অাল্লাহ মনের খবরও রাখেন
ফুদালা। পুরো নাম ফুদালা ইবনু উমাইর ইবনে মালূহ লাইছি। রাসূলুল্লাহ সা.এর জঘন্য দুশমন। মক্কা বিজয়ের সময় আল্লাহর রাসূল সা. যখন মক্কায় অবস্থান করছিলেন তখন ফুদালা বাহ্যিকভাবে ইসলাম কবুল করেছিল। কিন্তু ভিতরে ভিতরে শট, মুনাফিক। মনে রাসূল সা. এর বিরুদ্ধে প্রচন্ড বিদ্বেষ ও হিংসা পোষণ করত।
.
ফুদালা পরিকল্পনা করল, যখনই সুযোগ হাতে আসবে মুহাম্মদ (সা.)কে হত্যা করবে। তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা কিন্তু কোনো সাধারণ বিষয় ছিল না। ফুদালা খুব ভালো করে জানত, রাসূলুল্লাহ সা.এর সঙ্গে দশ হাজার সেনা বাহিনী রয়েছে। সে যদি তার অপবিত্র পরিকল্পনায় সফলও হয়, তাহলেও তার বাঁচার কোনো পথ নেই। সাথে সাথে তাকে গ্রেফ্তার করে হত্যা করা হবে। কিন্তু হিংসা ও বিদ্বেষ এমন মন্দ অভিশাপ যা মানুষকে উম্মাদ করে দেয়। মানুষের চিন্তা ও চেতনা শক্তিকে বিকল করে ছাড়ে। অবশেষে অপরিণামদর্শী হয়ে ভুল কাজটি করেই ফেলে।
.
ফুদালা ভাবল, তার এ অপবিত্র পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর তাকে যদি হত্যাও করা হয় তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এ পরিকল্পনা মতে কাজ অবশ্যই হওয়া দরকার। সে চিন্তা-ফিকির করতে লাগল, কোন সময় রাসূল সা.এর উপর আক্রমণ করা যেতে পারে। শয়তানি চিন্তা তার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, যখন আল্লাহর রাসূল সা. তাওয়াফ করবে তখনই এ কাজের জন্য উপযুক্ত সময় হতে পারে।
.
তিনি সা. তখন একদম একা থাকবেন। আশে-পাশে কিছু লোক থাকলেও তত বেশি হবে না। সে তার তরবারিটা কাপড়ের ভিতর লুকিয়ে রেখে সময়ের অপেক্ষা করতে লাগল। কখন রাসূলুল্লাহ সা. তাওয়াফ করবে- এ আশায়।
.
একদিন ফুদালার সামনে ঠিকই সুযোগ আসে। দেখল, আল্লাহর রাসূল সা. তাওয়াফ করছেন। সেও তাওয়াফ করা আরম্ভ করে। সে তো সুযোগের সন্ধানে ছিল, কখন তাঁর উপর আক্রমণ করা যায়। তাওয়াফের এক পর্যায়ে সে রাসূলুল্লাহ সা. এর নিকটবর্তী হয়। এদিকে আল্লাহ তা‘আলার সিদ্ধান্ত হচ্ছে, তিনি তাঁর প্রিয় হাবিব ও বন্ধুকে মানুষের হাত থেকে রক্ষা করবেন।
.
আল্লাহ তা‘আলা তাৎক্ষণিকভাবে ওহির মাধ্যমে আপন রাসূল সা.কে ফুদালার অপবিত্র ইচ্ছা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি সা. চাইলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতার করতে পারতেন। হত্যার সরঞ্জাম তো তার কাপড়ের ভিতর লুকানো ছিলই। কিন্তু এখানে তো দয়াই দয়া। নিজের উম্মতের কল্যাণ, সদাচার এবং ক্ষমা।
.
ফুদালা কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। আল্লাহর রাসূল সা. তাকে সম্বোধন করে বললেন,
(أفضالة)
-“আরে তুমি ফুদালা না?”
সে বলল,
-হ্যাঁ, আল্লাহর রাসূল সা.! আমিই ফুদালা।
রাসূলুল্লাহ সা. তাকে শুধু বললেন,
(ما ذا كنت تحدث به نفسك)
-“তুমি মনে মনে কি কথা চিন্তা করছিলে?” ফুদালা বলল,
-কিছু না। আমি তো আল্লাহর যিকির করছিলাম।
.
