সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

কোরআনের আলোকে হযরত নূহ আঃ এর কতিপয় ঘটনাঃ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : মঙ্গলবার ০২/০১/২০১৮

কোরআনের আলোকে হযরত নূহ আঃ এর কতিপয় ঘটনাঃ

পবিত্র কোরআন মজিদে সূরা আল- মু'মিনের ৭৮ নং আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা তার প্রিয় রাসূল আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাঃ কে সম্বোধন করে বলেছেন-

ولقد ارسنا رسلا من قبلك منهم من قصصنا عليك ومنهم من لم نقصص عليك وما كان لرسول ان يأتي باية الا باذن الله. المؤمن: 78.

আমি আপনার পূর্বে অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন নিয়ে আসা কোন রাসুলের কাজ নয়।

কোরআন মজিদে যে সব নবী আঃ এর বর্ণনা এসেছে। তার মধ্যে হযরত নূহ আঃ একজন বড় নবী ও প্রথম রাসুল। নিম্নে হযরত নূহ আঃ এর কতিপয় ঘটনা আলোচিত হল।

হযরত নূহ আঃ কে আল্লাহ পাক রেসালতের দায়ীত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেনঃ

মহান আল্লাহ বলেছেন-

ولقد ارسلنا نوحا الي قومه فلبث فيهم الف سنة الا خمسين عاما- فأخذهم الطوفان وهم ظالمون. فانجيناه واصحاب السفينة وجعلناها اية للعالمين.

العنكبوت: 14-15.

আমি নূহ আঃ কে তাঁর সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলাম। তিনি তাদের মধ্যে পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর অবস্থান করেছিলেন। অতঃপর তাদেরকে মহাপ্লাবন গ্রাস করেছিল। বস্তুত তারা ছিল পাপী। অতঃপর আমি তাঁকে ও নৌকারোহীগণকে রক্ষা করলাম। এবং নৌকাকে নিদর্শন করলাম বিশ্ববাসীর জন্যে। হযরত নূহ আঃ স্বীয় জাতীকে বুঝিয়ে বললেন-

اني لكم رسول امين- فاتقوا الله وطيعون. আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসুল । তাই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর আর আমার আনুগত্ব কর। কিন্তু তাঁর জাতী তাঁকে হুমকি দিয়ে বলল, হে নূহ , তুমি যদি তোমার কর্মকান্ড থেকে বিরত না হও, তাহলে আমরা তোমাকে প্রস্ত্ররাগাত করব। وما امن معه الا قليل বলাবাহুল্য, অতি অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল। তাদের সংখ্যা চল্লিশ জোড়া মতান্তরে পঞ্চাশ জোড়া।

হযরত নূহ আঃ নিজ সম্প্রদায়কে যে দাওয়াত দিয়েছেন-

আল্লাহ পাক বলেছেনঃ হযরত নূহ আঃ স্বীয় জাতীকে দাওয়াত পেশ করেছেন

ياقوم اعبدوا الله مالكم من اله غيره افلا تتقون. হে আমার জাতী তোমরা আল্লাহর এবাদত কর। কেননা আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোন উপাস্য নেই। তিনি আরো বলেছেন- اعبدوا الله واتقوه واطيعون তোমরা আল্লাহর বন্দেগী কর ও আল্লাহকে ভয় কর আর আমার আনুগত্য কর। নূহ আঃ নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছেনঃ اني لكم رسول امين- فاتقوا الله وطيعون. আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত রসুল । তাই তোমরা আল্লাহকে ভয় কর আর আমার আনুগত্য কর।

আল্লাহর কাছে নূহ আঃ এর অভিযোগ ও দাওয়াতী কার্যক্রমের বিবরণ পেশঃ

নূহ আঃ বলেছেন- قال: رب ان قومي كذبون. হে আমার পালনকর্তা; আমার জাতী আমার প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। অথচ আমি তাদেরকে রাত দিন দাওয়াত দিয়েছি। যতই তাদেরকে ডেকেছি, ততই তারা পালিয়ে গেছে। মূখ ঢেকে ফেলে কানে আংগুল ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমাকে তারা পাথর মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তিনি আল্লাহকে আরো বলেছেন- انهم عصوني واتبعوا من لم يزده ماله وولده الا خسارا.

