সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ওয়াহী
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : মঙ্গলবার ২১/১১/২০১৭

৬। আবূল ইয়ামান হাকাম ইবনু নাফি (রহঃ) আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আবূ সুফিয়ান ইবনু হরব তাকে বলেছেন, বাদশাহ হিরাকল একবার তাঁর কাছে লোক পাঠালেন। তিনি কুরাইশদের কাফেলায় তখন ব্যবসা উপলক্ষে সিরিয়ায় ছিলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সুফিয়ান কুরাইশদের সাথে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্ধিবদ্ধ ছিলেন। আবূ সুফিয়ান তার সঙ্গীদের সহ হিরাকলের কাছে এলেন এবং তখন হিরাকল জেরুযালেমে অবস্থান করছিলেন। হিরাকল তাদেরকে তাঁর নিকটে ডাকলেন। তার পাশে তখন রোমের নেত্রীস্থানীয় ব্যাক্তিগন উপস্থিত ছিল। এরপর তাদের কাছে ডেকে নিলেন এবং দোভাষীকে ডাকলেন

তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, এই যে ব্যাক্তি নিজেকে নাবী বলে দাবী করে তোমাদের মধ্যে বংশের দিক দিয়ে তাঁর সবচেয়ে নিকটাত্মীয় কে? আবূ সুফিয়ান বললেন, আমি বললাম, বংশের দিক দিয়ে আমিই তাঁর নিকটাত্মীয়। তিনি বললেন, তাঁকে আমার খুব কাছে নিয়ে এস এবং তাঁর সঙ্গীদেরও কাছে এনে পেছনে বসিয়ে দাও। এরপর তাঁর দোভাষীকে বললেন, তাদের বলে দাও, আমি এর কাছে সে ব্যাক্তি সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করবো, সে যদি আমার কাছে মিথ্যা বলে, তবে সাথে সাথে তোমরা তাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রকাশ করবে। আবূ সুফিয়ান বলেন, আল্লাহ্ কসম! তারা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে প্রচার করবে- লজ্জা যদি আমার না থাকত, তবে অবশ্যই আমি তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম

এরপর তিনি তাঁর সম্পর্কে আমাকে প্রথম প্রশ্ন যে করেন তা হচ্ছে, তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশমর্যাদা কেমন?’ আমি বললাম, তিনি আমাদের মধ্যে অতি সম্ভ্রান্ত বংশের। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে এর আগে আর কখনো কি কেউ একথা বলেছে?’ আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তাঁর বাপ-দাদাদের মধ্যে কি কেউ বাদশাহ ছিলেন?’ আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তারা কি সংখ্যায় বাড়ছে, না কমছে?’ আমি বললাম, তারা বেড়েই চলেছে। তিনি বললেন, তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর কেউ কি নারায হয়ে তা পরিত্যাগ করে?’ আমি বললাম, না। তিনি বললেন, নবূয়তের দাবীর আগে তোমরা কি কখনো তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ?’ আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তিনি কি চুক্তি ভঙ্গ করেন?’ আমি বললাম, না। তবে আমরা তাঁর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ের চুক্তিতে আবদ্ধ আছি। জানিনা, এর মধ্যে তিনি কি করবেন।

আবূ সুফিয়ান বলেন, কথাটুকু ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে আর কোন কথা সংযোজনের সুযোগই আমি পাইনি। তিনি বললেন, তোমরা কি তাঁর সাথে কখনো যুদ্ধ করেছ?’ আমি বললাম, হাঁ। তিনি বললেন, তাঁর সঙ্গে তোমাদের যুদ্ধ কেমন হয়েছে?’ আমি বললাম, তাঁর আমাদের মধ্যে যুদ্ধের ফলাফল কুয়ার বালতির ন্যায়। কখনো তাঁর পক্ষে যায়, আবার কখনো আমাদের পক্ষে আসে। তিনি বললেন, তিনি তোমাদের কিসের আদেশ দেন?’ আমি বললাম, তিনি বলেনঃ তোমরা এক আল্লাহ্ ইবাদত কর এবং তাঁর সঙ্গে কোন কিছুর শরীক করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার ভ্রান্ত মতবাদ ত্যাগ কর। আর তিনি আমাদের সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করার, সত্য কথা বলার, নিষ্কলুষ থাকার এবং আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দেন।

