সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

হযরত খিজির আলাইহিস সালাম প্রসংগ।
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বুধবার ০৫/০৯/২০১৮

★হযরত খিজির (আঃ) কি আজো জীবিত নাকি মৃত ?

হযরত খিজির (আঃ) তাঁর সম্পকে বেশ কম সকলেই জানেন কিন্তু উনিকি আজো জীবিত আছেন কিনা তা নিয়ে ২ ধরনের মত আমরা লক্ষ করে থাকি। আমি ২ পক্ষের মতামত ও দলিলসমুহ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। বাকী বিচার বিবেচনা করার দায়িত্ব আপনাদের।

প্রথমে যারা বলেন যে খিজির (আঃ) জিবীত তাদের বক্তব্য শুনুন

বুখারী শরীফের সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে হযরত খিজির (আঃ) জীবিত এবং তিনি মানুষের সাথে মিলিতও হন, নবী করিম (দঃ) এরশাদ করেছেন খিজির (আঃ) আল্লাহর হকুমে আবে হায়াত পান করেছেন, সুতরাং তিনি কেয়ামত পযন্ত জীবিত থাকবেন। তিনি মানুষের সাথে মানুষের সুরতে উপস্থিত হয়ে মুলাকাত করে থাকেন। কোন কোন সময় নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন বলেন আমি হলাম খিজির। আর কোন কোন সময় অনেকে উনার সাথে মিলিত হয়ে যান, সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হন, কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না যে উনি খিজির (আঃ)। সুতরাং আমরা দোয়াও করতে পারি হে আল্লাহ আমাকের হযরত খিজির (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দাও।

দামেস্কের একটি মসজিদ যে মসজিদের নামই হল মসজিদে খিজির, যাকে জামে মসজিদে দামেশক ও বলা হয়। হাদীস শরীফে আছে সে মসজিদের মিনারে ফজরের নামাজের সময় হযরত ঈসা (আঃ) আসমান থেকৈ নেমে আসবেন। যখন ফজর নামাজের একামত দেয়া শেষ হবে। বনি উমাইয়ার একজন বাদশাহ নাম অলিদ বিন আবদুল মালিক তিনি বাদশাহ থাকাকালীন সময় এ মসজিদে তশরীফ নিয়ে আসেন। তিনি আসার পর সৈন্যদের বলে দেন তোমরা আমি মসজিদে থাকাকালীন কাউকে প্রবেশ করতে দিও না আমি একাকীই নামাজ আদায় করব। তিনি একাকী নামাজ পড়তে লাগলেন কিন্তু কিছুক্ষন পর দেখলেন তার অদুরে অন্য একজন লোক নামাজ আদায় করছেন, তখন তিনি খুব রাগতভাবে নামাজ আদায় করলেন মনে মনে বলত লাগলেন আমি সিপাহিদের বলে দিয়েছি আমি থাকাকালীন মসজিদে যেন কেউ প্রবেশ না করে কিন্তু এ লোকটিকে তারা প্রবেশ করতে দিল কেন? এসব চিন্তা করতে করতে তিনি নামাজ শেষ করলেন আর শেষ করে তিনি সে লোকটিকে আর মসজিদে দেখতে পেলেন না। তবুও বাদশাহ সিপাহিদের প্রশ্ন করল তখন সিপাহিরা উত্তর দিল হযরত যিনি আপনার পাশে নামাজ পড়েছেন তিনি কোন সাধারন লোক না তিনি হলেন হযরত খিজির (আঃ) । এভাবে খিজির (আঃ) এর সাথে অনেকেরই সাক্ষাৎ হয়ে থাকে।

হযরত খিজির (আঃ) কে ছিলেন সে বিষয়ে ওলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে কোন কোন ওলামার মতে তিনি ফিরিশতা ছিলেন তবে জমহুর ওলামাগন এ মতের বিরোধীতা করেছেন। জমহুরের মতে তিনি মানুষ ছিলেন তবে কোন কোন ওলামা বলেন তিনি মানুষ ছিলেন এবং আল্লাহর অলি ছিলেন। আর জমহুর এর অধিকাংশের মতে তিনি আল্লাহর নবী ছিলেন। এবং তিনি এখনও জীবিত আছেন তিনি মৃত্যু বরণ করেন নি, যদিও অন্যান্য নবীগনের উপর কিছুক্ষনের জন্য হলেও মৃত্যু এসেছে। তবে ইসা (আঃ) ইদরিস (আঃ) ইলিয়াস (আঃ) খিযির (আঃ) এ ৪ জন নবীর উপর মৃত্যু সংগঠিত হয়নি। সুতরাং হযরত খিযির (আঃ) আল্লাহর নবী ছিলেন এবং এর পক্ষে কোরআন ও হাদীস শরীফের দলীলও রয়েছে।

