সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

আবু নাজীহ (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : রবিবার ০৯/০৭/২০১৭

প্রখ্যাত ছাহাবী আবু নাজীহ আমর ইবনু আবাসাহ আস-সুলামী ইসলামের প্রাথমিক যুগেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে নিজেকে ধন্য করে ছিলেন। মাক্কী জীবনেই রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন গোপনে ইসলামের দাওয়াত দেন, সে সময় তিনি মক্কায় এসে রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে কিছু প্রশ্ন করে নিশ্চিত হন যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহ্‌র রাসূল, তখন তিনি ইসলাম কবুল করেন। রাসূলের নিকট থেকে দ্বীন সম্পর্কে শিক্ষা নিয়ে তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী নিজ এলাকায় চলে যান। অতঃপর রাসূল মদীনায় হিজরত করলে তিনিও মদীনায় রাসূলের খেদমতে হাযির হন। এ ঘটনা সম্পর্কেই নিম্নের হাদীছ।-

আবু নাজীহ আমর ইবনু আবাসাহ আস-সুলামী (রাঃ) বলেন, জাহেলী যুগ থেকেই আমি ধারণা করতাম যে, লোকেরা পথভ্রষ্টতার উপর রয়েছে এবং এরা কোন ধর্মেই নেই, আর ওরা প্রতিমা পূজা করছে। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে শুনলাম যে, তিনি মক্কায় অনেক আশ্চর্য খবর বলছেন। সুতরাং আমি আমার সওয়ারীর উপর বসে তাঁর কাছে এসে দেখলাম যে, তিনি আল্লাহ্‌র  রাসূল (ছাঃ)। তিনি গোপনে (ইসলাম প্রচার করছেন), আর তাঁর সম্প্রদায় (মুশরিকরা) তাঁর প্রতি দুর্ব্যবহার করছে। সুতরাং আমি বিচক্ষণতার সাথে কাজ করলাম।

আমি মক্কায় তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, আপনি কে? তিনি বললেন, ‘আমি নবী’। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেন, ‘আমাকে মহান আল্লাহ্‌ প্রেরণ করেছেন’। আমি বলাম, কি নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন? তিনি বললেন, ‘জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল­াহ্কে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে’। আমি বললাম, এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে? তিনি বললেন, ‘একজন স্বাধীন এবং একজন কৃতদাস’। তখন তাঁর সঙ্গে আবু বকর ও বিলাল (রাঃ) ছিলেন। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুগত। তিনি বললেন, ‘তুমি এখন এ কাজ কোন অবস্থাতেই করতে পারবে না। তুমি  কি আমার অবস্থা ও লোকেদের অবস্থা দেখতে পাও না? অতএব তুমি (এখন) বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো’। 

সুতরাং আমি আমার পরিবার-পরিজনের নিকট চলে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় চলে এলেন। আর আমি স্বপরিবারেই ছিলাম। অতঃপর আমি খবরাখবর নিতে আরম্ভ করলাম এবং যখন তিনি মদীনায় আগমন করলেন, তখন আমি (তাঁর ব্যাপারে) লোকেদেরকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। অবশেষে আমার পরিবারের কিছু লোক  মদীনায় এল। আমি বললাম, ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদীনায় এসেছেন? তারা বলল, লোকেরা তাঁর দিকে ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয়নি।

অতঃপর আমি মদীনায় এসে তাঁর খিদমতে হাযির হ’লাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র  রাসূল (ছাঃ)! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলে’। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র  রাসূল (ছাঃ)! আল্লাহ্‌ তা‘আলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা, তা আমাকে বলুন? আমাকে ছালাত সম্পর্কে বলুন? তিনি বললেন, ‘তুমি ফজরের ছালাত পড়। তারপর সূর্য এক বল­ম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কারণ তা শয়তানের দু’শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং সে সময় কাফেররা তাকে সিজদা করে। পুনরায় তুমি ছালাত আদায় কর। কেননা ছালাতে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া বল­মের সমান হয়ে যায়। অতঃপর ছালাত থেকে বিরত হও। কেননা তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়। অতঃপর যখন ছায়া বাড়তে আরম্ভ করে, তখন ছালাত আদায় কর। কেননা এ ছালাতে ফিরিশতা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আছরের ছালাত আদায় কর। অতঃপর সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকো। কেননা সূর্য শয়তানের দু’শিং-এর মধ্যে অস্ত যায় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং তখন কাফেররা তাকে সিজদা করে’। 

পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র  নবী (ছাঃ)! আপনি আমাকে ওযূ সম্পর্কে বলুন? তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিয়ে (হাত ধোয়ার পর) কুলি করবে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিস্কার করবে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহ্‌র  আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধৌত করে, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। তারপর সে যখন তার হাত দু’খানি কনুই পর্যন্ত ধোয়, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে ঝরে যায়। তারপর সে যখন তার পা দু’খানি গাঁট পর্যন্ত ধৌত করে, তখন তার পায়ের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করে, আল্লাহ্‌র  প্রশংসা ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে, যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ্‌ তা‘আলার জন্য খালি করে, তাহ’লে সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন  তার মা তাকে প্রসব করেছিল।

.

তারপর আমর ইবনে আবাসাহ (রাঃ) এ হাদীছটি রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী আবু উমামা (রাঃ)-এর নিকট বর্ণনা করলেন। আবু উমামাহ (রাঃ) তাঁকে বললেন, হে আমর ইবনে আবাসাহ! তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল! একবার ওযূ করলেই কি এই ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হবে? আমর বললেন, হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়) আল্লাহ্‌ তা‘আলা অথবা রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার কি প্রয়োজন আছে? যদি আমি এটি রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট থেকে একবার, দু’বার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহ’লে কখনই তা বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি তাঁর নিকট এর চেয়েও অধিকবার শুনেছি’

 (মুসলিম হা/৮৩২; নাসাঈ হা/১৪৭, ৫৭২, ৫৮৪; ইবনু মাজাহ হা/২৮৩, ১২৫১, ১৩৫৪; আহমাদ হা/১৬৫৬৬, ১৬৫৭১, ১৬৫৭৮, ১৬৫৮০, ১৮৯৪০)। 

আমর ইবনু আবাসাহ (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণ ও তাঁর দ্বীনি ইলম অর্জনের প্রতি আগ্রহ-স্পৃহা ছিল অতুলনীয়। আমাদেরকেও তাঁর মত দ্বীনি শিক্ষার্জনে আগ্রহী ও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাওফীক দান করুন- আমীন!

২৬১

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