সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

শিক্ষণীয় দক্ষতার গল্প
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : শুক্রবার ০৮/১২/২০১৭

শিক্ষণীয় দক্ষতার গল্প 

মেয়েটির নাম আমাতু বিনতে খালিদ। উপাধি ছিল উম্মে খালিদ। সে ছিল হযরত খালিদ ইবন সাঈদ ইবনুল ‘আছ রা.এর মেয়ে। কুরাইশ বংশের সাথে সম্পর্কযুক্ত খালিদ ইবন সাঈদ রা. ইসলামের প্রাথমিক যুগের মুসলমান। তিনি সেসব সৌভাগ্যবান সাহাবিদের অন্তর্ভূক্ত যারা আবিসিনিয়া হিজরত করার সুযোগ পেয়েছিলেন। আলোচ্য আমাতু বিনতে খালিদ আবিসিনিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন এবং তার বাল্যকাল সেখানেই অতিবাহিত হয়। তার মাতার নাম ছিল উমায়মা বিনতে খালাফ আল খুজা‘ইয়াহ।
.
এ মেয়েটি আবিসিনিয় ভাষার কিছু কিছু শব্দও শিখেছিলেন। তার পিতা পরবর্তীতে আবিসিনিয়া থেকে মদিনায় দ্বিতীয় হিজরত করেছিলেন সপরিবারে। ছোট্ট এ মেয়েটিকে তার পিতা-মাতা উম্মে খালিদ উপাধি ধরে ডাকতেন। মেয়েটির এই উপাধিটি রাসূলুল্লাহ সা.ই রেখেছিলেন। 
.
আল্লাহর রাসূল সা. কেবল তাঁর সাহাবিদের নয়; তাদের বাচ্চাদেরকেও ভালোবাসতেন। বিশেষ উপলক্ষে তাদের স্মরণ রাখতেন। একদা রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকট কোথা থেকে যেন কিছু কাপড় এলো। কাপড়গুলো তিনি সাহাবিদের মাঝে বন্টন করতে লাগলেন। কাপড়সমূহের মধ্যে একটি চাদর ছিল অত্যন্ত সুন্দর। টুকটুকে লাল ও হলুদ রঙের কাজ করা ওই কালো রেশমি শালটি রাসূলুল্লাহ সা. নিজের মোবারক হাতে নেন এবং সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন:
(من ترون نكسوها هذه الخميصة)
-“তোমাদের কী রায়? বলো দেখি, এ শাল কাকে পরানো যায়?”
.
সাহাবিরা শ্রদ্ধাবনত হয়ে কোনো উত্তর দিলেন না। তবে মনে মনে অবশ্যই ভাবছেন, কে সেই ভাগ্যবান যে এই সুন্দর, আকর্ষণীয় ও কারুকার্যখচিত কাপড়টি পাবে। 
সাহাবিরা রাসূলুল্লাহ সা.এর পবিত্র চেহারার দিকে তাকিয়ে আছেন, কি কথা বের হয় তাঁর মুখ দিয়ে এবং কাকে এ সম্মানে ভূষিত করেন- তা দেখার জন্য। উল্লেখ্য, এ ধরনের মূল্যবান কাপড় পাওয়ার সুযোগ তখনকার মুসলমানদের খুব কমই হত।
.
সবাইকে অবাক করে রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করলেন: (إيتوني بأم خالد) 
-“উম্মে খালিদকে ডেকে নিয়ে এসো।” 
জনৈক সাহাবি দৌড়ে গেলেন। তার পিতাকে গিয়ে বলেন, আল্লাহর রাসূল সা. তার মেয়েকে ডেকে পাঠিয়েছেন। খালিদ ইবন সাঈদ রা. নিজের মেয়েটিকে কোলে নিয়ে দ্রুত রাসূলুল্লাহ সা.এর দরবারে পৌঁছেন এবং উম্মে খালিদকে আল্লাহর রাসূল সা.এর খেদমতে পেশ করেন।
.