হাফিজ আবু বকর বায়হাকী আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা) ইনতিকাল করেন তাঁর সাহাবীগণ তার চতুষ্পার্শ্বে বসে গেলেন ও রোদন করতে লাগলেন ৷ তারা সকলে একত্রিত হলেন ৷ এমন সময় একজন আধাপাকা শ্মশ্রুধারী উজ্জ্বল স্বাহ্যবান এক ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করলেন ও সকলকে ডিঙ্গিয়ে তার নিকটবর্তী হলেন এবং কান্নাকাটি করলেন ৷ অতঃপর সাহাবায়ে কিরামের প্রতি তাকালেন ও বললেন : “প্রতিটি মুসীবত হতেই আল্লাহ তাআলার কাছে সান্ত্বনা রয়েছে ৷ প্রতিটি ক্ষতিরই ক্ষতিপুরণ রয়েছে এবং প্রতিটি নশ্বর বন্তুর স্থলবর্তী রয়েছে ৷ সুতরাং আল্লাহর প্রতি সকলে প্রত্যাবর্তন করুন ৷ তারই দিকে মনােযােগী হোন! তিনি আপনাদেরকে মুসীবতের মাধ্যমে পরীক্ষা করছেন ৷ তাই আপনারা ধৈর্যধারণ করুন! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই যার ক্ষতি পুরণ হবার নয় ৷ এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন ৷” সাহাবীগণের একজন অন্য জনকে বলতে লাগলেন, তোমরা কি এই ব্যক্তিকে চেন? আবু বকর (রা) ও আলী (রা) বললেন : “হ্যা , রাসুলুল্লাহ (স)-এর জ্ঞাতি ভাই খিযির (আ) ৷”

ইমাম শাফিঈ (র) তাঁর মুসনাদে আলী ইবন হুসাইন (র) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ (না) যখন ইনতিকাল করেন ও শোকবাণী আসতে থাকে , তখন উপস্থিত সাহাবীগণ এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেন, তিনি বলেছেন, প্রতিটি মুসীবত থেকেই আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে সান্তুনা রয়েছে, প্রতিটি নশ্বর বন্তুর স্থলবর্তী রয়েছে, প্রতিটি ক্ষতিরই ক্ষতিপুরণ রয়েছে ৷ সুতরাং আল্লাহ্ তাআলার প্রতি ভরসা করুন ও তার কাছেই প্রত্যাশা করুন ৷ আর প্রকৃত মুসীবতগ্রস্থ ব্যক্তি তিনিই, যিনি সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন ৷ আলী ইবন হুসাইন (র) বলেন, তােমরা কি জান, তিনি কে ছিলেন? তিনি ছিলেন খিযির (আ) ৷

আবদুল্লাহ ইবন ওহাব (র) মুহাম্মদ ইবন মুনকাদির (র) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন উমর ইবন খাত্তাব (রা) একটি জানাযার নামায আদায় করছিলেন, এমন সময় তিনি একজন অদৃশ্য ব্যক্তির আওয়াজ শুনলেন, “আপনার প্রতি আল্লাহ্ তাআলা রহমত করুন ৷ আমাদেরকে ছেড়ে জানাযা পড়বেন না ৷” উমর (রা) তার জন্য অপেক্ষা করলেন ৷ তিনি নামাযে যোগদান করলেন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য এরুপ দু’আ করলেন, হে আল্লাহ৷ আপনি যদি তাকে শাস্তি দেন তবে অনেক ক্ষেত্রেই সে আপনার অবাধ্যতা করেছে ৷ আর আপনি যদি তাকে মাফ করে দেন তাহলে সে তো আপনার রহমতেরই মুখাপেক্ষী ৷” মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর ঐ ব্যক্তি বললেনঃ হে কবরের বাসিন্দা ! তোমার জন্য সুসংবাদ, যদি না তুমি তত্ত্বাবধানকারী, কর উত্তলকারী, খাজাঞ্চী, কােষাধ্যক্ষ, কিংবা কোতয়াল হয়ে থাক ৷ তখন উমর (রা) বললেন, চল, আমরা তাকে তার দুআ ও তার উক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি যে, তিনি কে? বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন ৷ তারা লক্ষ্য করে দেখলেন যে, তার পায়ের চিহ্ন এক হাত দীর্ঘ ৷ তখন উমর (রা) বলেন, আল্লাহর শপথ ! ইনিই খিযির (আ), তার সম্বন্ধে রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদেরকে অবহিত করেছিলেন 

