কুরাইশের মহিলারা সমস্ত মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ
উম্মে হানি রা.এর মূল নাম ছিল ফা’খতা। তিনি কুরাইশ সর্দার আবু তালিবের কন্যা এবং রাসূলুল্লাহ সা.এর চাচাত বোন। হযরত আলী, আক্বিল ও জাফর রা.এর সহোদরা। তাঁদের মায়ের নাম ছিল ফাতেমা বিনতে আসাদ হাশেমিয়া। মক্কাতেই তাঁর জন্ম। পিতা ও মাতা উভয়ের দিক দিয়ে হাশেমি বংশের এই মেয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর চেয়ে বয়সে একটু ছোট ছিলেন।
.
পাঠকমহল আশাকরি জানেন, রাসূলুল্লাহ সা. এর দাদার ইনতিকালের পর তাঁর চাচা আবু তালিবের ঘরেই লালিত-পালিত হন তিনি। এভাবে রাসূলুল্লাহ সা. এবং উম্মে হানির বাল্যকাল একই ঘরে অতিবাহিত হয়। জাহেলি যুগেও রাসূলুল্লাহ সা.কে উম্মে হানি অত্যন্ত ভালোবাসতেন। সম্মান করতেন।
.
নেহায়েত বুদ্ধিমতি, রূপবতী ও গায়রতমন্দ মহিলা ছিলেন উম্মে হানি। তাঁর বিয়ে হয় বনি মাখযুমের জনৈক হুবায়রা ইবনু আমরের সাথে। যদিও মক্কা বিজয়ের সময় উম্মে হানি ইসলাম কবুল করেছেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা.এর প্রতিরক্ষা করেছেন সারা জীবন।
.
কোনো কোনো বর্ণনা মতে মে‘রাজের রাতে আল্লাহর রাসূল সা. উম্মে হানির ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তখনই তাঁকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস এবং আসমানসমূহের সফর করানো হয়। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা.এর আকাঙ্খা ছিল, উম্মে হানির সাথে তাঁর বিয়ে হোক। কিছু কারণবশত: তা আর হয়নি।
.
মক্কা বিজয়ের সময় উম্মে হানি যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তার স্বামী হুবায়রা পালিয়ে নাজরান চলে যায়। আল্লাহর রাসূল সা. তাঁর এ চাচাত বোনকে মক্কা বিজয়ের দিন এভাবে সম্মানিত করলেন যে, তিনি তার ঘরে তাশরিফ নিয়ে গেলেন। গোসল করলেন এবং তার ঘরেই আট রাকা‘ত নামায আদায় করেন। রাসূলুল্লাহ সা.এর অন্যতম চারিত্রিক সৌন্দর্য ছিল, তিনি প্রিয়জনদের ঘরে তাশরিফ নিয়ে যেতেন।
.
এদিকে উম্মে হানির স্বামীর দুইজন নিকটাত্মীয় পালিয়ে তার কাছে আসে এবং আশ্রয় প্রার্থনা করে। এ দুইজন ছিল এমন অপরাধী যাদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে মৃত্যুদন্ড জারি হয়েগেছে। তাদেরকে যেন যে কোনো অবস্থায় হত্যা করা হয়। ফলে হযরত আলী রা. তাদের পিছু নিয়েছিলেন।
.
একজন মহিলার জন্য তার শ্বশুরালয়ের আত্মীয়স্বজনও অত্যন্ত গুরুত্বের। আর এ গুরুত্ব গভীরভাবে উপলব্ধি করেন উম্মে হানি। একদিকে আপন সহোদর ভাই, আরেকদিকে শ্বশুরবাড়ির নিকটাত্মীয়। দু'টানায় পড়ে গেলেন তিনি। ভাবলেন, এমন সঙ্গিন মুহূর্তে একজনই তাকে সাহায্য করতে পারেন। তিনি হচ্ছেন, স্বয়ং আল্লাহর রাসূল সা.।
.
রাসূলুল্লাহ সা.এর কাছে গিয়ে উম্মে হানি বললেন,
-হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার শ্বশুরালয়ের দুইজন আত্মীয়কে আশ্রয় দিয়েছি। আমার আপন ভাই আলী ইবন আবি তালিব তাদের হত্যা করতে চাচ্ছে।
আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করেন:
(قد أجرنا من أجرت يا أم هانيء)
-“উম্মে হানি! যাকে তুমি আশ্রয় দিয়েছ তাকে আমরাও আশ্রয় দিলাম।”
.
আরেক বর্ণনা মতে তিনি যখন তার দেবরদের আশ্রয় দেন, তাদেরকে কামরায় ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। হযরত আলী রা. ওই দু’জনকে হত্যা করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু এ সাহসী মহিলা তাদের প্রতিরক্ষা করেন। আপন ভাইকে বাঁধা দেন এবং সোজা রাসূলুল্লাহ সা.এর খিদমতে গিয়ে হাজির হন।
.
তখন আল্লাহর রাসূল সা. গোসল করছিলেন এবং হযরত ফাতেমা রা. কাপড় দিয়ে পর্দার ব্যবস্থা করছিলেন। উম্মে হানি রা. বলেন, আমি সালাম দিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সা. জিজ্ঞাসা করলেন,
- “কে?”
