রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের (রাঃ) নিয়ে মসজিদে বসে ছিলেন । আলোচনা করছিলেন বিভিন্ন বিষয়ে । একপর্যায়ে তিনি বললেন , তোমরা জান্নাতী দেখতে চাও? তাহলে মসজিদের এই দরজার দিকে তাকিয়ে থাকো , কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন লোক এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে এবং সে হবে জান্নাতী ।
সাহাবীরা (রাঃ) খুব উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন । সবাই ভাবছিলেন কে হতে পারে এত বিপুল সৌভাগ্যের অধিকারী ? কিছুক্ষন পরে ঐ দরজা দিয়ে সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) প্রবেশ করলেন ।
পরের দিনও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন , এই দরজা দিয়ে সবার প্রথমে যে মসজিদে প্রবেশ করবে সে জান্নাতী । এবারো সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) ঐ দরজা দিয়ে সবার আগে প্রবেশ করলেন ।
তৃতীয় দিনেও একি ঘটনা ঘটলো ।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) ছিলেন দ্বীনের ব্যাপারে একনিষ্ঠ এবং সিরিয়াস একজন যুবক । তিনি ভাবলেন, সাদ তাঁর কোন আমলের জন্য এই বিপুল সৌভাগ্যের অধিকারী হলেন তা আমাকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে । তিনি সাদ (রাঃ) এর কাছে যেয়ে বললেন , “ আমার আব্বুর সঙ্গে আমার একটু মনোমালিন্য হয়েছে । আপনি কি আমাকে আপনার বাসায় কয়েকদিন থাকতে দিবেন ? সাদ (রাঃ) বললেন , “ হ্যাঁ অবশ্যই ,কেন নয় । আমার বাসার দরজা তোমার জন্য সবসময় খোলা থাকবে । কাজেই আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) সাদ (রাঃ) এর সঙ্গে তার বাসায় গেলেন । আসলে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) এর আসল উদ্দেশ্য ছিল সাদ (রাঃ) এর ব্যক্তিগত প্জীবনটা খুব কাছ থেকে দেখা এবং সেই বিশেষ আমলটি খুঁজে বের করা ।
প্রথম রাত ।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) ভাবলেন , সাদ (রাঃ) বোধহয় সারা রাত তাহাজ্জুদ আদায় করবেন, বা কুর’আন তিলাওয়াত করবেন এবং পরদিন অবশ্যই রোজা রাখবেন । কিন্তু তাঁকে হতাশ করে দিয়ে সাদ (রাঃ) রাতে ঘুমিয়ে গেলেন এবং শেষ রাতে ঊঠে অল্প কিছু সময় তাহাজ্জুদ আদায় করলেন । পরদিন সকালে আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) যখন দেখলেন সাদ (রাঃ) নাস্তা করছেন তখন তিনি আরো হতাশ হয়ে গেলেনঃ না, এ লোক দেখি রোজাও রাখেনি ।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) ভাবলেন আজকে হয়তো সাদ (রাঃ) অসুস্থ , তাঁর শরীরটা কিঞ্চিৎ খারাপ হয়তো আগামী কাল তিনি রোজা রাখবেন এবং সারা রাত আল্লাহ্র ইবাদাত বন্দেগীতে কাটাবেন । কিন্তু দ্বিতীয় রাতেও সাদ (রাঃ) ঘুমালেন, শেষ রাতে উঠে অল্প কিছু সময় তাহাজ্জুদ আদায় করলেন এবং রোজাও রাখলেন না ।
তৃতীয় রাতেও একি ঘটনা ঘটলো । এবার আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) অধৈর্য হয়ে সাদ (রাঃ) এর কাছে যেয়ে বললেন, “ দেখুন! আমার আব্বুর সঙ্গে আমার কোন মনোমালিন্য হয়নি , আমি আসলে আপনার কাছে থেকে আপনার সেই আমলটা বের করার চেষ্টা করছিলাম যার কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন ।
সাদ (রাঃ) বললেন , “ দেখ আমার সেরকম কোন বিশেষ আমল নেই । তবে হ্যাঁ আমি রাতে ঘুমানোর যাবার আগে যারা আমার মনে কষ্ট দিয়েছে আমি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেই ।
সুবহানআল্লাহ । সাদ (রাঃ) এমন একজন সাহাবী যিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, যিনি উহুদ যুদ্ধের বীর ,যিনি তাঁর সময়কার সুপার পাওয়ার পার্সিয়ানদের পরাজিত করেছিলেন কিন্তু তাঁকে এই দুনিয়াতেই জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হল শুধু মানুষকে ক্ষমা করার কারণে , এবং আমরা মানুষকে ক্ষমা করে দেওয়ার ব্যাপারটাকে খুবই তুচ্ছ করে দেখি ।
আমাদের নিজেদের অবস্থাটা সাদ (রাঃ) এর সঙ্গে তুলনা করে দেখি একবার । সাদ (রাঃ) প্রতি রাতে মানুষদের ক্ষমা করে দিতেন আর আমরা বছরের পর বছর চলে যাই আমরা আমাদের ভাই বোন , বাবা মা , আত্মীয়স্বজন , বন্ধু বান্ধব আমাদের যে দুঃখ কষ্ট দিয়েছেন সেগুলো ভুলে যেয়ে তাদের ক্ষমা করে দেওয়ার কথা একবারো চিন্তা করিনা । কেন ? কারণ
আমরা মনে করি এবং গভীরভাবে বিশ্বাস করি আমরা যদি আর একজনকে ক্ষমা করে দেই , তাদের সামনে একটু বিনীত হই তাহলে আমাদের ইজ্জা আমাদের সম্মান কমে যাবে । অথচ আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ কোন মানুষ যদি আর একজন মানুষকে ক্ষমা করে দেই তাহলে আল্লাহ্ (সুবঃ) ক্ষমাকারীর ইজ্জা, সম্মান বাড়িয়ে দেন, এই দুনিয়াতে অবশ্যই আখিরাতেও” ।
একটু ভেবে দেখি সকালে ঘুম থেকে ঊঠার পর থেকে শুরু করে ঘুমাতে যাবার আগমুহূর্ত পর্যন্ত আমরা কতবার আল্লাহ্র অবাধ্য হয়েছি, আল্লাহ্র হুকুমের বিরুদ্ধচারন করেছি । একটু ভেবে দেখি । আমরা চাই আল্লাহ্ (সুবঃ) আমাদের আকাশ ছোঁয়া পাপ আর প্রতিনিয়ত করা বিরুদ্ধচারণ ক্ষমা করে দিক কিন্তু আমরা নিজেরা অন্যদের সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি সহ্য করতে পারি না , তাদেরকে ক্ষমা করা তো দূরের কথা তাদের কে ক্ষমা করার চিন্তাটাও করি না ।
সংগৃহিত
২৪০২
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
অদ্য ১৮/০৬/২০১৭ রোজ রবিবার. দিনব্যাপী ইমাম বাতায়ণ প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা......
আগামী ১৮ জুন ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ইমাম পোর্টাল এর......
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের (রাঃ) নিয়ে মসজিদে বসে ছিলেন । আলোচনা......
১. আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী......