সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

মুসলিম নারী এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য – পর্ব ১
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : মঙ্গলবার ২০/০৬/২০১৭

মুসলিম নারী

নারী এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা কেন?

প্রথমত:

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাকে পুরুষের স্বভাব-প্রকৃতি থেকে ভিন্ন বিশেষ স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; আর সে থেকেই তিনি তাকে এমন কতগুলো বিধিবিধানের সাথে বিশেষিত করেছেন, যেগুলো ঐ বিশেষ স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ হায়েয (ঋতুস্রাব), নিফাস, উভয় অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জন, দুধ পান করানো এবং সালাত (নামায), সিয়াম (রোযা), হজ প্রভৃতি ধরনের ইবাদতের কিছু কিছু বিধানের সাথে যা সংশ্লিষ্ট। সুতরাং পুরুষ ও নারী গবেষকদের উপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হল, তারা এ বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্ট করে তাদের আলোচনা নির্দিষ্ট করবেন।

 

দ্বিতীয়ত:

একজন নারীর উপর কিছু আবশ্যকীয় দায়িত্ব ও মহান আমানত রয়েছে, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তার উপর ন্যস্ত করেছেন। সে সাধারণভাবে আকিদা-বিশ্বাস, পবিত্রতা অর্জন, সালাত (নামায), সিয়াম (রোযা) প্রভৃতির মত শরী‘আতের সকল বিধিবিধানের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর তার জন্য আরও কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে, একাধারে সে লালন-পালনকারিনী, মাতা ও স্ত্রী হওয়ার কারণে তাকে সেগুলোর সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত করা হয়েছে; সুতরাং প্রত্যেক অবস্থায় তার উপর আবশ্যক হল সে ঐ নিয়ম-কানুনসমূহ যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে। অতএব তাকে নিয়ে মোটামুটিভাবে ও বিস্তারিতভাবে আলোচনা হওয়া আবশ্যক; আরও আবশ্যক সুস্পষ্টভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা, যাতে মুসলিম নারী তার মধ্য দিয়ে ঐসব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারে।

 

তৃতীয়ত:

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যব্যাপী ইসলামের শত্রুগণের পক্ষ থেকে বিগত যুগে মুসলিম নারীরা ঐ নগ্ন হামলার শিকার হয়েছে এবং মুসলিম সন্তানদের কেউ কেউ সেই প্রয়াসকে গলধঃকরণ করেছে; ফলে তারা ঐ কলমসমূহ যা লিখেছে, তা-ই আওড়াতে থাকে এবং ঐ আওয়াজসমূহের প্রতিধ্বনি-ই করতে থাকে, যাতে নারী তার আপন গৃহ থেকে বেরিয়ে যায়, সে পুরুষের সাথে অবাধে মেলামেশা করতে পারে এবং তাকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে এবং তার শিশু সন্তানদের যত্ন নেয়ার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে পারে। ঐ আওয়াজসমূহ মুসলিম নারীকে নিয়ে চিৎকার করে বলে: “তুমি যে অবস্থানে রয়েছো, তা ভেঙ্গে চুরমার করে দাও; তোমার চতুর্পাশে বিস্তৃত পর্দাসমূহ ছিঁড়ে ফেল; আমাদের দিকে বের হয়ে আস, যাতে তুমি আলো দেখতে পাও, যে আলো থেকে তুমি আড়ালে ছিলে যুগ যুগ ধরে; পুরুষের কর্তৃত্ব থেকে স্বাধীনতা অর্জন কর; মর্যাদার শর্তসমূহ থেকে মুক্তি লাভ কর; তোমার পর্দা খুলে ফেলে দিয়ে বের হয়ে আস; ঘর থেকে বের হয়ে আসার মাধ্যমে তোমার অস্তিত্ব ও কণ্ঠস্বরের প্রমাণ দাও; জীবনের প্রতিটি লোভনীয় বস্তু থেকে তোমার অংশটুকু গ্রহণ করার মাধ্যমে তুমি নিজেকে উপভোগ কর; তোমার স্বাধীন রুচি ব্যতীত অন্য কিছু যাতে তোমাকে শাসন না করে এবং বই পুস্তকের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় তোমার যাদুকরী কোমলতা ছাপিয়ে, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ও রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুমি ব্যবসা চালিয়ে যাও!”

