পরশে তাঁহার সোনা হল যারা
নবী-রাসূল, সৎ ও নেক্কার লোক, আলেম-উলামা ও পথপ্রদর্শক ইমামগণ যে অবস্থায়ই থাকুন, আল্লাহর প্রতি দাওয়াতের মিশন কখনো ভুলতেন না। লোকজনকে তাওহিদের দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে অনু পরিমাণও ত্রুটি করতেন না। পরিস্থিতি যতই নাজুক ও সঙ্গিন হোক, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হোক..... তারপরও একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান দায়ি আল্লাহর পয়গাম পৌঁছানোর জন্য কোনো না কোনো পন্থা বের করেই পেলেন।
.
এর সুন্দর একটি উদাহরণ হচেছ ইউসুফ আ.। তিনি কারাগারের মধ্যেও নিজের দাওয়াতি মিশনকে ভুলেননি। কয়েদি সাথিদেরকে রাব্বুল আলামিনের তাওহিদ ও একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। আর আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সা. তো ছিলেন দাওয়াতে দীনের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ উদাহরণ, উজ্জ্বল আদর্শ। তিনি তাঁর উন্নত চরিত্র দিয়ে মানুষের অন্তর জয় করেছেন। অত্যন্ত মহব্বত ও ভালোবাসা দিয়ে তাদেরকে দাওয়াত দিতেন।
.
মানুষের মাথার উপর নয়; তিনি হৃদয়ের উপর শাসন করেছেন। ফলে যারা পুরস্কারের লোভে তাঁর পিছু নিয়েছিল তারাও তাঁর অনুগত হয়েগেল।
.
আল্লাহর রাসূল সা. মক্কা থেকে মদিনার দিকে হিজরত করে যাচ্ছিলেন। কুরাইশের কাফিররা তাঁর খুন বৈধ ঘোষণা করেছিল। একশত লালবর্ণের উট পুরস্কার সাধারণ কোনো বিষয় ছিল না। অপরাধপ্রবণ লোকদের জন্য এটা অনেক বড় পুরস্কার ছিল।তাদের বলা হলো, তাঁকে জীবিত অথবা মৃত পেশ করতে হবে। অত:পর কতলোক রাসূলুল্লাহ সা.এর পিছু নিয়েছে পুরস্কারের লোভে?!
.
তাদেরই একজন বুরায়দা আসলামি। সে ছিল নিজ গোত্রের সর্দার। সত্তরজন সাথিসহ (كراع الغميم) নামক এলাকায় তার সঙ্গে রাসূলুল্লাহর দেখা হয়। ওই জায়গাটি মক্কা থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত।
কুরাইশ বড় অংকের যে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল সেই পুরস্কারের লোভে সেও আল্লাহর রাসুল সা. ও আবু বকর রা.এর সন্ধানে বের হয়েছিল।
.
এই লোকটি যখন কাফেলায়ে হকের নিকটবর্তী হলো, আল্লাহর রাসূল সা. জিজ্ঞাসা করেন,
- “তুমি কে?”
বলল,
-আমি বুরায়দা।
নবী করিম সা. কোনো কিছুতে লক্ষণ বের করতেন না। তবে কিছু কিছু শব্দ থেকে শুভলক্ষণ বের করতেন। আরবি ভাষায় ‘বারদ’ শব্দের অর্থ ঠান্ডা। আল্লাহর রাসূল সা. আবু বকর রা.এর প্রতি তাকিয়ে বললেন,
-(يا أبابكر برد أمرنا وصلح)
- “হে আবু বকর! আমাদের কাজ ঠান্ডা ও সঠিক হয়েছে।”
অত:পর বললেন,
-“তুমি কোন গোত্রের লোক?”
সে জবাব দিল,
-আসলাম গোত্র।
আসলাম যেহেতু সালামত (অর্থাৎ শান্তি ও নিরাপত্তা) শব্দ থেকে উদ্গত। তাই রাসূলুল্লাহ সা. আবু বকর রা.কে বললেন,
-“আমরা নিরাপদে আছি।”
.
তারপর জিজ্ঞাসা করেন,
- “আসলাম গোত্রের কোন শাখার?”
বুরায়দা বলল,
-বনি সাহম থেকে।
সাহম শব্দের অর্থ হচ্ছে হিস্সা ও অংশ। আল্লাহর রাসূল সা. ইরশাদ করলেন,
-“তোমার হিস্সা বের হয়ে এসেছে। অর্থাৎ ইসলাম থেকে তুমিও হিস্সা পাবে।”
তখন বুরায়দা রাসূলুল্লাহ সা.কে জিজ্ঞাসা করল,
-আপনি কে?
