন্যথায় নয়। অপর দিকে অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা অপ্রাপ্তির মধ্য দিয়েই কাক্সিক্ষত দাম্পত্য জীবনে প্রবেশ করল মেয়েটি। আর শুরুতেই সে জেনে গেল এ টাকা মূলত পাওয়ার জন্য ধার্য হয়নি; বরং এ টাকা পাওয়ার মতো পরিস্থিতি অর্থাৎ তালাক না পড়ার আকাক্সক্ষাই তার মাঝে প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় লজ্জার ব্যাপার হলো, স্বামীদের ভিতর মোহর পরিশোধের  চিন্তা বাদ দিয়ে স্ত্রীর নিকট বেহায়ার মতো মা চাওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়েছে। তাও আবার নিকৃষ্টতম কায়দায় ফেলে। কায়দাটি হলো দাম্পত্যের একদম প্রথম প্রহরে অত্যন্ত স্পর্শকাতর সময় ও অনুভূতির মধ্যে স্বাভাবিক কিংবা প্রচ্ছন্ন হুমকির মাধ্যমে কাপুরুষের মতো মোহরের টাকার দায় থেকে মা চায়। একেবারে নতুন জীবনে প্রবেশকারী লাজুক স্ত্রী দাম্পত্যের প্রথম প্রহরেই উপায় না দেখে মা করে দেয়। অনেক সময় রেওয়াজ মনে করে বৃদ্ধ দাদী-নানীরা নববধুকে শিখিয়ে দেয় যে, না করবি না! স্বামী বাসর রাতে মোহর মাফ চাইলে মাফ করে দিস। প্রশ্ন হলো এ মা করাটা কি স্ত্রীর আন্তরিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল? অবলা মেয়েটি কি তখন অপরিহার্য অধিকার মোহরের টাকা দাবি করা বা ছেড়ে দেয়ার স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর্যায়ে থাকে? স্বামীর মা চাওয়ার উত্তরে তার পে কি অতি বিনয়ের সঙ্গেও ‘না’ বাচক কোন উত্তর দেয়া সম্ভব? সাহস করে ‘না’ বাচক উত্তর দিলেও কি মেয়েটি সুখে-শান্তিতে থাকবে? সে কি বিভিন্ন রকমের পেরেশানির শিকার হবে না? এজন্যই তো দেখা যায় এভাবে মোহরের টাকা মার পর দুর্ভাগ্যক্রমে দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল দেখা দিলে মাকৃত সেই মোহরের টাকা যথারীতি পাওনা টাকা হিসেবেই দাবি করা হয়। না দিলে কিংবা অস্বীকৃতি জানালে লাল-দালানের ভাত পর্যন্তও খেতে হয়। এর সোজা অর্থ হলো অবলা মেয়েটি যে দাম্পত্য জীবনের একদম প্রথম প্রহরে স্বামীর মা চাওয়ার প্রেেিত মাফ  করেছিল সেটা ছিল নিতান্তই নিরুপায় হয়ে এবং এক ধরনের চাপে পড়ে। আর এভাবে মা নিয়ে কি কারও টাকা ভোগ করার সুযোগ ইসলাম দিয়েছে? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেন, ‘সাবধান! জুলুম করো না। জেনে রেখো, কারও সম্পদ তার আন্তরিক সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্যের জন্য ভোগ করা বৈধ নয়।’ (মিশকাত : ২৫৫) আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, স্বামীর সামর্থ্য ও সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি মোহর ধার্য করা হয় কেবল সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির জন্যে। বর-কনে উভয় পই ধরে রাখেন, এ মোহর পরিশোধের জন্য নয় বরং সামাজিকভাবে বড় ফিগারের মোহর জাহির করার জন্য। এসব প্যাঁচানো উদ্দেশ্য ও প্রথাগত কাগুজে পদ্ধতির মারপ্যাঁচে পড়ে আর্থিক অপরিহার্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চনার শিকার হয় নারী। তামাশায় পরিণত হয় মোহরের মত ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও আর্থিক অধিকার।

