ঈমানের বলে বলিয়ান হোন
আবদুল্লাহ ইবন উবাইয়ের ছেলের নামও ছিল আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহ ইবন উবাই যত বড় মুনাফিক ও ইসলামের শত্রু ছিল তার ছেলে তত বড় নবীপ্রেমী ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সা.এর জন্য জান বিসর্জনকারী ছিলেন। ছিলেন উচ্চমার্গের মু’মিন। একজন জঘন্য মুনাফিকের ঘরে এমন আশেকে রাসূল ঠিক যেন আঁধার ঘরে বহ্ণিশিখা। যে শিখা অন্ধকারের বিরুদ্ধে আজীবন যুদ্ধ চালিয়ে গেছে।
.
বনি মুস্তালিক যুদ্ধে আবদুল্লাহ ইবন উবাইয়ের বাজে মন্তব্যটি তার কানেও পৌঁছে। সে বলেছিল, যারা রাসূলুল্লাহ সা.এর সঙ্গে আছে তাদের উপর অর্থ ব্যয় করো না। এমনকি সে আল্লাহর রাসূল সা.কে ছেড়ে পালিয়েও যায়। বলল, আমরা যদি মদিনা পৌঁছি তাহলে মদিনার সম্মানিত লোক লাঞ্চিত লোকদের বের করে দেবে। এটা বলে সে নিজেকে সম্মানিত এবং (নাউজুবিল্লাহ) রাসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাহাবিদেরকে লাঞ্চিত বলে মন্তব্য করেছিল।
.
এমন মন্তব্য এড়িয়ে যাবার মত সাধারণ বিষয় ছিল না। তাই আল্লাহর রাসূল সা. আনসারদের সম্মানিত সর্দার উসাইদ ইবন হুদাইর রা.কে ডেকে বললেন,
(أو ما بلغك ما قال صاحبكم)
-“তোমাদের সাথী যেসব কথা বলেছে তা কি তুমি জানো?”
উসাইদ ইবন হুদাইর আরজ করলেন,
-হে আল্লাহর রাসূল! কোন সাথী?
বললেন,
-“আবদুল্লাহ ইবন উবাই।”
আরজ করলেন,
-কী বলেছে সে?
বললেন,
(زعم إن رجع إلى المدينة ليخرجن الأعز منها الأذل)
-“ তার ধারণা, সে যখন মদিনা ফিরে যাবে তখন যে সম্মানিত সে লাঞ্চিতকে বের করে দেবে।”
হযরত হুদাইর রা. আরজ করলেন,
-আল্লাহর কসম! আপনি চাইলে, আপনিই তাকে মদিনা থেকে বের করে দিবেন। হে আল্লাহর রাসূল সা.! আপনি সম্মানিত। লাঞ্চিত হল সে। অত:পর আরজ করলেন,
-হে আল্লাহর রাসূল! তার সাথে কোমল ব্যবহারের অনুরোধ করছি। আল্লাহর কসম! আপনাকে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের নিকট এমন মুর্হূতে নিয়ে এসেছেন যখন স্বজাতির লোকজন তাকে খুব মানত। তার মাথায় রাজকীয় মুকুট পরানোর জন্য প্রস্তুত ছিল। সে মনে করে, আপনি তার রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছেন।
.
এসব কথা সবিস্তারে আবদুল্লাহ রা.এর নিকট তখনই পৌঁছে যখন তার পিতা বনি মুস্তাালিক যুদ্ধ থেকে ফিরছিল। তখনও শহরে প্রবেশ করেনি। আবদুল্লাহ রা. খাপ থেকে তরবারি বের করেন। নাঙা তরবারি নিয়ে পিতার রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান। পিতার সওয়ারি আসার সাথে সাথে তার গতিরোধ করেন।
নেক্কার ছেলে পিতাকে বলল,
(أ أنت الذي تقول لئن رجعنا إلى المدينة ليخرجن الأعز منها الأذل تريد رسول الله صلى الله عليه وسلم)
-“তুমি কি এমন কথা বলেছ যে, আমরা যখন মদিনা ফিরে যাব তখন সম্মানিত লোক লাঞ্চিত লোককে শহর থেকে বের করে দেবে ? তোমার ইংগিত ছিল রাসূলুল্লাহ সা.এর প্রতি?”
.
এবার ঈমানি জোশ লক্ষ করুন। ছেলে আপন পিতাকে বলছে,
(والله لا تدخل إلى المدينة أبدا حتى تقول: رسول الله صلى الله عليه وسلم هو الأعز وأنا الأذل)
-“আল্লাহর কসম! তুমি ততক্ষণ পর্যন্ত মদিনায় প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এ কথার স্বীকার করবে না, আল্লাহর রাসূল সা. হচ্ছেন সম্মানিত আর তুমি হচ্ছ লাঞ্চিত।”
বললেন,
-তোমার এমন স্পর্ধা, তুমি রাসূলুল্লাহ সা. সম্পর্কে মনে যা আসে তাই বল।
.
