সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ: আলোচিত ও অনালোচিত কারণসমূহ আ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ০৬/০৭/২০১৭

আমাদের সমাজের সকল মানুষ এবং ইসলাম সম্পর্কে যাদের সামান্য জ্ঞানও আছে তারা সকলেই জানেন যে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষ সমাজের সকল মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের অন্যতম প্রেরণা। তাত্ত্বিক, প্রায়োগিক ও ঐতিহাসিকভাবে তা সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠির সকল মানুষই ধর্মীয়ভাবে শান্তিপ্রিয়। সবাই আমরা শান্তি চাই। এখন সমস্যা হলো, তাহলে ইসলামের নামে বোমাবাজি, অশান্তি, নিরিহ নিরপরাধ মানুষ হত্যা, আত্মহত্যা ইত্যাদি কেন ঘটছে? এ সকল ঘটনার কারণ জানা শুধু কৌতুহল নিবারণের বিষয় নয়, বরং সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। সন্ত্রাস একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। এর নিরাময়ের জন্য এর সঠিক কারণ নির্ণয় করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক কারণ নির্ণয় এই ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের পথ সুগম করবে। পক্ষান্তরে এর কারণ নির্ণয়ে বিভ্রান্তি সমস্যাকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে।

ইসলামের নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সারা বিশ্বে অমুসলিম ও মুসলিম গবেষক-বুদ্ধিজীবীগণ জঙ্গিবাদের যে সকল কারণ উল্লেখ করছেন সেগুলির অন্যতম হলো: (১) ইসলাম, (২) ইসলামী শিক্ষা, (৩) ওহাবী মতবাদ ও (৪) পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্র।

আলোচিত প্রথম কারণ: ইসলাম

অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিত জঙ্গিবাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে দায়ী করেন। তাদের মতে ইসলাম তার অনুসারীদের অসহিষ্ণুতা ও জঙ্গিবাদ শিক্ষা দেয়। ইসলামে জিহাদের নামে অমুসলিমদেরকে হত্যা করার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এর ফলেই মুসলিমদের মধ্যে জঙ্গিবাদের উত্থান। তাদের মতে ইসলামী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বন্ধ করার একমাত্র উপায় ইসলাম ধর্মকে নির্মুল অথবা নিয়ন্ত্রণ করা। এরা দাবি করেন যে, ইসলামী সভ্যতার সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংঘাত আবশ্যম্ভাবী। একে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান ‘সভ্যতার সংঘাত’ তত্ত্বের সঠিকত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

এক্ষেত্রে মানব সভ্যতার সংরক্ষণের জন্য এই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো, শক্তির মাধ্যমে এদেরকে হত্যা করা, বন্দি করা ও মুসলিম দেশগুলিকে সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। বিশেষত, ইসলামী শিক্ষার বিস্তার রোধ করা। এ সকল গবেষক-পণ্ডিতদেরকে হয়ত মুসলিমগণ ‘ইসলাম-বিদ্বেষী’ বলে মনে করতে পারেন, তবে এদের অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ মতপ্রকাশের জন্য বিদ্বেষের চেয়ে অজ্ঞতাই বড় কারণ। এদের অনেকেই ইসলামের জিহাদ বিষয়ক কিছু নিদের্শ হয়ত পাঠ করেছেন, কিন্তু জিহাদের প্রকৃত অর্থ, শর্ত বা বিধানাবলি জানেন নি। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিম ধর্ম-প্রচারক বা ধর্মগুরুদের প্রচারণামূলক বইপুস্তকই পাঠ করেছেন, ইসলামী জ্ঞানের সূত্রগুলি থেকে নিরপেক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ করেন নি। এরা দেখছেন যে, কোনো কোনো মুসলিম নির্বিচারে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করছে এবং এজন্য তারা ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের উদ্ধৃতি পেশ করছে কাজেই তাঁরা ধারণা করেন যে, কুরআন এইরূপই শিক্ষা দিয়ে থাকে। এভাবেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই জঙ্গিবাদের জন্য ইসলামই দায়ী এবং ইসলামকে নির্মুল বা নিয়ন্ত্রণ করাই এই সমস্যা দূরীকরণের একমাত্র উপায়।

