সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

প্রসঙ্গ : হজ্জ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ২৬/০৭/২০১৮

প্রসঙ্গ : হজ্জ 

হজ্জ এর অর্থ হলো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে শরিয়তের নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে নিদির্ষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থান তথা বায়তুল্লাহ শরীফ এবং সংশ্লিষ্ট স্থান সমূহের জিয়ারত করা। (শামী, দ্বিতীয় খন্ড) হজ্জ ইসলামের পঞ্চ রুকনের অন্যতম একটি রুকন। যারা অর্থিক ও শারীরিক দিক থেকে সামর্থবান তাদের উপর জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ। 

প্রাচীনকাল থেকেই আল্লাহ প্রেমিক বান্দারা বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ করে আসছেন। হযরত আদম (আ.) আল্লাহ পাকের হুকুমে এবং জিবরাঈল (আ.) এর দেখানো পদ্ধতিতে বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করেছেন। এর পর থেকে এ ঘরের তাওয়াফ ও জিয়ারত অব্যাহত থাকে। হযরত নুহ (আ.) এর সময়কার মহাপ্লাবন এবং তুফানে বায়তুল্লাহ শরীফ লোক চক্ষুর অন্তরালে চাপা পড়ে যায়। এর পর আল্লাহর হুকুমে হযরত ইবরাহীম (আ.) কাবা শরীফ পুনর্নিমাণ করেন এবং আল্লাহর হুকুমে হযরত ইবরাহীম (আ.) এবং হযরত ইসমাঈল (আ.) কাবা শরীফের তাওয়াফ সহ হজ্জের যাবতীয় কর্মকান্ড সমাধা করেন। অতঃপর মহান রাব্বুল আলামীন গোটা বিশ্ব জাহানকে হযরত ইবরাহীম (আ.) এর সামনে তুলে ধরেন এবং তিনি আল্লাহর হুকুমে ‘মাকামে ইবরাহীম’ অথবা ‘জাবালে আবু কুবাইস’ নামক পাহাড়ে দাড়িয়ে দুই কানে আঙ্গুল রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব ও পশ্চীমে মুখ করে ঘোষণা করেন, ‘‘লোক সকল! তোমাদের পালন কর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের উপর সেই গৃহের হজ্জ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালন কর্তার আদেশ পালন কর।” ইবরাহীম (আ.) এর সেই আহবান থেকে ই হজ্জের উৎপত্তি। সেই আহবান থেকে আজ পর্যন্ত কয়েক হাজার বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। প্রতি বছরই বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে কাবাঘরের তাওয়াফ করে যাচ্ছে। কেউ স্থল পথে কেউ জল পথে কেউ আকাশ পথে এসে হজ্জ করছে। দিন যত যাচ্ছে বায়তুল্লাহর পানে আগমন কারীর সংখ্যা তত বাড়ছে। এমনকি হযরত ইবরাহীম (আ.) এর পরে যত নবী-রাসূল দুনিয়াতে এসেছেন সবাই বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ সহ হজ্জের যাবতীয় কাজ সমাধা করেছেন। -তাফসীরে ইবনে কাসীর।

জাহিলিয়াতের যুগেও লোকেরা বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ ও জিয়ারত করত। তবে তারা তাওয়াফ করত জাহিলী নিয়মে। এতে অনেক অশ্লীল কর্মকান্ড ও তারা ঢুকিয়ে দিয়েছিল। নবম হিজরীতে রাসূল (সা.) এর নির্দেশে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরামের একটি দল হজ্জ পালন করেন আর এ বছর থেকেই ইসলামের বিধান অনুসারে এবং হযরত ইবরাহীম (আ.) প্রবর্তিত নিয়ম অনুসারে হজ্জের বিধিবিধান প্রবর্তন করা হয়। 

মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির প্রতীক হল পবিত্র হজ্জ। ইসলামী জীবন দর্শনের উপর পূর্ণ অটল ও অবিচল থাকা হলো হজ্জের প্রধান শিক্ষা। মুসলমানরা পরকালকে বিশ্বাস করে, সাদা-কালো, ধনী-গরীব, আমীর-ফকীর, রাজা-প্রজা ও দেশ-গোত্রের ভেদাভেদ ইসলামে নেই। সব মুসলমান একে অপরের ভাই, একই আল্লাহর বান্দা, একই রাসূলের আদর্শের অনুসারী বা উম্মত, একই কুরআনের বিশ্বাসী, একই কাবার প্রভুর পুজারী। এবিশ্বাসের এক বাস্তব অনুশীলন হল পবিত্র হজ্জ। হজ্জের একটি অন্যতম তাৎপর্য ও শিক্ষা হলো গোটা উম্মাহ তথা মুসলিম মিল্লাতের বৃহত্তর ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখা বা প্রতিষ্ঠা করা এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা। 

