মূল্যবান শিক্ষণীয় গল্প
হুনায়নের যুদ্ধে মুশরিক বাহিনীর সর্দার ছিল মালেক ইবন অউফ আন নাসরি। সে ছিল হাওয়াযিন বংশের সাহসী ও নির্ভীক কমান্ডার। বনি সাক্বিফের সহায়তায় পঁচিশ হাজার সৈন্য সমেত হুনায়নের ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলো। মুসলমানদের বিরুদ্ধে। তৎকালিন কাফির-মুশরিকদের মাঝে তার সম্মান ছিল আকাশচুন্বী। খুবই সমীহ করতো সবাই তাকে। সে যখন ঘোষণা করল, সম্প্রদায়ের সবাই নিজেদের সাথে নিজ নিজ সম্পদ, গৃহপালিত প্রাণী , নারী ও শিশুদেরও নিয়ে রণাঙ্গনে উপস্থিত হবে- সবাই একবাক্যে মেনে নিল তার এ সিদ্ধান্ত। কেউ কেউ বিরোধিতা করলেও সে তার কথার উপর অটল ছিল। অনুসারীদের উদ্দেশ্যে মালেক ইবন অউফ বলল: আমাদের বাহিনীকে মনে রাখতে হবে, এই ময়দানেই অটল থাকতে হবে আমাদের। পলায়ন করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ পালিয়ে যাদের কাছে যাবো তারা তো আমাদের সঙ্গেই আছে। তার এ যুদ্ধকৌশল বলতে গেলে খুবই সফল ছিল। এ কারণেই যুদ্ধের শুরুর দিকে মুসলমানরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছিলো। দিগ্বিদিক ছুটাছুটি করে যুদ্ধের ভয়াবহতায়। আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহই বলা যায়, রাসূলুল্লাহ সা. এর বীরত্ব ও সাহসিকতার ফলে পলায়নরত মুসলমানরা ফিরে আসে। এমন দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করে যে, একসময় আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেন। বনি সাক্বিফ ও বনি হাওয়াযিন অবস্থা বেগতিক দেখে জান নিয়ে পালিয়ে গেল। সেই পলাতকদের মধ্যে ওই বাহিনীর কমান্ডার মালেক ইবন অউফও ছিল। গল্পের শুরু এখানেই। পালিয়ে তায়েফের বনি সাক্বিফের দুর্গে গিয়ে আশ্রয় নেয় মালেক ইবন অউফ। এরই মধ্যে তার গোত্র বনি হাওয়াযিন ইসলাম গ্রহণের জন্য মনস্থ করে। ইতিবাচক চিন্তা নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর দরবারে উপস্থিত হয়। আল্লাহর রাসূল সা. তাদের নারী ও শিশুদের ফিরিয়ে দিলেন। বন্ধুরা! একটু চিন্তা করুন। একজন কমান্ডার যে যুদ্ধের ময়দানে শোচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করেছে, তার কী অবস্থা হয় ? সে তো লোকজনকে মুখ দেখাবার যোগ্যও থাকে না। মালেক ইবন অউফের অবস্থাও ছিল তাই। তার অবস্থা এমন কাহিল হয়ে গেল যে, সে নিজ গোত্র থেকে পৃথক হয়ে বনি সাক্বিফের দয়া-দাক্ষিণ্যের উপর বেঁচে রইল। তার নিকট যেমন কোনো সম্পদ ও সরঞ্জাম ছিল না, ছিল না গোত্রের কোনো লোকজন। তার তো বনি সাক্বিফের পক্ষ থেকেও আশংকা রয়েছে, হুনায়নের যুদ্ধে পরাজয়ের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে তাকে আবার হত্যা করে কিনা।
