ইসলামী সংস্কৃতি ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতি
ইসলাম কেবলই একটি ধর্ম নয়, বরং দ্বীন এবং পরিপূর্ণ জীবন ব্যাবস্থা। দোলনা থেকে
কবর পর্যন্ত একজন মানুষের জীবানাচরণ, রীতি নীতি কেমন হওয় উচিত, স্বল্প পরিসরের
এ জীবনকে কিভাবে পরিচালিত করলে একজন মানুষ ইহকালে সুখময় জিন্দেগী এবং পর
কালে মুক্তি লাভ করতে পারে তার একটি নিঁখুত ভারসাম্য পূর্ণ বিধান দিয়েছে ইসলাম।
ইসলামে রয়েছে একটি স্বচ্ছ সুন্দর ও সুস্থ সংস্কৃতি। যার অন্যতম লক্ষ হচ্ছে মানুষের
জীবনকে সুন্দর করা, সুখ শান্তিময় ও কল্যানময়
করা। বর্তমানে এক শ্রেনীর নাম সর্বস্ব
মুসলমান ইসলামের এই সুস্থ ও সুন্দর সংস্কৃতিকে বিসর্জন দিয়ে পশ্চাত্যের অশ্লীল,অশালীন
ও নগ্ন অসংস্কৃতিক পিছনে পড়েছে যা নিতান্তই মূর্খতাপ্রসূত বিবেক বিবর্জিত।কেননা
ইস
লামী সংস্কৃতি পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অপেক্ষা অনেক সমৃদ্ধ, উন্নত, শালীন,মার্জিত, কল্যানকর
ও মঙ্গলময়। এ বিষয়টি বাস্তবভাবে বুঝার জন্য পাশ্চাত্য সংস্কৃতি ও ইসলামী সংস্কৃতির
একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক আলোচনা নিচে পেশ করা হল।
ক. পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাঃ ইসলামে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা
ও পবিত্রতার প্রতি অনেক বেশী গুরু
ত্বারোপ করা হয়েছে। প্রতিদিন অন্তত পাঁচ বেলা প্রতিটি মুসলমানকে নামাযের জন্য পবিত্রতা
অর্জন করতে হয়। কিন্তু পাশ্চাত্য সমাজে এমন কোন বিধান নেই। তেমনি ভাবে স্বামী ও
স্ত্রীর যৌন মিলনের পর গোসল করা ইসলামে ফরয, কিন্তু পাশ্চাত্য সমাজে যৌনকর্মের
পর গোসল করার কোন ধারনাই নাই। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা অর্জনের উদ্দেশ্যে
নিয়মিত উযু ও গোসল করা ইসলামীর সংস্কৃতির অংশ। পক্ষান্তরে ইউরোপের সংস্কৃতিবান
জাতি হিসেবে পরিচিত ফরাসিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন
“চতুর্দশ লুই”। তিনি সর্বসাকুল্যে তিনবার গোসল করেছিলেন । দুবারের গোসলে তার
কোন হাতই ছিল না। জন্ম ও মৃত্যুর পর জর্ডান নদীর পানি দিয়ে তাকে গোসল দেয়া হয়।
আর তার জীবনের তৃতীয় গোসল ছিল প্রথম বিবাহ করার সময়। এ থেকে সহজে অনুমান
করা যায়, পাশ্চাত্য সমাজ শারীরিক
ভাবে কতটা অপরিচ্ছন্ন।
খ. দাঁত ও মুখ পরিস্কার করণঃ নিয়মিত মুখ পরিস্কার
করার জন্য ইসলামে মিসওয়াক ব্যব
হার ও কুলি করার বিধান রয়েছে। কেবল ঘুম থেকে উঠার পরই নয়, কমপক্ষে দিনে পাঁচ
বার নামাযের পূর্বে মিসওয়া করা সুন্নাত। যা দাত ও মুখকে পরিস্কার রাখে,
এবং মুখের
দুর্গন্ধকে দূর করে। দাতকে করে মজবুত ও উজ্জল। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্য সমাজে দেখা
যায়
