১. সমস্ত শরীর ঢাকা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَقُل لِّلۡمُؤۡمِنَٰتِ يَغۡضُضۡنَ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِنَّ وَيَحۡفَظۡنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنۡهَاۖ وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ أَوۡ ءَابَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآئِهِنَّ أَوۡ أَبۡنَآءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوۡ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ إِخۡوَٰنِهِنَّ أَوۡ بَنِيٓ أَخَوَٰتِهِنَّ أَوۡ نِسَآئِهِنَّ أَوۡ مَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُهُنَّ أَوِ ٱلتَّٰبِعِينَ غَيۡرِ أُوْلِي ٱلۡإِرۡبَةِ مِنَ ٱلرِّجَالِ أَوِ ٱلطِّفۡلِ ٱلَّذِينَ لَمۡ يَظۡهَرُواْ عَلَىٰ عَوۡرَٰتِ ٱلنِّسَآءِۖ وَلَا يَضۡرِبۡنَ بِأَرۡجُلِهِنَّ لِيُعۡلَمَ مَا يُخۡفِينَ مِن زِينَتِهِنَّۚ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٣١﴾ [النور: ٣١]
“আর মুমিন নারীদেরকে বল, যেন তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীন যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১]
অন্যত্র বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ذَٰلِكَ أَدۡنَىٰٓ أَن يُعۡرَفۡنَ فَلَا يُؤۡذَيۡنَۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ٥٩﴾ [الاحزاب: ٥٩]
“হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজদের উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেওয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯]
২. কারুকার্য ও নকশা বিহীন পর্দা ব্যবহার করা:
তার প্রমাণ পূর্বে বর্ণিত সূরা নুরের আয়াত وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ “তারা স্বীয় রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না।” এ আয়াতের ভেতর কারুকার্য খচিত পর্দাও অন্তর্ভুক্ত। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা যে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বারণ করেছেন, সে সৌন্দর্যকে আরেকটি সৌন্দর্য দ্বারা আবৃত করাও নিষেধের আওতায় আসে। তদ্রূপ সে সকল নকশাও নিষিদ্ধ, যা পর্দার বিভিন্ন জায়গায় অঙ্কিত থাকে বা নারীরা মাথার উপর আলাদাভাবে বা শরীরের কোনো জায়গায় যুক্ত করে রাখে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَقَرۡنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ ٱلۡأُولَىٰ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মতো সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৩]
التبرج অর্থ: নারীর এমন সৌন্দর্য ও রূপ-লাবণ্য প্রকাশ করা, যা পুরুষের যৌন উত্তেজনা ও সুড়সুড়ি সৃষ্টি করে। এ রূপ অশ্লীলতা প্রদর্শন করা কবিরা গুনাহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর না। (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস হবে।) ক. যে ব্যক্তি মুসলিমদের দল থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল। খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল। গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হলো।”[35]
৩. পর্দা সুগন্ধি বিহীন হওয়া:
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রচুর হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সুগন্ধি ব্যবহার করে নারীদের বাইরে বের হওয়া হারাম। সংক্ষিপ্ততার জন্য আমরা এখানে উদাহরণস্বরূপ, রাসূলের একটি হাদীস উল্লেখ করছি, তিনি বলেন, “যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হলো, অতঃপর কোনো জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে নারী ব্যভিচারিণী।”[36]
৪. শীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ভেসে উঠে এমন পাতলা ও সংকীর্ণ পর্দা না হওয়া।
ইমাম আহমদ রহ. উসামা ইবন যায়েদের সূত্রে বর্ণনা করেন, “দিহইয়া কালবির উপহার দেওয়া, ঘন বুননের একটি কিবতি কাপড় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে পরিধান করতে দেন। আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়ে দিই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাকে বলেন, কী ব্যাপার, কাপড় পরিধান কর না? আমি বললাম, আল্লাহর রাসূল, আমি তা আমার স্ত্রীকে দিয়েছি। তিনি বললেন, তাকে বল, এর নিচে যেন সে সেমিজ ব্যবহার করে। আমার মনে হয়, এ কাপড় তার হাড়ের আকারও প্রকাশ করে দিবে।”[37]