তারপর তিনি দোভাষীকে বললেন, তুমি তাকে বল, আমি তোমার কাছে তাঁর বংশ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তুমি তার জওয়াবে উল্লেখ করেছ যে, তিনি তোমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের। প্রকৃতপক্ষে রাসূল গণকে তাঁদের কওমের উচ্চ বংশেই প্রেরণ করা হয়ে থাকে। তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, কথা তোমাদের মধ্যে ইতিপূর্বে আর কেউ বলেছে কিনা? তুমি বলেছ, না। তাই আমি বলছি যে, আগে যদি কেউ কথা বলে থাকত, তবে অবশ্যই আমি বলতে পারতাম, এমন ব্যাক্তি, যে তাঁর পূর্বসূরীর কথারই অনুসরণ করছে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে কোন বাদশাহ ছিলেন কি না? তুমি তার জবাবে বলেছ, না। তাই আমি বলছি যে, তাঁর পূর্বপুরুষের মধ্যে যদি কোন বাদশাহ থাকতেন, তবে আমি বলতাম, ইনি এমন এক ব্যাক্তি যিনি তাঁর বাপ-দাদার বাদশাহী ফিরে পেতে চান। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি- এর আগে কখনো তোমরা তাঁকে মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছ কি না? তুমি বলেছ, না। এতে আমি বুঝলাম, এমনটি হতে পারে না যে, কেউ মানুষের ব্যাপারে মিথ্যা ত্যাগ করবে অথচ আল্লাহ্ ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলবে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, শরীফ লোক তাঁর অনুসরন করে, না সাধারণ লোক? তুমি বলেছ, সাধারণ লোকই তাঁর অনুসরণ করে। আর বাস্তবেও এরাই হন রাসূল গণের অনুসারী। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তারা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি বলেছ বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানে পূর্ণতা লাভ করা পর্যন্ত রকমই হয়ে থাকে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি, তাঁরা দ্বীনে দাখিল হওয়ার পর নারায হয়ে কেউ কি তা ত্যাগ করে? তুমি বলেছ, না। ঈমানের স্নিগ্ধতা অন্তরের সাথে মিশে গেলে ঈমান এরূপই হয়। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি চুক্তি ভঙ্গ করেন কি না? তুমি বলেছ, না। প্রকৃতপক্ষে রাসূল গণ এরূপই, চুক্তি ভঙ্গ করেন না। আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি তোমাদের কিসের নির্দেশ দেন। তুমি বলেছ, তিনি তোমাদের এক আল্লাহ্ ইবাদত করা তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক না করার নির্দেশ দেন। তিনি তোমাদের নিষেধ করেন মূর্তিপূজা করতে আর তোমাদের আদেশ করেন সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করতে, সত্য কথা বলতে কলুষমুক্ত থাকতে। তুমি যা বলেছ তা যদি সত্য হয়, তবে শীঘ্রই তিনি আমার দুপায়ের নীচের জায়গার মালিক হবেন। আমি নিশ্চিত জানতাম, তাঁর আবির্ভাব হবে; কিন্তু তিনি যে তোমাদের মধ্যে থেকে হবেন, কথা ভাবিনি। যদি জানতাম, আমি তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারব, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য আমি যে কোন কষ্ট স্বীকার করতাম। আর আমি যদি তাঁর কাছে থাকতাম তবে অবশ্যই তাঁর দুখানা পা ধুয়ে দিতাম। এরপর তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেই পত্রখানি আনতে বললেন, যা তিনি দিহ্য়াতুল কালবীর মাধ্যমে বসরার শাসকের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি তা পাঠ করলেন। তাতে লেখা ছিলঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম (দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহ্ নামে) আল্লাহ্ বান্দা তাঁর রাসুল মুহাম্মদএর পক্ষ থেকে রোম সম্রাট হিরাকল এর প্রতি। --শান্তি (বর্ষিত হোক) তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসরণ করে। তারপর আমি আপনাকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। ইসলাম গ্রহণ করুন, নিরাপদে থাকবেন। আল্লাহ্ আপনাকে দ্বিগুণ পুরষ্কার দান করবেন। আর যদি মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে সব প্রজার পাপই আপনার উপর বর্তাবে। হে আহলে কিতাব! এস সে কথার দিকে, যা আমাদের তোমাদের মধ্যে একই; যেন আমরা আল্লাহ্ ব্যতীত আর কারো ইবাদত না করি, কোন কিছুকেই তাঁর শরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ্ ব্যতীত রব রূপে গ্রহণ না করি। যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলো, তোমরা সাক্ষী থাক, আমরা মুসলিম (:৬৪)