আরব তরুনী! তুমি কি দারিদ্রতা চাও, অথচ সৌন্দর্য একটি বড় গচ্ছিত সম্পদ

তুমি কি পবিত্রতা চাও, অথচ এ যুগ হচ্ছে উপভোগের যুগ!

আগে অবশ্য মান-মর্যাদা রক্ষার যুগ ছিল, এখন সেটা তো শেষ হয়ে গেছে,

এ যুগ তো নতুন অনেক কিছু করেছে, সুতরাং তুমি চমৎকার কিছু কর!  [১]

 এই নগ্ন হামলা এর বিরুদ্ধে দাবি করে জোটবদ্ধ পরিশ্রম বা চেষ্টা-সাধনা, যাতে মুসলিম নারী তার বিরুদ্ধে প্রণীত পরিকল্পনাকে পরিপূর্ণ মনোযোগের সাথে বুঝতে পারে; অতঃপর সে পর্যবেক্ষণ করবে এবং তার পথ সে সচেতন দৃষ্টিতে গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।

 

চতুর্থত:

আর তা তৃতীয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট; উপরোল্লেখিত নগ্ন হামলার সাথে সাথে নারী বিষয় নিয়ে অনেক ফেতনা-ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলার উদ্ভব সাধন করা হয়েছে। যেগুলো ইসলামী শরী‘আতের ব্যাপারে সচেতন মুসলিম নারীদের কারও কারও মধ্যেও দেখা যায়। বস্তুত এ ফেতনা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে এমন কিছু লোক হাঁকডাক দিচ্ছে, যারা চায় নিজেকে প্রকাশ করতে; আরও চায় তার জন্য এমন একটি রায় বা মত হবে, যা তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত হবে। অবশেষে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নারীর অনেক ব্যাপার নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে দু’ভাগে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর বিষয়টি শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলো না। ফলে আমরা দৈনিক সংবাদপত্রগুলো এবং ম্যাগাজিনসমূহে বিখ্যাত ও অখ্যাত ব্যক্তিবর্গের হাতে লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ অধ্যয়ন করি— কারণ, তারা দাবি করে যে, শরী‘আত কারও একান্ত বিষয় নয়, সবাই এতে মত প্রকাশ করার অধিকার রাখে। [২]

 

তারা চিকিৎসা, প্রকৌশল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোন কথা বলতে রাজি নয়; কারণ, তারা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয়; কিন্তু তারা মূর্খতা ও অজ্ঞতা সত্ত্বেও আল্লাহর শরী‘আতের মধ্যে নাক গলানোটাকে গ্রহণ করেছে; আল্লাহ তুমি পবিত্র! এটা কত বড় অপবাদ!!

এটা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের উপর গুরু দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় যে, সত্য বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও গবেষণা চালিয়ে যাবেন, যতটুকু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে বর্ণনা, দলিল-প্রমাণ ও জ্ঞানবুদ্ধির শক্তি থেকে দান করেছেন।

 

পঞ্চমত:

মুসলিম নারী পরবর্তী যুগসমূহে কাফির ও মুনাফিকদের মধ্য থেকে প্রত্যেক হাঁকডাককারী ও হাঁকডাককারিনীর বাহন ও ফটক হিসেবে গৃহীত হয়েছে, যাতে তারা এই দীনের অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে; কারণ, তারা জানে যে, নারী যখন তার ঘর থেকে বের হয়ে যাবে, তার শিশুসন্তানদেরকে মুরব্বী ও কাজের মহিলার নিকট রেখে যাবে, পুরুষদের ময়দানসমূহে অনুপ্রবেশ করবে ও তাদের সাথে মেলামেশা করবে, তাদের কাপড় পরিধান করবে, তার চেহারা ও শরীরের কোন কোন অংশ উন্মোচিত করবে, শিল্পকারখানার ধোঁয়ায় নিজেকে কলুষিত করবে এবং খরিদ্দার ও পর্যবেক্ষকদের জন্য তার দেহের বাহ্যিক দিকটিকে সুসজ্জিত করবে, আর এভাবে সে পুরুষের সাথে তার কর্মক্ষত্রে প্রতিযোগিতা করবে এবং তার প্রকৃত ময়দানকে সে উপেক্ষা করবে; তখনই সে বিকৃতির প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ করবে এবং সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাবে; আর এভাবেই তারা নারীকে নষ্ট-ভ্রষ্ট করে দিবে এবং শিশু ও তার লালন-পালন ও আদব-কায়দার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অবহেলা করবে; আর তার পুরুষের অধিকারের দিকে মনোযোগ দিবে না; আর তা থেকেই পুরো সমাজে বিশৃঙ্খলা পুনঃপ্রবর্তিত হবে।