পাশ্চাত্যের অনেক পণ্ডিত, যারা বিভিন্ন মুসলিম সমাজ ও জনগোষ্ঠির সাথে সুপরিচিত বা ইসলাম ধর্ম ও ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা পরিচিত, তারা উপর্যুক্ত মতামত পুরোপরি সমর্থন করেন না। তারা মনে করেন, ইসলামে অনেক ভাল কথা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামী সভ্যতার সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার সহঅবস্থান সম্ভব। তবে ইসলামের মধ্যে ভাল বিষয়ের সাথে জিহাদ, ধর্মত্যাগ, বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ক কিছু উগ্র ও অসহিষ্ণু বিষয়ও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যেগুলি মানবাধিকার বা সভ্যতার সহঅবস্থান বা বিকাশের বিপক্ষে। এ সকল শিক্ষা থেকেই জঙ্গিবাদের জন্ম। এজন্য জঙ্গিবাদ দমনের জন্য ইসলামের ‘ভাল শিক্ষাগুলির’ প্রসংশা করতে হবে ও সেগুলির বিকাশ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি উগ্র বা ‘খারাপ’ শিক্ষার বিস্তার রোধ করতে হবে। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। এ থেকে ‘উগ্রতা’ উৎসাহ দিতে পারে এরূপ শিক্ষা বাদ দিতে হবে। এভাবে মুসলিম সমাজগুলিতে ‘মডারেট’ মুসলিমদের উত্থান ঘটাতে পারলেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

আলোচিত দ্বিতীয় কারণ: ইসলামী শিক্ষা

বিশ্বের ধার্মিক বা অধার্মিক কোনো মুসলিমই উপর্যুক্ত মতামতদ্বয় সঠিক বলে মানতে পারেন না। বরং তারা একে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং বিদ্বেষমূলক মত বলে বিশ্বাস করেন। তাঁরা অনুভব করেন যে, যদি ইসলাম ধর্মই জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী হতো তবে আমরা সকল মুসলিমই আমাদের মধ্যে জঙ্গিবাদের আগ্রহ বা প্রেরণা অনুভব করতাম। মুসলিম পরিবারে বা সমাজে লালিত পালিত সকল ধার্মিক বা অধার্মিক মুসলিমই ইসলাম সম্পর্কে কমবেশি কিছু শিক্ষা পরিবার, প্রতিষ্ঠান বা সমাজ থেকে পেয়েছেন। কিন্তু কখনোই তারা অমুসলিম বা অন্যান্য মতাবলম্বীদের প্রতি অসহিষ্ণুতার শিক্ষা পান নি। সকল মুসলিম সমাজেই মুসলিমগণ অমুসলিমদের সাথে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছেন। কাজেই জঙ্গিবাদের জন্য ইসলাম কখনো দায়ী হতে পারে না। সমস্যা থাকলে অন্য কোথাও রয়েছে, ইসলামের মধ্যে নয়। তাঁরা অস্বীকার করেন না যে, কিছু মুসলিম সন্ত্রাসের সাথে জাড়িত। তবে তারা কখনোই স্বীকার করেন না যে, তাদের ধর্ম তাদের সন্ত্রাসের জন্য দায়ী। বরং এ সকল সন্ত্রাসীদের ব্যক্তিগত বিভ্রান্তি, মানসিক বিক্ষুব্ধতা, সামাজিক অনাচার বা অন্য কোনো কারণ এর পিছনে কার্যকর।

এদের অনেকেই মনে করেন যে, জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য মূলত দায়ী ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার। জঙ্গিবাদের বিস্তারে মাদ্রাসা শিক্ষার এই দায়িত্বের প্রকৃতি নির্ণয়ে এ সকল পণ্ডিতের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আমরা আগেই দেখেছি যে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অমুসলিম পাণ্ডিতগণও ‘ইসলামী শিক্ষাকেই’ মূলত জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য দায়ি করছেন। তবে ‘দায়িত্বের’ প্রকৃতি নির্ণয়ে তাদের মধ্যে এবং তাদের সাথে মুসলিম পণ্ডিতদের বিভিন্নতা রয়েছে। কেউ মনে করছেন যেহেতু ইসলামের মধ্যেই জঙ্গিবাদের শিক্ষা রয়েছে, সেহেতু ইসলামী ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষার প্রসার মানেই জঙ্গিবাদের প্রসার। যত বেশি কুরআন, হাদীস, ফিক্হ ইত্যাদি ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষা প্রসার লাভ করবে, ততই বেশি ‘জিহাদী’ মনোভাব, অন্য ধর্ম ও অন্য মতের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাব ও মোল্লাতান্ত্রিক (theocratic) স্বৈরাচারী সরকার জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব প্রসার লাভ করবে। এজন্য ইসলামী শিক্ষা বা ইসলামের ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষার প্রসার রোধই জাঙ্গিবাদ দমনের প্রধান উপায়।

