সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ছোটদের ভালোবাসুন
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ১৪/১২/২০১৭

ছোটদের ভালোবাসুন 

আল্লাহর রাসূল সা. বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতেন। তাঁর চারিত্রিক মাধুর্য ছিল, তিনি বাচ্চাদের চুমো খেতেন। গলায় জড়িয়ে ধরতেন। তাদের সাথে কথা বলতেন। বিশেষ করে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর নাতিদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। কখনো কখনো তিনি দিনের প্রথম প্রহরে নিজের কোনো কোনো আত্মীয় বা সাথীদের বাড়ি তাশরিফ নিয়ে যেতেন।
.
আবু হুরায়রা রা. বলেন, একদিন আমি মসজিদে নববিতে উপবিষ্ট ছিলাম। দিনের আলো ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। রাসুলুল্লাহ সা. আমার হাত ধরলেন এবং হাতে একটু চাপ দিয়ে আমাকে একদিকে চলার জন্য ইংগিত করলেন।  আমি চললাম তাঁর সাথে সাথে । রাসূলুল্লাহ সা. এর চলার গতি ছিল তাঁর কন্যা ফাতেমা রা. এর বাড়ি অভিমুখে। 
.
তখনকার দিনে ফাতেমা রা. মসজিদে নববির পূর্ব দিকে অবস্থিত বনি ক্বায়নুক্বার বাজারের পাশে বসবাস করতেন। বনি ক্বায়নুক্বার এ বাজারটি জান্নাতুল বকীর দিকে ছিল। 
.
আবু হুরায়রা রা. আরো বলেন, আমরা উভয়ে চুপচাপ কোনো কথা না বলে বাজারের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। আল্লাহর রাসূল সা. বাজারে প্রবেশ করলেন। এক নজর দেখলেন...অত:পর সেখান থেকে চলে এলেন। আমিও তাঁর সাথে সাথে ছিলাম। ফাতেমা রা. এর ঘরে গেলেন তিনি।
.
ঘরের আঙ্গিনায় এসে ইরশাদ করলেন, (أين لكع ؟) “ছোট কোথায়?” 
আবার বললেন, (أين لكع ؟) “ছোট কোথায়?” 
তৃতীয়বার ফের বললেন, (أين لكع ؟) “ছোট কোথায়?” 
এ শব্দসমূহ রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর নাতি হযরত হাসান ইবন আলি রা. সম্পর্কে উচ্চারণ করছিলেন।
.
আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, এদিকে ফাতেমা রা. তার ছেলেকে প্রস্তুত করছিলেন। তাই কোনো উত্তর দেন নি। আমরা অনুমান করলাম, তিনি হাসান রা.কে গোসল করিয়ে ভালো কোনো পোশাক পরিয়ে দিচ্ছেন। আল্লাহর রাসূল সা. এবং আমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ফিরে এলাম।
.
আমরা যখন মসজিদে এলাম। আল্লাহর রাসূল সা. মসজিদে এসে পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, (أين لكع ؟) “ছোট কোথায়?” 
কিছু সময় যেতে না যেতেই হযরত হাসান রা. গলায় হার পরিহিত অবস্থায় দৌঁড়ে এলেন। রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর প্রিয় নাতিকে দেখা মাত্রই নিজের দুই বাহু উম্মুক্ত করে অভ্যর্থনা জানালেন। এদিকে হযরত হাসান রা.ও নিজের বাহু উম্মুক্ত করে দিলেন এবং দৌড়ে এসে রাসূলুল্লাহ সা. এর কোলে ঝাপ দিলেন। 
.