নূহ আঃ এর প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে সান্তনা বাণীঃ

মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে জানিয়ে দিলেন যে, যারা ঈমান এনেছে এরা ছাড়া আর কোন লোক ঈমান আনবে না। কোরয়ানের ভাষায়ঃ

واوحي الي نوح انه لن يؤمن من قومك الا من قد امن, فلا تبتئس بما كانوا يفعلون. سورة: هود- 36.

নূহের প্রতি ওহী হয়েছিল, 'যারা ঈমান এনেছে তারা ছাড়া তোমার কওমের অন্য কেহ কখনও ঈমান আনবে না। সুৎরাং তারা যা করে তার জন্য তুমি দঃখিত হইও না।

তিনি বুঝতে পারলেন এরা যত দিন বেচে থাকবে ততদিন শুধু গুণাহই বৃদ্ধি পাবে এবং সেই সাথে পরকালের আযাব বাড়তে থাকবে জীবিত থাকলে এদের বংশ বাড়বে আর যে কয়জন মুসলমান আছে তাদেরকেও কাফের বানিয়ে ছাড়বেতিনি জাতীর প্রতি করুণশীল হয়ে মুসলমানদের রক্ষার জন্য এবং কাফেরদের শাস্তি কমানোর জন্য তাদের জীবনাবসান ঘটানো দরকার মনে করলেন।

আল্লাহর কাছে নূহ আঃ এর দোয়া/প্রার্থনাঃ

নূহ আঃ আল্লাহ পাকের কাছে দোয়া করলেন। পবিত্র কোরানের ভাষায়ঃ

وقال نوح رب لا تذر علي الارض من الكافرين ديارا- انك ان تذرهم يضلوا عبادك ولا يلدوا الا فاجرا كفارا- رب اغفر لي ولوالدي ولمن دخل بيتي مؤمنا وللمؤمنين والمؤمنات ولا تزد الظالمين الا تبارا.

سورة: نوح.

" নূহ আঃ ফরিয়াদ করে বললেন- হে প্রভূ, পৃথিবীতে কাফেরদের মধ্য থেকে একটি গৃহবাসীকেও ছেড়ে দিও না। তুমি তাদেরকে ছেড়ে দিলে ওরা তোমার বান্দাদেরকে গুমরাহ করবে এবং জন্ম দিতে থাকবে কেবল গুণাহগার ও কাফের। হে আমার পালনকর্তা, তুমি ক্ষমা কর আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং যারা মু'মিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মু'মিন পূরুষ ও মু'মিন নারীদেরকে। আর যালিমদের শুধু ধ্বংশই বৃদ্ধি কর।"

আল্লাহ পাক নূহ আঃ এর দোয়া কবুল করলেন কাফেরদের ধ্বংশ হয়ে উঠলো অনিবার্য। এই ধ্বংশ সাধনের জন্য আল্লাহ পাক মহাপ্লাবনের কথা জানিয়ে দিয়ে নূহকে একটি নৌকা বানাতে নির্দেশ দিলেন। যেন মু'মিনগণ তুফানের সময় কিশতিতে আরোহন করে বেচে যায়।

নূহ আঃ কে নৌকা তৈরীর নির্দেশঃ

কিশতি কি ? সটা কিভাবে কি দিয় তৈরী করবে কিছুই তো নূহ আঃ জানেন না। তাই মহান আল্লাহ নূহকে বললেন-

واصنع الفلك باعيننا ووحينا ولا تخاطبني في الذين ظلموا انهم مغرقون. هود: 11.