আবূ সুফিয়ান বলেন, হিরাকল যখন তাঁর বক্তব্য শেষ করলেন এবং পত্র পাঠও শেষ করলেন, তখন সেখানে শোরগোল পড়ে গেল, চীৎকার হৈ-হল্লা তুঙ্গে উঠল এবং আমাদের বের করে দেওয়া হল। আমাদের বের করে দিলে আমি আমার সঙ্গীদের বললাম, আবূ কাবশার ছেলের বিষয়তো শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, বনূ আসফার (রোম)-এর বাদশাহও তাকে ভয় পাচ্ছে। তখন থেকে আমি বিশ্বাস করতে লাগলাম, তিনি শীঘ্রই জয়ী হবেন। অবশেষে আল্লাহ্ তাআলা আমাকে ইসলাম গ্রহণের তওফীক দান করলেন

ইবনু নাতূর ছিলেন জেরুযালেমের শাসনকর্তা এবং হিরাকলের বন্ধু সিরিয়ার খৃষ্টানদের পাদ্রী। তিনি বলেন, হিরাকল যখন জেরুযালেম আসেন, তখন একদিন তাঁকে বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। তাঁর একজন বিশিষ্ট সহচর বলল, আমরা আপনার চেহারা আজ বিবর্ণ দেখতে পাচ্ছি, ’ ইবনু নাতূর বলেন, হিরাকল ছিলেন জ্যোতিষী, জ্যোতির্বিদ্যায় তাঁর দক্ষতা ছিল। তারা জিজ্ঞাসা করলে তিনি তাদের বললেন, আজ রাতে আমি তারকারাজির দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম, খতনাকারীদের বাদশাহ আবির্ভূত হয়েছেন। বর্তমান যুগে কোন্ জাতি খতনা করে?’ তারা বলল, ইয়াহূদী ছাড়া কেউ খতনা করে না। কিন্তু তাদের ব্যাপার যেন আপনাকে মোটেই চিন্তিত না করে। আপনার রাজ্যের শহরগুলোতে লিখে পাঠান, তারা যেন সেখানকার সকল ইয়াহূদীকে হত্যা করে ফেলে। তারা যখন ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত ছিল, তখন হিরাকলের কাছে এক ব্যাক্তিকে উপস্থিত করা হল, যাকে গাসসানের শাসনকর্তা পাঠিয়েছিল। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্পর্কে খবর দিচ্ছিল। হিরাকল তার কাছ থেকে খবর জেনে নিয়ে বললেন, তোমরা একে নিয়ে গিয়ে দেখ, তার খতনা হয়েছে কি-না। তারা তাকে নিয়ে দেখে এসে সংবাদ দিল, তার খতনা হয়েছে। হিরাকল তাকে আরবদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে জওয়াব দিল, তারা খতনা করে। তারপর হিরাকল তাদের বললেন, ইনি [রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] উম্মতের বাদশাহ। তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। এরপর হিরাকল রোমে তাঁর বন্ধুর কাছে লিখলেন। তিনি জ্ঞানে তাঁর সমকক্ষ ছিলেন। পরে হিরাকল হিমস চলে গেলেন। হিমসে থাকতেই তাঁর কাছে তাঁর বন্ধুর চিঠি এলো, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাব এবং তিনই যে প্রকৃত নাবী, ব্যাপারে হিরাকলের মতকে সমর্থন করছিল। তারপর হিরাকল তাঁর হিমসের প্রাসা রোমের নেতৃস্থানীয় ব্যাক্তিদের ডাকলেন এবং প্রাসাদর সব দরজা বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। দরজা বন্ধ করা হল। তারপর তিনি সামনে এসে বললেন, হে রোমবাসী! তোমরা কি কল্যাণ, হিদায়ত এবং তোমাদের রাষ্ট্রের স্থায়িত্ব চাও? তাহলে এই নাবী' রায়আত গ্রহণ কর। কথা শুনে তারা জংলী গাধার মত ঊর্ধ্বশ্বাসে দরজার দিকে ছুটল, কিন্তু তারা তা বন্ধ অবস্থায় পেল। হিরাকল যখন তাদের অনীহা লক্ষ্য করলেন এবং তাদের ঈমান থেকে নিরাশ হয়ে গেলেন, তখন বললেন, ওদের আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তিনি বললেন, আমি একটু আগে যে কথা বলেছি, তা দিয়ে তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপর কতটুকু অটল, কেবল তার পরীক্ষা করেছিলাম। এখন আমি তা দেখে নিলাম। একথা শুনে তারা তাঁকে সিজদা করল এবং তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হল। এই ছিল হিরাকল এর শেষ অবস্থা। আবূ আবদুল্লাহ [বুখারী (রহঃ)] বলেন, সালেহ ইবনু কায়সান (রহঃ), ইউনুস (রহঃ) মামার (রহঃ) হাদীস যুহরী (রহঃ) থেকে রিওয়ায়েত করেছেন।

২৪৮

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