ইরশাদ করেন,
-“আমি মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ। আল্লাহর রাসূল।”
আল্লাহর রাসূল সা. যখন নিজের পরিচয় দেন, বুরায়দা অত্যন্ত প্রভাবিত হলো এবং নিজ গোত্রের সত্তরজন লোকসহ মুসলমান হয়ে গেলেন।
.
সম্মানিত পাঠক! এখন দেখুন, আল্লাহর রাসুল সা. সফরের অবস্থায়। কিন্তু সেই অবস্থায়ও তিনি তাঁর চরিত্রের মাধ্যমে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে তার গোত্রসহ মুসলমান বানাতে সফল হয়েছেন। এই লোকটি কেবল মুসলমান হয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং আনন্দের আতিশায্যে তিনি নিজ পাগড়ি খুলে বল্লমের মাথায় বেঁধে নিলেন যার শুভ্র পুচ্ছ বাতাসে পতপত করে উড়ছিল। সুসংবাদ দিতে দিতে তিনি রাসূলুল্লাহ সা.এর সামনে সামনে চলছিলেন এবং বলছিলেন, হে লোকজন! নিরাপত্তার বাদশাহ, সন্ধিরক্ষক এবং দুনিয়াকে ন্যায় ও ইনসাফে পরিপূর্ণকারী লোকটি তাশরিফ আনছেন। এভাবে আল্লাহর রাসূল সা.এর মদিনা অভিমুখি সফর অব্যাহত ছিল। পথে পথেও তিনি দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ আঞ্জাম দিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।
.
মদিনার কাছাকাছি যখন পৌঁছেন, বনি আসলাম গোত্রের দুই চোরের সাথে সাক্ষাত হয়। লোকজন তাদের মন্দ পেশার কারণে “মুহানান” অর্থাৎ সময়ের লাঞ্চিত ও অপমানিত লোক হিসেবে আখ্যায়িত করত। আল্লাহর রাসূল সা. তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলে তারা উভয়েই ইসলাম কবুল করে নেন। রাসূলুল্লাহ সা. যখন তাদের নাম জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলল,
-আমাদের নাম “মুহানান”। অর্থাৎ আমরা লাঞ্চিত লোক। লোকজনকে লুট করি।
.
রাসূলুল্লাহ সা.এর উন্নত চরিত্র লক্ষ্য করুন। তিনি তাদেরকে তিরস্কার করার পরিবর্তে বললেন,
-“তোমরা লাঞ্চিত নও।” (بل أنتما المكرمان) “বরং তোমাদের নাম হচ্ছে ‘মুকরামান’ অর্থাৎ সম্মানিত।”
তিনি সা. তাদেরকে মদিনা চলে আসার জন্য দাওয়াত দিলেন।
.
আল্লাহর রাসূল সা. ডাকাত, চোর ও লুন্টনকারীদের হৃদয় জয় করে নেন তাঁর মধুর সুব্যবহারের মাধ্যমে। তাদের বিগত কর্মকান্ডের দরুন তাদের তিরস্কার করার পরিবর্তে তাদেরকে ইজ্জত ও সম্মান প্রদান করেন। তাঁর পরশে এসে এসব মাটির মানুষ সোনার মানুষে পরিণত হলেন। ফলে পরবর্তীতে তারা কাফেলা লুট করার পরিবর্তে কাফেলা প্রহরার কাজ আরম্ভ করে দেন।
৫২৬
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
পরশে তাঁহার সোনা হল যারা নবী-রাসূল, সৎ ও নেক্কার লোক,......
তিন ব্যক্তির গল্প আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. হতে বর্ণিত, তিনি......
শিক্ষণীয় গল্প এগুলো শুধুই গল্প নয়। গল্পের ব্যানারে আঁকা পৃথিবীর......
দক্ষতার গল্প আনাস ইবনু মালেক রা.। রাসূলুল্লাহ সা.এর বিশেষ খাদেম......
সাফল্যের গল্প... পঞ্চম এবং অস্টম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিলাভ ।......
দ্বিতীয় খলিফার ন্যায় বিচার একবার কিছু সুগন্ধী দ্রব্য বাহরাইন থেকে......
দক্ষতার গল্প খায়বারের ময়দানে উপস্থিত আল্লাহর রাসুল সা.। ইহুদিদের বিরুদ্ধে......
শিক্ষনীয় একটি ঘটনা দু'জন ফেরেস্তার দেখা হল, আঁকাশ থেকে পৃথিবীতে......
শিশুকালীন যৌন হয়রানি রোধে মায়েদের জন্য ১৩টি গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ ১.......
শূন্যহাতেও তিনি নির্ভিক যে ঘটনাটি আপনারা পড়তে যাচেছন তার বর্ণনাকারী......