সম্মানিত পাঠক, রাসূলুল্লাহ সা.এর উন্নত চরিত্র দেখুন, তিনি ইচ্ছা করলে এ কাপড়টি তার ঘরেও পাঠিয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সা. তাঁর নিজের মোবারক হাতে উম্মে খালিদকে এই সুন্দর কাপড়টি পরিয়ে দেয়াকে অগ্রাধিকার দিলেন। মেয়েটির আনন্দে সরাসরি অংশ নিলেন। উপস্থিত সাহাবিগণ রা. এ দৃশ্য অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দেখছিলেন।আর অভিভূত হচ্ছিলেন।
.
রাসূলুল্লাহ সা. শালটি তাকে পরাচ্ছেন এবং একই সাথে তাঁর সত্যনিষ্ঠ মুখ দিয়ে ব্যাখ্যা করছেন এ বলে:
(هذا سنا يا أم خالد! هذا سنا)
“হে উম্মে খালিদ! এ কাপড়টি খুব মানিয়েছে তোমাকে। খুবই সুন্দর এ কাপড়।” 
আবিসিনিয় ভাষায় সুন্দর কোনো বস্তুকে (سنا) বলা হয়। 
.
ছোট্ট মেয়ে। সে তো মহাখুশি এমন উপহার পেয়ে। আল্লাহর রাসূল সা. সরাসরি নিজের হাতে তাকে এই কাপড়টি পরিয়ে দিয়েছেন- এটা তো খুবই সম্মানের বিষয়। আপনি একটু কল্পনা করে দেখুন, উম্মে খালিদ হয়ত সারা জীবন এ ঘটনাকে ভুলেননি। নিশ্চয়ই হৃদয়ের গহীনে ধারন করেছিলেন সেই মধুর স্মৃতি, আল্লাহর রাসূল সা. বাল্যকালে তাকে এই শাল পরিয়ে ছিলেন।
.
রাসূলুল্লাহ সা. মেয়েটিকে আরো একটি উপহার দিয়েছেন। বললেন, (أبلي وأخلقي) 
-“তুমি কাপড়টি পুরনো হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করতে থাক, অনেক দিন পরিধান করো।” অর্থাৎ তুমি দীর্ঘদিন বেঁচে থাকো। পুনরায় তিনি এ কথাটি বললেন, (أبلي وأخلقي)। অত:পর তৃতীয়বার আবার বললেন, (أبلي وأخلقي) “কাপড়টিকে তুমি পুরনো করো, বারবার পরিধান করো এবং দীর্ঘজীবি হও।”
.
উম্মে খালিদের জীবনে আল্লাহর রাসূল সা.এর এই দুআ কবুল হয়েছে। তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন। মহিলা সাহাবিদের মধ্যে তিনিই সবার শেষে মৃত্যুবরণ করেছেন।
,
রাসূলুল্লাহ সা.এর হাতে উপহার পেয়ে উম্মে খালিদ তো আনন্দে আত্মহারা। সে তাঁর পিঠের উপর ভেসে উঠা নবুয়তের মোহর বিশিষ্ট চিহ্ণটি ধরে খেলতে লাগল। উম্মে খালিদের পিতা তাকে বারন করলেন। বকা দিয়ে বললেন, 
-উম্মে খালিদ, আম্মু ! কি করছ তুমি?।
কিন্তু রাসূল সা. এর দয়া ও স্নেহ দেখুন, তিনি খালিদ ইবন সাঈদকে বলেন, 
(دعها) 
-“ওকে ছেড়ে দাও খালিদ, (ওকে খেলতে দাও)। 
যতক্ষণ মন চায় উম্মে খালিদ রাসূলুল্লাহ সা.এর পবিত্র দেহ নিয়ে খেলা করল।
.
সম্মানিত পাঠক, এ ঘটনাকে আরেকবার একটু মনযোগ দিয়ে পড়ুন তো। আল্লাহর রাসূল সা. ছিলেন পৃথিবীর সব চাইতে ব্যস্ততম ব্যক্তি। কিন্তু এ ছিল তাঁর উন্নত চরিত্র। বাচ্চাদের ভালোবাসতেন। তাদের আদর করতেন। সঙ্গী-সাথীদের বিশ্বস্ততা, কুরবানি, তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা রাসূলুল্লাহ সা. মনে রাখতেন। তিনি তাঁর সাথীদের এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের সম্মান করতে চাইতেন। এ জন্যই তিনি তাদের বাচ্চাদের সাথে এধরনের মহব্বতপূর্ণ আচরণ করতেন, আদর-যত্ন করতেন।
