সাদাকার ফযীলতঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“যারা রাতে-দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে তাদের মাল-সম্পদ খরচ করে, তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট বদলা রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।” [সূরা বাকারাহ/২৭৪]
১-সাদাকা ধন-সম্পদ ও রিজিক বৃদ্ধির কারণ: আল্লাহ তায়ালা বলেন: (আল্লাহ তায়ালা সুদকে বিলুপ্ত করেন এবং সাদাকাকে বৃদ্ধি করেন।) [বাকারাহ/২৭৬] এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সাদাকা কোনও মালকে হ্রাস করে না”। [মুসলিম, নং ২৫৮৮]
২-সাদাকা রোগ থেকে আরোগ্যে পাওয়ার কারণ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সাদাকার মাধ্যমে রোগীদের চিকিৎসা করো”। [স্বাহীহ আল জামি, শাইখ আলবানী হাসান বলেছেন]
৩-সাদাকা সাদাকারীর সঠিক ঈমানের প্রমাণ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সাদাকা হচ্ছে প্রমাণ”। [মুসলিম, স্বহীহ আল জামি নং ৩৯৫৭]
৪-সাদাকা পুণ্য ও তাকওয়া অর্জনের উপায়: আল্লাহ তায়ালা বলেন: (তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করবে না) [আল্ ইমরান/৯২]
৫-সাদাকা আত্মাকে পাক ও পরিশুদ্ধ করে: আল্লাহ তায়ালা বলেন: (তাদের সম্পদ থেকে সাদাকাহ গ্রহণ করবে যাতে তা দিয়ে তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করতে পার।) [তাওবা/১০৩]
৬-সাদাকা কিয়ামত দিবসে সাদাকাকারীকে সূর্যের তাপ থেকে ছায়া করবে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “প্রত্যেক ব্যক্তি তার সাদাকার ছায়াতলে থাকবে যতক্ষণে লোকদের মাঝে ফয়সালা শেষ না হয়”। [আহমদ, শাইখ আলবানী স্বহীহ বলেছেন, স্বহীহ আল জামি নং ৪৫১০] অন্য হাদীসে সাত প্রকারের লোক আরশের ছায়াতলে স্থান পাবে বলে উল্লেখ হয়েছে, তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সে যে, “গোপনে এমন ভাবে সাদাকা করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে তার বাম হাত জানতে পারে না”। [বুখারী, (১৪২৩) মুসলিম(১০৩১)]
৭-সাদাকা করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বৈশিষ্ট: ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবচেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন এবং তাঁর দানশীলতা আরও বৃদ্ধি পেত, যখন রামাযান মাসে ফেরেশতা জিবরীল তাঁর সাথে সাক্ষাত করত”। [বুখারী, নং (৬) মুসলিম]
৮-সাদাকা হচ্ছে আত্মীয়তা বজায় রাখা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “কোনও এক মিসকিনকে সাদাকা করা একটি সাদাকা আর তা আত্মীয়কে করা একটি সাদাকা ও একটি আত্মীয়তা”। [আহমাদ, নাসাঈ, তিরমিযী, নং (৬৫৮) ইবনে কাসীর হাদীসটির সূত্রকে স্বহীহ বলেছেন]
৯-সাদাকা বিপদ থেকে নিরাপদে রাখে এবং আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ সওয়াবের কাজ বিপদাপদ থেকে নিরাপদে রাখে, গোপন ভাবে সাদাকা করা প্রতিপালকের ক্রোধ নিভিয়ে দেয় এবং আত্মীয়তা বজায় রাখা বয়স বৃদ্ধি করে”। [স্বহীহুত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব]
১০-সাদাকা অন্তরের নিষ্ঠুরতার চিকিৎসা: একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট তার অন্তরের কঠোরতার অভিযোগ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন: “ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকিনদের খাদ্য দান করো”। [আহমদ, নং (৭৫৬৬, হাসান স্বহীহ আল জামি নং ১৪১০]
১১-সাদাকা কিয়ামতের দিনে জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণ: (আর তারা আল্লাহর প্রতি তাদের ভালবাসার কারণে মিসকিন, ইয়াতীম ও কয়েদীকে খাবার খাওয়ায়। …. যার ফলে আল্লাহ তাদের সে দিনের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন আর তাদের দিবেন সজীবতা ও আনন্দ।) [সূরা দাহর/৯ ও ১১] হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাক যদিও অর্ধেক খেজুরও সাদাকা করে হয়”। [মুত্তাফাক আলাইহি]
১২-সাদাকা পাপ মোচন করে এবং তা গুনাহের কাফফারা স্বরূপ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “এবং সাদাকা পাপ মুছে দেয় যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়”। [তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী স্বহীহ বলেছেন, স্বহীহ আল জামি নং ২৯৫১]
১৩-সাদাকা আল্লাহর ভালবাসার কারণ: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আল্লাহর নিকট পছন্দনীয় সৎ কাজ হচ্ছে, মুসলিম ব্যক্তিকে খুশী করা কিংবা তার কষ্ট দূর করা কিংবা তার ক্ষুধা নিবারণ করা কিংবা তার ঋণ পরিশোধ করা”। [স্বহীহুত তারগীব ওয়াত্ তারহীব]
১৪-সাদাকাকারীর জন্য প্রত্যেক দিন ফেরেশতা দুআ করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “প্রতিদিন মানুষ যখন সকাল করে, তখন দুই জন ফেরেশতা অবতরণ করে। তাদের একজন বলে: হে আল্লাহ! তুমি (সৎ কাজে) ব্যয়কারীকে তার প্রতিদান দাও। আর দ্বিতীয় জন বলে: হে আল্লাহ! (আল্লাহ যা জরুরি করেছেন তা) ব্যয় না কারীর (সম্পদকে) ধ্বংস করে দাও”। [বুখারী, যাকাত অধ্যায়/১৩৭৪]
১৫-সাদাকার সওয়াব মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আদম সন্তান মারা গেলে তার সৎ আমল সমাপ্ত হয়ে যায় তিনটি ব্যতীত: ১-সাদাকায়ে জারিয়া ২-উপকারী ইলম ৩-সৎ সন্তান যে তার জন্য দুআ করে”। [মুসলিম, অসিয়ত অধ্যায়]
১৬-সাদাকা জান্নাতে প্রবেশের কারণ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “হে লোকেরা! আপসে সালাম বিনিময় কর, অন্যকে খাবার খাওয়াও, আত্মীয়তা বজায় রাখ এবং রাত্রে নামায আদায় কর যখন লোকেরা নিদ্রায় থাকে, তাহলে অভিবাদনের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে”। [হাদীসটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, নং (২৪৯০) এবং শাইখ আলবানী স্বহীহ বলেছেন]
পরিশেষে প্রিয়/প্রিয়া পাঠক/পাঠিকাদের নিকট আবেদন করব, স্বল্প হলেও নফল সাদাকা করুন এবং করার অভ্যাস করুন। কারণ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ (অর্ধেক খেজুর সাদাকা করে হলেও জাহান্নাম থেকে বেঁচে থাক)
মহান আল্লাহ আমাদেরকে যাকাত আদায়ের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে দান-সদকা করে তার প্রিয়ভাজন বান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করে নিন। আমীন।
ওয়া স্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মদ, তাসলীমান মাযীদান।
৪৭৩
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
সাদাকার ফযীলতঃ আল্লাহ তায়ালা বলেন: “যারা রাতে-দিনে গোপনে ও প্রকাশ্যে......