মুহাররম মাসের দশ তারিখ দিনটি হলো আশুরার দিন। দশ বুঝাতে আরবি ভাষায় ‘আশারা’ ব্যবহার করা হয়। আশারা থেকে আশুরা বা দশম দিবস। ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক ঘটনা প্রবাহ বিবেচনায় এ দিনটি আমাদের কাছে স্মরণীয় ও বরণীয়। এ দিনটি একদিকে যেমন নাজাত বা শুকরিয়ার দিবস। তেমনি অন্যদিকে কারবালার মরুপ্রান্তরে হযরত ইমাম হুসাইন রা. ও তাঁর সাথীদের শাহাদাতের ঘটনাও এ দিনে সংঘঠিত হওয়ায় তা আমাদের কাছে শোকাহত ঘটনার স্মারক। তাই এ দিনটি শোক দিবস হিসেবেও পরিচিত। কৃতজ্ঞতা ও শোক দিবসের মৌলিক তফাৎটি অনেকের কাছে সুস্পষ্ট না থাকায় তারা আশুরার মূল শিক্ষার বিকৃতি ঘটাচ্ছে। অনেকে মনে করে আশুরা মানে কারবালা দিবস। বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। তবে এ কথা সত্য যে, কারবালার ঘটনার দুঃখ বেদনা ও শিক্ষণীয় বিষয়গুলো ভুলে যাওয়ার মতো নয়। কিন্তু আমাদের সামগ্রিক ও সামষ্টিক চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে একটি মারাত্মক ভুল হবে যদি আমরা কারবালার আলোচনায় আত্মনিয়োগ করে এ দিনের অন্যান্য স্মরণীয় ও পালনীয় বিষয়গুলো থেকে দূরে সরে যাই। অতীতে আশুরা দিবসে যেসব স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছে সেগুলো থেকে কিছুতেই আমাদের চোখ বন্ধ করে রাখা সমীচীন হবে না। অনুরূপভাবে এ দিনে যেসব ফজিলত ও পালনীয় বিষয় রয়েছে সেগুলো থেকে কোনোভাবেই বিরত থাকা ঠিক হবে না।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, রমজানের পর আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ। আর ফরজ নামাযের পর রাতের নামাযই হলো সর্বোত্তম। [সহীহ মুসলিম- ২/৩৬৮]
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল সা. কে রমজান ও আশুরায় যেরূপ গুরুত্বের সাথে রোজা রাখতে দেখেছি, অন্য সময় তা দেখিনি। [সহীহ বুখারি- ১/২১৮] হযরত ইবনে আব্বাস রা. বর্ণিত অন্য এক হাদিসে এসেছে- নবী কারিম সা. মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার পর ইয়াহুদীদেরকে আশুরার দিনে রোজা রাখতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এ দিনে কিসের রোজা রাখ? জবাবে তারা বললো, এ দিন আল্লাহ তায়ালা হযরত মুসা আ. এবং তাঁর কওম বনি ইসরাইলকে ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি দেন, আর এ দিনেই ফেরাউন স্ব-দলবলে লোহিত সাগরে ডুবে মারা যায়। অতএব, আমরা এর শোকর আদায়ের লক্ষ্যে এবং উক্ত গৌরবময় দিনটির সম্মান জ্ঞাপনার্থে এ দিনটিতে রোজা রেখে থাকি। তাদের কথা শুনে হুজুর সা. বললেন, আল্লাহর নবী হযরত মুসা আ. এর অনুসরণের দাবিদার তোমাদের চেয়ে আমরা বহুগুনে বেশি। অতঃপর (হুজুর সা. নিজে আশুরার রোজা রাখেন এবং) তাঁর উম্মতগণকেও এ দিনে রোজা রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। [সহীহ বুখারি- ১/২৬৮] রাসুল সা.-এর এক সাহাবি থেকে আরেকটি বর্ণনায় এসেছে- রাসুল সা. ইরশাদ করেন, যদি কেউ মুহাররম মাসে রোজা রাখে, তাহলে প্রতিটি রোজার পরিবর্তে ত্রিশটি রোজার সওয়াব লাভ করবে। [তবরানি- ১১/৭২] অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুল সা. জনৈক সাহাবির প্রশ্নের উত্তরে বললেন, রমজানের পর যদি তুমি রোজা রাখতে চাও তবে মুহাররম মাসে রাখ। কারণ এটি আল্লাহর মাস। এ মাসে এমন একটি দিন আছে, যে দিনে আল্লাহ তায়ালা একটি জাতির তওবা কবুল করবেন। [জামে তিরমিজি- ১/১৫৭] উল্লেখ্য যে, এ হাদিসে রোজার পাশাপাশি তওবা ও ইস্তেগফারেরও ইঙ্গিত এসেছে।
২৩৯
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
মুহাররম মাসের দশ তারিখ দিনটি হলো আশুরার দিন। দশ বুঝাতে......