সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ওয়াজের হাদিয়া গ্রহন
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : সোমবার ২৪/০২/২০২০

"ওয়াজে চুক্তি করে টাকা নেওয়া জায়েজ নেই




তাই ওয়াজ করার জন্য চুক্তি করে টাকা নেওয়া অথবা টাকা রোজগারের উদ্দেশ্যে ওয়াজ করা নাজায়েজ। 


কোরআনুল কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা সেই লোক যাদেরকে আল্লাহতায়ালা পথ প্রদর্শন করেছেন। অতএব, আপনি তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এটা তো সারা বিশ্বের জন্য উপদেশবাণী।’ –সূরা আনআম: ৯০


বস্তুত মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করা মানুষকে হেদায়েত বাণী শোনানোর অন্তর্ভুক্ত। এটা মানুষকে হেদায়েতের জন্য কোরআনে কারিম তেলাওয়াত শোনানোর ন্যায়; যা মানুষের হেদায়েতের ওসিলা হবে। আর হাদিস শরিফে মানুষের থেকে বিনিময় লাভের উদ্দেশ্যে তাদেরকে কোরআন শোনানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 


এ সম্পর্কে হাদিসে শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কোরআন পড়ো এবং তার ওপর আমল করো। আর তাতে সীমালংঘন করো না, তার ব্যাপারে শৈথিল্য করো না, তার বিনিময় খেয়ো না এবং তাকে নিয়ে রিয়া করো না।’ 

(মুসনাদে আহমাদ: ১৫৫৬৮, সুনানে বায়হাকি: ২৬২৪, মুজামে তাবরানি আওসাত: ২৫৭৪)


তেমনি অপর হাদিসে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি জনৈক পাঠকারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন- যে কোরআন পড়ছিলো। অতঃপর সে (মানুষের নিকট) চাইলো। তখন তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লেন। অতঃপর তাকে বললেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে, তার উচিত আল্লাহর কাছে তার বিনিময় চাওয়া। বস্তুত এমন কিছু দল আসবে যারা কোরআন পড়বে; যার বিনিময় মানুষের নিকট চাবে (তাদের একাজ অবাঞ্ছিত)।’ 

(জামে তিরমিজি: ২৯১৭, মুসনাদে আহমাদ: ১৯৯৫৮)


অপর হাদিসে এরূপ লোকদেরকে কিছু না দিতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘অচিরেই মানুষের ওপর এমন কাল আসবে; যে সময় কোরআন শোনানোর বিনিময় চাওয়া হবে। সুতরাং যখন তোমাদের কাছে তারা চাইবে, তখন তোমরা তাদেরকে দেবে না।’ (আত তাওজিহ লি-শরহিল জামিইস সহিহ: ১৭৪ পৃ.)


অনেকে ওয়াজকে মাদরাসার শিক্ষকতা কিংবা মসজিদের ফরজ নামাজের ইমামতির সঙ্গে তুলনা করে ওয়াজের জন্য চুক্তি করে টাকা নেওয়াকে জায়েজ করতে চান। কিন্তু এটা ঠিক নয়। 


মাদরাসার শিক্ষক অথবা মসজিদের ইমামের ওপর বক্তাকে কিয়াস (কোরআন, হাদিস বা ইজমার কোনো দলিল দ্বারা প্রমাণিত কোনো বিষয়ের ওপর অনুমান করে এই তিন উৎসে নেই এমন কোনো বিষয়ে মাসয়ালা নির্ণয় করাকে কিয়াস বলে) করা যাবে না। 


কেননা,মাযহাবে হানাফীতে যদিও ইমামতি ও শিক্ষকতার জন্য বেতন জায়েয নেওয়া নিষেধ আছে, তবে তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী যুগের আলেমরা বেতন গ্রহণকে জায়েজ বলেছেন। 


পরবর্তী যুগের আলেমদের পরিচয় প্রসঙ্গে ‘দুসতূরুল উলামা’ (২/১৭৮)তে বলা হয়েছে, ৪৪৮ হিজরি থেকে ৬৯৩ হিজরি পর্যন্ত আলেমরা উলামায়ে মুতাআখখিরিন কিংবা পরবর্তী যুগের অন্তর্ভুক্ত।