বললাম,
-উম্মে হানি বিনতে আবি তালিব।
আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করেন,
(مرحبا بأم هانيء)
- “উম্মে হানি! স্বাগতম।”
রাসূলুল্লাহ সা. গোসল শেষ করে আট রাকা‘ত নামায আদায় করলেন। উম্মে হানি রা. আরজ করেন:
-হে আল্লাহর রাসূল! আমার ভাই আলীর বিরুদ্ধে নালিশ করতে এসেছি আমি:
(إنه قاتل فلان بن هبيرة قد أجرته, فقال صلى الله عليه وسلم: قد أجرنا من أجرت يا أم هانيء)
“হুবায়রার ছেলে অমুককে আলী হত্যা করতে চায় যাকে আমি আশ্রয় দিয়েছি।” তখন রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন,
-“উম্মে হানি! তুমি চিন্তা করো না। যাকে তুমি আশ্রয় দিয়েছ মনে করো আমরাও তাকে আশ্রয় দিয়েছি।”
.
এ সম্মান, এ মহব্বত ও ভালোবাসা ছিল রাসূলুল্লাহ সা.এর মহৎ চরিত্রের নমুনা।
সম্মানিত পাঠক! রাসূলুল্লাহ সা. এর উন্নত চরিত্রের আরো একটি ঝলক দেখা যায় উম্মে হানির নিম্নোক্ত ঘটনায়:
.
মক্কা বিজয়ের পর উম্মে হানির স্বামী হুবায়রা নাজরানের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। হযরত আলী রা.এর বড় ইচ্ছা, রাসূলুল্লাহ সা. যদি উম্মে হানিকে বিয়ে করেন তাহলে তাকে আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সা.এর সাথে দুই দুইটি আত্মীয়তার সম্মানে ভূষিত করবেন। তিনি তো এমনিতেই রাসূলুল্লাহ সা.এর নিকট আত্মীয়া ছিলেন। দ্বিতীয়ত: তাঁর স্ত্রীও হবেন সাথে সাথে। সোনায় সোহাগা হবে। আল্লাহর রাসূল সা. আলী রা.এর পরামর্শকে পসন্দ করলেন।
.
উম্মে হানির নিকট বিয়ের প্রস্তাব পাঠান তিনি। জবাবে উম্মে হানি বললেন,
- হে আল্লাহর রাসূল! আমার প্রাণের চাইতেও প্রিয় আপনি। কিন্তু আপনার অধিকার অনেক বড় ও মহান। আমার কিছু এতিম বাচ্চা রয়েছে যাদের আমি লালন-পালন করছি। আমার ভয় হচ্ছে, আমি যদি আপনার হক ও অধিকার রক্ষায় মনোনিবেশ করি তা হলে আমার এসব বাচ্চার অধিকার ক্ষুন্ন হবে। আর যদি নিজের বাচ্চাদের হক আদায়ে আত্ম নিয়োগ করি তা হলে আপনার অধিকার ও হক আদায়ে ত্রুটি আসবে।
.
এখানেও রাসূলুল্লাহ সা. এর উন্নত চরিত্র দেখুন। তিনি উম্মে হানির জবাব শুনলেন। তার জবাব শুনে কেবলমাত্র আনন্দিতই হননি; বরং তিনি কুরাইশি মহিলাদের প্রশংসা করলেন। সহিহ বুখারিতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন,
(نساء قريش خير نساء)
“কুরাইশের মহিলারা সমস্ত মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”
(ركبن الإبل)
“তারা উটে আরোহন করেন।”
(أحناها على ولد في صغره)
“তারা বাচ্চাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহময়ী।”
(وأرعاها على بعل في ذاته)
“এবং নিজ নিজ স্বামীর সকল বিষয়ে খুব ভালো করে যত্ন নেন।
৪৩৪
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
চুল কাটার জন্য সেলুনে বসে আছি। ভদ্রোচিত চেহারার এক লোক......
দক্ষতার গল্প কোনো ব্যক্তিত্বের উন্নত চরিত্র সম্পর্কে জানতে চান? তা......
দুনিয়া কাঁপানো সেই মালদ্বীপের ঘটনা . প্রায় পাঁচশত বৎসর আগের......
নবীদের কাহিনী সবসময় শিক্ষনীয় হযরত মূসা আ. যখন মিসর থেকে......
মহান অাল্লাহর উপর ভরসা রাখুন আমরা কোনো কোনো কারণে ভরসা......
কলম সৈনিকের ভূমিকা মোহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী পৃথিবীর বুক থেকে মুসলিম......
প্রচন্ড রোদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর ঘর থেকে......
দক্ষতার গল্প তিনি ছিলেন মানবতার সর্দার। জগতের সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ......
কুরাইশের মহিলারা সমস্ত মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মে হানি রা.এর মূল......
সফল হওয়ার জন্য মানসিক দক্ষতার প্রয়োজন সফল হওয়ার জন্য কয়েকটি......