সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

বিজয় দিবস অামাদের প্রেরণার উৎস
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বুধবার ০৬/১২/২০১৭

বিজয় দিবস অামাদের প্রেরণার উৎস
অধ্যক্ষ এম সোলাইমান কাসেমী 

বাংলাদেশের অব্যুদয় ইতিহাসের এক অনিবার্য ফল। আমাদের অতীত ইতিহাস নানা বিপর্যয়ের, প্রতারণা, নির্যাতনের ও বঞ্চনার। দীর্ঘদিন আমরা বন্দী ছিলাম দাসত্বে। আমাদের চিন্তার আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। বঞ্চনার পাহাড় গড়ে উঠেছিল আমাদের চারদিকে। নবাবী শোষণ, বেনিয়া শাসন এবং পরবর্তীতে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ আমাদের জাতীয় সত্তার অধিকার অক্টোপাসের মতো চেপে বসেছিল। তা থেকে মুক্ত হবার আকাঙ্খা থেকে যে সংগ্রামী চেতনা জেগে উঠেছিল তারই ফলশ্রুতিতে স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পরিশেষে বিজয়গর্বে স্বাধীনতা লাভ।
১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় জীবনে এক অবিনাশী স্মৃতিময় আনন্দঘন গর্বিত দিন। আমাদের জাতীয় জীবনে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবে চিহ্নিত। এই বিজয় অসত্যের বিরুদ্ধে সত্যের, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের। ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয় ১৯৪৭-এর ১৪ই আগষ্ট। এদিন ভারত উপমহাদেশ দুটি রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে ভারত ও পাকিস্তান নামে। আমাদের দেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভূক্ত হয়। কিন্তু আমাদের দেশ শোষিত হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা। তা থেকে মুক্ত হবার জন্য এদেশের মানুষ সংগঠিত হতে থাকে। নানা আন্দোলনের ভিতর দিয়ে সংগ্রাম চলতে থাকে। বহু তরুণ প্রাণ দেয় ভাষার জন্য, স্বাধিকারের জন্য। শেষে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ক্ষমতা তাঁকে দেয়া হয়নি। বঞ্চনার ভয়াল হাত আবারও টুটি চেপে ধরে। শুরু হয় গণজাগরণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে বাঙালি জাতি ঐক্যের সুদৃঢ় দেয়াল রচনা করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৭ই মার্চ ১৯৭১ সাল। একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন-‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।
তারপর অতি দ্রুত ঘটনা ঘটতে থাকে এবং পঁচিশে মার্চের রাতে পাক বাহিনী বাংলার ঘুমন্ত মানুষের ওপর হায়নার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে, শুরু হয় মুক্তিসংগ্রাম। প্রতিরোধ-প্রতিবাদ রূপ নেয় সশস্ত্র সংগ্রামে। সে সংগ্রামের ইতি ঘটে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের ভিতর দিয়ে। বাঙালি জাতির বহুকালের স্বপ্ন এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ভিতর দিয়ে বাস্তবায়িত হয়। তাই এই দিনটিই আমাদের জাতীয় ইতিহাস বিজয় দিবস নামে চিহ্নিত। স্বাধীনতা লাভ করার জন্য মানুষ সংগ্রাম করে। শাসকের অত্যাচার, রক্ষচক্ষু সবকিছু উপক্ষো করে মুক্তিপাগল মানুষ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জীবন দেয় দেশের জন্য, জাতির জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। আমাদের দেশের মানুষ সুখে থাকতে চেয়েছিল। তাঁরা মর্যাদা চেয়েছিল। মানুষ হিসেবে আত্মবিকাশের অধিকার চেয়েছিল। কিন্তু সে অধিকার তারা পায়নি-পেয়েছে অবহেলা, বঞ্চনা আর নির্যাতন। তাই তারা আত্মমর্যাদা রক্ষা এবং জাতীয় জীবনে সুখ-শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রাপ্তির লক্ষ্যে অন্যায়ের প্রতিবাদে মুখর হয়েছে-সংগ্রাম চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
নিরস্ত্র মানুষের ওপর অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়ে যে অমানুষিক বর্বরতার পরিচয় পাক সেনারা দিয়েছিল তার তুলনা ইতিহাসে বিরল। তারই প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এদেশের মানুষ। সংগঠিত হয় এক পতাকাতলে। ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি তুলে এদেশের মানুষের চেতনায় রোপণ করে দেয় স্বাধীনতা লাভের প্রত্যয়ী অঙ্গীকার। সে অঙ্গীকারের ফলশ্রুতিই হলো আমাদের স্বাধীনতা। দীর্ঘ নয় মাস এদেশের মানুষ শক্তিশালী পাক সেনাদের সাথে যুদ্ধ করেছে। যুদ্ধ করেছে এদেশের রাজাকার, আলবদর বাহিনীর বিরুদ্ধে। শেষে এই অসম যুদ্ধে বাঙালির সূর্য- সৈনিকেরা জয় লাভ করে। পরাজিত হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনের এক চরম ঘটনা। এ যুদ্ধ ছিল আমাদের মরণ-বাঁচনের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে জয়লাভ করতে না পারলে বাঙ্গালি জাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হতো। চিরকালের জন্য পরাধীনতার শিকল বাঁধা হয়ে যেত এ জাতির মেরুদন্ডে। ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর পাক-বাহিনী নয় মাস সংগ্রামের পর বাঙালিদের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাই দিনটি আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বিজয় দিবস হিসেবে চিহ্নিত। বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনে তাৎপর্যবাহী নানা কারণে। এই দিনে আমরা মুক্ত হই বিদেশী আধিপত্যবাদ থেকে, মুক্ত হই নির্যাতন থেকে। আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি নতুন পথ খুঁজে পায়। আমাদের চেতনায় জন্ম দেয় জাতিসত্তার নবতর অনুভব। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় ‘বাংলাদেশ’ নামক একটি নতুন সার্বভৌম রাষ্ট্র। অতএব, আমাদের জীবনে বিজয় দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। অনেকগুলো দিন নিয়ে বছর। অনেক বছর নিয়ে যুগ, শতাব্দী। এ সব দিন অলক্ষ্যে চলে যায়। কিন্তু এর মধ্য থেকে একটি দিন স্মৃতিময় হতে থাকে, স্মরণে উজ্জ্বলতা দেয়। আমাদের বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বর তেমনি একটি দিন। এ দিনের স্মৃতি আমাদের মানসে চির উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। এ দিন বিজয়ের-এ দিন আনন্দের, গর্বের এবং বেদনারও। লাখো শহীদের বুকের রক্তে রঞ্জিত স্বাধীনতার প্রথম সূর্যোদয়ের এই দিন আমাদের জাতিসত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লেখক : এম.ফিল গবেষক।

৩১১

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