রাসূলুল্লাহ সা. ফুদালার কথা শুনে হেসে পড়েন। ইরশাদ করলেন,
(استغفر الله)
-“ফুদালা! আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও।” এবং একই সাথে তাঁর হস্ত মোবারক তার বুকে রাখলেন। ফুদালার হৃদয়ে প্রশান্তি নেমে আসে। ষড়যন্ত্রমূলক চিন্তাধারা থেকে একেবারে পবিত্র হয়ে গেল তার তনুমন।
.
আল্লাহু আকবর! ঐ ব্যক্তির চাইতে আর কে সৌভাগ্যবান যার বুকের উপর আল্লাহর রাসূল সা. নিজের স্নেহের হাত রেখেছেন? ফুদালার অবস্থা পাল্টে যায়। রাসূলুল্লাহ সা.কে হত্যার পরিকল্পনাকারী এবং নিজের বুকের মধ্যে হিংসা-বিদ্ধেষ পোষণকারী ফুদালা বর্ণনা করে, যখনই রাসূলুল্লাহ সা. তাঁর স্নেহের হাতটি আমার বুকে রাখলেন, আমার দিলের অবস্থা সাথে সাথে পাল্টে গেল।
.
আসুন, তার মুখেই শুনি:
-আল্লাহর কসম! রাসূলল্লাহ সা. তাঁর বরকতময় হাত যখনই আমার বুকের উপর থেকে উঠিয়ে নিলেন অনুভব করলাম, আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে আমার নিকট আল্লাহর রাসূল সা.এর চাইতে প্রিয় আর কেউ নেই।
.
ফুদালা হারাম শরিফ থেকে বের হয়ে পরিবার-পরিজনের দিকে ফিরে যায়। পথিমধ্যে তার পুরনো প্রেমিকা দাঁড়ানো ছিল। সে তাকে থামিয়ে দেয়। বলল, -এসো। কিছু সময় আমার সঙ্গে কাটাও।
কিন্তু এখন তো আগের সেই ফুদালা নেই। তার অন্তরাত্মা পরিচ্ছন্ন হয়ে গেছে। হৃদয়ের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। ফুদালা কয়েকটি কবিতা আবৃত্তি করে তখন যার ভাবার্থ হচ্ছে এরূপ:
-আমার প্রেয়সী বলে, এসো একান্তে আলাপ করি। আমি বললাম, আল্লাহ ও ইসলাম এমন কাজ থেকে বাঁধা দেয়। তুমি যদি মুহাম্মদ সা. এবং তাঁর দলকে মক্কা বিজয়ের মুহূর্তে দেখতে, যখন মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছিল তখন বুঝতে, আল্লাহর দ্বীন একেবারে স্পষ্ট হয়ে গেছে। শিরকের চেহারায় অন্ধকার ছেয়ে গেছে। .
সম্মানিত পাঠক! আল্লাহর রাসূল সা. নিজের হত্যার পরিকল্পনাকারীকে ক্ষমা করে তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেছেন। পৃথিবীতে এমন দয়ালু, মেহেরবান এবং উন্নত চরিত্রের অধিকারী আর কেউ আছে?
৩৮৯
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
জীবনের দুঃখ, সমস্যাগুলো স্মরণ করার পূর্বে মানুষের উচিত জীবনের নেয়ামতগুলো......
কুরাইশের মহিলারা সমস্ত মহিলাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মে হানি রা.এর মূল......
সৎ বন্ধু নির্বাচন মোহাম্মদ সোলাইমান কাসেমী সমাজে চলতে হলে বহু......
পড়ার অনুরোধ.... যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন প্রথম যেদিন প্রেসিডেন্ট......
রূপে নয় গুণেই পৃথিবী অালোকিত হয় এক যুবতীর প্রশংসা শুনে......
একটি শিক্ষণীয় ইসলামিক গল্প , অন্ধকার ঘরে শুয়ে আছে রাহাত......
অাত্নশুদ্ধি অর্জন করতে পারলে মানবাত্মা পরলোকে পরমাত্মা মহান প্রভুর দীদার......
এক রাজার দক্ষতা ও সফলতা এক দেশের রাজা ইন্তিকাল করার......
শিক্ষণীয় গল্প এগুলো শুধুই গল্প নয়। গল্পের ব্যানারে আঁকা পৃথিবীর......
ইয়া উম্মাতি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের শেষ মূহুর্ত চলছে।......