যে, সকাল বেলায় বহু নারী পুরুষ
নিয়মিত দাঁত মাজে না, খিলাল করে না। শুধু
কেবল
জার্ম কিলার লিকুইড বা জীবানু নাশক তরল পদার্থ দিয়ে কুলি করে নেয়। এতে মুখের
দূর্গন্ধ তো দূর হয়Ñই না, বরং এতে দাতেরও ক্ষতি হয়।
গ. পোশাক পরিচ্ছদঃ মুসলিম প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত
এবং মহিলার ক্ষেত্রে
পর পুরুষের সামনে সমস্ত শরীর ও নীচে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত পোশাকে ঢেকে রাখা
ফরজ ও অবশ্য কর্তব্য। কিন্তু পাশ্চাত্য সমাজে দেখা যায় সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা।
পুরুষরা
পোশাকে প্রায় পুরো শরীর ঢেকে রাখে, আর মহিলারা আন্ডার ওয়্যারের উপর স্কার্ট পড়ে
যা অনেক সময় হাফ প্যান্ট থেকেও খাটো হয়ে থাকে। তা পরে কারো সামনে বসলে
উরুর অংশ সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাদের এহেন কুরুচিপূর্ণ পোশাক দেখলে যুবকদের তো
বটেই বৃদ্ধদেরও যৌনউম্মাদনার সৃষ্টি হয়। ফলে যুব সমাজ ধর্ষন, ব্যাভিচার, এসিড নিক্ষেপ,
নারী অপহরণ, প্রভৃতি অপরাধে জরিয়ে
পড়ে।
ঘ. বয়োবৃদ্ধ পিতা মাতা ও শশুর শাশুরীর প্রতি আচরণঃ ইসলাম মাতা পিতার
আদেশ
মান্য করা ও তাদের প্রতি সদ্বব্যবহার করাকে অপরিহার্য করেছে। বিশেষত তারা যখন
বৃদ্ধ বয়সে উপনিত হয়, তখন তাদের সামনে মন্দ
ব্যবহার এমনকি বিরক্তি ভরে ‘উফ’
শব্দটি উচ্চারন না করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্য সমাজে সবচেয়ে
হতভাগ্য ও অবহেলিত মানুষ হলো বয়োবৃদ্ধ পিতামাতা ও শশুর শাশুরী। সেখানে বয়স্ক
ছেলে মেয়েরা পিতা মাতার সংসারে থাকে না, অথবা পিতা মাতাকে ছেলে মেয়েদের
সংসারে রাখা হয় না। তারা পৃথক জীবন যাপন করে। চলন শক্তি রহিত না হওয়া পর্যন্ত
তারা হাট বাজার করে। জীবন শক্তি নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজেদের রান্না নিজেরাই
করে। আর রান্না বা চলাফেরার শক্তি যখন না থাকে তখন রান্নার প্রয়োজন হয় না,
এমন
জিনিস খেয়ে বেচে থাকে। অনেক সময় একলা ঘরের মধ্যে মরে পরে থাকে। দূর্গন্ধ বের
হলে প্রতিবেশী ফ্লাটের লোকেরা দরজা ভেঙে মৃতদেহ বের করে। আর যারা তাদের বয়ো
বৃদ্ধ মাতা পিতাকে আরেকটু ভালো রাখতে চায়, তারা তাদেরকে বৃদ্ধাশ্রমে/বৃদ্ধনিবাসে
পাঠায়। বৃদ্ধ পিতা মাতার প্রতি এমন অমানবিক নিষ্ঠুরতাই চলে পাশ্চাত্য সমাজে। তেমনি
ভাবে আমেরিকান মূল্যোবোধে সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বর্জনীয় বস্তু হলো শাশুরী। যাকে
প্রথম সুযোগেই দূরে ফেলে দিতে হবে। তা না হলে তিনি পারিবারিক পরিবেশ দূষনীয়
করবেন। তাই তারা ময়লা আবর্জনাকে তুলনা করে থাকে শাশুরীর সাথে। এবং নিত্যকার
ময়লা দুর করার সময় বলে থাকে শাশুরীকে ফেলে দিয়েছি। কি অদ্ভুত এক সংস্কৃতি ?
