সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

যে ব্যক্তি বলেন: ‘মুসলমানদের দারিদ্রের কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি’ সে ব্যক্তির হুকুম কি?
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ২৪/০১/২০১৯

আমরা মনে করি, তার এ দৃষ্টিভঙ্গি ভুল। কারণ যার জন্য ইচ্ছা রিযিকের সমৃদ্ধিদানকারী ও সংকোচনকারী হচ্ছেন আল্লাহ তাআলা। অধিক জনসংখ্যা রিযিক সংকোচনের কারণ নয়। যেহেতু এ পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সকলের রিযিকের ভার আল্লাহর উপরে। তবে, আল্লাহ তাআলা কোন হেকমতের কারণে রিযিক দেন এবং কোন হেকমতের কারণে রিযিক থেকে বঞ্ছিত করেন। যে ব্যক্তি এমন বিশ্বাস করে তার জন্য আমার নসীহত হচ্ছে- সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং এ বাতিল বিশ্বাস ত্যাগ করে। সে যেন জেনে রাখে, এ বিশ্বজগতের সদস্য যতই বৃদ্ধি পাক না কেন আল্লাহ চাইলে তাদের সকলের রিযিকে সমৃদ্ধি দিতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে বলেছেন, “যদি আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে রিযিকে সমৃদ্ধি দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত ও সূক্ষ্মদর্শী।[সূরা শুরা, আয়াত: ২৭] শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উছাইমীন [ফাতাওয়া উলামায়িল বালাদিল হারাম, পৃষ্ঠা- ১০৮৪] কোন সন্দেহ নেই জননিয়ন্ত্রণ ও জনসংখ্যা হ্রাস করার প্রচারণা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশ হচ্ছে: “তোমরা প্রমময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসবা নারীকে বিয়ে কর। কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করবো।[সুনানে আবু দাউদ, (২০৫০), আলবানী ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (১৭৮৪) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন] আল্লাহ তাআলা সকল মাখলুকের রিযিক নিশ্চয়তা দানকারী। তিনি বলেন: “আর পৃথিবীতে বিচরণশীল যে কারো রিযিক আল্লাহর উপর” [সূরা হুদ, আয়াত: ৬] তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিরোধ করা; সেটা গর্ভ-নিরোধক বিভিন্ন উপায় গ্রহণের মাধ্যমে কিংবা গর্ভপাত ঘটানোর মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে; এ বিশ্বাস থেকে যে, মজুদকৃত সম্পদ অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়, কিংবা জনকল্যাণের দাবী হচ্ছে- জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো; নিশ্চয় এটি আল্লাহর রুবুবিয়্যত (প্রতিপালকত্ব) ও তাঁর রিযিকের প্রশস্ততাকে অস্বীকার করার নামান্তর। এটি মুশরিকদের বিশ্বাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যারা দারিদ্রের ভয়ে তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করত। আল্লাহ তাআলা বলেন: “দারিদ্রের কারণে সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দেই।”[সূরা আনআম, আয়াত: ১৫১] তিনি আরও বলেন: “দারিদ্রের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহা অপরাধ।”[সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ৩১] অধিক জনসংখ্যা আল্লাহর একটি নেয়ামত; এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা ও নিরংকুশভাবে তাঁর ইবাদত করা কর্তব্য। এ কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী শুয়াইব (আঃ) এর কথা উল্লেখ করেন যে, তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর কিছু নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন: “স্মরণ কর; যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে; তিনি তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৮৬] অধিক জনসংখ্যা উম্মতের মর্যাদা ও শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যম। তাই তো আল্লাহ তাআলা বনী ঈসরাইলদের সম্পর্কে বলেন: “অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুরিয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম।”[সূরা বনী ঈসরাইল, আয়াত: ৭] মিশরের ভবিষ্যত সম্পর্কে এক গবেষণায় ড. মুহাম্মদ সৈয়দ গিলাব বলেন: “জনসংখ্যা বৃদ্ধি কখনো বোঝা ছিল না এবং আগামী শতাব্দীতেও এটাকে বোঝা গণ্য করা ঠিক হবে না। বরং সর্বকালে জনসংখ্যা মিশরের অগ্রগতির পথকে সুগম করেছে।” ওপর এক গবেষণায় ড. মোস্তফা আল-ফাক্কি আরব বিশ্বে মিশর একটি প্রভাবশালী দেশ হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন- ‘মিশর জনসম্পদের গুদামঘর হওয়া’। