মহররম মাসের গুরুত্ব আর করনীয় আমল নিয়ে কিছু ইম্পরটেন্ট পয়েন্ট নোট করলাম। বিভিন্ন পিডিএফ থেকে কালেক্ট করা।
মহররম অর্থ মর্যাদাপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য ও রহস্যময় তাৎপর্য নিহিত রয়েছে এ মাসকে ঘিরে, সঙ্গে সঙ্গে এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল, এসব কারণেই এ মাসটি মর্যাদাপূর্ণ। তাই এ মাসের নামকরণ করা হয়েছে মহররম বা মর্যাদাপূর্ণ মাস।
মহররম সম্পর্কে (যা আশহুরে হুরুমের অন্তর্ভুক্ত তথা নিষিদ্ধ মাস) পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বিধান ও গণনায় মাসের সংখ্যা ১২। যেদিন থেকে তিনি সব আসমান ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে চারটি হলো সম্মানিত মাস। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। সুতরাং তোমরা এ মাসগুলোর সম্মান বিনষ্ট করে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।’ (সূরা তওবা: ৩৬)
অর্থাৎ সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে আল্লাহতায়ালা ১২টি মাস নির্ধারণ করে দেন। তন্মধ্যে চারটি মাস বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে।
ওই চারটি মাস কী কী? এর বিস্তারিত বর্ণনা হজরত আবু হুরায়রা (র.) সূত্রে বর্ণিত, হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, এক বছরে ১২ মাস। এর মধ্যে চার মাস বিশেষ তাৎপর্যের অধিকারী। এর মধ্যে তিন মাস ধারাবাহিকভাবে (অর্থাৎ জিলকদ, জিলহজ ও মহররম) এবং চতুর্থ মাস মুজর গোত্রের রজব মাস। [সহিহ বুখারি: ৪৬৬২ ও মুসলিম: ১৬৭৯]
আশুরার সিয়ামের গুরুত্ব:
মহররম মাসে সিয়াম রাখা সম্পর্কে অনেক বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বিশেষভাবে আশুরা, অর্থাৎ মহররমের ১০ তারিখে সিয়াম রাখার ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়, রমাদান মাসের সিয়াম ফরজ হওয়ার আগে আশুরার সিয়াম উম্মতে মুহাম্মাদীর ওপর ফরজ ছিল। পরবর্তী সময়ে অবশ্যই ওই বিধান রহিত হয়ে যায় এবং তা নফলে পরিণত হয়। হাদিস শরিফে হজরত জাবের (র.) সূত্রে বর্ণিত আছে, হজরত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের আশুরার সিয়াম রাখার নির্দেশ দিতেন এবং এর প্রতি উৎসাহিত করতেন। এ বিষয়ে নিয়মিত তিনি আমাদের খবরাখবর নিতেন। যখন রমদানের সিয়াম ফরজ করা হলো, তখন আশুরার সিয়ামের ব্যাপারে তিনি আমাদের নির্দেশও দিতেন না এবং নিষেধও করতেন না। আর এ বিষয়ে তিনি আমাদের খবরাখবরও নিতেন না। [সহিহ মুসলিম শরিফ: ১১২৮]
ওই হাদিসের আলোকে আশুরার সিয়ামেরর শ্রেষ্ঠত্ব প্রতীয়মান হয়। এমনকি ওই সময়ে তা ফরজ ছিল। বর্তমানে এই সিয়াম যদিও নফল, কিন্তু অন্যান্য নফল সিয়ামের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
হজরত ইবনে আব্বাস (র.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশুরা ও রমদানের সিয়াম সম্পর্কে যেরূপ গুরুত্ব প্রদান করতেন, অন্য কোনো সিয়াম সম্পর্কে সেরূপ গুরুত্বারোপ করতেন না। [সহিহ বুখারি ও মুসলিম]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: “আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি আরাফার সিয়াম বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার সিয়াম বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”[সহিহ মুসলিম: ১১৬২]
এটি আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ একদিনের রোজার মাধ্যমে বিগত বছরের সব গুনাহ মার্জনা হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান অনুগ্রহকারী।
আশুরার রোজার মহান মর্যাদার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি এ সিয়ামের ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকতেন। ইবনে আব্বাস (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: “ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে আশুরার সিয়াম ও এ মাসের সিয়াম অর্থাৎ রমদানের সিয়ামের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যত বেশি আগ্রহী দেখেছি অন্য সিয়ামের ব্যাপারে তদ্রূপ দেখিনি।”[সহিহ বুখারি: ১৮৬৭]
আশুরার সিয়ামের পদ্ধতি:
মুসলিম শরিফে হজরত ইবনে আব্বাস (র.) থেকে বর্ণিত, ‘মহানবী (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আশুরার দিনে রোজা রাখেন এবং অন্যদেরও রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন, তখন সাহাবিরা অবাক হয়ে বলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইহুদি-নাসারারা তো এই দিনটিকে বড়দিন মনে করে। (আমরা যদি এই দিনে রোজা রাখি, তাহলে তো তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য হবে। তাদের প্রশ্নের উত্তরে রসূল (সাল্লাল্লাহু ওয়ালাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, 'তারা যেহেতু এদিন একটি রোজা পালন করে) আগামী বছর ইনশাআল্লাহ আমরা এই ১০ তারিখের সঙ্গে ৯ তারিখ মিলিয়ে দুই দিন রোজা পালন করব। [সহিহ মুসলিম: ১১৩৪]
বর্জনীয়: সহীহ হাদিসে সিয়াম করার আমলটাই একমাত্র দলিল ভিত্তিক প্রমানিত। এছাড়া অন্য যে সমস্ত আমল বা শোক প্রকাশ বা অন্যান্য কাজ সবই মানুষের নিজস্ব মনগড়া কর্ম। এগুলোর কোন অস্তিত্ব সুন্নাহ সম্মত না। ওগুলো বিদাআ’ত এর পর্যায়ে পরে। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সবাইকে কবুল যোগ্য আমল করার তাওফিক দান করুন।
আল্লাহ তাআ’লার মাস মহররম মাস! এ মাসটিকে সর্বোচ্চ সম্মান দেয়ার চেষ্টা করি। নিয়মিত আমলের পাশাপাশি আরও কিছু আমল যোগ করা যেতে পারে, এবং সেগুলো গুরত্বের সাথে করার ব্যাপারে মনযোগী হওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে, যেমন: জামায়াত সহকারে সালাত, নিয়মিত কুরআন তিলওয়াত করা, মর্যাদাপূর্ণ মাসের কথা স্মরন করে বাড়তি সাদাকা করা, হাদিয়া দেয়া, নিজের ভুলগুলো খুঁজে বের করা এবং সংশোধন করে নেয়া, গীবত, পরচর্চা, হিংসা, বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকা, মুসলিম উম্মাহের জন্য বেশি বেশি দুয়া করা।
এপ্রিল মাসে আমরা বাংলাদেশীরা একটি উৎসব করে থাকি, তা হলো ১৪ই এপ্রিল। অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ পালন করা। আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই...বিস্তারিত
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদবিস্তারিত