(ওহ আমার পয়গম্বর,) তুমি আমার তত্বাবধানে ও আমার ওহী অনুযায়ী নৌকা নির্মাণ কর এবং যারা সীমা লঙ্ঘন করেছে তাদের ব্যপারে তুমি আমাকে কিছু বলিও না। নিশ্চয়ই তারা ডুবে মরবে। "

অতঃপর নূহ আঃ নৌকা বানাতে লাগলেন। তাঁর কওম তখনও তাঁকে বিদ্রূপ করা থেকে বিরত হল নাবরং তারা আল্লাহর নবী বিয়াদবী করে উপহাস করতে লাগল। কুরানের ভাষায়ঃ

ويصنع الفلك وكلما مرعليه ملأ من قومه سخروا منه قال ان تسخروا منا فانا نسخر منكم كما تسخرون. هود: 38.

সে নৌকা নির্মাণ করতে লাগলো এবং যখনই তাঁর কওমের প্রধানেরা তাঁর কাছ দিয়ে অতিক্রম করতো, তাঁকে উপহাস করতো। নূহ বলতো, তোমরা যদি আমাদেরকে উপহাস কর তবে আমরাও তোমাদেরকে সেইরুপ উপহাস করবো, যেরূপ তোমরা উপহাস করছো।

উল্লেখ্য যে, কোন কোন ঐতিহাসিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, নৌকাখানি-

৩০০ গজ লম্বা

৫০ গজ প্রস্থ

৩০ গজ উচু ও ত্রিতল বিশিষ্ট্য

উহার দুই পার্শ্বে অনেকগুলি জানালা ছিল।

নীচ তলায় জীব জন্তু, দ্বিতীয় তলায় পূরুষগণ এবং উপরের তলায় নারীরা আরোহন করেছিল।

নবীকে বিদ্রূপ করার ফলঃ

কিশতিতে পায়খানা করার উৎসব

ঈমান না আনার কারণে 'কাফেরদেরকে মহা এক প্লাবনে ডুবিয়ে মারা হবে' নবীর এই ভবিষ্যৎ বাণী তারা অবিশ্বাস করেছিল। শুস্ক সেই মরুভূমিতে কিভাবে নৌকা চালানো যায় এই কথা বুঝতে না পেরে তারা নবীকে পাগল বলে আখ্যায়িত করল। নূহ আঃ আল্লাহর নির্দেশে নৌকা নির্মাণ সমাপ্ত করে বন্যার অপেক্ষায় থাকলেন। নৌকার প্রতি কাফেরদের ঘৃণা কৌতুক দিন দিন বাড়তে লাগলো। আসভ্য এই কাফেররা এমন এক পর্যায়ে পৌছে গেল যে নৌকা নিয়ে তামাশা শুরু করে দিল। তামাশাচ্ছলে নৌকায় গিয়ে তারা পায়খানা করে আসতো। এই তামাশা তাদের একটি উৎসবে পরিণত হলো। দলে দলে লোক এসে এই অশ্লিল আনন্দ করে চলে যেতো। মুসমানগণ সংখ্যায় ছিল মাত্র চল্লিশ জোড়া এবং কাফের ছিল অসংখ্য। তাই কাফেরদের এই বেয়াদবী প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তাদের ছিল না। মুসলমানগণ সুধু দোয়া করতে পারতো।

কাফেরদের উপর কুষ্ঠ রোগ ছড়িয়ে পড়াঃ

কিছু দিন যেতে না যেতেই কাফেরদের মধ্যে কুষ্ঠ রোগ দেখা দিল। দেহের ঘা আর সারে না। যতই চিকিৎ সা করা হয় ততই ঘা বেড়ে যায়। কোন ওষুধেই কাজ হয় না। কষ্ট ও যাতনাই দেশ হাহাকার করে উঠলো।