হাফিজ ইবন আসাকির (র) আলী (রা ) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন একদিন রাতের বেলায় আমি তাওয়াফ করছিলাম ৷ হঠাৎ এক লোককে আমি কাবা শরীফের গিলাফ ধরে থাকতে দেখলাম ৷ তখন তিনি বলেছিলেন, হে মহান সত্তা! যার বাণী শুনতে কেউ বিরক্ত বোধ করে না, যাঞা যাকে বিরক্ত  করে না পুনঃ পুনঃ কাকুতি মিনতিকারীর মিনতিতে এবং যাঞাকারীদের প্রার্থনায় যিনি বিরক্ত হন না, আপনার ক্ষমার শীতলতা দিয়ে আমার প্রাণ জুড়ান। এবং আপনার রহমতের স্বাদ আস্বাদন করান ৷ আলী (রা) বলেন, আমি বললাম, আপনি যা বলছিলেন তা আমার জন্য পুনরায় বলুন ৷ তিনি বললেন, আমি যা বলেছি তুমি কি তা শুনে ফেলেছ? বললাম, শুনেছি ৷ তখন তিনি আবার বললেন, ঐ সত্তার শপথ, যার হাতে খিযিরের প্রাণ ন্যস্ত ৷ আলী (রা) বলেন, “ইনিই হচ্ছেন খিযির (আ) ৷” যে ব্যক্তি দুআটি প্রতি ফরয সালাতের পর পড়বে তার গুনাহরাশি আল্লাহ্ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন, যদিও তার গুনাহরাশি সাগরের ফেনা, গাছের পাতা ও তারকার সংখ্যার মত হয় তবুও আল্লাহ্ তাআলা তা মাফ করে দেবেন ৷

ইবনে আসাকির (র) রাবাহ ইবন উবায়দ৷ (র) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, একদিন আমি একটি লোককে দেখলাম উমর ইবন আবদুল আযীয (র)-এর হাতে ভর দিয়ে তার আগে আগে চলছে ৷ তখন আমি মনে মনে বললাম, এ লোকটি পাদুকাবিহীন ৷ অথচ উমরের কত অম্ভরঙ্গ! বর্ণনাকারী বলেন, উমর ইবন আবদুল আযীয (র) সালাত শেষে ফিরে আসলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মাত্র যে লোকটি আপনার হাতে ভর দিয়ে চলছিলেন তিনি কে? তিনি বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছ হে রাবাহ?’ আমি বললাম, জী হ্যা’ ৷ তিনি বললেন, “তোমাকে তো আমি একজন পুণ্যবান লোক বলেই জানি ৷ তিনি হচ্ছেন আমার ভাই খিযির (আ) ৷ তিনি আমাকে সুসংবাদ দিলেন যে, আমি অচিরেই শাসনকর্তা হব এবং ন্যায় বিচার করব ৷”

অপর দল বলেনঃ

হযরত খিজির (আঃ) নবী ছিলেন ঠিক আছে কিন্তু তিনি যে বতমানেও জীবিত আছেন তা ঠিক না এ বিষয়ে যে সব হাদীস রয়েছে তার কোনটি দুবল কোনটির রাবি সন্দেহযুক্ত, কোনটি বাতিল তাদের দলিল হল ইমাম আহমদ (র) তার মুসনাদে জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, যে পবিত্র সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, যদি মুসা(আ) আমার যমানায় বেঁচে থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ ব্যতীত তার কোন উপায় থাকত না ৷ এ হাদীস শরীফ দ্বারা তারা যুক্তি প্রদশন করেন যে  যদি নবীগণ রাসুলুল্লাহ (সা)-এর যমানায় জীবিত থাকতেন, তাহলে তারা রাসুলুল্লাহ (সা)-এর অনুসারী হতেন এবং তার নিষেধের আওতাধীন থাকতেন ৷  যদি খিযির (আ) জীবিত থাকতেন তাহলে তিনি মুহাম্মাদ (স)-এর উম্মত ও তাঁর শরীয়তের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হতেন ৷

অপর একটি যুক্তি হল তাও বুখারী শরীফের হাদীস একদিন নবী করিম (দঃ) সাহাবীদের বলেন ১০০ বছর পর তোমাদের মধ্যে হতে কোন মানুষ বেঁচে থাকবে না, এ থেকে বুঝা যায় খিজির (আঃ) ও যেহেতু মানুষ সুতরাং তিনিও বেঁচে থাকার কথা নয়। তিনি যদি আমাদের নবী মুহাম্মদ (দঃ) েএর জামানায়ও বেঁচে থাকেন তবুও তিনি তখন থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন।

সুতরাং যারা বলে খিযির (আঃ) জিবিত হজ্ব করেন মদীনায় মানুষের সাথে মোলাকাত করেন মুসাফিরদেরকে সাহায্য করেন, মনে রাখবেন এমন কোন কথা সহিহ নয়, খিজির (আঃ) একজন নবী ছিলেন তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
উভয় পক্ষের মতামত আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করলাম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝার তৌফিক দান করুন। (আমিন!)

সংগৃহিত 

২৭৭৮

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