ঙ. শিশুদের প্রতি আচরণঃ ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত
মিলন অবৈধ, তাই বিবাহ বহির্ভূত
সন্তানের জন্মের প্রশ্ন এখানে নেই এবং বিবাহিত দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদের হার খুবই
কম
বিধায় শিশুরা মাতা পিতার যৌথ ভালবাসায় বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়। অধিকন্তু মহিলারা
সন্তানদেরকে অনেক বেশী সময় দিতে পারেন। কিন্তু পাশ্চাত্য সমাজে বিবাহ বহির্ভূত
মিলন
ও সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ না থাকায় এবং বিবাহিত দম্পতির মধ্যে বিচ্ছেদের
হার
খুব বেশী হওয়ায় মাতা পিতার ভালোবাসা খুব সন্তানের ভাগ্যেই জোটে। তাছাড়া পাশ্চাত্য
বাসীরা নিজ শিশুদেরকে কোলে নেয়ার চেয়ে পোষা কুকুরকে কোলে নিতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
এভাবে শিশুরা অনাদারে অবহেলায় বেড়ে ওঠে। আবার পিতা মাতা বাইরে বেড়াতে যাওয়ার
সময় সাথে নেয় ছোট শিশু এবং পোষা কুকুর। কুকুরের গলার বেল্টের সঙ্গে লাগানো চেইন
ধরে মা হেটে চলেছেন তো বাবা হাঁটেন শিশুর কোমরে বেল্টের সঙ্গে লাগানো চেইন ধরে।
যেন মানব শিশু আর কুকুর সমস্তরের ঝীব। মানবতার প্রতি এ কেমন লাঞ্ছনা? শুধু তাই
নয় ছোট অবুঝ শিশুর সামনে খেলনা আর খাবার রেখে একটি লম্বা বেল্ট বা চেইন দিয়ে
ঘরে বেধে মা শিশুর সামনে দিয়ে বয় ফ্রেন্ডের হাত ধরে ক্লাবে নাচতে চলে যান অথবা
অন্য
কোন ধান্দায় বেরিয়ে যান। বাবা মা একসঙ্গে থাকলে দু জনই বাইরে চলে যান। এদিকে কিছু
ক্ষন খেলাধুলা করে অনেকক্ষন কেঁদে শিশুটি পেন্টিতে পেশাবÑপায়খানা করে এক সময় ঘুমিয়ে
পড়ে। যে শিশুর প্রতি বাবা মা এমন নিষ্ঠুর আচরণকরতে পারেন, সে শিশুই বড় হয়ে বৃদ্ধ মা
বাবাকে নিজের কাছে রেখে সেবা যতœ করার পরিবর্তে দূরে বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রাখে যেন তাদের
সেই বাল্যকালেরই প্রতিশোধ নেয়।
চ. ছেলে মেয়ের ভরন পোষনঃ সাধারনত মুসলিম পরিবারে
ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা শেষ
করে কোন পেশা বা কাজে নিয়োজিত না হওয়া পর্যন্ত পিতা মাতা ভরন পোষন দিয়ে থাকেন।
আর মৃত্যুকালে অধিকাংশ সম্পদই উত্তরাধিকার সূত্রে সন্তানÑসন্ততির জন্য রেখে যান। কিন্তু
পাশ্চাত্য সমাজে সন্তান বড় হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদেরকেই নিজেদের পড়াশোনার খরচ
উপার্জন করতে হয়। পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মেয়েরা তাদের শিক্ষাব্যয়ের
প্রায় অনেক
টুকুই খন্ডকালীন যৌনকর্মী হিসেবে অর্জন করে থাকে। ছাত্রীদের বিপুল যৌন আয় লক্ষ
করে
ইদানিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও এ পেশায় প্রতিযোগিতামূলক ভাবে এগিয়ে এসেছে।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের চাহিদা ছাত্রীদের
চেয়েও বেশী। অপরদিকে পাশ্চাত্যের
৯০ ভাগ লোকই মৃত্যুর পূর্বে নিজ সম্পদের ৮০Ñ৯০ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল,
