জুমার খোৎবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেয়া যাবে কি ?
*** যে কোন মসজিদে মুসল্লীদের আধিক্যতা ও Majority 'র প্রতি বিবেচনা করে খোৎবা'র ভাষা নির্ধারণ করা মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও খতীব সাহেবের উপর অপরিহার্য । এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি আমলে না নেয়ার কারণে আমাদের আলেম সমাজএর মধ্যে কিছু কিছু আলেম / খতিব সাধারণ মুসলমানদেরকে নেহায়েত বড় একটি জ্ঞান লাভের ক্ষেত্র থেকে যুগ যুগ ধরে বণ্চিত করে আসছেন ।
*** মহান আল্লাহপাক বলেন ,
و ما أرسلنا من رسول إلاّ بلسان قومه ليبين لهم
" আমি কোন রসুল আ:কে তাঁর সম্প্রদায়ের ভাষাবহির্ভূত প্রেরণ করিনি । এ কারণে যে, যেনো তিনি তাঁদের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারেন ।" সূরা ইব্রাহিম ৩
*** এ আয়াত দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, নবী আ: ও তাঁর উম্মতের ভাষা যদি অভিন্ন না হয় , তা'হলে তাওহীদের বাণী প্রচারের কাজটি মোটেই সম্ভব নয় । বরং আমার তাফসীর হচ্ছে যে, মানুষের প্রতি তাওহীদের দাওয়াত অতি সহজ করার লক্ষ্যে আল্লাহপাক উভয়ের জন্য একই ভাষা নির্বাচন করেছেন ।
*** জুমার খোৎবার ন্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যদি খতীব ও শ্রোতাদের মধ্যে ভাষাগত বিভক্তির কারণে অজানা থেকে যায় , তা'হলে খোৎবা'র হক্ব কতটুকু আদায় করা হলো ???
*** মহানবী সা: আরবী ছিলেন । যদি কুরআন মজিদ আরবী ভাষায় না হতো তখন অবস্হা কি দাঁড়াতো ? মহান আল্লাহপাক বলেন
و لو جعلناه قرانا أعجميا لقالوا لو لا فصلت اياته أأعجمي و عربي ؟
" যদি আমি পবিত্র কুরআনকে অনারবী ভাষায় করতাম , তখন কাফেররা বলতো , এ বিভাজন কেন ? রসুল সা: হলেন আরবী আর কিতাব হলো অনারবী ???????
সূরা ফুস্সিলাত ৪৪
*** মহানবী সা: আরবী ছিলেন । সাহাবীগণ আরবী ছিলেন । আর তাই তিনি আরবী ভাষায় খোৎবা প্রদান করবেন , এটাইতো স্বাভাবিক । মুষ্টিমেয় সাহাবী রা: যদি অনারবী হয়ে থাকেন , সেটা তো ধর্তব্য নয় । কেননা খোৎবার ভাষাটি নির্ধারিত হতে হবে সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে । বরং মহানবী সা:'র খোৎবা থেকেও এ কথা সুস্পস্ট হলো যে, Majority সাহাবী রা: আরবী ছিলেন বিধায় , তিনি আরবী ভাষায় খোৎবা দিয়েছেন ।
*** নাকি অধিকাংশ সাহাবী রা: অনারবী ছিলেন ???????? !!!!!!!!!!!!
*** সমস্ত ভাষা আল্লাহর দান । বরং ইহা তাঁর নিদর্শন সমূহের অন্যতম । তিনি বলেন ,
و من ايته خلق السموت و الارض و اختلاف السنتكم و الوانكم ان في ذالك لآيات للعالمين
" এবং তাঁর নিদর্শন সমূহের অন্যতম আকাশ ও ভূখন্ড সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণগত পার্থক্য । এখানে শিক্ষিত সমাজের জন্য শিক্ষনীয় বিষয় নিহিত ।"
সূরা আর রোম ২২
*** ইসলাম ধর্মে ইজতিহাদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । যদি ইজতিহাদকে অস্বীকার করা হয় , তা'হলে মাইক থেকে আরম্ভ করে Electricity সহ কোন কিছুই হালাল করা যাবেনা । হানাফী মাযহাবের ফতওয়ায়ে শামীতে লেখা আছে
من لم يعرف زمانه فهو جاهل
" যে ব্যক্তি তাঁর সময়ের সংগে মানিয়ে চলতে পারেনা , সে একজন মূর্খ ।"
মহানবী সা: বলেছেন
من سن سنة فله اجر
" যে ব্যক্তি একটি কল্যাণকর পদ্বতীর সূচনা করলো , তাঁর জন্য প্রতিদান রয়েছে ।"
*** খোৎবা ও নামাজ কি সমপর্যায়ের ? নবী করিম সা: সহ খোলাফায়ে রাশেদীন রা: খোৎবা চলাকালিন মুসল্লীদের প্রশ্নের জবাব দিতেন । এক সাহাবী রা:তাহিয়্যাতুল মসজিদ না পড়ে বসে গেলে রসুল সা: খোৎবা চলাকালিন অবস্হায় তাঁকে সুন্নত পড়ার নির্দেশ দেন । পক্ষান্তরে নামাজ চলাকালিন সময়ে কথা বলা যাবে কি ? কথা বলা হলে নামাজ কি বাতিল হবেনা ??? তা'হলে উভয় কাজটি সমপর্যায়ের কি ভাবে হলো ?
*** যদি খোৎবার মান নামাজের সমান হয় , তা'হলে লক্ষ লক্ষ বাংগালী আরবী খোৎবা'র কিছুই না বুঝে প্রতি শুক্রবার নামাজ শেষে ঘরে ফিরে যান , তাঁদের বুঝতে না দেয়ার দায় - দায়িত্ব কওমী আলেমগণ নেবেন কি ???
এ দায়িত্ব নিতে হবে কওমী হুজুরদের । আমরা তাঁদের ছাড়বোনা ।
قال زيد بن ثابت رضي الله عنه قال لي رسول الله صلي الله عليه و سلم " اتحسن السريانية ؟ قلت لا ، قال فتعلمها ، اتعلمتها في سبعة عشر يوما "
سير إعلام النبلاء ج٢ زيد بن ثابت
" সাইয়িদানা যায়েদ বিন সাবেত রা: বলেন " মহানবী সা: আমাকে বললেন , তুমি হিব্রু ভাষা জানো ? বললাম না । বললেন ইহা অধ্যয়ন করো । আমি ইহা মাত্র সতের দিনে সম্পূর্ণ শিখে ফেলেছিলাম । "
আমি সামান্য জ্ঞানে আর কিবা আলোচনা করতে পারি । মানুষ কে বিভ্রান্তিতে ফেলার কোন অভিপ্রায় আমার নাই । আমি শুধু চেষ্টা করলাম কেন আরবী ভাষা ছাড়াও খুতবা দেওয়া যাবে । তাতে খুতবার উদ্দেশ্য হাসিল হবে ।
৬৭৬
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
জুমার খোৎবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেয়া যাবে কি ?......