৫. পর্দা শরীরের রং প্রকাশ করে দেয় এমন পাতলা না হওয়া।
সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জাহান্নামের দু’ প্রকার লোক আমি এখনও দেখি নি:
(ক) সেসব লোক যারা গরুর লেজের মতো বেত বহন করে চলবে, আর মানুষদের প্রহার করবে।
(খ) সে সব নারী, যারা কাপড় পরিধান করেও বিবস্ত্র থাকবে, অন্যদের আকৃষ্ট করবে এবং তারা নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে ঘোড়ার ঝুলন্ত চুটির মত। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তার ঘ্রাণও পাবে না।
৬. নারীর পর্দা পুরুষের পোশাকের ন্যায় না হওয়া।
ইমাম বুখারী ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণকারী নারী এবং নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণকারী পুরুষের ওপর অভিসম্পাত করেছেন।”[38]
৭. সুখ্যাতির জন্য পরিধান করা হয় বা মানুষ যার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে, পর্দা এমন কাপড়ের না হওয়া।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “যে ব্যক্তি সুনাম সুখ্যাতির পোশাক পরিধান করবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন অনুরূপ কাপড় পরিধান করাবেন, অতঃপর জাহান্নামের লেলিহান আগুনে তাকে দগ্ধ করবে।” সুনাম সুখ্যাতির কাপড়, অর্থাৎ যে কাপড় পরিধান করার দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি লাভ উদ্দেশ্য হয়। যেমন, উৎকৃষ্ট ও দামি কাপড়, যা সাধারণত দুনিয়ার সুখ-ভোগ ও চাকচিক্যে গর্বিত-অহংকারী ব্যক্তিরাই পরিধান করে। এ হুকুম নারী-পুরুষ সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যে কেউ এ ধরনের কাপড় অসৎ উদ্দেশ্যে পরিধান করবে, কঠোর হুমকির সম্মুখীন হবে, যদি তাওবা না করে মারা যায়।
৮. পর্দা বিজাতীয়দের পোশাক সাদৃশ্য না হওয়া।
ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আবু দাউদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেন, “যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখল, সে ওই সম্প্রদায়ের লোক হিসেবে গণ্য।”
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿أَلَمۡ يَأۡنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن تَخۡشَعَ قُلُوبُهُمۡ لِذِكۡرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلۡحَقِّ وَلَا يَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلُ﴾ [الحديد: ١٦]
“যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাযিল হয়েছে, তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয় নি? আর তারা যেন তাদের মতো না হয়, যাদেরকে ইতঃপূর্বে কিতাব দেওয়া হয়েছিল।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১৬]
ইবন কাসীর অত্র আয়াতের তাফসীরে বলেন, “এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে মৌলিক কিংবা আনুষাঙ্গিক যে কোনো বিষয়ে তাদের সামঞ্জস্য পরিহার করতে বলেছেন। ইবন তাইমিয়্যাও অনুরূপ বলেছেন। অর্থাৎ অত্র আয়াতে নিষেধাজ্ঞার পরিধি ব্যাপক ও সব ক্ষেত্রে সমান, কাফিরদের অনুসরণ করা যাবে না।”[39]
সমাপ্ত
২২
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
মুসলিম নারীর পর্দার জরুরি শর্তসমূহ১. সমস্ত শরীর ঢাকা:আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿وَقُل......
ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি ও জাতীয় কলঙ্ক। আমাদের সমাজে এখন......
দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীর কর্তব্য:১. স্বামীর অসন্তুষ্টি থেকে বিরত থাকা। রাসূলুল্লাহ......
﴿وَمَا كَانَ لِمُؤۡمِنٖ وَلَا مُؤۡمِنَةٍ إِذَا قَضَى ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥٓ أَمۡرًا......
নারীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব:আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا......
আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুই ভাগে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষ আর নারী।......