সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ইসলাম নিয়ে কথা বলা কি এতটাই সহজ কিংবা মামুলি কোন বিষয়?
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ১৫/০৬/২০১৭

সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, আল্লাহ তায়ালার শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, সাহাবীদের উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের উপর।

আমাদের দেশে ইসলাম নিয়ে কথা বলাটা খুবই সহজ একটি বিষয়। অনেক সময় মনে হয় এটাই বুঝি সবচেয়ে সহজ কাজ! যে যার মত ইসলাম নিয়ে কথা বলে যাচ্ছে, যে যেভাবে ইসলামকে বুঝতে পারছে সেইভাবেই ইসলামকে ব্যাখ্যা করছে আর তার ব্যাখ্যাটিকেই সঠিক বলে মেনে নিচ্ছে। কেউ একজন কুরআন পড়ল আর সে তার মস্তিষ্ক চাষ করে যা বুঝতে পারল তাই ইসলাম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। ইসলাম নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে কিন্তু অধিকাংশ লেখাতেই নেই কোন রেফারেন্স, যে যতটুকু বুঝতে পারল সেইভাবেই সে ততটুকু তুলে ধরছে। সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ কিংবা সময় কিংবা ইচ্ছা তাদের হচ্ছে না। আচ্ছা বিষয়টিকি এতটাই সহজ? আমরা যারা ইসলাম নিয়ে লিখে থাকি তাদের সর্বপ্রথম খেয়াল রাখতে হবে- ‘ইসলাম’ অহি’র মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসেছে, কারো মস্তিষ্ক চাষ করা কোন মতবাদ নয়, যে যেভাবে বলবে বা ব্যাখ্যা করবে তাই ইসলাম নয়।

ইসলাম নিয়ে লিখতে যেয়ে তার দলীল দিতে হবে, কোরআনের কোন সূরা কত নম্বর আয়াত, যে হাদীসটি উল্লেখ করা হচ্ছে তা সহীহ কিনা কারণ মিথ্যা কোন হাদীস প্রচার করলে তা হবে মিথ্যা প্রচার করার শামিল। ইসলাম নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পর্কে জেনে বুঝে, দলীলগুলো যাচাই বাছাই করে তারপর ইসলাম নিয়ে কথা বলতে হবে। আমি বা অন্য কেউ যেভাবে ইসলাম বুচ্ছি ঠিক সেইভাবেই কি সাহাবীরা বুঝতেন? আমরা যে আমলগুলো করছি সেগুলো কি সহীহ দলিল দ্বারা সাব্যস্ত রয়েছে? সর্বপরি আমাদের দলিল মজবুত করত লেখা প্রকাশ করতে হবে। মিথ্যা জাল দলীল, ভুল ব্যাখ্যা সম্বলিত কথা এড়িয়ে চলতে হবে। ব্যক্তি যত বড়ই হোক না কেন, সে যা বলছে বা লিখছে তার দলীল কি? রেফারেন্স কি? ‘অহি’ নিয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের খুবই সতর্ক হতে হবে কেননা এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়, একটু ভুল ব্যাখ্যা, একটা মিথ্যা-জাল হাদীস দ্বারা অনেক মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারে আর তার দায়ভার আমাকে/আপনাকেই নিতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন: “হে মানুষ, অবশ্যই তোমাদের নিকট রাসূল এসেছে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে। সুতরাং তোমরা ঈমান আন, তা তোমাদের জন্য উত্তম হবে।” (সূরা আন নিসাঃ ১৭০)

সত্য তথা হক এসেছে একমাত্র আল্লাহর নিকট থেকে কাজেই সেই হক বা সত্যের অবশ্যই দলীল থাকতে হবে। আমার কিংবা আপনার কথা কিংবা অধিকাংশ মানুষ যা বলছে কিংবা কোন পীর-বুজুর্গ বলেছেন অথবা স্বপ্নে দেখেছেন – এগুলোর কোনটাই হকের দলীল নয়!

অহির ক্ষেত্রে যদি একটু বিন্দুমাত্র হেরফের হতো কিংবা কিছুটা বানিয়ে বলা হত তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও ছাড় দেওয়া হত না। এই বিষয়েও কঠিন সতর্ক বাণী এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করত, তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম। তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে ফেলতাম। অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করার থাকত না। আর এটিতো মুত্তাকীদের জন্য এক নিশ্চিত উপদেশ। আর আমি অবশ্যই জানি যে, তোমাদের মধ্যে কতক রয়েছে মিথ্যারোপকারী (কুরআনের প্রতি)।” (সূরা হাক্কাহঃ ৪৪-৪৯)

কাজেই ইসলাম সম্পর্কে কোন লেখা লিখতে যেয়ে, ইসলাম সম্পর্কে কথা বলতে যেয়ে আমাদের খুবই সতর্ক হতে হবে যে আমি যা বলছি বা যা লিখছি তা সঠিক আছে তো? আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করছি না তো কিংবা কোন জাল-মিথ্যা কিংবা দূর্বল হাদীস প্রচার করছি না তো? প্রকৃতপক্ষে আমাদের দেশে অবস্থা এই বিষয়ে খুবই করুন, বাজারে প্রচলিত অধিকাংশ ইসলাম সম্পর্কিত বইয়ে খেয়াল করলে দেখবেন কুরআনের আয়াত নম্বর যদিও দেয়া থাকে কিন্তু হাদীসের ক্ষেত্রে অনেকটা দায়সারা অবস্থা, কোন রেফারেন্স নেই, হাদীসটি সহীহ নাকি জাল সেই বিষয়েও বক্তব্য নেই বল্লেই চলে শুধুমাত্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আচ্ছা, আরেকটু সহজ করে দিই, আপনার বাসায় যে ‘ইসলামী’ বইগুলো আছে সেগুলো খুলে দেখুন তো, ঠিক কতটুকু রেফারেন্স দেয়া আছে? ‘নেয়ামুল কুরআন’ কিংবা ‘আমলে নাজাত’ ধরণের বইগুলো, দলীল তো দূরের কথা আজগুবী যতসব ‘আমলের’ কথা বই লিখে বাজারে চালিয়ে দেয়া হয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘আমার পক্ষ থেকে লোকদের নিকট পৌছে দাও যদিও তা একটি মাত্র লাইন হয়’।
সূত্র: Virtues and Merits of the Prophet (pbuh) and his Companions, Bukhari :: Book 4 :: Volume 56 :: Hadith 667