মোহরের গুরুত্ব
যে-মোহর আজকের মুসলমানদের কাছে খেল-তামাশা ও প্রথাগত পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে তার গুরুত্ব ইসলামে সীমাহীন। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। এরপর তারা যদি তোমাদের জন্য খুশি মনে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয়, তাহলে তা ভোগ কর স্বাচ্ছন্দ্যে।’ (নিসা : ৪) বর্ণিত আয়াতের মাধ্যমে একথা দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয় যে, মোহর স্ত্রীর অপরিহার্য অধিকার ও প্রাপ্য। তা আদায় করা স্বামীর উপর ফরজ। এর নির্দেশদাতা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। স্ত্রীর স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া তাতে অন্যকারো হস্তেেপর সুযোগ নেই। তাই প্রত্যেক মুমিন-মুসলমান স্বামীর অবশ্য কর্তব্য খুশি মনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধ-উপরোধ কিংবা জোর-জবরদস্তির অপোয় থাকা কুরআনের নির্দেশ পরিপন্থী ও জঘন্য অপরাধ এবং চাপ দিয়ে কিংবা কোন কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ স্বামী মাফ করিয়ে নিলেও তা মাফ হবে না এবং পরিশোধ করার পর কোন কায়দায় ফেলে তা ফেরতও নিতে পারবে না। এভাবে মা-বাবা, ভাই-বোন বা অন্য কেউ স্বীয় মেয়ে, বোন বা আত্মীয়ের মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতেও পারবে না, মাফও করাতে পারবে না। নিলে তা হবে আত্মসাতের শামিল। তবে  স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় হৃষ্টচিত্তে মোহরের অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহর মাফ করে দেয় কিংবা পুরোপুরি বুঝে নিয়ে অংশ বিশেষ বা পূর্ণ মোহরই ফিরিয়ে দেয়, তবে তার ব্যবহার বৈধ হবে। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস : ২/৫৭-৫৮; ইবনে কাসীর : ১/৪৪২; বয়ানুল কুরআন : ২/৯৩; তাফসীরে উসমানী : ১০০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘উল্লেখিত মাহরাম নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় সম্পদের বিনিময়ে তলব করবে বিয়ে করার জন্য; ব্যভিচারের জন্য নয়। অতএব তাদেরকে তোমরা যে উপভোগ করেছ এ কারণে তাদের প্রাপ্য ও ধার্যকৃত বিনিময় (মোহর) তাদেরকে প্রদান কর। আর মোহর নির্ধারিত থাকার পরও তোমরা পরস্পরে কোন বিষয়ে সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা নিসা-২৪)
পবিত্র এই আয়াতটি দ্বারাও এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয় যে, মোহর ইসলামের অতি গুরত্বপূর্ণ ফরজ এবং বিয়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ এবং মোহর এমন কিছু হতে হবে যা শরীয়তে সম্পদ বলে গণ্য। বিয়ের সময় মোহরের কথা উল্লেখ না করলেও কিংবা না দেয়ার শর্ত করলেও তা বাতিল হয় না; বরং স্বামীর জিম্মায় যথানিয়মে বাকি থাকে। তাই স্বামীর অবশ্য কর্তব্য যথাযথভাবে স্ত্রীর মোহর পরিশোধ করা। এভাবে একথাও প্রমাণিত হয় যে, বিয়ের পর মেলামেশা হলে কিংবা নির্জনবাস হলে মোহর ধার্য করা থাকলে ধার্যকৃত পূর্ণ মোহর আর ধার্য করা না থাকলে মোহরে মিছল (ঐ নারীর বংশের তার মতো অন্যান্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছে সেই পরিমাণ মোহর) আদায় করতে হবে। তবে স্ত্রী ইচ্ছে করলে ধার্যকৃত মোহর থেকে কিছু ছেড়ে দিতে পারে। এভাবে স্বামীও ইচ্ছে করলে কিছু বেশি দিতে পারে। সেচ্ছায় ও আগ্রহের সঙ্গে হলে এতে দোষের কিছু নেই। (আহকামুল কুরআন, জাসসাস : ২/১৪০-১৪৬; আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী : ১/৩৮৪-৩৯০; তাফসীরে উসমানী : ১০৫) এ ব্যাপারে প্রিয়নবী সা. ইরশাদ করেন, ‘মোহর আদায় না করার নিয়তে কেউ যদি কোন নারীকে বিয়ে করে আল্লাহ তাআলা খুব ভাল করেই জানেন যে, তার মোহর আদায়ের নিয়ত নেই। তাহলে সে স্বয়ং আল্লাহকে ধোঁকা দেয়ার স্পর্ধা দেখাল এবং অন্যায়ভাবে নারীকে উপভোগ করল। কিয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীরূপে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে। মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৪/৫২২-৫২৩ ) পাঠক! লেখার কলেরব বৃদ্ধির আশঙ্কায় মোহরের অপরিহার্যতা প্রসঙ্গে দুটি আয়াত ও একটি হাদীস উল্লেখ করেই ান্ত করলাম। নতুবা এ প্রসঙ্গে  আরও একাধিক আয়াত ও অসংখ্য হাদীস রয়েছে ।

