বর্তমানে
সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ডাক্তাররা এ রোগের ব্যাপারে বলছেন যে, রোগটি
ছোঁয়াচে। কিন্তু জনৈক ইমাম সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী বুখারী শরীফে নাকি একটি হাদীস
আছে, যেখানে
বলা হয়েছে ছোঁয়াচে রোগ বলতে কিছু নেই। ইসলামে কি ছোঁয়াচে
রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে? অথচ এটি একটি বাস্তব বিষয়। অনেকে আবার বলছে,
আল্লাহর নবী সা. যদি এমন কথা বলে থাকেন তাহলে তিনি ভুল বলেছেন (নাউজুবিল্লাহ)। অতএব
হুযুরের নিকট বিষয়টির সমাধান কামনা করছি।
মূল
উত্তরের আগে কয়েকটি কথা জেনে নেয়া উচিত।
ক) ইসলামের
কোনো বিষয়ই সঠিক বাস্তবতার পরিপন্থী নয়। কেননা, এ বিশ্বজগত যিনি সৃষ্টি কছেন তিনিই শরীয়ত দিয়েছেন। অতএব
ইসলামের কোনো বিষয়ের সাথে সঠিক বাস্তবতার সংঘর্ষ হতে পারে না। এবং যারা এ কথা
বলছে যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ‘আল্লাহর নবী সা. ভুল বলেছেন’ তাদের শীঘ্রই তাওবা করা
উচিত। কেননা এটা এমন একটি আপত্তিকর মন্তব্য যার ওপর ভিত্তি করে মানুষ ঈমান হারা
হয়ে যায়।
খ) এ বিশ্ব
জগতে যা কিছু হয় সবই আল্লাহ তাআলার ফয়সালাতে হয়ে থাকে। এর পিছনে যেসব আসবাবকে
বাহ্যিক কার্যকারণ হিসেবে দেখা যায় এগুলো যদিও বাস্তব, তবে এসবের
কার্য ও ক্রিয়া করার ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। আল্লাহ তাআলা ক্রিয়া করার ক্ষমতা না
দিলে এগুলো ক্রিয়া করতে পারবে না। এজন্যই ইবরাহীম আ.কে আগুনে নিক্ষেপের পরও
আল্লাহর হুকুম না হওয়ার কারণে আগুন কোনো ক্রিয়া করতে পারেনি।
গ)
সুস্থতা-অসুস্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়। সুস্থতার যেমন বিভিন্ন কারণ রয়েছে
তদ্রূপ অসুস্থতারও বিভিন্ন কারণ আছে। যেমন-মাত্রাতিরিক্ত ঠান্ডায় সর্দি বা জ্বর
হয়। তেমনিভাবে রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ এটিও যে, সংক্রামক
রোগে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া। এটি একটি বাস্তব বিষয়। শরীয়ত একে
অস্বীকার করেনি। তবে অন্যান্য আসবাবের ব্যাপারে যে কথা এখানেও একই কথা-কার্য ও
ক্রিয়া করার ক্ষমতা আল্লাহপ্রদত্ত। রোগের মধ্যে ক্রিয়া করার নিজস্ব ক্ষমতা নেই।
তাই আল্লাহ চাইলে রোগাক্রান্ত হবে নতুবা হবে না। এজন্যই দেখা যায়, সংস্পর্শে
যাওয়ার পরও অনেকে রোগাক্রান্ত হয় না।
ভূমিকার পর
মূল উত্তর দেওয়া হল।
প্রশ্নে যে
হাদীসের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে এর মূল আরবী পাঠ এর সঠিক তরজমা এই, ‘রোগ-ব্যধি
(তার নিজস্ব ক্ষমতায়) একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে লেগে যায় না।’ (সহীহ
মুসলিম, হাদীস :
৫৭৪২)
ছোঁয়াচে
রোগ বলতে কিছু নেই-হাদীসের এ তরজমা বিশুদ্ধ নয়। কেননা, এর থেকে
বোঝা যায়, বাস্তব ছোঁয়াচে রোগকে ইসলাম অস্বীকার করেছে।
অথচ রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ যেমনিভাবে বাস্তব তদ্রূপ রোগাক্রান্ত হওয়ার
এই কারণটিও বাস্তব।
ইসলাম একে অস্বীকার করেনি। এক্ষেত্রে যে বিষয়টিকে ভ্রান্ত ও বাতিল সাব্যস্ত করা
হয়েছে তা হল, কোনো ব্যাধিকে এমন মনে করা যে, তা নিজে
নিজেই সংক্রমিত হয়। যেমনটি জাহেলী যুগে মনে করা হত। উপকার ও অপকারের একমাত্র
মালিক আল্লাহ তাআলা। হায়াত-মওত, সুস্থতা-অসুস্থতা সবই তাঁর হুকুমে হয়ে থাকে।
মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত
হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমনের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং
আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু
রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে
বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা
দোষের নয়। বরং কিছু হাদীসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
-বাযলুল
মাজহূদ ১৬/২৪২; শরহুন নববী ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর ৬/৪৩৩; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৪/৩৭০; তরজুমানুস সুন্নাহ ২/৪১৬; বুলুগুল আরাব ফী
মারিফাতি আহওয়ালিল আরব ২/৩১৫
হাফেজ
মাওলানা মুফতি জুবায়ের হাসান
কেন্দ্রীয়
জামে মসজিদ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
তারিখঃ-
১৩/০৪/২০২০ ইং
১৫
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
প্রশ্নঃবর্তমানে সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ডাক্তাররা এ রোগের......