 

আমি এখানে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না, কিন্তা এটা বিজ্ঞজনদের উপর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণকে বাধ্যতামূলক করে দেয়; কেননা প্রয়োজনের সময় থেকে আলোচনা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।

 

ষষ্ঠত:

দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দিকে নারীর উদারতার বিষয়ে যা লক্ষ্য করা যায়, সেটি মোটেই সহজ ব্যাপার নয়, চাই তার আচার-আচরণগত দিক হউক, অথবা তার কাজকর্মের দিক হউক, অথবা পুরুষদের সাথে তার মেলামেশার ব্যাপারে বা তাদের সাথে নির্জনে সময় কাটানোর ব্যাপারে হউক, অথবা তাদের সাথে কোনো প্রকার বাধ্য-বাধকতা ছাড়া অবাধ কথা-বার্তা বলার ব্যাপারে হউক, অথবা তার সাজসজ্জা, পোষাক-পরিচ্ছদ, পর্দা ও শরী‘আতের সীমা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শনের ব্যাপারে হউক, অনুরূপভাবে তার নিজ গৃহে তার কাজকর্ম ও ঘর থেকে বেশি বেশি বাইরে গমন করা এবং প্রাচ্য অথবা পাশ্চাত্য থেকে আগত বিভিন্ন ফ্যাশান ও শ্লোগানে প্রভাবিত হওয়ার ক্ষেত্র্রে নমনীয়তার ব্যাপারে হউক; আমি বলব: এই উদারতা ও শৈথিল্য থেকে যা দেখা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত যত্নসহকারে দাবি করে মুসলিম নারী বিপর্যয়ে পতিত হওয়ার পূর্বেই তাকে উদ্দেশ্য করে  আবশ্যকীয় দায়িত্ব পালন করা, যেমনিভাবে অনেক দেশে বিপর্যয়ে পতিত হয়েছে তার বোন ও মুসলিম নারীসমাজ; সুতরাং সে এমন হয়ে গেছে যে, আপনি আকার-আকৃতি ও বেশভূশায় তার মাঝে ও কাফির নারীর মাঝে কোন পার্থক্য করতে পারবেন না। 

 

সপ্তমত:

আজকের মুসলিম নারীর সাথে কয়েকটি প্রবণতার দ্বন্দ্ব চলছে, এগুলোকে মোটামুটি নিম্নলিখিতভাবে উল্লেখ করা যায়:

–          প্রাচীন সামাজিক প্রবণতা: নির্দিষ্ট প্রকৃতির লোক এবং প্রত্যেক প্রাচীন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরার প্রতি আহ্বানকারী ব্যক্তি; এগুলোর মধ্যে কোনটি শরী‘আত স্বীকৃত আর কোনটি শরী‘আত স্বীকৃত নয়, সে দিকে কোন প্রকার দৃষ্টি দেয়া ছাড়াই শুধুমাত্র প্রথার অনুসরণ ও অনুকরণের মাঝে সীমাবদ্ধ।

–          প্রত্যাখ্যানকারী প্রবণতা: আর তা এমন এক প্রবণতা, যা প্রতিটি প্রচীন বিষয়কেই প্রত্যাখ্যান করে; আর নারীকে অতীতের আড়াল ও শরী‘আতের শিক্ষাসমূহ থেকে বের হয়ে আসার জন্য আহ্বান করে এবং তাকে ছোট হউক, বা বড় হউক, আকৃতিগত হউক, বা বিষয়বস্তুগত হউক প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাফির নারীর অনুসরণের জন্য ডাকে।