মোহর কখন আদায় করবে
কুরআন-হাদীসের ভাষ্যমতে বিয়ের সঙ্গে সঙ্গে মেলামেশার পূর্বেই পূর্ণ মোহর আদায় করা উচিত। সম্ভব না হলে অন্তত কিছু হলেও আদায় করে দেয়া উচিত। এ ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যথেষ্ট তাকিদ দিয়েছেন। হযরত আলী রা.-এর সঙ্গে ফাতিমা রা.-এর বিয়ে সম্পাদিত হলে রাসূলুল্লাহ সা. হযরত আলীকে বলেলেন, হে আলী, মেলামেশার পূর্বেই তুমি তোমার স্ত্রীকে কিছু মোহর দাও। হযরত আলী রা. জানালেন যে তার কাছে কিছু নেই। তখন মহানবী সা. বললেন, তোমার  বর্মটি মোহর হিসেবে দাও। আলী রা. তাঁর বর্মটি মোহর হিসাবে দিয়ে ফাতিমার সঙ্গে মিলিত হলেন। (আবু দাউদ : ১/২৮৯-২৯০)
এভাবে জনৈক আনসারী সাহাবী এক নারীকে বিয়ের আগ্রহ প্রকাশ করলে নবীজী সা. তাকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘মোহর আদায় করার জন্য তোমার নিকট কি আছে?’ তিনি কিছুই নেই জানালে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, ‘যাও মোহরের জন্য একটি লোহার আংটি হলেও যোগাড় করে নিয়ে আস।’ (বুখারী : ২ ; আবু দাউদ : ১/২৮৭)। তবে যদি অনিবার্য কারণে বিয়ের সময় বা মেলামেশার পূর্বে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশও আদায় করা সম্ভব না হয়, তাহলে কবে নাগাদ তা আদায় করা হবে তার তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। পরিষ্কারভাবে মোহর আদায়ের তারিখ নির্ধারণ না করে শুধু মৌখিকভাবে কাগজে-কলমে প্রথাগত পদ্ধতিতে মোহর নির্ধারণ করে সারা জীবন তা আদায় না করা বা স্ত্রীর কাছ থেকে বেহায়ার মতো মাফ করিয়ে নেয়া কিংবা আদায় না করে স্ত্রীর দেনা কাঁধে নিয়ে মৃত্যুবরণ করা কেবল ইসলামের বিধানমতে কঠিন অন্যায়ই নয়; সুস্থ বিবেক ও রুচির বিচারেও নিতান্ত হীন ও কাপুরুষোচিত কাজও বটে।

মোহর তলব করার অধিকার স্ত্রীর রয়েছে
এ কথা ঠিক যে, মোহর নগদ আদায় না করলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে কিন্তু তা আদায়ের তারিখ নির্ধারণ করে নিতে হবে। স্বামী যদি তাও না করে তাহলে ইসলাম স্ত্রীকে এই অধিকার দিয়েছে যে, মোহর উসূল না হওয়া পর্যন্ত সে নিজেকে স্বামীর কাছে সোপর্দ করা হতে বিরত থাকতে পারবে এবং স্বামীকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এমনকি চুম্বন-আলিঙ্গন ইত্যাদি থেকেও বাধা দিতে পারবে ও স্বামীর সঙ্গে কোথাও সফরে যেতে অস^ীকার করতে পারবে। স্বামী এগুলোতে তাকে বাধ্য করতে পারবে না। এই অবস্থাতেও স্ত্রী মোহর তো পাবেই; স্ত্রীর ন্যায়সঙ্গত ভরণ-পোষণও স্বামীর নিয়মিত দিতে হবে। (শামী, হেদায়া : ভরণ-পোষণ অধ্যায়)

