সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

আহলে বাইতের ফযীলত, তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : রবিবার ০৯/০৭/২০১৭

আহলে বাইত বলতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই পরিবার-পরিজন বুঝানো উদ্দেশ্য, যাদের উপর সদকা হারাম। এরা হলেন আলী রা. জাফর রা. আব্বাস রা. এর পরিবার ও সন্তান-সন্ততি এবং বনু হারেস বিন আব্দুল মোত্তালিব এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সকল পবিত্রা স্ত্রী গণ ও কন্যা বর্গ।
আল্লাহ তাআলা বলেন:

إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا 

‘হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং চান তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’ [১]

ইমাম ইবনে কাসীর রা. বলেন, কুরআন মাজীদ নিয়ে যে চিন্তা-গবেষণা করে, সে কখনোই এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে না যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী গণ উপরোক্ত আয়াতে শামিল রয়েছেন। কেননা বাক্যের পূর্বাপর ধারা নবীর স্ত্রীদের সাথে সম্পৃক্ত। এজন্যই উপরোক্ত আয়াতের পরই আল্লাহ তাআলা বলেন:

وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آَيَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ 

‘আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখবে।’ [২]

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা তোমাদের গৃহে কিতাব ও সুন্নাহের যা কিছু নাযিল করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, সে অনুযায়ী তোমরা আমল কর।

কাতাদাহ ও আরো অনেকে বলেন, আয়াতের অর্থ হল তোমরা সে নিয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা সকল মানুষের মধ্য থেকে শুধু তোমাদের জন্যই নির্ধারিত করা হয়েছে। তা হল তোমাদের ঘরেই ওহী নাযিল হয়ে থাকে। আয়েশা সিদ্দীকা বিনতে সিদ্দীক রা. তাদের মধ্যে প্রথম যিনি এ নিয়ামত লাভ করেছেন এবং এ ব্যাপক রহমত লাভে তিনি তাদের মধ্যে এক বিশেষ মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন। কেননা তিনি ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আর কোন স্ত্রীর বিছানায় ওহী নাযিল হয়নি, যেমন স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন।

কোন কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেন: আয়েশা রা. এর এ বিশেষ মর্যাদার কারণ হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ছাড়া আর কোন কুমারী নারী বিবাহ করেননি এবং তার বিছানায় রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া আর কোন পুরুষ শয়ন করেননি। অতএব তার এ বিশেষ গুণে অভিষিক্তা হওয়া এবং সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারিণী হওয়া যথোচিত হয়েছে। আর যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রী গণ আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত, তাই তাঁর আত্মীয়-স্বজনও আহলে বাইত নামে অভিহিত হওয়ার অধিক হকদার ও উপযুক্ত। [৩]

এজন্য আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আহলে বাইতকে মহ্ববত করে ও ভালোবেসে থাকে। আর তাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অসিয়তকে স্মরণ রাখে, যা তিনি ‘গাদীরে খা’ নামক স্থানে ব্যক্ত করেছিলেন:

أذَكِّرُكُمُ اللهَ فِيْ أهْلِ بَيْتِيْ
‘আমার আহলের ব্যাপারে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি’ [৪]

তাই আহলে সুন্নাত তাদেরকে ভাল বাসে ও সম্মান করে। কেননা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা ও সম্মান করারই অন্তর্ভুক্ত। এ শর্তসাপেে যে, তারা সুন্নাতের অনুসারী হবে এবং মিল্লাতের আদর্শের উপর স্থিতিশীল থাকবে, যেমনি ভাবে তাদের পূর্ববর্তী সালফে সালেহীন আব্বাস রা. ও তাঁর সন্তানগণ এবং আলী রা. ও তাঁর সন্তানগণ প্রমুখ সে আদর্শের উপর ছিলেন। পক্ষান্তরে যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করবে এবং দ্বীনের উপর স্থিতিশীল থাকবে না, তাদের সাথে বন্ধত্ব – যদি তারা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও থাকে – জায়েয হবে না।