.
ছোট্ট মেয়ে উম্মে খালিদ এবং পরিবারের লোকজন রাসূলুল্লাহ সা. প্রদত্ত এ সম্মান কখনো ভুলেনি। তার পিতাকে একটু জিজ্ঞাসা করুন, যখন তার মেয়েকে আল্লাহর রাসূল সা. নিজের মোবারক হাতে এ কাপড়টি পরিয়ে দিচ্ছিলেন, তার আনন্দের সীমা কি ছিল? মেয়ে সম্পর্কে উচ্চারিত রাসূলুল্লাহ সা.এর এ শব্দগুলো কিভাবে ভুলতে পারেন তিনি:
(هذا سنا يا أم خالد! هذا سنا) “উম্মে খালিদ, এটা অত্যন্ত সুন্দর একটি কাপড়। তোমাকে খুব মানিয়েছে।”
.
বন্ধুরা!, তিনি ছিলেন আমাদের রাসূল সা., আমাদের নবী, আমাদের পথদ্রষ্টা। এই ছিল আমাদের পথপ্রদর্শকের উন্নত চরিত্র, স্নেহ ও ভালোবাসার ঝিলিক। আর উম্মে খালিদের জন্য ওই ঘটনা যেন মরুর বুকে স্নেহের এক পশলা বৃষ্টি।
.
উম্মে খালিদ বাল্যকাল থেকেই অত্যন্ত মেধাবি ও বুদ্ধিমতী মেয়ে ছিলেন। খায়বার যুদ্ধের সময় দুইটি বৃহৎ পানির জাহাজ মুহাজিরদের বহন করে মদিনা নিয়ে আসে। সে দিনগুলোতেই মুসলমানরা খায়বারের বিজয় লাভ করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সা.এর চাচাত ভাই জাফর ইবন আবি তালিব রা.ও সেই আগত মুহাজিরদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। আবিসিনিয়া থেকে মুহাজিররা যখন আসছিলেন তখন নাজ্জাশি তার ঘনিষ্টজন ও অন্যান্য লোকদের নিয়ে তাদের বিদায় জানাতে এসেছিলেন। মুসলমানদেরকে বললেন:
-আল্লাহর রাসূল সা.কে সর্বপ্রথম আমার সালাম জানাতে ভুলে যেয়ো না। 
.
উম্মে খালিদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ওই মেয়েটি তার সেই কথাটিকে মনে রেখে ছিলেন। তার ইচ্ছা ছিল, আল্লাহর রাসূল সা.কে নাজ্জাশির সালামটি সেই সর্বপ্রথমে পৌঁছাবেন। রাসূলুল্লাহ সা. আবিসিনিয়া হতে প্রত্যাবর্তনকারী মুহাজিরদের অভ্যর্থনা জানিয়ে ইরশাদ করেছিলেন:
(والله لا أدري بأيهما أفرح, بفتح خيبر أم بقدوم جعفر)
“আল্লাহর কসম! জানি না, আজ কোনটাতে আমি বেশি আনন্দিত। খায়বারের বিজয়ে নাকি জাফরের ফিরে আসায়।”
.
উম্মে খালিদ রা. সালামের কথাটি ভুলেন নি। তিনি মুচকি হেসে নাজ্জাশির সালাম পৌঁছালেন রাসূলুল্লাহ সা.এর নিকট। ইবনে হাজর তার ‘আল ইসাবা’ শীর্ষক গ্রন্থে লিখেছেন, আল্লাহর রাসূল সা. সেই মেয়েটিকেই আদর করেছেন এবং তার উপাধি রেখেছেন ‘উম্মে খালিদ’। রাদিয়াল্লাহু আনহা।

৪০২

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