অন্য অনেকে মনে করেন যে, ইসলামের মধ্যে মূলত জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই, তবে ইসলামী শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসাগুলিতে ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথবা এগুলির পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী ইসলামকে জঙ্গিবাদী রূপদানের সহায়ক। অথবা ইসলামী আবেগের অপব্যবহার করে এ সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদেরকে সহজেই জঙ্গিতে রূপান্তরিত করা যায়। কেউ মনে করছেন, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবেই ইসলামের শিক্ষা প্রদান করছে, তবে সম্ভবত শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু ত্র“টি রয়েছে, যে কারণে এগুলি জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত হয়ে গিয়েছে। এদের মতে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারই জঙ্গিবাদ রোধের উপায়। “It is a fact that some of the Madrasha students have got involved with what is called ‘Islamic’ militancy…. Though Madrasha education may not be held rresponsible for thes most unwanted activities, yet there are some loopholes and it is time to think about bringing Madrasha education into the mainstream.”

`ইসলামী জঙ্গিবাদের’ জন্য ‘ইসলাম’-কে দায়ী করলে যেমন মুসলিমগণ হতবাক, বিস্মিত, ব্যথিত বা উত্তেজিত হয়ে এইরূপ মতকে বিদ্বেষমূলক বলে মনে করেন, ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসার সাথে জড়িত মানুষরাও এই দ্বিতীয় মতটির বিষয়ে একইরূপ বিস্ময়, ব্যথা বা উত্তেজনা অনুভব করেন।

তাঁরা অনুভব করেন যে, যদি ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসা শিক্ষাই জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী হতো তবে আমরা মাদ্রাসার সকল ছাত্র শিক্ষক আমাদের মধ্যে জঙ্গিবাদের আগ্রহ বা প্রেরণা অনুভব করতাম। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা কখনোই তা নয়। সন্ত্রাস, হত্যা ও ধ্বংসের প্রতি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা ও বিরোধিতা অনুভব করছেন এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসা আলেম, ইমাম ও পীর-মাশাইখ। বিগত প্রায় আড়াই শত বৎসর ধরে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উপমহাদেশে চালু রয়েছে এবং মূলত একই পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী অনুসরণ করে চলেছে। এছাড়া অনুরূপ পদ্ধতির অগণিত মাদ্রাসা মালয়েশিয়া ও অন্যান্য মুসলিম দেশে চালু রয়েছে। এগুলি থেকে বের হয়ে আসা অগণিত মানুষ সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করেছেন, কিন্তু ইতিহাসের কোনো পর্যায়েই তাঁরা সন্ত্রাসের জন্ম দেন নি। তাঁরা অস্বীকার করেন না যে, কিছু মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক এই অপরাধের সাথে জাড়িত; তবে তারা কখনোই বিশ্বাস করেন না যে, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের এই অপরাধের জন্য দায়ী। বরং তা তাদের ব্যক্তিগত বিভ্রান্তি।

এ সকল মাদ্রাসাশিক্ষিত মানুষেরা উপর্যুক্ত পাণ্ডিত-বুদ্ধিজীবীদেরকে ‘ইসলামীশিক্ষা বিদ্বেষী’ বা ‘মাদ্রাসা বিদ্বেষী’ বলে মনে করে থাকেন। তবে আমার কাছে মনে হয় ‘ইসলামী জঙ্গিবাদের’ জন্য ‘ইসলাম ধর্ম’-কে দায়ী করা এবং ‘ইসলামী শিক্ষা’-কে দায়ী করা উভয় মতের পিছনেই মূলত অজ্ঞতা কার্যকর। পাশ্চাত্য অমুসলিম পণ্ডিতগণ যেমন কোনো কোনো মুসলিমকে সন্ত্রাসী কর্মে লিপ্ত দেখে সন্ত্রাসীর ধর্মকে দায়ী করছেন, তেমনি অনেকে কোনো কোনো মাদ্রাসা শিক্ষিতকে সন্ত্রাসে লিপ্ত দেখে সন্ত্রাসীর শিক্ষাকে দায়ী করছেন। এ সকল পণ্ডিতের অনেকেই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচী ও মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচিত নন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে তাঁরা জানতে পারেন যে, মাদ্রাসাগুলিতে জঙ্গিবাদীদের আখড়া এবং মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকগণ জঙ্গি কার্যক্রমে লিপ্ত। এথেকে তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসা শিক্ষাই মূলত জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তারের জন্য দায়ী।

সাধারণভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, কোনো অপরাধীর অপরাধের জন্য তার ধর্ম, শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার ইত্যাদি সাধারণত দায়ী হয় না। তদুপরি আমি এখানে নিম্নের বিষয়গুলি বিবেচনা করার জন্য পাঠককে অনুরোধ করছি।

(১) আমাদের সমাজের লক্ষ লক্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক সকলেই আমাদের দেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিভিন্ন সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত। এদের দুর্নীতির জন্য কেউই তাদের শিক্ষাব্যবস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন না। কারণ তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেন তারাও একই শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত। তাঁরা ভাল করেই জানেন যে, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় বা এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনোই দুর্নীতি শিক্ষা দেওয়া হয় না, বরং সততা ও আদর্শই শিক্ষা দেওয়া হয়। কাজেই দুর্নীতিবাজের দুর্নীতির জন্য তার ব্যক্তিগত লোভ, সামাজিক অনাচার, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ইত্যাদিই দায়ী; তার ধর্ম, শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এজন্য কোনো অজ্ঞ মানুষ বা ‘মাদ্রাসা শিক্ষিত’ মানুষ দুর্নীতির প্রসারের জন্য ‘আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা’ বা ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ দায়ী বলে মন্তব্য করলে বা ডাক্তারদের ‘কসাইসুলভ আচরণের জন্য’ মেডিকেল কলেজগুলি’ দায়ী বলে মন্তব্য করলে শিক্ষিত মানুষেরা তাকে মুর্খ বা নির্বোধ বলেই মনে করবেন।

(২) অনুরূপভাবে আমাদের দেশের অনেক মানুষই সমাজতন্ত্র বা ‘সর্বহারার রাজত্বের’ নামে সন্ত্রাসকর্মে লিপ্ত। এরা আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অধীনে শিক্ষা লাভ করেছেন। কিন্তু কেউই বলবেন না যে, এদের ঘৃণ্য কর্মের জন্য তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সমাজতান্ত্রিক আদর্শ দায়ী।

(৩) স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমানে আমেরিকার প্রশাসন ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। এই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানব সন্তান জীবন ও সম্পদ হারিয়েছেন। তারা নির্বিচার বোমা মেরে ফালুজা ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের ‘গণহত্যাযজ্ঞে’ লিপ্ত হয়েছেন এবং সম্পদ ধ্বংস করেছেন এবং এরপর কয়েকশত কুর্দীকে হত্যার অপরাধে তারা সাদ্দাম হোসেনের বিচার করছেন। ইরাকী, আরব, মুসলিম ও বিশ্বের যে কোনো দেশ ও ধর্মের শান্তিকামী মানুষের দৃষ্টিতে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মানবতার বিরুদ্ধে কঠিনতম অপরাধ। এখানে একজন বিক্ষুদ্ধ ইরাকী, আরব বা মুসলমান এই অপরাধের জন্য ‘খৃস্টধর্ম’, ‘গণতন্ত্র’ বা ‘আমেরিকান সভ্যতা’-কে দায়ী করে মন্তব্য করতে পারেন; কারণ প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার সহকর্মীবৃন্দ ‘বিশ্বাসী ও ধর্মপরায়ণ খৃস্টান, আমেরিকান সভ্যতার সন্তান ও গণতন্ত্রের ধারক-বাহক’। কিন্তু কোনো খৃস্টান, আমেরিকান, গণতন্ত্র প্রেমিক বা কোনো একজন প্রাজ্ঞ পণ্ডিত এই মতের সাথে একমত হবেন না। তারা একে অজ্ঞতা প্রসূত প্রলাপ বলেই মনে করবেন। কারণ তারা জানেন যে, খৃস্টধর্ম, গণতন্ত্র বা আমেরিকান সভ্যতা কোনোটির এইরূপ হত্যাযজ্ঞ, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও লুটতরাজ শিক্ষা দেয় না বা সমর্থন করে না। মার্কিন প্রশাসন যা করছেন তা বর্তমান নেতৃবৃন্দের অন্যায়, এরজন্য তাদের ধর্ম, আদর্শ বা সভ্যতা দায়ী নয়।

