সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

তালাক সম্পর্কিত কিছু আলোচনা
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : শুক্রবার ০৪/০৮/২০১৭

১. তিন তালাক ছাড়া কি তালাক হয় না

যেমন, কেউ মনে করে যে, শুধু এক বা দুই তালাক দেওয়ার দ্বারা তো তালাকই হয় না। তালাকের জন্য একসাথে তিন তালাক দেওয়াকে তারা অপরিহার্য মনে করে।

মনে রাখবেন, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তালাক দেওয়ার সঠিক পদ্ধতি হল, শুধু এক তালাক দেওয়া। পরবর্তীতে আবারও প্রয়োজন হলে শুধু এক তালাকই দিবে। এরচেয়ে বেশি দিবে না। কিন্তু তিন তালাক দিয়ে ফেললে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক বহাল রাখার সকল পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

একই মজলিসে কিংবা একই শব্দে তিন তালাক দেওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু কেউ এমনটি করলে তালাক কার্যকর হবে এবং তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়ে যাবে।

২. তালাকের সাথে কি বায়েন শব্দ ব্যবহার করা জরুরি

অনেকে মনে করে, শুধু তালাক বললে তালাক হয় না; বরং তালাকের সাথে বায়েন শব্দও যোগ করা অত্যাবশ্যক।

এটিও ভুল ধারণা। শুধু তালাক শব্দ দ্বারাই তালাক হয়ে যায়। এর সাথে বায়েন শব্দ যোগ করার কোনো প্রয়োজন নেই। উপরন্তু এ শব্দের সংযোজন নাজায়েয। তবে কেউ যদি এক তালাক বায়েন বা দুই তালাক বায়েন দেয় তবে সে মৌখিকভাবে রুজু করার (পুনরায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার) পথ বন্ধ করে দিল। এখন শুধু একটি পথই খোলা আছে। আর তা হল, নতুনভাবে শরীয়তসম্মত পন্থায় বিবাহ দোহরানো। অথচ শুধু তালাক বললে এক তালাক বা দুই তালাক পর্যন্ত মৌখিক রুজুর পথ খোলা থাকে। এজন্য স্বামীর উচিত, যত উত্তেজিতই হোক না কেন, কোনো অবস্থাতেই যেন তিন তালাক না দেয়। এমনকি তা কখনো মুখেও না আনে। অথচ অনেকে তো তিন তালাক দেওয়ার পরও পৃথকভাবে বায়েন শব্দ যোগ করেন। যেন সব কটি তালাক দেওয়ার পরও তার মন ভরল না। না হলে তিন তালাক দেওয়ার পর আর কী বাকি থাকে যে, বায়েন শব্দ বলতে হবে?!

মনে রাখবেন, তিন তালাক দেওয়াই এক গুনাহ, এরপর বায়েন শব্দ যোগ করে সে আরো বেশি গুনাহগার হল।

৩. একসাথে তিন তালাক দিলে কি তালাক হয় না

অনেকে এই ভুল ধারণাও প্রচার করে রেখেছে যে, একসাথে তিন তালাক দেওয়া হলে তালাক হয় না কিংবা শুধু এক তালাক হয়।

এটিও একটি মারাত্মক ভুল। একসাথে তিন তালাক দেওয়া জায়েয না হলেও কেউ যদি এই নাজায়েয কাজ করে তাহলে তার স্ত্রীর উপর তিন তালাক ঠিকই পতিত হয়। এক্ষেত্রে তার মৌখিকভাবে রুজু করার অধিকার অবশিষ্ট থাকে না। এমনকি নতুন করে বিবাহ দোহরিয়ে নেওয়ার দ্বারাও তারা একে অপরের জন্য হালাল হতে পারে না। তাই সকল স্বামীরই কর্তব্য, প্রথম থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা। মুখ দিয়ে কখনো তিন তালাক কিংবা তালাক, তালাক, তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর আগেই দুই তালাক দিয়ে থাকলে এখন আর তৃতীয় তালাকের চিন্তাও না করা।

৪. গর্ভাবস্থায় তালাক দিলে কি তালাক পতিত হয় না

অনেকে এই মাসআলা বানিয়ে রেখেছে যে, গর্ভাবস্থায় স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হলে তা কার্যকর হয় না। এটিও সম্পূর্ণ অবাস্তব কথা। গর্ভাবস্থায় হোক বা অন্য যেকোনো অবস্থাই হোক তালাক দেওয়া হলে তা পতিত হয়ে যায়। এজন্য সঠিক মাসআলা শেখা সকলের দায়িত্ব। অজ্ঞতার ধোকায় থাকার কারণে হারাম কখনো হালাল হতে পারে না।

