অযোগ্য নও তুমি আল্লাহর কাছে
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উদার মানুষ ছিলেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর উদারতার সামনে সাগরের বিশালতাও হার মানতো। আকাশের চেয়েও বিরাট এবং সাহারার চেয়েও প্রশস্ত ছিল তাঁর হৃদয়। আর সেই প্রশস্ত ও উদার হৃদয়ের শামিয়ানায় সবাই সমান গুরুত্ব পেতো। হোক সে সাধারণ কিংবা সমাজের চোখে তুচ্ছ কেউ। এমন লোকের প্রতিও সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতেন তিনি যার তেমন কোনো গুরুত্বই ছিল না সমাজে।
.
বনি আশযা‘ আরবের অন্যতম প্রসিদ্ধ গোত্র বনি গাতফানের একটি শাখা। প্রাচীন যুগ থেকে এ গোত্রটির বসবাস ছিল মদিনার শহরতলীতে। ওই গোত্রের এক বেদুইন যাহির ইবন হারাম রা. মদিনা থেকে কিছু দূরত্বে বসবাস করতেন। অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন তিনি। চেহারার দিক দিয়েও দেখতে খুব একটা সুন্দর ছিলেন না। তবে তার একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আল্লাহর রাসূল সা.ও তাকে খুব মহব্বত করতেন।
.
যাহির ইবন হারাম আশযায়ি‘ রা. যখনই মদিনা আসতেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর জন্য কিছু না কিছু গ্রাম্য উপঢৌকন নিয়ে আসতেন। যেমন: টাটকা সবজি, ফলমূল, যব, মধু ইত্যাদি। যাহির রা. যখন ফিরে যেতেন, আল্লাহর রাসূলও তাকে শহুরে হাদিয়া-তোহফা দিয়ে বিদায় জানাতেন।
.
একদিন তো আল্লাহর রাসূল সা. যাহির রা. কে এমন সম্মান দিলেন, যা অন্য কোনো সাহাবির ভাগ্যে জোটে নি। তিনি সা. বললেন, ‘যাহির আমার গ্রাম্য বন্ধু আর আমি তার শহুরে বন্ধু।’
আহা! কী মহানুভবতা! কী মায়াভরা উক্তি!
আসুন, হাদিসে বর্ণিত শব্দগুলোর উপর একটু চিন্তা করি:
(إن لكل حاضرة بادية وبادية آل محمد زاهر بن حرام)
“নিশ্চয়ই প্রত্যেক শহুরে পরিবারের একজন গ্রাম্য বন্ধু থাকে আর মুহাম্মদের পরিবারের গ্রাম্য বন্ধু হচ্ছে যাহির ইবন হারাম।”
.
যাহির রা. ছিলেন সহজ, সরল। সাদাসিধে মানুষ। শহুরে চালচলন সম্পর্কে ছিলেন বেখবর। নিজ গ্রাম থেকে যখন আসতেন, সঙ্গে আনা পণ্যসামগ্রী নিয়ে বাজারের মধ্যেই কোনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যেতেন এবং বিক্রি আরম্ভ করে দিতেন। প্রাচীনকাল থেকে প্রথা চলে আসছিল, যখনই গ্রাম থেকে কোনো ব্যক্তি সবজি, ফলমূল ইত্যাদি নিয়ে আসত লোকজন দৌড়ে এসে তার চতুর্দিকে জড়ো হয়ে যেত। এভাবে তারা তাজা টাটকা সবজি পেয়ে যেত যা প্রায়শই সস্তা হতো।
.
একদা একই কায়দায় যাহির রা. সঙ্গে আনা গ্রাম্য কিছু পণ্যসামগ্রীসহ বাজারে এলেন এবং এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তা বিক্রি করতে লাগলেন। তার ভাগ্য ভালোই ছিল, আল্লাহর রাসূল সা.ও বাজারে আসেন তখন। এসে রাসূলুল্লাহ সা. যখন তাঁর গ্রাম্য বন্ধুকে দেখলেন, পিছনের দিক দিয়ে গিয়ে তার চোখের উপর তাঁর পবিত্র হাত রাখলেন।
.