–          মাঝামাঝি প্রবণতা: আর তা এমন এক প্রবণতা, যার প্রতি জাতির চিন্তাবিদগণ ও শরী‘আতের অনুসারী ব্যক্তিবর্গ আহ্বান করে এবং বলে: “হে নারী! তুমি বিবেক দিয়ে অনুধাবন কর। কেননা, তুমি মুসলিম নারী, তুমি জান যে, তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ গ্রহণ করার মধ্যেই তোমার কল্যাণ; আর তিনিই সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন, যা তোমাকে উপকৃত করবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য অনেক নির্দেশনা অবতীর্ণ করেছেন, তুমি সেগুলো গ্রহণ কর, কারণ তাতে তোমার মুক্তি নিহিত রয়েছে। আর এমন প্রত্যেকটি বিষয়, যেদিকে তারা তোমাকে পরিচালিত করে, চাই তা প্রাচীন প্রথা হউক, অথবা আধুনিক ষড়যন্ত্র হউক, তোমার উচিত হল, তুমি এগুলোকে এই পরিমাপক দ্বারা ওজন করে নেবে, অতঃপর তুমি গ্রহণ করবে অথবা প্রত্যাখ্যান করবে।” [৩]

 

মুসলিম সমাজে অনেক নারী সে যে সমাজে বসবাস করে, সেই সমাজের প্রবাহের শক্তি বিবেচনায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছে এবং নারীগণ এসব আওয়াজের ধাক্কাধাক্কির ফলে অনেক দলে পৃথক হয়ে গিয়েছে। ফলে মুসলিম নারীর সামনে বহু পথের উদ্ভব হলো, প্রত্যেকেই নারীর স্বার্থ ও কল্যাণ চিন্তা করার কথা বলে, তার অধিকার দাবি করে এবং তাকে নিয়ে কান্নাকাটি করে ও কান্নার ভান করে। তাই অনেক নারীর নিকটই মিথ্যার সাথে সত্যের মিশ্রণ হয়ে গেছে এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সিদ্ধান্তহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

একদিকে কারও উপর কাফির ও ফাসিকদেরর আওয়াজ ও চেঁচামেচি প্রভাব বিস্তার করেছে এবং এই গোষ্ঠীর কলমের লেখালেখিতে প্রতারিত হয়ে ভ্রষ্ট এই ধারায় চলে গেছে। ফলে সে শরী‘আতের সীমালঙ্ঘন করে পর্দা খুলে ফেলেছে, পুরুষদের সাথে মেলা-মেশায় গিয়েছে এবং শিল্পকলা, অভিনয়, গান ও নৃত্যের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।

 

আরেকদিকে কেউ কেউ আছে এক পা এগুলে দু‘পা পেছায়; সে দ্বিধাগ্রস্ত— একবার সে বস্তুবাদী চিন্তা করে, আরেকবার সে তার স্বভাবধর্ম ও স্রষ্টার শিক্ষাসমূহের দিকে ফিরে আসে।

 

অন্যদিকে আছেন রক্ষণশীল বুদ্ধিমান নারী, যিনি তার প্রতিপালকের শিক্ষা ও দর্শনসমূহ সংরক্ষণ করেন এবং ঈমান ও তুষ্টতা সহকারে সেই শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি এই দীনকে শক্তভাবে বহন ও আঁকড়ে ধরেছেন এবং বিজাতীয় বিনষ্ট বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর তিনি তার প্রতিপালকের দিকে অন্যদেরকে মাথা উঁচু করে দৃঢ়তার সাথে আহ্বান করেন এবং তার ব্যক্তিত্ব, পর্দা ও পবিত্রতা রক্ষা করে চলেন। তার স্বামীর অধিকার বাস্তবায়নকারিনী হিসেবে এবং তার শিশুসন্তানদের লালনপালনকারিনী হিসেবে এই জীবনে তিনি তার প্রকৃত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন।

 

এই প্রতিটি অবস্থাই আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে অন্ধকার দূর করার জন্য, যা মুসলিম নারীর বিষয়ে এই যুগ বা সময়কে প্রভাবিত করেছে; যাতে করে প্রত্যেক সত্যানুসন্ধানী মুক্তিকামী পুরুষ অথবা নারীর জন্য পথ স্পষ্ট হয় এবং তার মাইলফলকগুলো পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়ে উঠে।