৫. তালাক পতিত হওয়ার জন্য কি সাক্ষীর উপস্থিতি জরুরি

অনেকের ধারণা, স্বামী তালাকের সময় কোনো সাক্ষী না রাখলে তালাক পতিত হয় না। আগেরটার মতো এটাও মানুষের মনগড়া মাসআলা। কোন মূর্খ এই কথা বলেছে জানা নেই। সাক্ষীর প্রয়োজন তো হয় বিবাহের সময়। তালাক পতিত হওয়ার জন্য এক বা একাধিক কোনো সাক্ষীরই প্রয়োজন নেই। স্বামী যদি রাতের অন্ধকারে একা একা বসে তালাক দেয় তাহলেও তালাক হয়ে যায়।

৬. রাগের অবস্থায় তালাক দিলে কি তালাক হয় না

তালাক তো দেওয়াই হয় রাগ হয়ে। কয়জন আছে, শান্তভাবে তালাক দেয়? আসলে তো এমনই হওয়া উচিত ছিল যে, যদি বাস্তবসম্মত ও অনিবার্য প্রয়োজনে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় তাহলে বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করে একে অন্যের কল্যাণকামী হয়ে বুঝে-শুনে, সঠিক মাসআলা জেনে নিয়ে মাসআলা অনুযায়ী তালাক প্রদানের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।

 কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মানুষ মাসআলা জানার চেষ্টাও করে না, আর না তাদের মধ্যে এই সুবুদ্ধি আছে যে, বড়দের সাথে পরামর্শ করবে, চিন্তা-ভাবনা করবে। নিজের ইচ্ছাবিরোধী কোনো কিছু পেলেই রাগের বশে তালাক দিয়ে ফেলে। আর তা এক বা দুইটি নয়; এক নিঃশ্বাসে তিন তালাক।

যখন রাগ প্রশমিত হয় তখন অনুতপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কথা বানাতে থাকে। বলে, আমি রাগের মাথায় বলে ফেলেছি, তালাক দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এসব লোকের জেনে রাখা উচিত যে, তালাক পতিত হওয়ার জন্য নিয়তের কোনো প্রয়োজন নেই। এটা কোনো ইবাদত নয় যে, এর জন্য নিয়ত করতে হবে। নিয়ত থাক বা না থাক সর্বাবস্থায় তালাক শব্দ বলে ফেললে বা কাগজে লিখে দিলেই তালাক হয়ে যায়। তেমনিভাবে রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়।

অবশ্য কেউ যদি প্রচন্ড রেগে যায় ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে না।

শেষকথা এই যে, দাম্পত্য জীবন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় ও বিশেষ একটি নেয়ামত। স্বামী-স্ত্রী সকলের কর্তব্য, এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং একে অপরের সকল অধিকার আদায় করা। স্ত্রীর জন্য উচিত নয়, কথায় কথায় স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া। আবার স্বামীর জন্যও জায়েয নয় আল্লাহ তাআলার দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করা।

বিয়ে, তালাক ও দাম্পত্য জীবনের সকল বিধান ও মাসআলা শিক্ষা করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য জরুরি। বিশেষ করে স্বামীর কর্তব্য হল, তালাকের মাসআলা ও এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত না হয়ে মুখে কখনো তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর যদি কোনো কারণে তালাক দেয় এবং এমনভাবে দেয় যে, এখন আর তাদের একসাথে থাকা শরীয়তে বৈধ নয় তাহলে তাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। বিভিন্ন টাল-বাহানা, অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে কিংবা ভুল কথার উপর ভিত্তি করে অথবা মূল ঘটনা গোপন রেখে একসাথে বাস না করা উচিত। বিয়ে শুধু একটি সময়ের বিষয় নয়, সারা জীবনের বিষয়।

বাস্তবেই যদি তালাক হয়ে যায় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এরপরও স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে বাস করে তাহলে তা হবে কবীরা গুনাহ এবং উভয়েই যেন ব্যভিচারের গুনাহয় লিপ্ত।

আল্লাহ তাআলা সকলকে হেফাযত করুন এবং তাকওয়া ও পবিত্রতা দান করুন। আমীন। 

৭৭৭৯

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