সুপ্রিয় পাঠক! সামনে যাবার আগে একটু চিন্তা করুন তো, রাসূলুল্লাহ সা.এর চরিত্র কত উন্নত ও মহৎ ছিল! যাহির অতি সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তার অত্যন্ত ভালো গুণ হচ্ছে, আল্লাহর রাসূল সা. তাকে ভালোবাসেন আর তিনিও আল্লাহর রাসূল সা.কে মহব্বত করেন।
.
রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন:
(ابغوني في ضعفاءكم)
“আমাকে তোমরা দুর্বলদের মধ্যে তালাশ করো।”
তিনি আরো বলেন: (فإنما ترزقون وتنصرون بضعفائكم) “তোমাদেরকে রিযিক ও বিজয় দান করা হয় সেই দুর্বলদের কারণেই।”
.
একটু কল্পনা করুন তো, বন্ধুরা! যাহিরের চোখের উপর রাসূলুল্লাহ সা.এর রেশমের চেয়েও নরম ও তুলতুলে এবং কস্তুরি ও গোলাপের চাইতেও বেশি সুগন্ধিময় হাত। প্রথম প্রথম তো যাহির ভড়কে গেছেন। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তিনি বলতে লাগলেন, কে ভাই? আমার চোখের উপর কে হাত রাখল?
.
কিন্তু যখন তিনি রাসূলুল্লাহ সা.এর মোবারক হাতের ছোঁয়া অনুভব করলেন, তাঁর সুরভির ঘ্রাণ নিলেন.. তখন তিনি বুঝতে পারলেন, তার পিছনে জগতের ইমাম দাঁড়িয়ে। এ সুযোগকে তিনি গনিমত মনে করলেন এবং পিঠ দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.এর সিনার সাথে ঘষা আরম্ভ করে দিলেন।
.
আল্লাহর রাসূল সা. মহব্বতপূর্ণ ভঙ্গিতে বললেন, "হে লোকজন! কেউ কি আছো, যে এই গোলামকে কিনে নিবে?”
যাহিরও সকরুণ ভঙ্গিমায় আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার মত কালো কৃঞ্চ গ্রাম্য লোককে কিনে নিয়ে কেউ করবে টা কী? আমাকে কিনে বড় লোকসান হবে তার। কোনো মান বা মূল্যই তো নেই আমার। আমি তো বেকার, অপদার্থ মানুষ।
.
রাসূলুল্লাহ সা. জবাবে বললেন: “আরে প্রিয়! এমনটি বলো না। কেউ কি তোমাকে বলেছে, তোমার কোনো মান নেই, মূল্য নেই? তুমি আল্লাহর নিকট অপদার্থ নও। তুমি তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাস। এ জন্যে তুমি আল্লাহর নিকট বড়ই মূল্যবান।”
৪১০
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
অনেকের ধারণা, বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক হবার জন্য তথাকথিত উচ্চশিক্ষা ও......
প্রভু প্রজ্ঞা দান করুন হে আমার প্রভু! আমাকে প্রজ্ঞা দান......
পাপ থেকে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া আমাদের আদি পিতা হযরত আদম......
বিপদ-অাপদ মানুষকে সম্মানিত করে পিতাবিহীন সন্তানের মা হতে যাচ্ছেন- এ......
ইমামগণ সমাজের বাতিঘর ইসলাম সবসময় শান্তির কথা বলে। এ শান্তির......
অাল্লাহ অন্তর ও অামল দেখেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ......
کلّ بدعة ضلالة. অর্থ : প্রত্যেক বিদঅাত গুমরাহী বা পথভ্রষ্টতা।......
নামাযের পর তাড়াহুড়ো করবেন না ফরয নামাযের পরবর্তী সময়টা অত্যন্ত......
স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় এম সোলাইমান কাসেমী প্রিয় বাংলাদেশ'র অনেক পরে......
من صمت نجا. অর্থ : যে চুপ থাকে সে নাজাত......