তবে হ্যাঁ, একটি উপায় আছে। (أو يأذن لك رسو ل الله صلى الله عليه وسلم)। “যদি তোমার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল সা. অনুমতি দেন তাহলে তুমি মদিনা প্রবেশ করতে পারবে।” থামো। বিনা অনুমতিতে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না তুমি।
.
এর মধ্যে রাসূলুল্লাহ সা.ও সেখানে উপস্থিত হন। আবদুল্লাহ ইবন উবাই তাঁর কাছে অনুমতি চাইলে তিনি তাকে অনুমতি প্রদান করেন। তখন ছেলে আবদুল্লাহ রা. তাকে মদিনায় ঢুকতে দেন।
.
একবার আবদুল্লাহ রা. রাসূলুল্লাহ সা.এর খিদমতে আরজ করেন,
-হে আল্লাহর রাসূল! আমি জানতে পেরেছি, আপনি আমার পিতাকে হত্যা করাতে চাচ্ছেন। আপনি নির্দেশ করুন, আমি নিজেই তার মাথা কেটে আপনার খিদমতে পেশ করে দিচ্ছি।
সম্মানিত পাঠক! এটার নামই হল ভালোবাসা। একেই বলে রাসূলুল্লাহ সা.এর ভক্তি।
.
আবদুল্লাহ রা. বলেন,
-আল্লাহর কসম! খাযরাজের সবাই জানে, পুরো গোত্রে আমার চাইতে বেশি নিজের পিতার সেবা-শুশ্রুষাকারী আর কেউ নেই। আমার ভয় হয়, অন্য কাউকে যদি আপনি তাকে হত্যার নির্দেশ দেন তখন হয়ত: আমি সহ্য করতে পারব না। আপন পিতার হত্যাকারীকে চলা-ফেরা করতে দেখলে হয়ত: তখন কাফিরের পরিবর্তে মুসলমানকে খুন করে বসব। তখন তো আমি জাহান্নামের উপযোগী হয়ে যাব।
.
বন্ধুরা ! একটু ভাবুন তো। ছেলে আপন মুনাফিক পিতাকে হত্যা করার অনুমতি প্রার্থনা করছে। তবে রাসূলুল্লাহ সা.এর মহৎ চরিত্র লক্ষ করুন সেখানে। তিনি ইরশাদ করলেন:
(بل نترفق به ونحسن صحبته ما بقي معنا)
-“বরং আমরা তার সাথে নম্র ব্যবহার করব এবং যতদিন সে বাহ্যিকরূপে আমাদের সাথে রয়েছে তার সাথে ভালো আচরণ করে যাব।”
.
সম্মানিত পাঠক! আপনি দেখুন, একজন ছেলের দৃঢ় অবস্থান এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.এর প্রতি নিষ্ঠা। আপন ছেলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.এর মহব্বত ও সন্তুষ্টিকে পিতার মহব্বত ও সন্তুষ্টির উপর অগ্রাধিকার প্রদান করছে। এ-সবকিছু আবদুল্লাহ রা.এর পূর্ণাঙ্গ ঈমানের প্রমাণ বহন করে। সৎ ও নেক্কার ছেলে আপন পিতার প্রতি ভালোবাসারও এক নজির স্থাপন করে দিল।
.
একটু রাসূলুল্লাহ সা.এর উন্নত চরিত্রকেও লক্ষ করুন। মহান চরিত্রের অধিকারী ছেলের প্রশ্নের জবাবও দিলেন কত উদারতা, ক্ষমা, দয়া ও সদাচারণের মাধ্যমে। এমন ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিকে কি বলা যায়! নবী-চরিত্রের মাহাত্ম্য?! রাসূলুল্লাহ সা.এর প্রতাপ ও প্রতিপত্তির বিষয়টাও লক্ষ করুন, কেমন ছিল তা ?!
৩৯৮
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
কোরআন ও বিজ্ঞান ভূপৃষ্টে মানুষের অস্তিত্বের প্রথম দিন থেকেই তারা......
দানের ফজিলত হযরত সোলাইমান (আ.)-এর যুগের একটি ঘটনা। এক ব্যক্তির......
হৃদয়ে মক্কা-মদিনার কামনা করুন দুনিয়ার মধ্য সবচাইতে শান্তির জায়গা হল......
সাধারণ অর্থে গবেষণা হল সত্য ও জ্ঞানের অনুসন্ধান। কোন সত্য......
হজ্ব প্রসঙ্গে.... আগামী ১৪ জুলাই হজ ফ্লাইট শুরু হবে। হজের......
আল্লাহর সাহায্য লাভের উপায় বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টি আল্লাহতায়ালার সাহায্যের মুখাপেক্ষি।......
হযরত খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ (রা:) নাম তাঁর খাদীজা। কুনিয়াত ‘উম্মু......
মহান অাল্লাহ অাদম সন্তানদেরকে ক্ষমা করবেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান......
কান্নাকাটি অাল্লাহর পছন্দ আল্লাহর দয়া ও রহমত আকৃষ্ট করতে কান্নার......
خیرکم من تعلم القران وعلّمه. অর্থ : তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম......