বাইতুল মুকাদ্দাসের এই মসজিদকে মসজিদুল আকসা বলা হয় এ-কারণে যে, তা মক্কা (হেজায) থেকে অনেক দূরে। কুরআনুল কারিম যখন মিরাজের ঘটনায় বাইতুল মুকাদ্দাসের কথা উল্লেখ করলো, তার সঙ্গে এদিকেও মনোযোগ আকর্ষণ করা হলো যে, বনি ইসরাইলের দাওয়াত ও তাবলিগের এই জায়গা এবং…
বাইতুল মুকাদ্দাস এই পবিত্র ভূমি উপাসনাকেন্দ্র বা মসজিদের কারণে বনি ইসরাইলের কেবলা ছিলো। এই পবিত্র ভূমিতে বনি ইসরাইলের অসংখ্য নবী ও রাসুলের মাজার ও সমাধিস্থল রয়েছে। এই পবিত্র স্থানটির মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব কেবল ইহুদি ও নাসারাদের চোখেই নয়; মুসলমানগণও এটিকে পবিত্র স্থান বলে মান্য করেন। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মিরাজের ঘটনা তার পবিত্রতাকে আরো বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। যখনই কোনো মুসলমান সুরা আল-ইসরা তেলাওয়াত করে, তার হৃদয়ে এই স্থানের পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য প্রভাব বিস্তার না করে পারে না।
‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তার বান্দাকে রজনীযোগে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আল-মসজিদুল হারাম থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত—যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়— তাকে আমার নিদর্শন দেখানো জন্য; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
[সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১]
বাইতুল মুকাদ্দাসের এই মসজিদকে মসজিদুল আকসা বলা হয় এ-কারণে যে, তা মক্কা (হেজায) থেকে অনেক দূরে। কুরআনুল কারিম যখন মিরাজের ঘটনায় বাইতুল মুকাদ্দাসের কথা উল্লেখ করলো, তার সঙ্গে এদিকেও মনোযোগ আকর্ষণ করা হলো যে, বনি ইসরাইলের দাওয়াত ও তাবলিগের এই জায়গা এবং বনি ইসরাইলের নামাযের কেবলা, যা তোমাদের কাছেও সম্মান ও পবিত্রতায় বরিত—ইহুদিদের নৈরাজ্যমূলক কার্যকলাপ এবং আল্লাহ তাআলার নীতিমালা ও আইন-কানুনের বিরুদ্ধে তাদের ধারাবাহিক বিদ্রোহ ও অবাধ্যাচরণের ফলে দুই-দুইবার ধ্বংস, বিনাশ ও অপমানের শিকার হয়েছিলো। কেবল এই পবিত্র ভূমিই নয়, বরং স্বয়ং ইহুদিরাও মুশরিক ও খ্রিস্টানদের হাতে চরম লাঞ্ছনা ও অপদস্থতার শিকার হয়েছিলো। কিন্তু তবুও তারা উপদেশ লাভ করে নি, শিক্ষা গ্রহণ করে নি। যখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ব্যাপক দাওয়াত ইহুদিদেরকে সৎপথ ও হেদায়েতের আহ্বান জানিয়েছে এবং দীন ও দুনিয়ার সম্মান ও মর্যাদার পয়গাম শুনিয়েছে, তখন তারা তাঁর সঙ্গে ঘৃণা ও তাচ্ছিল্যের আচরণই করেছিলো এবং প্রাচীনকালের ঘটনাবলির মতো তখনও তারা অবহেলা ও অবাধ্যাচরণ অবলম্বন করে স্থায়ী লাঞ্ছনা ও অপদস্থতাকেই আহ্বান করেছে।
কুরআনুল কারিম বলছে, (আল্লাহ তাআলা বলেন,) আমি আসমানি কিতাবে (নবী ও রাসুলগণের সহিফাসমূহে) পূর্ব থেকেই বনি ইসরাইলকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, তোমরা দুই ভয়াবহ নৈরাজ্য ও অশান্তি সৃষ্টি করবে এবং বিদ্রোহ ও অবাধ্যাচরণ করবে এবং তোমরা আল্লাহ তাআলার এই পবিত্র স্থানের অশান্তির উপকরণ হবে। তার ফলে প্রত্যেক বারই তোমাদেরকে ধ্বংস ও অপদস্থতার শিকার হতে হবে। আর যে-ভূমিকে তোমরা অতিমাত্রায় ভালোবাসছো তা-ও জালিমদের হাতে ধ্বংসপ্রাপ্ত ও বরবাদ হয়ে যাবে। তারপর আমি আরো একবার তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করবো এবং সৌভাগ্য ও সফলতার প্রতি আহ্বান জানাবো।
যদি তোমরা অতীতের ঘটনাবলি থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করে সত্যের আহ্বানে সাড়া দাও এবং অবারিত চিত্তে তা গ্রহণ করো, তবে পৃথিবীর কোনো শক্তি তোমাদের সৌভাগ্য ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আর যদি তোমাদের ইতিহাস-কুখ্যাত একগুঁয়েমি ও অবাধ্যাচরণ এবং সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও বিরোধিতা তোমাদের সঙ্গ ত্যাগ না করে এবং অতীতকালের ঘটনাবলির মতো এবারও তোমরা নৈরাজ্য ও অশান্তি সৃষ্টি করো এবং পথভ্রষ্টতাকে আপন করে নাও, তবে আমার পক্ষ থেকে কর্মফলের বিধান আগের মতোই পুনরাবৃত্ত করা হবে। তারপর তোমাদের ওপর স্থায়ী লাঞ্ছনা ও অপদস্থতার মোহল লাগিয়ে দেয়া হবে। এগুলো তো হবে দুনিয়াতে আর এমন অবাধ্য ও পাপাচারীদের জন্য আখেরাতে নিকৃষ্ট ঠিাকানা হবে ‘জাহান্নাম’।
সূত্র : কাসাসুল কুরআন, তাফসিরে ইবনে কাসির
হাফেজ মাওলানা সালাহউদ্দীন জাহাঙ্গীর
২৭৭
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
বাইতুল মুকাদ্দাসের এই মসজিদকে মসজিদুল আকসা বলা হয় এ-কারণে যে,......