 

অষ্টমত:

মুসলিম সমাজ তথা মুসলিম জাতির পরিপূর্ণতার জন্য এমন রক্ষণশীল আদর্শ নারীর প্রয়োজন, যে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জানে এবং তার উপর অর্পিত আমানতকে অনুধাবন করে; যে নিজের পথ দেখতে পায় এবং তার নিজের অধিকার ও অন্যের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।

–          আমাদের প্রয়োজন এমন মুসলিম মুমিন নারীর, যার রয়েছে তার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অগাধ বিশ্বাস; সুতরাং তিনি তাঁকে প্রতিপালক, স্রষ্টা ও মাবুদ বা উপাস্য বলে বিশ্বাস করেন; আরও বিশ্বাস করেন তাঁর ফেরেশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমষ্টি ও রাসূলগণের প্রতি; আর পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভাল ও মন্দের প্রতি। অতঃপর  এই ঈমান অনুযায়ী তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন তার এই জীবনের চিন্তাভাবনাগুলোকে; জগত, জীবন ও মানুষ সম্পর্কে।

–          আমাদের প্রয়োজন এমন সচেতন নারীর, যিনি তার প্রতিপালকের শরী‘আত তথা বিধিবিধানকে সংরক্ষণ করেন, অনুধাবন করেন তাঁর আদেশসমূহকে; অতঃপর সে অনুযায়ী কাজ করেন। আর অনুধাবন করেন তাঁর নিষেধসমূহকে, অতঃপর সেগুলো থেকে দূরে থাকেন। তার নিজের অধিকার এবং তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক জানেন, অতঃপর এর মাধ্যমে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।

–          আর আমাদের প্রয়োজন এমন সচেতন নারীর, যিনি তার প্রকৃত দায়িত্বের বিষয়গুলো এবং তার গৃহরাজ্যের বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন; অতঃপর এই ছোট্ট রাজ্যের অধিকার সংরক্ষণ করেন, যে রাজ্য পুরুষদের প্রস্তুত করে এবং শিশু-কিশোরদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসায় ও তাঁর দীনের সেবায় গঠন করে তোলে।

–          আর আমাদের প্রয়োজন এমন নারীর, যার বাহ্যিক দিক তার অভ্যন্তর সম্পর্কে বলে দেয়। কারণ, তিনি প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের দ্বারা প্রভাবিত নন, প্রভাবিত নন কোনো প্রবণতা বা ফ্যাশন দ্বারা; যিনি প্রত্যেক ধ্বনি বা চীৎকারের অনুসরণ করেন না। তিনি তার বাহ্যিক ক্ষেত্রে মডেল বা আদর্শ, যেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ দিকেও আদর্শ। তার শরীর সংরক্ষিত; আর তার হৃদয় ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ এবং তার পবিত্রতা ও সচ্চরিত্রতার দিকটি সুস্পষ্ট; আর তার পোষাক-পরিচ্ছদ ও অন্তরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় অবস্থাই পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র। তিনি ঈমান এনেছেন, শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং আমল করেছেন।

–          আর আমাদের প্রয়োজন এমন আদর্শ আল্লাহ্‌র পথে আহ্বানকারী নারীর, যিনি তার কথার পূর্বে কাজের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহ্বান করেন; তিনি মানুষের জন্য ভাল ও কল্যাণকে পছন্দ করেন, যেমনিভাবে তা তিনি নিজের জন্য পছন্দ করেন; তিনি একে উপদেশ দেন, ওকে নির্দেশনা প্রদান করেন আর আরেকজনের অন্যায় কাজের সমালোচনা করেন; তিনি লালন-পালন করেন, গঠন করেন, ভুলত্রুটি সংশোধন করেন, সমস্যা সমাধান করেন, তার সম্পদ দ্বারা দান-সাদকা করেন, তার সাধ্যানুসারে কর্মতৎপরতা পরিচালনা করেন, দাওয়াতী কাজ নিয়েই তিনি জীবনযাপন করেন, কি দাঁড়ানো অবস্থায়, কি তার বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায়, কি তার কাজের মধ্যে— এক কথায় যে কোন স্থানে, যে অবস্থায়ই থাকেন।