কল্পনা করুন তো বন্ধুরা! একজন পরাজিত কমান্ডার। কাউকে মুখ দেখাবার যোগ্যতাও নেই যার। তার কারণেই পরাজয় ঘটেছে- এমন কথা বলে বলে মানুষ তাকে ঘৃণা করছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে তার, যেন কোথাও কেউ নেই। কিন্তু নাহ্। এমন এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন সেখানে যিনি তার ব্যাপারে কল্যাণকর ধারণা পোষণ করছিলেন। তার সাথে সহমর্মিতা ও উত্তম আচরণের জযবা রাখেন। এই ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন দয়ালু নবী হযরত মুহাম্মদ সা.। তিনি সা. মালেক ইবন অউফের গোত্রের লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘মালেক ইবন অউফ কোথায়?’ তারা উত্তর দিল, সে তো তায়েফের দুর্গে। লোকজনের কাছ থেকে লুকিয়ে বেড়াচ্ছে। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে। বর্তমানে সে নিজের ভবিষ্যত নিয়েই পেরেশান। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, (أخبروا مالكا أنه إن أتاني مسلما) ‘মালেককে জানিয়ে দাও, সে যদি মুসলমান হয়ে আমার কাছে আসে, (رددت عليه أهله وماله) ‘আমি তার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ ফিরিয়ে দেব।’ (وأعطيته مائة من الإبل) ‘এবং তাকে একশত উটও প্রদান করব।’ আচ্ছা! কেউ কি নিজের প্রাণের শত্রুর সাথে এমন ব্যবহারের কথা চিন্তাও করতে পারে?! এমন এক বিশাল বাহিনীর কমান্ডার যিনি সম্প্রতি বিজয় অর্জন করেছে, নিজের দুশমন সম্পর্কে এরকম ইতিবাচক ভাবনা পোষণ করতে পারে?! নাহ। কখনোই নয়। এটাই তো আমাদের প্রিয় রাসূল সা.এর চরিত্র, যিনি দুশমনকেও বুকের সাথে মিলাচ্ছেন। মালেক ইবন অউফের নিকট রাসূলুল্লাহ সা. এর পয়গাম পৌঁছে যায় একসময়। তার মনে হলো, পয়গামটা যেন তার হৃদয়েরই প্রতিধ্বনি। যে ধরনের বিপদ ও অস্থিরতার মধ্যে সে নিমজ্জিত ছিল তার সমাধানও ছিল ইসলাম গ্রহণের মধ্যে। কাল বিলম্ব না করে দ্রুত তায়েফ থেকে ছুটে যায় রাসূলুল্লাহ সা.এর দরবারে। উপস্থিত হয়ে ইসলাম কবুল করে। শামিল হয় সত্যের মিছিলে। আল্লাহর রাসূল সা. এর চরিত্র দেখুন, তিনি মালেক ইবন অউফের উপর কোনো ধরনের শর্ত আরোপ করলেন না। তাকে তিরস্কার, ভালো-মন্দ কিংবা কোনো ধরনের জিজ্ঞাসাবাদও করেন নি; বরং কল্পনার চাইতেও ভালো আচরণ করেছেন তার সাথে তিনি (সা.)। পরবর্তীতে মালেক ইবন অউফকে দ্বিতীয়বার বনি হাওয়াযিনের সর্দার নিযুক্ত করা হয়। তায়েফ জয়ের দায়িত্বও সোপর্দ করা হয় তাকে।
৪১১
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
জীবনের দুঃখ, সমস্যাগুলো স্মরণ করার পূর্বে মানুষের উচিত জীবনের নেয়ামতগুলো......
মানুষ বেইমানী করে, ইতর প্রাণীরা করে না! এক রাজার দশটি......
দক্ষতার শিক্ষণীয় গল্প রেষ্টুরেন্টে বসে এক হুজুর নাস্তা করছেন। হাত......
শূন্যহাতেও তিনি নির্ভিক যে ঘটনাটি আপনারা পড়তে যাচেছন তার বর্ণনাকারী......
কুরাইশের মহিলারা সমস্ত মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মে হানি রা.এর মূল......
শিক্ষণীয় গল্প মদিনায় এক অদ্ভূত মহিলা বসবাস করত। অনেকটা উম্মাদের......
শিক্ষণীয় দক্ষতার গল্প ইকরিমা ইবন আবি জেহেল ছিল বনি মাখযূম......
চাঁদ নেমেছে আজ আমার ঘরে আল্লাহর রাসূল সা.এর ঘরে কয়েকদিন......
একটি শিক্ষনীয় গল্প এক গ্রামে এক বৃদ্ধ ইন্তেকাল (মৃত্যু) করলেন।......
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না পাকিস্তানের একজন বিশ্বখ্যাত চিকিৎসক......