আল্লাহর রাসূল সা. হাসান রা.কে চুমো দিলেন। তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ওদিকে হাসান রা. তার কচি কচি হাত দিয়ে দাঁড়ি মোবারক নিয়ে খেলতে লাগলেন। 
.
রাসূল সা. হাসান রা.এর চুমো খেতে লাগলেন। তারপর হযরত হাসান রা.এর জন্য দুআ করলেন, 
(اللهم إني أحبه فأحبه وأحب من يحبه) 
-“হে আল্লাহ! নিঃসন্দেহে আমি একে ভালোবাসি। তুমিও তাকে ভালোবেসো এবং যে তাকে ভালোবাসে তাকেও তুমি ভালোবেসো।”
হযরত হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসূল সা. এই দু‘আটি তিনবার উচ্চারণ করলেন।
.
মুহতারাম নানাজান এবং সুপ্রিয় নাতির মধ্যকার মহব্বত ও ভালোবাসার এ দৃশ্য আবু হুরায়রা রা. সারা জীবন মনে রেখেছেন। রাসূলুল্লাহ সা.এর দুআর শেষাংশকে তিনি কখনো ভুলেননি:
 (وأحب من يحبه)  
“যে হাসানকে ভালোবাসে, হে আল্লাহ! তুমি তাকেও ভালোবেসো।” 
.
এখানে আবু হুরায়রা রা.এর অবস্থান ও অনুভুতি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি যখনই হযরত হাসান রা.কে দেখতেন, ভক্তি ও ভালোবাসার আতিশায্যে তার নয়নযুগল অশ্রুসজল হয়ে যেত। আসুন, হাদিসে তার ভাষায় অধ্যয়ন করি। তিনি বলেন,
 (ما رأيت حسنا قط إلا فاضت عيناي دموعا) 
-“আমি যখনই হাসানকে দেখি আমার দু'চোখে ভক্তি ও ভালোবাসার অশ্রুবন্যা বয়ে যায়।”
.
সম্মানিত পাঠক! এটাই ছিল আমাদের রাসূল ও পথপ্রদর্শক, আমাদের আদর্শ, আমাদের পথিকৃৎ, গোটা মানবজাতির সর্দার হযরত মুহাম্মদ সা.এর চরিত্র। তিনি শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও নিজের নাতিদের ভীষণ ভালোবাসতেন এবং তাদের জন্য সময় বের করতেন। 
.
একদিনের ঘটনা, আল্লাহর রাসূল সা. হযরত হাসান রা.এর চুমো খাচ্ছিলেন। বনি তামিমের সর্দার আক্বরা‘ ইবন হাবেসও সেই মজলিশে উপস্থিত ছিল। এ বেদুইন সর্দার মুসলমান হয়েছিলেন মক্কা বিজয়ের দিন। হুনায়ন ও তায়েফ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তাকেও আল্লাহর রাসূল সা. হুনায়ন যুদ্ধে অর্জিত গনিমতের সম্পদ থেকে এক’শ উট প্রদান করেছিলেন। এ জন্য তাকে (مؤلفة القلوب) এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
.
বেদুইন সর্দারদের মধ্যে রূঢ়তা ও কঠোরতা বেশি থাকত। মরুবাসী লোকজন তাদের বাচ্চাদের কমই ভালোবাসত। তিনি যখন আল্লাহর রাসূল সা.কে দেখেন, তিনি তাঁর নাতিকে চুম্বন করছেন, বললেন:
(إن لي عشرة من الولد لا قبلت منهم أحدا)
-“আমার তো দশটি বাচ্চা আছে। তাদের কাউকে আমি কখনো চুম্বন করেনি।”
রাসূলুল্লাহ সা. সেই বেদুইন সর্দারের দিকে তাকিয়ে ইরশাদ করেন,
 (من لا يرحم لا يرحم)
-“যে ব্যক্তি অন্যদের উপর দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হয় না।”

বন্ধুরা! এ ছিল রাসূলুল্লাহ সা.এর সচ্চরিত্র। তিনি বড়-ছোট সবাইকে সমানভাবে দয়া ও স্নেহ করতেন। আমরা কি আমাদের বাচ্চাদের এভাবে আদর করি ?!, স্নেহ করি ?!

৩৩১

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