–          আর আমাদের প্রয়োজন এমন নারীর, যিনি তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সচেতন থাকেন, অতঃপর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের আনুগত হওয়া থেকে, তাদের আহ্বানসমূহে সাড়া দেওয়া থেকে এবং তাদের জীবন-পদ্ধতি অনুসরণ থেকে সতর্ক থাকেন। তিনি সদা-সতর্কতা অবলম্বন করেন এবং ঐসব ভ্রান্ত প্রচার-প্রপাগান্ডা থেকে সতর্ক করেন, যেগুলো নারীকে তাদের প্রপাগান্ডার বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছে— যার বিবরণ পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে।

এই প্রয়োজনীয়তাই বিজ্ঞজন ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে তাদের বক্তব্য-বিবৃতি ও লেখনীর মাধ্যমে তাদের চেষ্টা-সাধনা শুরু করতে বাধ্য করে। যাতে তারা মুসলিম নারী ও তার অভিভাবকের দৃষ্টি খুলে দেন ‌এবং স্মরণ করিয়ে দেন তার কাঁধের উপর অর্পিত আমানতের কথা।

 

নবমত:

পুরুষের উপর প্রভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে নারীর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। তিনি যদি মা হন, তবে তার জন্য নির্দেশ দেয়া ও নিষেধ করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর তার (পুরুষের) উপর আবশ্যক হল তার আনুগত্য করা এবং সৎকাজের ব্যাপারে করা তার আদেশসমূহের বাস্তবায়ন করা।

আর সে যদি স্ত্রী হয়, তবে তার অধিকার আছে স্বামীকে আল্লাহ্‌র আনুগত্যের ব্যাপার উৎসাহিত ও প্রলুব্ধ করার এবং অন্যায় ও অবাধ্যতার ব্যাপারে সতর্ক করার। আর স্বামীর ক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকাকে গণ্ডমূর্খ ছাড়া অন্য কেউ অস্বীকার করে না। আর অনুরূপভাবে তার প্রভাব বিদ্যমান যদি সে বোন, কন্যা বা নিকটাত্মীয়ও হয়।

আর এই জন্য নারীর উপর আবশ্যক হল, সে এই মহান ভূমিকা অনুধাবন করবে, যাতে তার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে পারে।

 

দশমত:

একজন নারী একজন পুরুষের চেয়ে নারী, নারীসমাজ ও নারীদের মাঝে প্রচলিত প্রবণতা সম্পর্কে বেশি ওয়াকিফহাল। তেমনিভাবে সে তাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশি অবগত। সে-ই পুরুষের চেয়ে ক্ষমতাবান এই পথে চলতে।

পটভূমি হিসেবে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রত্যেকটিই নারী প্রসঙ্গে এবং নারীর দায়িত্ব, অধিকার, জবাবদিহিতা ও এই সামগ্রিক সীমারেখা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে; যার মাধ্যমে একজন নারী তার ভূমিকা সুন্দরভাবে পালন এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে আদায় করতে পারে।

 

[1] দ্রষ্টব্য: সাকাফাতুল মুসলিমা (ثقافة المسلمة), পৃ. ১৭

[2] এই উক্তিটি বর্তমানে খুব বেশি ধ্বনিত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যে ব্যক্তি বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও শরী‘আত সম্পর্কে কথা বলতে ইচ্ছা পোষণ করে সে এই গণ্ডিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ পায় এবং যেকোনো কিছু  দলিল থাকুক বা না থাকুক নিজের মর্জিমতো হারাম করতে কিংবা হালাল করতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা কোন প্রকার নিয়মনীতি বা বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করেই যুক্তি দেখায়: ‘এটা আমার মত, আর ওটা তোমার মত’; ‘এটা আমার বুঝ, আর এটা তোমার বুঝ’।

[3] দ্রষ্টব্য: সাকাফাতুল মুসলিমা (ثقافة المسلمة), পৃ. ১৭ – ১৮

৪৬৪

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