সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

মসজিদ সম্পর্কীত মাসআলা, মসজিদে ছালাতের ফযীলত ও মসজিদের আদব
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ১৫/০৬/২০১৭

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, আল্লাহর নিকটে প্রিয়তর স্থান হ’ল মসজিদ এবং নিকৃষ্টতর স্থান হ’ল বাজার’।

(২) ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে) মসজিদে যাতায়াত করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে মেহমানদারী প্রস্ত্তত রাখেন’। [47]

(৩) তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশী নেকী পান ঐ ব্যক্তি যিনি সবচেয়ে দূর থেকে মসজিদে আসেন এবং ঐ ব্যক্তি বেশী পুরস্কৃত হন, যিনি আগে এসে অপেক্ষায় থাকেন। অতঃপর ইমামের সাথে ছালাত আদায় করেন।[48] তিনি বলেন, ‘প্রথম কাতার হ’ল ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে এর ফযীলত কত বেশী, তাহ’লে তোমরা এখানে আসার জন্য অতি ব্যস্ত হয়ে উঠতে’।[49]

(৪) ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে যে সাত শ্রেণীর লোক আশ্রয় পাবে, তাদের এক শ্রেণী হ’ল ঐ সকল ব্যক্তি যাদের অন্তর মসজিদের সাথে লটকানো থাকে। যখনই বের হয়, পুনরায় ফিরে আসে।[50]

(৫) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অন্যত্র ছালাত আদায়ের চেয়ে আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করা এক হাযার গুণ উত্তম এবং মাসজিদুল হারামে ছালাত আদায় করা এক লক্ষ গুণ উত্তম।

উল্লেখ্য যে ‘অন্য মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে ছালাত আদায় করলে পাঁচশত গুণ ছওয়াব বেশী পাওয়া যাবে’ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি ‘যঈফ’।

মসজিদ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য :

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করেন। [53] তবে যদি ঐ মসজিদ ঈমানদারগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়, তাহ’লে তা ‘যেরার’ (ضِرَار) অর্থাৎ ক্ষতিকর মসজিদ হিসাবে গণ্য হবে’ (তওবাহ ৯/১০৭)। উক্ত মসজিদ নির্মাণকারীরা গোনাহগার হবে।

(২) মসজিদ থেকে কবরস্থান দূরে রাখতে হবে। নিতান্ত বাধ্য হ’লে মাঝখানে দেওয়াল দিতে হবে। মসজিদ সর্বদা কোলাহল মুক্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে হওয়া আবশ্যক।

(৩) মসজিদ অনাড়ম্বর ও সাধাসিধা হবে। কোনরূপ সাজ-সজ্জা ও জাঁকজমক পূর্ণ করা যাবে না বা মসজিদ নিয়ে কোনরূপ গর্ব করা যাবে না।

(৪) মসজিদ নির্মাণে সতর্কতার সাথে ইসলামী নির্মাণশৈলী অনুসরণ করতে হবে। কোন অবস্থাতেই অমুসলিমদের উপাসনা গৃহের অনুকরণ করা যাবে না।

(৫) মসজিদে নববীতে প্রথমে মিম্বর ছিল না। কয়েক বছর পরে একটি কাঠের তৈরী মিম্বর স্থাপন করা হয়। যা তিন স্তর বিশিষ্ট ছিল। তিন স্তরের অধিক উমাইয়াদের সৃষ্ট।

(৬) যে সব কবরে বা স্থানে পূজা হয়, সিজদা হয় বা যেখানে কিছু কামনা করা হয় ও মানত করা হয়, ঐসব কবরের বা স্থানের পাশে মসজিদ নির্মাণ করা হারাম এবং ঐ মসজিদে ছালাত আদায় করা বা কোনরূপ সহযোগিতা করাও হারাম। কেননা এগুলি শিরক এবং আল্লাহ শিরকের গোনাহ কখনই ক্ষমা করেন না (তওবা করা ব্যতীত)।

(৭) মসজিদের এক পাশে ‘আল্লাহ’ ও একপাশে ‘মুহাম্মাদ’ লেখা পরিষ্কারভাবে শিরক। একইভাবে ক্বিবলার দিকে চাঁদতারা বা কেবল তারকার ছবি নিষিদ্ধ। মুসলমান ‘আল্লাহ’ নামক কোন শব্দের ইবাদত করে না। বরং তারা অদৃশ্য আল্লাহর ইবাদত করে। যিনি সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও বিশ্বচরাচরের স্রষ্টা। যিনি সাত আসমানের উপরে আরশে সমাসীন (ত্বোয়াহা ২০/৫)। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ও শক্তি সর্বত্র বিরাজমান। যিনি আমাদের সবকিছু দেখেন ও শোনেন (ত্বোয়াহা ২০/৪৬)। তাঁর নিজস্ব আকার আছে। কিন্তু তা কারু সাথে তুলনীয় নয় (শূরা ৪২/১১)

(৮) মসজিদে ক্বিবলার দিকে ‘আল্লাহ’ ও কা‘বা গৃহের ছবি এবং মেহরাবের দু’পাশে গম্বুজের আকৃতি বিশিষ্ট দীর্ঘ খাম্বাযুক্ত সুসজ্জিত টাইল্স বসানো যাবে না। মেহরাবের উপরে কোনরূপ লেখা বা নকশা করা যাবে না। মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) মসজিদে চাকচিক্য করাকে বিদ‘আত বলেছেন।