অতএব আহলে বাইত সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের ভূমিকা ন্যায়পরায়ণতা ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তারা আহলে বাইতের দ্বীনদার ও সঠিক পথের উপর অবিচল ব্যক্তিদেরকে খুবই মহব্বত করে থাকে এবং আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হয়েও যারা সুন্নাতের বিরোধিতা করে এবং দ্বীনের আদর্শ হতে চ্যুত হয়ে যায়, তাদের থেকে দূরে সরে যায়। কেননা অবিচলভাবে আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণ অনুসারী না হওয়া পর্যন্ত আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকা তার কোন কাজেই আসবে না। আবু হোরায়রা রা. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যখন এ আয়াত নাযিল হয়:

وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ 

‘আর তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন কর’ [৫]

তখন তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন:

يَا مَعْشَرَ قُرَيْشٍ، أوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا، اشْتَرُوا أنْفُسَكُمْ لَا أغْنِيْ عَنْكُمْ شَيْئاً، يَا عَبَّاسَ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ لَا أغْنِيْ عَنْكَ مِنَ اللهِ شَيْئاً، يَا صَفِيَّةَ عَمَّةَ رَسُوْلِ اللهِ لَا أغْنِيْ عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئاً، يَا فَاطِمَةَ بِنْتِ مُحَمَّدٍ سَلِيْنِيْ مِنْ مَالِيْ مَا شِئْتِ لَا أغْنِيْ عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئاً.

‘ হে কুরাইশগণ! (অথবা অনুরূপ কোন শব্দে তিনি সম্বোধন করেছিলেন) নিজেদেরকে ক্রয় করে নাও। আল্লাহ তাআলার সামনে আমি তোমাদের কোন কাজেই আসব না। হে আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব! আমি আল্লাহর কাছে তোমার কোন উপকারে আসব না। হে রাসূলুল্লাহর ফুফু সাফিয়্যাহ! আমি আল্লাহর সামনে আপনার জন্য কিছুই করতে পারব না। হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! আমার সম্পত্তি হতে যা চাও চেয়ে নাও। তবে আল্লাহর কাছে আমি তোমার কোনই কাজেই আসব না’ [৬]

অন্য এক হাদীসে এসেছে:

مَنْ بَطَّأَ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُه، رواه مسلم.

‘আমল যাকে পেছনে ফেলে দেয়, বংশ তাকে এগিয়ে নিতে পারে না’ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত সেই সব রাফেযী-শিয়াদের পথ ও মত থেকে পুত: পবিত্র, যারা কোন কোন আহলে বাইতের ব্যাপারে খুব বাড়াবাড়ি করে থাকে এবং তার মাসূম (তথা সকল প্রকার গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত) বলে দাবি করে থাকে। [৭]

অনুরূপভাবে আহলে সুন্নাত সে সব নাসেবী লোকদের ভ্রান্ত পথ থেকেও মুক্ত, যারা দ্বীনের প্রকৃত অনুসারী আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে থাকে এবং তাদের প্রতি কটূক্তি আরোপ করে থাকে।

একই ভাবে তারা সে সব বেদআতী এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের ভ্রষ্টতা থেকেও পবিত্র, যারা আহলে বাইতকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তাদেরকে রব হিসাবে স্থির করে।

এ ক্ষেত্রে এবং এ ছাড়া আর সব ব্যাপারেও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ন্যায় সংগত নীতি ও সরল পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছে – যাতে কোন বাড়াবাড়ি ও ত্রুটি কোনটাই নেই এবং আহলে বাইতও অন্যান্যদের ব্যাপারেও অধিকার ক্ষুণ্ণ ও অতিরঞ্জন কোনটাই করা হয়নি। দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত আহলে বাইতের লোকজন তাদের নিজেদের সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করার প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন। এবং বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জনকারীদের থেকে নিজেরা মুক্ত থেকেছেন। আমিরুল মুমিনীন আলী রা. তার নিজের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি কারীদেরকে অগ্নিদগ্ধ করেছেন এবং ইবনে আব্বাস রা. তাদেরকে হত্যা করা সমর্থন করেছেন। অবশ্য অগ্নিদ্ধ করার বদলে তরবারী দ্বারা হত্যা করার প্রবক্তা ছিলেন তিনি। আলী রা. অতিরঞ্জনকারীদের নেতা আব্দুল্লা বিন সাবাকে হত্যা করার জন্য খুঁজে ছিলেন। কিন্তু সে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে লুক্কায়িত রাখে।

৭৯০

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