মোহরের পরিমাণ
মোহরের পরিমাণ নিয়েও মুসলিম উম্মাহ বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির শিকার। কোন েেত্র দেখা যায় মোহরের অংক এত বেশি যে, স্বামীর পে তা আদায় করা আদৌ সম্ভব না। আবার অনেক েেত্র দেখা যায় যে, মোহরের পরিমাণ এত তুচ্ছ ও সামান্য যে, তা উল্লেখ  করার মতো না। আবার এমনও হয় যে, একজন লোকই যখন মেয়ের পরে হয় তখন বলে মোহর যত বড় অংকের হয় ততই ভাল। এই লোকটিই যখন ছেলের পরে হয় তখন কম মোহরের প নেয়। এগুলোর কোনটিই শরীয়তে কাম্য নয়। মোহর মূলত একটি সম্মানী যা স্বামী স্ত্রীকে দিয়ে থাকে, যার মূল উদ্দেশ্যই হলো স্ত্রীকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদান। এজন্য ইসলাম বলে, মোহর এত সামান্য নির্ধারণ করা উচিত নয় যা মর্যাদার কোন ইঙ্গিত বহন করে না। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা যা আদায় করা স্বামীর পে অসম্ভব হয়। এমন হলে মোহর হয়ে যাবে স্রেফ তামাশা।
রাসূল সা. ও সাহাবীগণ রা.-এর আমল তার জীবন্ত নমুনা। আবু সালামা ইবনে আ. রহমান রহ. বলেন, ‘আমি উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবী সা. কি পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? জবাবে তিনি বললেন নবী সা. তাঁর স্ত্রীদেরকে ১২ উকিয়া অর্থাৎ পাঁচ শ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ ( মুসলিম, হাদীস : ১৪২৬; আবু দাউদ; হাদীস : ২১০৫; নাসায়ী : ৬/১১৬-১১৭)। আবু হুরাইয়া রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.-এর যুগে আমাদের মোহর ছিল দশ উকিয়া অর্থাৎ ৪০০ দেরহাম। (নাসায়ী : ৬/১১৭) প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মোহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ ইসলামে নির্ধারিত নেই। তবে সর্বনিম্ন পরিমাণটি নির্ধারিত রয়েছে। হানাফী মাযহাব মতে সর্বনিম্ন মোহর দশ দেরহাম। যার পরিমাণ প্রায় দুই তোলা সাড়ে সাত মাশা রূপা। (নিসা : ২০; বাদায়ে : ২/২৭৫)। এই সর্বনিম্ন মোহর নির্ধারিত থাকার উদ্দেশ্য এই নয় যে, এত সামান্য পরিমাণ মোহর নির্ধারণ করা শরীআতে প্রশংসনীয়; বরং উদ্দেশ্য হলো এর চেয়ে কম মোহর নির্ধারণ করা শরীয়তসম্মত নয় যদিও স্ত্রী রাজি থাকে। এর চেয়ে কম নির্ধারিত হলে মোহরের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয় না। তাছাড়া মোহরের এই সর্বনিম্ন পরিমাণও রাখা হয়েছে মূলত আর্থিকভাবে অসচ্ছল লোকদের কথা বিবেচনা করে। যেন তারা নারীর সম্মতির শর্তে এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে বিয়ে করতে পারে।

মোহরের কিছু বিধান
বিয়ের সময় কোন কারণে মোহর নির্ধারণ না করা হলেও বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে। এেেত্র যদি মেলামেশা কিংবা বাধামুক্ত নির্জনবাস সম্পাদিত হয় অথবা স্বামী মারা যায়, তাহলে স্ত্রীকে মোহরে মিছিল দেয়া ওয়াজিব। শরীয়তের দৃষ্টিতে মোহরে মিছিল হলো, স্ত্রীর খান্দানের সেই সব নারীদের অনুরূপ মোহর যারা বয়স, বিত্ত, রূপ-সৌন্দর্য, জ্ঞান-বুদ্ধি, শিা-দীা, আখলাক-চরিত্র ইত্যাদিতে ঠিক তারই মত। (সূরা নিসা : ৪; আবু দাউদ :  রদ্দুল মুহতার : ২৮১-২৮৩, হিদায়া ২/৩২৩-৩২৬) আর যদি নির্জনবাস কিংবা মেলামেশার পূর্বেই তালাক ঘটে যায়, তাহলে স্ত্রীকে মুতআ দেয়া ওয়াজিব। মুতআ স্ত্রীকে প্রদত্ত খরচকে বলে। মুতআ পরিমাণ হলো এক জোড়া কাপড় অর্থাৎ একটি জামা, একটি পায়জামা ও একটি ওড়না বা ছোট চাদর । অথবা একটি শাড়ি ও একটি বড় চাদর যার দ্বারা পুরো দেহ আবৃত করা যায়। তবে কেউ এর চেয়ে বেশি দিলে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। (বাকারা : ২৩৬; হিদায়া; ২/৩২৫; রদ্দুল মুহতার : ৪/২৪২-২৪৪)। আর যদি বিয়ের সময় মোহর নির্ধারিত হয়ে থাকে তবে অবস্থাভেদে এর হুকুমও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন : স্ত্রীর সঙ্গে যদি নির্জনবাস বা মেলামেশা হয় তাহলে নির্ধারিত পূর্ণ মোহর দেয়া ওয়াজিব। আর যদি মেলামেশা বা নির্জনবাসের পূর্বেই বিচ্ছেদ ঘটে, তাহলে নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক দেয়া ওয়াজিব। (বাকারা : ২৩৭; রদ্দুল মুহতার : ৪/২৩৩-২৩৬; হেদায়া : ২/৩২৪)। মোহরের সকল সামাজিক মেকি প্রথা ও পোশাকি রেওয়াজ থেকে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ও আমাদের সমাজকে রা করুন। আমীন।

লেখক :  মুফতী পিয়ার মাহমুদ, গ্রন্থ প্রণেতা, ধর্মীয় গবেষক ও সিনিয়র মুহাদ্দিস
জামিয়া মিফতাহুল উলূম মাদরাসা

২০৪৭

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