(৯) ‘আল্লাহ’ বা ‘মুহাম্মাদ’ বা ‘কালেমা’ খচিত ভেন্টিলেটর বা জানালার গ্রীল ইত্যাদি নির্মাণ করা যাবে না।

(১০) মসজিদের বাইরে, মিনারে বা গুম্বজে ‘আল্লাহ’ বা ‘আল্লাহু আকবর’ এবং দেওয়ালে ও ছাদের নীচে দো‘আ, কালেমা, আসমাউল হুসনা ও কুরআনের আয়াত সমূহ লেখা বা খোদাই করা যাবে না বা কা‘বা গৃহের গেলাফের অংশ ঝুলানো যাবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মসজিদে এসবের কিছুই ছিল না।

(১১) মসজিদের ভিতরে-বাইরে কোথাও মাথাসহ পূর্ণদেহী বা অর্ধদেহী প্রাণীর প্রতিকৃতি বা ছবিযুক্ত পোস্টার লাগানো যাবে না। কেননা ‘যে ঘরে কোন (প্রাণীর) ছবি টাঙানো থাকে, সে ঘরে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না’।[59]

(১২) মসজিদে অবশ্যই নিয়মিতভাবে আযান ও ইবাদতের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(১৩) মসজিদে (নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক) ওযূখানা ও টয়লেটের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

(১৪) মসজিদ ও তার আঙিনা সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ইবাদতের নির্বিঘ্ন ও সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।

(১৫) মসজিদে আগত আলেম ও মেহমানদের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে ও সর্বোচ্চ আপ্যায়ন করতে হবে। কেননা তারা আল্লাহর ঘরের মেহমান।

(১৬) পুরুষের কাতারের পিছনে মহিলা মুছল্লীদের জন্য পৃথকভাবে পর্দার মধ্যে পুরুষের জামা‘আতের সাথে ছালাতের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় মহিলাগণ নিয়মিতভাবে পুরুষদের সাথে জুম‘আ ও জামা‘আতে যোগদান করতেন।[60] তবে এজন্য পরিবেশ নিরাপদ ও অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন হবে এবং তাকে সুগন্ধিবিহীন অবস্থায় আসতে হবে।[61]

(১৭) কেবল মসজিদ নির্মাণ নয়, বরং মসজিদ আবাদের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে এবং নিয়মিতভাবে বিশুদ্ধ দ্বীনী তা‘লীম ও তারবিয়াতের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন মসজিদে নববীতে ছিল। বর্তমানে মসজিদগুলিতে ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক বিশুদ্ধ দ্বীনী তা‘লীমের বদলে অশুদ্ধ বিদ‘আতী তা‘লীম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাছাড়া জামা‘আত শেষে দলবদ্ধভাবে সর্বোচ্চ স্বরে ও সুরেলা কণ্ঠে মীলাদ ও দরূদের অনুষ্ঠান করা কোন কোন মসজিদে নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে ঐসব মসজিদ এখন ইবাদত গৃহের বদলে বিদ‘আত গৃহে পরিণত হয়েছে। সংশ্লিষ্টগণ আল্লাহকে ভয় করুন!

(১৮) সুন্নাত থেকে বিরত রাখার জন্য ‘সুন্নাতের নিয়ত করিবেন না’ লেখা বা মসজিদে লালবাতি জ্বালানোর ব্যবস্থা রাখা ঠিক নয়। কেননা ইক্বামত হয়ে গেলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামা‘আতে যোগ দিলে ঐ ব্যক্তি পূর্ণ ছালাতের নেকী পেয়ে যায়।[62]

(১৯) জামে মসজিদের সাথে (প্রয়োজন বোধে) ইমাম ও মুওয়াযযিনের পৃথক কোয়ার্টার ও তাদের থাকা-খাওয়ার ও জীবন-জীবিকার সম্মানজনক ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।

(২০) মসজিদের আদব : (ক) মসজিদে প্রবেশ করে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’রাক‘আত ‘তাহিইয়াতুল মাসজিদ’ নফল ছালাত আদায় করবে। সরাসরি বসবে না। (খ) মসজিদে (খুৎবা ব্যতীত) উঁচু স্বরে কথা বলবে না বা শোরগোল করবে না। (গ) সেখানে কোন হারানো বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা যাবে না। (ঘ) মসজিদে কাতারের মধ্যে কারু জন্য কোন স্থান নির্দিষ্ট করা যাবে না (ইমাম ব্যতীত)। অতএব কোন মুছল্লীর জন্য পৃথকভাবে কোন জায়নামায বিছানো যাবে না। (ঙ) মসজিদে নববী ও মসজিদুল আক্বছা ব্যতীত সকল মসজিদের মর্যাদা সমান। অতএব বেশী নেকী হবে মনে করে বড় মসজিদে যাওয়া যাবে না।

(২১) মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দকে সর্বদা মসজিদের তদারকি করতে হবে এবং এর সংরক্ষণের প্রতি দৃষ্টি রাখতে হবে। নইলে তাদেরকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।[68] তাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নির্ভীক অনুসারী, আল্লাহভীরু ও নিষ্ঠাবান মুছল্লী হ’তে হবে (তওবা ৯/১৮)। তারা যেন মসজিদে কোন বিদ‘আত ও বিদ‘আতীকে প্রশ্রয় না দেন। কেননা তাহ’লে তাদের উপর আল্লাহর লা‘নত হবে এবং তাদের কোন নেক আমল আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।

১৮৭৯

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