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ জনাব খোরশেদ আহমাদ বলেন: “ভবিষ্যতে প্রভাবশালী ক্ষমতা শুধু সেসব দেশেরই থাকবে যেসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ পর্যায়ে এবং একই সাথে তারা টেকনিক্যাল সাইন্সেও অগ্রসর। তাই পাশ্চাত্যের জাতিগুলো তাদের কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব ধরে রাখার জন্য এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে জনসংখ্যা হ্রাসকরণ ও বন্ধ্যাকরণ আন্দোলন প্রচার করে যাচ্ছে। এ কারণে পাশ্চাত্যের দেশগুলো তাদের জনসংখ্যা বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে তারা এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলন সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে সব ধরণের প্রচার মাধ্যমের সর্বোত্তম ব্যবহার করছে।”। তিনি আরও বলেন: “প্রফেসর অর্গানস্কি (আমেরিকান বুদ্ধিজীবী) ঠিকই বলেছেন: “ভবিষ্যতে সে সেনাবাহিনী হবে অধিক শক্তিশীলী যার সৈন্য সংখ্যা হবে বেশি।” তিনি আরও বলেন: ইতিহাসের ছাত্রের কাছে এটি অজানা নয় যে, জনসংখ্যার রয়েছে মৌলিক রাজনৈতিক গুরুত্ব। এ কারণে প্রত্যেক সভ্যতা ও পরাশক্তি তার গঠন ও বিনির্মাণের যুগে জনসংখ্যা বাড়ানোর উপর অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তাই তো, উইল ডুরান্ট (Will Durant) অধিক জনসংখ্যাকে সভ্যতার অগ্রসরতার অন্যতম কারণ হিসেবে গণ্য করেন। অনুরূপভাবে আরনল্ড টয়েনবী (Arnold Toynbee) জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে সে সব বুনিয়াদি চ্যালেঞ্জসমূহের অন্যতম বলে ঘোষণা করেছেন যেগুলোর জোরে যে কোন মানব সভ্যতার উন্নতি ও বিস্তৃতি ঘটে।”। তবে এ বক্তব্যকে যেন ভুলভাবে বুঝা না হয় সেজন্য বলতে হয়: শুধুমাত্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি উন্নতি, সমৃদ্ধি ও শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার গ্যারান্টি দেয় না। বরঞ্চ এটি প্রধান কারণ; কিন্তু একমাত্র কারণ নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে মজবুত শিক্ষা, সঠিক লালনপালন, সমাজিক ন্যায় ও নিরাপত্তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই থাকতে হবে। বরং সবকিছুর আগে: ঈমান ও তাকওয়া থাকতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত ও পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও জমিনী নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। ফলে আমি তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করলাম।[সূরা আরাফ; আয়াত: ৯৬] ইসলামের শত্রুরা মুসলমানদের সংখ্যাধিক্য সম্পর্কে জোর গলায় সতর্ক করে আসছে এবং এটাকে তাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুকমি মনে করছে। প্রফেসর আরনন সোফার এর রচিত Changes in the Geography of the Middle East (১৯৮৪খ্রিঃ) বইতে রয়েছে; যে বইটি ইহুদি রাস্ট্রে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত এবং সে দেশের সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টগুলোতে এটি ‘রেফারেন্স বই’ হিসেবে গণ্য, গ্রন্থকার মনে করেন, মিশরের জনসংখ্যার উর্ধ্বগামী হার ইসরাইলের আতংকের কারণ; যেহেতু এর মাধ্যমে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা যেতে পারে। ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকা তার ১৯/১/১৯৮৮ তারিখের সংখ্যায় ‘ভূ-মধ্যসাগরের অববাহিকায় জনসংখ্যার টাইম-বোমা’ এ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ ছেপেছে। এ প্রবন্ধে লেখক এ ইস্যুতে আলোচনা করেছেন যা পাশ্চাত্যের লোকদের চোখের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। সেটা হচ্ছে- ভূ-মধ্যসাগরের পূর্ব ও দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত দেশগুলোতে বড় ধরণের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং ভূ-মধ্যসাগরের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত দেশগুলোতে জনসংখ্যা ঘাটতি। এ প্রবন্ধে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক প্রকল্পের একটি প্রতিবেদন থেকে উদ্ধৃতি দেয়া হয় যে, পঞ্চাশ দশকের দিকে ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের দুই তৃতীয়াংশ ছিল ইউরোপিয়ান। তারা জিব্রাল্টার প্রণালী থেকে বসফরাস প্রণালী পর্যন্ত বিস্তৃত দেশগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। কিন্তু ২০২৫ সাল নাগাদ এ চিত্র বিপরীত রূপ ধারণ করবে। অচিরেই ভূ-মধ্যসাগর একটি ইসলামী সাগরে পরিণত হবে; যদিও পুরোপুরি আরব সাগরে পরিনত না হয়।

১৫২০

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