একদিন একটি লোক নৌকায় গেল পায়খানা করতে। নৌকার পায়খানা তখন ছিল কানায় কানায় ভরা। পা ফসকিয়ে সে পায়খানার ভিতর পড়ে গেল। পায়খানার ভিতর হাবুডুবু খেয়ে কোন রকমে সে নৌকার উপরে উঠে আসল। তারপর বাড়ী গিয়ে ঘা ধুয়ে দেখে তার কুষ্ঠ রোগ ভাল হয়ে গেছে। যে রোগের কোন চিকিৎসা নাই, যে- রোগ সারা শরীর খেয়ে ফলতো সে-রোগ এখন দূর হয়ে গেছে। শরীর এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।

কাড়াকাড়ী করে মল সংগ্রহ করে ঘায়ে মাখা ও নৌকা পরিস্কারঃ

সকাল বেলায় প্রতিবেশিরা তাকে সুস্থ দেখে জিজ্ঞাসা করলো কোন ওষুধে সুস্থ হয়েছে। সে বলে দিল ঐ নৌকার মলের 'বরকতে' সে এখন সুস্থ। আর যায় কোথায়, কাফেরের দল সব বালতি নিয়ে ছুটলো। বালতি বুঝাই করে করে নিজেদের মল নিজেরাই বাড়ী নিয়ে যেতে লাগল। আর বরকত মনে করে ঘা ধুতে লাগলো। আর সঙ্গে সঙ্গে সুস্থ হয়ে যেতে লাগলো। কাফের মহলে মল সগ্রহ করার কাড়াকাড়ি লেগে গেল। শেষে যখন নৌকা মল শূণ্য হয়ে পড়লো তখনও অনেক রোগী বাকী থাকল। অগত্যা তারা নৌকা ধুয়ে ধুয়ে পানি নিতে লাগলো। সেই পানিতেও রোগ দূর হতে থাকলো। ফলে নৌকা কয়েকবার ধুয়া হয়ে গেল এবং নৌকা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। এটা ছিল একটা বন্যায় ডুবিয়ে মারা ছিল আর একটা উপহাস।

ان تسخروا منا فانا نسخر منكم كما تسخرون.

কোরআন মজিদের যে সব সূরায় নূহ আঃ এর ঘটনাবলী রয়েছেঃ

১। সূরাঃ الاعراف (৫৯ হতে ৬৪ আয়াত পর্যন্ত) لقد ارسلنا نوحا ------ انهم كانوا قوما عمين

২। সূরাঃ يونس (৭১ হতে ৭৩ আ: পর্যন্ত) واتل عليهم نبأ نوح ----- يطبع علي قلوب المعتدين

৩। সূরাঃ هود (২৫ হতে ৪৯ আ: পর্যন্ত) ولقد ارسلنا نوحا الي قومه --- فاصبر ان العاقبة للمتقين

৪। সূরাঃ المؤمنون (২৩ হতে ৩১ আয়াত পর্যন্ত)ولقد ارسلنا نوحا الي قومه --- افلا تتقون.

৫। সূরাঃ الشعراء (১০৫ হতে ১২২ আ: পর্যন্ত)كذبت قوم نوح المرسلين --- في الفلك المشحون

৬। সূরাঃالعنكبوت (১৪ হতে ১৫ আয়াত পর্যন্ত) ولقد ارسلنا نوحا ---- وجعلناهااية للعالمين.

৭। সূরাঃ الصافات (৭৫ হতে ৮২ আয়াত পর্যন্ত)ولقد نادانا نوح ---- ثم اغرقنا الاخرين.

৮। সূরাঃ القمر(০৯ হতে ১৬ আয়াত পর্যন্ত) كذبت قبلهم قوم نوح --- فكيف كان عذابي ونذر.

৯। সূরাঃ নূহ সম্পূর্ণ انا ارسلنا نوحا الي قومه ان انذر قومك ----- ولا تزد الظالمين الا تبارا.

৫০৮১

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