আর এটা এ কারণে যে, এ কাজের ওপর দ্বীনের ইলম ও আমলের স্থায়ীত্ব নির্ভরশীল। তাই বেতন না হলে, সেই অবস্থায় কেউ এ কাজের জন্য সময় বের করতে না পারলে দ্বীনের ইলম ও আমলের ক্ষতি হবে। কিন্তু ওয়াজ সে রকম কোনো বিষয় নয়। 


এ জন্য ফরজ নামাজের ইমামতির বিনিময় লেনদেনকে জায়েজ বলা হয় এবং তারাবির নামাজের ইমামতির বিনিময় বা খতমে তারাবির বিনিময় লেনদেনকে নাজায়েজ বলা হয়। 


কেননা, ওয়াক্তিয়া ফরজ নামাজের ইমামতি না হলে মসজিদে নামাজের জামাতের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ হুকুম আদায় বাধাগ্রস্ত হবে। কিন্তু তারাবির জামাত বা খতমে তারাবি সে রকম বিষয় নয়। কেননা, তারাবির জামাতের জন্য কোনো বিনিময়হীন ইমাম না পাওয়া গেলে কিংবা খতমে তারাবির জন্য নিবেদিত একনিষ্ঠ হাফেজ পাওয়া না গেলে; সে অবস্থায় একাকি সূরা তারাবির নামাজ আদায়ের বিকল্প হুকুম রয়েছে। 


অন্যদিকে শিক্ষকতা ও ইমামতির জন্য নিজের সময় বের করে মাদরাসা-মসজিদে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার বাধ্যবাধকতা থাকে। যার কারণে রোজগারের জন্য ভিন্নভাবে সময় দেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু ওয়াজের জন্য তা অপরিহার্য নয়। 


অধিকন্তু সারা দেশে দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে বিনা পারিশ্রমিকে দাওয়াত ও নসিহতের মেহনত চলছে। যার সঙ্গে জড়িতরা ক্রমধারায় মানুষের দ্বারে দ্বারে দাওয়াত ও হেদায়েতের জন্য বিনাবেতনে নিয়োজিত থাকছেন। প্রয়োজনে কিছু সময়-সুযোগ বের করে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে দাওয়াতের কাজকে প্রসারিত করা কর্তব্য।


সুতরাং মাদরাসায় পড়ানো বা মসজিদের ইমামতির জন্য মাস শেষে চুক্তিভিত্তিক নির্ধারিত বেতন নেওয়া বৈধ হলেও ওয়াজের জন্য সেভাবে শর্তারোপ করে টাকা বা হাদিয়া গ্রহণ করা বৈধ হবে না। কেউ এভাবে টাকা বা বিনিময় নিলে সেটা তার জন্য জায়েজ হবে না। 


উল্লেখ্য যে, বর্তমানে সম্মানিত বক্তাদের কেউ কেউ ওয়াজের জন্য টাকা লেনদেনের চুক্তি করায় তা সাধারণ মুসলমানদের মাঝে অনেক অশোভনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এতে আলেমদের মর্যাদাহানী হচ্ছে। যদিও কাজটিতে সবাই তাকওয়া তথা খোদাভীরুতার বিরোধী বলে সবাই স্বীকার করবেন।


সুতরাং এক্ষেত্রে সবার কর্তব্য হলো, দ্বীনের এ মহান (ওয়াজ) কাজ দাওয়াতে তাবলিগের মতো সম্পূর্ণ ফি সাবিলিল্লাহ হিসেবে করবেন। তদুপরি কেউ যাতায়াত খরচ হিসেবে কিছু দিলে সেটা নেওয়া যাবে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদেরকে অসন্তুষ্ট করে দরাদরি করা বা যাতায়াত খরচের বাইরে উচ্চবিলাসী দর হাঁকানো আলেমদের মর্যাদার পরিপন্থী কাজ। 


আবার এ বছর অযৌক্তিক চাহিদা রক্ষা না করায় আগামী বছর দাওয়াত না রাখাকেও দ্বীনী কর্তব্য পালনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।


বলা বাহুল্য, আমাদের দ্বীনী কাজগুলো আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য হওয়া উচিত। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই তো আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করেন। 


আল্লাহতায়ালা সবার সব দ্বীনী মেহনত কবুল করুন। আমিন। 




২০৪

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