হজ্জের মধ্যে ধর্মীয় ও পার্থিব অনেক উপকার রয়েছে যা সংক্ষেপে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে “ যাতে তারা তাদের কল্যাণের স্থান পর্যন্ত পৌছে এবং নির্দিষ্ট দিন গুলোতে আল্লাহর নাম স্বরণ করে।” (সূরা হজ্জ-২৮)।

 হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ন ফযিলত হলো- রাসূল (সা.) বলেন, “তোমরা হজ্জ ও উমরা পালন কর কারণ হজ্জ ও উমরা দুটি জিনিসকে ধ্বংস করে দেয়- দারিদ্রতা এবং গুনাহ।” একারণে হজ্জ করে কেউ দেউলিয়া হয়েছে এমন নজীর কোথাও পাওয়া যাবেনা। সুতরাং যাদের আর্থিক সামর্থ এবং শারীরিক শক্তি রয়েছে তাদের জন্য আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ করার চেয়ে মহৎ এবং কল্যাণকর কাজ দুনিয়াতে আর কিছু নেই। 

পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ঘর হল কাবা গৃহ তথা মসজিদে হারাম। পবিত্র কুরআনে কাবাগৃহ কে ‘বায়তে আতিক’ তথা স্বাধীন মুক্ত ঘর বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এর অর্থ হলো এ ঘরের এত মর্যাদা যে, দুনিয়ার কোন পরাশক্তি বা কোন কাফের অত্যাচারী এ ঘর ধ্বংস করতে পারবে না। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘‘ আল্লাহ কাবা ঘর কে কাফের ও অত্যাচারীদের অধিকার থেকে মুক্ত করে দিয়েছে।’’ ইয়েমেনের খৃষ্টান রাজা আবরাহা কাবা ঘরের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজ দেশে একখানা কাবা নির্মান করেছিলেন কিন্তু কেউ সেই কাবা জিয়ারতের জন্য পা বাড়ায়নি। অবশেষে তিনি বিশাল এক হস্তী বাহিনী নিয়ে কাবাঘর ধ্বংস করার জন্য এসেছিলেন, রাব্বুল আলামীন আবাবীল নামক এক প্রকার ছোট্র পাখী দ্বারা তাকে ধবংস করে দেন। হেরেম শরীফের ভিতরে এখনো অনেক আবাবীল পাখী অবস্থান করে, এরা ও সেই আবাবীলে বংশধর বলে জনশ্রুতি আছে।
হয়ত মহান রাব্বুল আলামীন কাবাঘর এবং পবিত্র মক্কা নগরীর নিরাপত্তার জন্য এখনো সেই আবাবীলদের নিয়োজিত রেখেছেন যারা অত্যাচারী আবরাহাকে ধবংস করেছিল। এই কাবাগৃহ মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র। 

মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে হেরমের সীমানার বাইরে আরাফার ময়দান অবস্থিত। এখানে হযরত আদম ও হাওয়ার দীর্ঘ বিচ্ছেদের পরে মিলন ঘটেছিল এ জন্য এ ময়দান কে আরাফার ময়দান বলা হয়। এখানে ইবরাহীম (আ.) এর প্রতিষ্ঠিত একখানা বিরাট মসজিদ রয়েছে। একে বলা হয় মসজিদে নামিরাহ। ময়দানের এক প্রান্থে অবস্থিত জাবালে রাহমাত, যেখানে হেরা গুহা অবস্থিত। জ্বিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ এ ময়দানে মুসলমানদের বিরাট সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সুবিশাল সম্মেলনে ভাষণ দেন ইমামূলমু’মিনীন বা মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা। এভাষণের অন্যতম আলোচ্য বিষয় হলো মুসলিম বিশ্বের ঐক্য সংহতি এবং বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গ। এখানে মুসলমানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ববাসীকে আহবান জানান। সকল প্রকার হানাহানী বিবাদ-বিদ্ধেষ ভূলেগিয়ে বিশ্বনবীর উম্মতদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপদেশ প্রদান করেন। ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির সুমহান আদর্শ তুলে ধরেন বিশ্বের সামনে। সে ভাষণ শ্রবণ করাও হজ্জের একটি অবশ্যপালনীয় বিষয়।

৩৩৮

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