সভ্যতা বিকাশে শ্রমের মর্যাদা
মাওলানা এম. সোলাইমান কাসেমী
পরিশ্রম সাফল্যের চাবিকাঠি। পরিশ্রম ছাড়া জীবনে কেউ উন্নতি করতে পারে না। এ পৃথিবীতে যারা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন, সবাই অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমেই করেছেন। শ্রমহীন অলস জীবন পঙ্গু জীবনের অন্তর্ভূক্ত। পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই বেঁচে থাকতে হয়। আধুনিক বিশ্বের যত বিস্ময়কর আবিস্কার রয়েছে তার সবই নিরলস শ্রমের ফসল। শ্রমহীন জীবন মানে হতাশার কাফন জড়ানো এক জীবন্ত লাশ। শ্রমবিমুখ মানুষ দেশ ও জাতির জন্য বোঝা। অপরিশ্রমী মানুষ জীবনে উন্নতি ও সাফল্য অর্জন করতে পারে না। সকল উন্নতির মূলেই রয়েছে শ্রম। পৃথিবীর জ্ঞানী ব্যক্তিদের আচরণ এবং উপদেশ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা কোনো কাজকেই ছোট করে দেখেননি। পৃথিবীর উন্নত দেশ সমূহের প্রতি দৃষ্টি দিলেও দেখা যাবে, সেসব দেশের মানুষ শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কোনো শ্রমকেই তারা মর্যাদা হানিকর বলে মনে করে না। তাদের কাছে কাজের ছোট বড় বলে কিছু নেই। সকল কাজের প্রতিই তারা সমভাবে শ্রদ্ধাশীল। সে কারনেই তারা উন্নতির চরম শিখরে পৌছে গেছে। একথা সত্য, পৃথিবীর যে জাতি শ্রমের প্রতি যতশ্রদ্ধাশীল, সে জাতি তত উন্নত ও সম্পদশালী। তাই মানব জীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী নিউটন বলেন, “সাফল্যের মাত্র দু’ভাগ প্রতিভা আর আটানব্বই ভাগই কঠোর পরিশ্রম”। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, কায়িক শ্রমের প্রতি আমাদের দেশের মানুষের এক ধরনের ঘৃণা রয়েছে, ফলে শিক্ষিত সমাজের একটা বিরাট অংশ কায়িক শ্রম থেকে দূরে সরে আছে। চরম বেকারত্ব সত্তে¡ ও তারা শ্রম বিমুখ। এই শ্রম বিমুখতার কারণেই আমরা আমাদের জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দেশের জনসংখ্যাকে জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের জন্য শ্রমের ক্ষেত্র গড়ে তুলতে হবে। কঠোর পরিশ্রমে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। শ্রমের যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। জনগণকে পরিশ্রমী করে তুলতে পারলে জাতীয় উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। সকল অভাব অনটনের অবসান ঘঠবে। তাই জাতীয় জীবনে শ্রমের মর্যাদা খুব বেশি। সাধারণত আমরা জানি শ্রম হলো দু’প্রকার। দৈহিক বা কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম। শরীরে খেটে যে শ্রম করা হয় তাকে দৈহিক বা কায়িক শ্রম বলে। আর যে শ্রমে বৃদ্ধিমত্তা তথা জ্ঞান খরচ করা হয় তাকে মানসিক শ্রম বলে। মানব জীবনে উভয় শ্রমই মূল্যবান। শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স:) বলেন, “শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে তার পাওনা পরিশোধ করে দাও”। তিনি আরও বলেন, “পরিশ্রমকারী ব্যক্তি আলাহর বন্ধু” উন্নত দেশের মানুষ কাজ ভালবাসে, যে কোনো শ্রমিককে শ্রদ্ধা করে। তারা কোনো কাজকে নিচ চোখে দেখেনা, তাই তারা এত উন্নত। মহা মনীষী কার্লাইল বলেছেন, “আমি পৃথিবীতে দু’ব্যক্তিকে সম্মান করি, কৃষক যে পরিশ্রম করে ফসল ফলায় আর ঐ চিত্র শিল্পী, যে তার জ্ঞান দিয়ে শিল্পকর্ম করে যায়”। পৃথিবীতে কোনো জাতি শ্রম ব্যতিরেকে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি। আল কুরআনে এসেছে “আলাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজের অবস্থা পরিবর্তন করে”। তাই বলা যায় যে জাতি যত পরিশ্রমী সে জাতি তত উন্নত। আজকের জাপান এর সবোৎকৃষ্ট উদাহরণ। ব্যক্তি জীবনে উন্নতি করতে হলে শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা দিতে হবে। পেশাগত ভিন্নতার কারণে মানুষের সামাজিক মর্যাদায় ও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। সমাজে বসবাসরত মানুষ নানা ধরনের কাজে বা পেশায় নিয়োজিত। এ পেশাগত কারণে মানুষের মধ্যে উঁচু নিচু ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে শ্রমের প্রতি মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গিরও পরিবর্তন ঘটেছে। প্রকৃত পক্ষে কোনো কাজই ঘৃণার নয়। সমাজে সব ধরনের কাজেরই গুরুত্ব রয়েছে। নেতার নেতৃত্ব, চিন্তাবিদদের চিন্তা, শিক্ষকের শিক্ষা, বিশেষজ্ঞের উপদেশ ইত্যাদি যেমন আবশ্যক, তেমনি কুলি, মজুর, মেথর, চাষি, ডাক পিওন, দোকানি, কেরানি প্রভৃতি ব্যক্তির শ্রমও সমভাবে আবশ্যক। এদের মধ্যে কোনো একটি শ্রেণীর অভাব ঘটলে সে ক্ষেত্রে অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ সমাজে প্রত্যেকেরই প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তাই কাজ ছোট বলে বিমুখ হয়ে বসে থাকলে চলবে না।
লেখক-
মাওলানা এম, সোলাইমান কাসেমী
অধ্যক্ষ,
সূফী ফতেহ্ আলী ওয়াইসী মহিলা মাদ্রাসা
আমিরাবাদ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।
১৬৭০
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
বিয়ে দৃষ্টিকে রাখে সংযত ও লজ্জাস্হানকে রাখে সুরক্ষিত হযরত আবদুল্লাহ......
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য,,, ১. নিশ্চয়ই হজ্জ এবং......
হযরত আবু উমামাহ(রাযিঃ) হইতে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি......
যে অাগে সালাম দেয় সে উত্তম আবূ উমামাহ্ (রাঃ) হতে......
পাপ মোচন ও সাওয়াব অর্জনের মাস রমজান মাওলানা এম সোলাইমান......
জুমু'অার নামাযের সময়ে ক্রয় বিক্রয় বন্ধ করুন হে মু'মিনগণ! জুম'আর......
ক্ষমা ও পুরস্কার নিশ্চয়ই যারা না দেখেও তাদের পালনকর্তাকে ভয়......
প্রশ্ন উত্তরে কুুরঅানের জ্ঞান প্রঃ পবিত্র কুরআনে মোট সূরা কতটি?......
মনোযোগ সহকারে কুরঅান তিলাওয়াত শুনুন কুরআন তিলাওয়াতের সময় চুপ থাকা......
ছোটদের ভালোবাসুন আল্লাহর রাসূল সা. বাচ্চাদের খুব ভালোবাসতেন। তাঁর চারিত্রিক......