আমাদের সমাজের সকল মানুষ এবং ইসলাম সম্পর্কে যাদের সামান্য জ্ঞানও আছে তারা সকলেই জানেন যে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ গোত্র নির্বিশেষ সমাজের সকল মানুষের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা ইসলামী ধর্মবিশ্বাসের অন্যতম প্রেরণা। তাত্ত্বিক, প্রায়োগিক ও ঐতিহাসিকভাবে তা সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠির সকল মানুষই ধর্মীয়ভাবে শান্তিপ্রিয়। সবাই আমরা শান্তি চাই। এখন সমস্যা হলো, তাহলে ইসলামের নামে বোমাবাজি, অশান্তি, নিরিহ নিরপরাধ মানুষ হত্যা, আত্মহত্যা ইত্যাদি কেন ঘটছে? এ সকল ঘটনার কারণ জানা শুধু কৌতুহল নিবারণের বিষয় নয়, বরং সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপায়। সন্ত্রাস একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। এর নিরাময়ের জন্য এর সঠিক কারণ নির্ণয় করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক কারণ নির্ণয় এই ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময়ের পথ সুগম করবে। পক্ষান্তরে এর কারণ নির্ণয়ে বিভ্রান্তি সমস্যাকে আরো ভয়ঙ্কর করে তুলতে পারে। ইসলামের নামে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদের কারণ সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সারা বিশ্বে অমুসলিম ও মুসলিম গবেষক-বুদ্ধিজীবীগণ জঙ্গিবাদের যে সকল কারণ উল্লেখ করছেন সেগুলির অন্যতম হলো: (১) ইসলাম, (২) ইসলামী শিক্ষা, (৩) ওহাবী মতবাদ ও (৪) পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্র। আলোচিত প্রথম কারণ: ইসলাম অনেক পাশ্চাত্য পণ্ডিত জঙ্গিবাদের জন্য ইসলাম ধর্মকে দায়ী করেন। তাদের মতে ইসলাম তার অনুসারীদের অসহিষ্ণুতা ও জঙ্গিবাদ শিক্ষা দেয়। ইসলামে জিহাদের নামে অমুসলিমদেরকে হত্যা করার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। আর এর ফলেই মুসলিমদের মধ্যে জঙ্গিবাদের উত্থান। তাদের মতে ইসলামী সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বন্ধ করার একমাত্র উপায় ইসলাম ধর্মকে নির্মুল অথবা নিয়ন্ত্রণ করা। এরা দাবি করেন যে, ইসলামী সভ্যতার সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংঘাত আবশ্যম্ভাবী। একে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান ‘সভ্যতার সংঘাত’ তত্ত্বের সঠিকত্বের সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এক্ষেত্রে মানব সভ্যতার সংরক্ষণের জন্য এই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় হলো, শক্তির মাধ্যমে এদেরকে হত্যা করা, বন্দি করা ও মুসলিম দেশগুলিকে সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। বিশেষত, ইসলামী শিক্ষার বিস্তার রোধ করা। এ সকল গবেষক-পণ্ডিতদেরকে হয়ত মুসলিমগণ ‘ইসলাম-বিদ্বেষী’ বলে মনে করতে পারেন, তবে এদের অনেকের ক্ষেত্রেই এরূপ মতপ্রকাশের জন্য বিদ্বেষের চেয়ে অজ্ঞতাই বড় কারণ। এদের অনেকেই ইসলামের জিহাদ বিষয়ক কিছু নিদের্শ হয়ত পাঠ করেছেন, কিন্তু জিহাদের প্রকৃত অর্থ, শর্ত বা বিধানাবলি জানেন নি। এরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইসলাম সম্পর্কে অমুসলিম ধর্ম-প্রচারক বা ধর্মগুরুদের প্রচারণামূলক বইপুস্তকই পাঠ করেছেন, ইসলামী জ্ঞানের সূত্রগুলি থেকে নিরপেক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ করেন নি। এরা দেখছেন যে, কোনো কোনো মুসলিম নির্বিচারে নিরপরাধ মানুষ হত্যা করছে এবং এজন্য তারা ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের উদ্ধৃতি পেশ করছে কাজেই তাঁরা ধারণা করেন যে, কুরআন এইরূপই শিক্ষা দিয়ে থাকে। এভাবেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এই জঙ্গিবাদের জন্য ইসলামই দায়ী এবং ইসলামকে নির্মুল বা নিয়ন্ত্রণ করাই এই সমস্যা দূরীকরণের একমাত্র উপায়। পাশ্চাত্যের অনেক পণ্ডিত, যারা বিভিন্ন মুসলিম সমাজ ও জনগোষ্ঠির সাথে সুপরিচিত বা ইসলাম ধর্ম ও ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা পরিচিত, তারা উপর্যুক্ত মতামত পুরোপরি সমর্থন করেন না। তারা মনে করেন, ইসলামে অনেক ভাল কথা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামী সভ্যতার সাথে পাশ্চাত্য সভ্যতার সহঅবস্থান সম্ভব। তবে ইসলামের মধ্যে ভাল বিষয়ের সাথে জিহাদ, ধর্মত্যাগ, বিধর্মীদের সাথে যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ক কিছু উগ্র ও অসহিষ্ণু বিষয়ও শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, যেগুলি মানবাধিকার বা সভ্যতার সহঅবস্থান বা বিকাশের বিপক্ষে। এ সকল শিক্ষা থেকেই জঙ্গিবাদের জন্ম। এজন্য জঙ্গিবাদ দমনের জন্য ইসলামের ‘ভাল শিক্ষাগুলির’ প্রসংশা করতে হবে ও সেগুলির বিকাশ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি উগ্র বা ‘খারাপ’ শিক্ষার বিস্তার রোধ করতে হবে। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। এ থেকে ‘উগ্রতা’ উৎসাহ দিতে পারে এরূপ শিক্ষা বাদ দিতে হবে। এভাবে মুসলিম সমাজগুলিতে ‘মডারেট’ মুসলিমদের উত্থান ঘটাতে পারলেই জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আলোচিত দ্বিতীয় কারণ: ইসলামী শিক্ষা বিশ্বের ধার্মিক বা অধার্মিক কোনো মুসলিমই উপর্যুক্ত মতামতদ্বয় সঠিক বলে মানতে পারেন না। বরং তারা একে বাস্তবতা বিবর্জিত এবং বিদ্বেষমূলক মত বলে বিশ্বাস করেন। তাঁরা অনুভব করেন যে, যদি ইসলাম ধর্মই জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী হতো তবে আমরা সকল মুসলিমই আমাদের মধ্যে জঙ্গিবাদের আগ্রহ বা প্রেরণা অনুভব করতাম। মুসলিম পরিবারে বা সমাজে লালিত পালিত সকল ধার্মিক বা অধার্মিক মুসলিমই ইসলাম সম্পর্কে কমবেশি কিছু শিক্ষা পরিবার, প্রতিষ্ঠান বা সমাজ থেকে পেয়েছেন। কিন্তু কখনোই তারা অমুসলিম বা অন্যান্য মতাবলম্বীদের প্রতি অসহিষ্ণুতার শিক্ষা পান নি। সকল মুসলিম সমাজেই মুসলিমগণ অমুসলিমদের সাথে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছেন। কাজেই জঙ্গিবাদের জন্য ইসলাম কখনো দায়ী হতে পারে না। সমস্যা থাকলে অন্য কোথাও রয়েছে, ইসলামের মধ্যে নয়। তাঁরা অস্বীকার করেন না যে, কিছু মুসলিম সন্ত্রাসের সাথে জাড়িত। তবে তারা কখনোই স্বীকার করেন না যে, তাদের ধর্ম তাদের সন্ত্রাসের জন্য দায়ী। বরং এ সকল সন্ত্রাসীদের ব্যক্তিগত বিভ্রান্তি, মানসিক বিক্ষুব্ধতা, সামাজিক অনাচার বা অন্য কোনো কারণ এর পিছনে কার্যকর। এদের অনেকেই মনে করেন যে, জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য মূলত দায়ী ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসার। জঙ্গিবাদের বিস্তারে মাদ্রাসা শিক্ষার এই দায়িত্বের প্রকৃতি নির্ণয়ে এ সকল পণ্ডিতের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আমরা আগেই দেখেছি যে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর অমুসলিম পাণ্ডিতগণও ‘ইসলামী শিক্ষাকেই’ মূলত জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য দায়ি করছেন। তবে ‘দায়িত্বের’ প্রকৃতি নির্ণয়ে তাদের মধ্যে এবং তাদের সাথে মুসলিম পণ্ডিতদের বিভিন্নতা রয়েছে। কেউ মনে করছেন যেহেতু ইসলামের মধ্যেই জঙ্গিবাদের শিক্ষা রয়েছে, সেহেতু ইসলামী ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষার প্রসার মানেই জঙ্গিবাদের প্রসার। যত বেশি কুরআন, হাদীস, ফিক্হ ইত্যাদি ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষা প্রসার লাভ করবে, ততই বেশি ‘জিহাদী’ মনোভাব, অন্য ধর্ম ও অন্য মতের প্রতি অসহিষ্ণু মনোভাব ও মোল্লাতান্ত্রিক (theocratic) স্বৈরাচারী সরকার জনগণের উপর চাপিয়ে দেওয়ার মনোভাব প্রসার লাভ করবে। এজন্য ইসলামী শিক্ষা বা ইসলামের ধর্মতাত্ত্বিক শিক্ষার প্রসার রোধই জাঙ্গিবাদ দমনের প্রধান উপায়। অন্য অনেকে মনে করেন যে, ইসলামের মধ্যে মূলত জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের কোনো স্থান নেই, তবে ইসলামী শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বা মাদ্রাসাগুলিতে ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। অথবা এগুলির পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী ইসলামকে জঙ্গিবাদী রূপদানের সহায়ক। অথবা ইসলামী আবেগের অপব্যবহার করে এ সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষকদেরকে সহজেই জঙ্গিতে রূপান্তরিত করা যায়। কেউ মনে করছেন, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবেই ইসলামের শিক্ষা প্রদান করছে, তবে সম্ভবত শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কিছু ত্র“টি রয়েছে, যে কারণে এগুলি জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত হয়ে গিয়েছে। এদের মতে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারই জঙ্গিবাদ রোধের উপায়। “It is a fact that some of the Madrasha students have got involved with what is called ‘Islamic’ militancy…. Though Madrasha education may not be held rresponsible for thes most unwanted activities, yet there are some loopholes and it is time to think about bringing Madrasha education into the mainstream.” `ইসলামী জঙ্গিবাদের’ জন্য ‘ইসলাম’-কে দায়ী করলে যেমন মুসলিমগণ হতবাক, বিস্মিত, ব্যথিত বা উত্তেজিত হয়ে এইরূপ মতকে বিদ্বেষমূলক বলে মনে করেন, ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসার সাথে জড়িত মানুষরাও এই দ্বিতীয় মতটির বিষয়ে একইরূপ বিস্ময়, ব্যথা বা উত্তেজনা অনুভব করেন। তাঁরা অনুভব করেন যে, যদি ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসা শিক্ষাই জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী হতো তবে আমরা মাদ্রাসার সকল ছাত্র শিক্ষক আমাদের মধ্যে জঙ্গিবাদের আগ্রহ বা প্রেরণা অনুভব করতাম। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা কখনোই তা নয়। সন্ত্রাস, হত্যা ও ধ্বংসের প্রতি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা ও বিরোধিতা অনুভব করছেন এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসা আলেম, ইমাম ও পীর-মাশাইখ। বিগত প্রায় আড়াই শত বৎসর ধরে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা উপমহাদেশে চালু রয়েছে এবং মূলত একই পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচী অনুসরণ করে চলেছে। এছাড়া অনুরূপ পদ্ধতির অগণিত মাদ্রাসা মালয়েশিয়া ও অন্যান্য মুসলিম দেশে চালু রয়েছে। এগুলি থেকে বের হয়ে আসা অগণিত মানুষ সমাজের বিভিন্ন স্তরে কাজ করেছেন, কিন্তু ইতিহাসের কোনো পর্যায়েই তাঁরা সন্ত্রাসের জন্ম দেন নি। তাঁরা অস্বীকার করেন না যে, কিছু মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষক এই অপরাধের সাথে জাড়িত; তবে তারা কখনোই বিশ্বাস করেন না যে, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের এই অপরাধের জন্য দায়ী। বরং তা তাদের ব্যক্তিগত বিভ্রান্তি। এ সকল মাদ্রাসাশিক্ষিত মানুষেরা উপর্যুক্ত পাণ্ডিত-বুদ্ধিজীবীদেরকে ‘ইসলামীশিক্ষা বিদ্বেষী’ বা ‘মাদ্রাসা বিদ্বেষী’ বলে মনে করে থাকেন। তবে আমার কাছে মনে হয় ‘ইসলামী জঙ্গিবাদের’ জন্য ‘ইসলাম ধর্ম’-কে দায়ী করা এবং ‘ইসলামী শিক্ষা’-কে দায়ী করা উভয় মতের পিছনেই মূলত অজ্ঞতা কার্যকর। পাশ্চাত্য অমুসলিম পণ্ডিতগণ যেমন কোনো কোনো মুসলিমকে সন্ত্রাসী কর্মে লিপ্ত দেখে সন্ত্রাসীর ধর্মকে দায়ী করছেন, তেমনি অনেকে কোনো কোনো মাদ্রাসা শিক্ষিতকে সন্ত্রাসে লিপ্ত দেখে সন্ত্রাসীর শিক্ষাকে দায়ী করছেন। এ সকল পণ্ডিতের অনেকেই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা, পাঠ্যক্রম, পাঠ্যসূচী ও মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচিত নন। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম থেকে তাঁরা জানতে পারেন যে, মাদ্রাসাগুলিতে জঙ্গিবাদীদের আখড়া এবং মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষকগণ জঙ্গি কার্যক্রমে লিপ্ত। এথেকে তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইসলামী শিক্ষা বা মাদ্রাসা শিক্ষাই মূলত জঙ্গিবাদের উত্থান ও বিস্তারের জন্য দায়ী। সাধারণভাবে আমরা বুঝতে পারি যে, কোনো অপরাধীর অপরাধের জন্য তার ধর্ম, শিক্ষা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার ইত্যাদি সাধারণত দায়ী হয় না। তদুপরি আমি এখানে নিম্নের বিষয়গুলি বিবেচনা করার জন্য পাঠককে অনুরোধ করছি। (১) আমাদের সমাজের লক্ষ লক্ষ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক সকলেই আমাদের দেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিভিন্ন সুপরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত। এদের দুর্নীতির জন্য কেউই তাদের শিক্ষাব্যবস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেন না। কারণ তাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করেন তারাও একই শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা প্রাপ্ত। তাঁরা ভাল করেই জানেন যে, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় বা এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কখনোই দুর্নীতি শিক্ষা দেওয়া হয় না, বরং সততা ও আদর্শই শিক্ষা দেওয়া হয়। কাজেই দুর্নীতিবাজের দুর্নীতির জন্য তার ব্যক্তিগত লোভ, সামাজিক অনাচার, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ইত্যাদিই দায়ী; তার ধর্ম, শিক্ষা ব্যবস্থা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এজন্য কোনো অজ্ঞ মানুষ বা ‘মাদ্রাসা শিক্ষিত’ মানুষ দুর্নীতির প্রসারের জন্য ‘আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা’ বা ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ দায়ী বলে মন্তব্য করলে বা ডাক্তারদের ‘কসাইসুলভ আচরণের জন্য’ মেডিকেল কলেজগুলি’ দায়ী বলে মন্তব্য করলে শিক্ষিত মানুষেরা তাকে মুর্খ বা নির্বোধ বলেই মনে করবেন। (২) অনুরূপভাবে আমাদের দেশের অনেক মানুষই সমাজতন্ত্র বা ‘সর্বহারার রাজত্বের’ নামে সন্ত্রাসকর্মে লিপ্ত। এরা আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার অধীনে শিক্ষা লাভ করেছেন। কিন্তু কেউই বলবেন না যে, এদের ঘৃণ্য কর্মের জন্য তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সমাজতান্ত্রিক আদর্শ দায়ী। (৩) স্বাধীনতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ইত্যাদি মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমানে আমেরিকার প্রশাসন ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন। এই যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানব সন্তান জীবন ও সম্পদ হারিয়েছেন। তারা নির্বিচার বোমা মেরে ফালুজা ও অন্যান্য শহরে হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের ‘গণহত্যাযজ্ঞে’ লিপ্ত হয়েছেন এবং সম্পদ ধ্বংস করেছেন এবং এরপর কয়েকশত কুর্দীকে হত্যার অপরাধে তারা সাদ্দাম হোসেনের বিচার করছেন। ইরাকী, আরব, মুসলিম ও বিশ্বের যে কোনো দেশ ও ধর্মের শান্তিকামী মানুষের দৃষ্টিতে এই রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মানবতার বিরুদ্ধে কঠিনতম অপরাধ। এখানে একজন বিক্ষুদ্ধ ইরাকী, আরব বা মুসলমান এই অপরাধের জন্য ‘খৃস্টধর্ম’, ‘গণতন্ত্র’ বা ‘আমেরিকান সভ্যতা’-কে দায়ী করে মন্তব্য করতে পারেন; কারণ প্রেসিডেন্ট বুশ ও তার সহকর্মীবৃন্দ ‘বিশ্বাসী ও ধর্মপরায়ণ খৃস্টান, আমেরিকান সভ্যতার সন্তান ও গণতন্ত্রের ধারক-বাহক’। কিন্তু কোনো খৃস্টান, আমেরিকান, গণতন্ত্র প্রেমিক বা কোনো একজন প্রাজ্ঞ পণ্ডিত এই মতের সাথে একমত হবেন না। তারা একে অজ্ঞতা প্রসূত প্রলাপ বলেই মনে করবেন। কারণ তারা জানেন যে, খৃস্টধর্ম, গণতন্ত্র বা আমেরিকান সভ্যতা কোনোটির এইরূপ হত্যাযজ্ঞ, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও লুটতরাজ শিক্ষা দেয় না বা সমর্থন করে না। মার্কিন প্রশাসন যা করছেন তা বর্তমান নেতৃবৃন্দের অন্যায়, এরজন্য তাদের ধর্ম, আদর্শ বা সভ্যতা দায়ী নয়।

১২১৪

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