লোকদের নিকট ইসলামের কথা, হকের বাণী পৌছাতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষ থেকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ‘ইসলাম’ সম্পর্কিত সব কিছুই এসেছে ‘অহি’ আকারে তিনি নিজের থেকে কোন কিছু বানিয়ে বলেন নি। “আর সে মনগড়া কথা বলে না। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়।” (সূরা নাজমঃ ৩-৪) এখন, ইসলাম সম্পর্কে এমন ব্যাখ্যা দিলাম, এমন একটি হাদীস বল্লাম যেটি মিথ্যা, জাল কিংবা বানোয়াট, কুরআন সম্পর্কে তথা আল্লাহর আয়াত সম্পর্কে এমন বক্তব্য পেশ করলাম যা প্রকারন্তরে মিথ্যা বলার নামান্তর তাহলে সওয়াব অর্জন তো দূরে থাক জাহান্নাম মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যারোপ করবে সে তার স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল”। অন্য বর্ণনায় ইচ্ছাকৃতভাবে কথাটি নেই। সূত্র: Knowledge, Bukhari :: Book 1 :: Volume 3 :: Hadith 106 – 110

আল্লাহ তায়ালা বলেন: বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’। (সূরা আরাফঃ ৩৩)

বল, ‘এটা আমার পথ। আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও। আর আল্লাহ পবিত্র মহান এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’। (সূরা ইউসুফঃ ১০৮)

“আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই” । এটাই হচ্ছে দাওয়াত প্রদানের প্রথম বিষয়, আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহর দিকে দাওয়াত প্রদানের উদ্দেশ্য লোক দেখানো, নিজস্ব ধারণা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে, মানুষের মাঝে পরিচিত হওয়ার জন্যে কিংবা পার্থিব কোন লাভের জন্যে নয় বরং আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিতে হবে আন্তরিকতার সাথে শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য। “আমি জেনে-বুঝে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেই” – যার মানে হল আমি মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করি পূর্ণাঙ্গ (স্বচ্ছ) জ্ঞান সহকারে অর্থাৎ অজ্ঞতা নিয়ে আহবান করি না। শুধুমাত্র মুসলিম শুধু এতটুকুই মানুষকে দাওয়াত প্রদান করার জন্যে যথেষ্ট নয় বরং সঠিকভাবে ইসলাম বলতে আসলেই কি বুঝায় তা জেনে নিতে হবে। সবাই যে যে পথে রয়েছে তাকেই ইসলাম বলে অভিহিত করে! যদিও, সঠিক ইসলাম সকলের নিকট পরিচিত নয়, কাজেই আহবানকারীকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে সঠিক ইসলাম বলতে কি বুঝায় এবং স্বচ্ছ জ্ঞান সহকারে তা মানুষের নিকট বলতে হবে বা তাদের সংশোধন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা এরপর উক্ত আয়াতে বলেন, “এবং যারা আমার অনুসরণ করেছে তারাও”, ভাল করে লক্ষ করুন, “যারা আমার অনুসরণ করেছে” অর্থাৎ দাওয়াতের ক্ষেত্রে যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথ ও পদ্ধতী অনুসরণ করে তারাও একইভাবে মানুষদের শুধুমাত্র আল্লাহর দিকে আহবান করে। এখন, যে কেউ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পথ ও পদ্ধতী ব্যতীত অন্য কোন পন্থায় মানুষকে দাওয়াত দেয় তাহলে সে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহবান করে না বরং সে যা চায় তার জন্য আহবান করে।

তাই “ইসলাম” নিয়ে লিখতে যেয়ে, মানুষের দিকে আহবান করতে যেয়ে সর্বপ্রথম খেয়াল করতে হবে আমি “অহি” ভিত্তিক জ্ঞান মানুষের নিকট বলতে যাচ্ছি, এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত পছন্দ কিংবা ব্যক্তিগতভাবে আমি যা বুঝি তাকে “ইসলাম” বলা কোনভাবেই উচিত হবে না। ‘হক’ এসেছে আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে, হিদায়াতের বাণী, সৎপথে চলার বাণী, আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার বাণী ‘অহী’র মধ্যেই মওজুত রয়েছে, এখানে ‘অহী’ বলতে বুঝানো হচ্ছে কুরআন এবং সহীহ হাদীস। মিথ্যা, বানোয়াট কথা অহী নয়, কোন মানুষের নিজস্ব মস্তিষ্ক চাষ করে দাওয়াতের পদ্ধতী আবিস্কার করে কিংবা মস্তিষ্ক প্রসূত ‘নিজে যা বুঝলাম তাই হক’ এমন কোন কথা অনুযায়ী দাওয়াত দেয়া ‘অহী’ প্রচার করা নয়। সুতরাং এটা কোন মামুলী কোন বিষয় নয়, বরং খুবই সতর্ক ও সাবধান হওয়া প্রয়োজন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের হক কথা বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

কুরআন ও হাদীসের পর যে বইগুলোর সাহায্য নিয়ে লেখাটি লেখা হয়েছে

১১৪৩

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