ইত্যাদির জন্য উৎসর্গ করে যান। তারপর কদাচিৎ সামান্য অংশই পরবর্তী বংশধরদের জন্য
রেখে যান।
বিয়ে ও যৌন চর্চাঃ একমাত্র বিবাহই ইসলামে
নারী পুরুষের যৌন সম্ভোগ ও সন্তান লাভের
বৈধ মাধ্যম। ইসলামে বিবাহ বহির্ভূত সকল প্রকার যৌনতা যেমনÑ লিভ টুগেদার, সমকামিতা,
পুশু মৈথুন ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও মারাতœক মহাপাপ। শুধু তাই নয়, বিবাহ বহির্ভূত অবৈধ
যৌনতা রোধের পদক্ষেপ হিসেবে ইসলাম বেগানা নারীÑপুরুষের মাঝে পর্দার বিধানকে ফরজ
ও আবশ্যকীয় করেছেন। পক্ষান্তরে দেখা যায় যে, যৌনতার আবর্তেই পাশ্চাত্য সমাজ ঘুরপাক
খাচ্ছে। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর বহু খৃষ্টান দেশে যৌনরাজ্যের
যে ভীতিপ্রদ চিত্র
ভেসে উঠেছে, তা যে কোন শান্তি
প্রিয় মানুষকে সন্দেহাতীতভাবে ভাবিয়ে তোলে। পুরুষ
সমকামিতা নারী সমকামিতা অবিবাহিত পুরুষ ও অবিবাহিতা মেয়ের যৌন সম্পর্ক বিবাহিত
পুরুষ ও বিবাহিতা মেয়ের
পরকিয়া, অবিবাহিত পুরুষ ও
মহিলার একত্রে বসবাস প্রভৃতি
আজ মার্কিন মুল্লুক, যুক্তরাজ্য,
কানাডাসহ বহুদেশে অপরাধ বলে
বিবেচিত নয়। এছাড়া পশু
মৈথুন মত জঘন্য যৌনতার চর্চাও
আজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে অবারিত। এভাবে করে পিতৃ পরিচয়হীন অবৈধ জারয সন্তানে
ভরে উঠেছে পাশ্চাত্য দেশগুলো । সেখানে বিবাহ ও পরিবার প্রথা দিন দিন লোপ পাচ্ছে।
১৯৭১ সালের হিসেব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বিবাহ বিচ্ছেদের হার শতকরা ৬৩ ভাগ। বর্তমান
অবস্থা
এ থেকে সহজে অনুমান করা যায়। পাশ্চাত্যের মেয়েরা দেহদান করে ব্যয়ের একাংশ সংগ্রহ
করে থাকে। একদিকে স্ত্রীরা দেহদান করে সংসারের আয় বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে স্বামীরা অবৈধ
যৌনাচার করে প্রচুর অর্থ নষ্ট করে। বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতা আর কাকে বলে। উপরিউক্ত
তুলনা
মূলক আলোচনা থেকে সুস্পষ্টরুপে প্রতীয়মান হয় যে, পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে ইসলামী সংস্কৃতি
সবদিক দিয়ে অতুলনীয় উন্নত, শালীন, মার্জিত, মঙ্গরজনক, ও কল্যানময়। এ ছাড় আহার, নিদ্রা,
শৃঙ্খলা, পারস্পারিক সম্পর্ক,
বিবেচনাবোধ, উৎসব,অনুষ্ঠান, প্রভৃতি মানব জীবনের
প্রয়েজনীয় সকল
সাংস্কৃতিক উপাদান ও উপকরণের ক্ষেত্রে ইসলামে রয়েছে স্বচ্ছ, সুন্দর ও ভারসাম্যপূর্ণ বিধান।
যা পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে অনুপস্থিত। তাই দ্বিধাহীন চিত্তে বলাযায়, অনাবিল সুখ, শান্তি কল্যানময়
জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান ও সংস্কৃতির কোন বিকল্প
পৃথিবীর বুকে নেই।
১৮৪০
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
ইসলামী সংস্কৃতি ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতি ইসলাম কেবলই একটি ধর্ম নয়,......
ইমাম বাতায়নের সকলকে মোবারকবাদ ...
রজব মাসের ফজিলত ও আমলআল্লাহ কর্তৃক মনোনীত চারটি মাস, বিশেষ......
২০১৯-এনকোভি; যা নভেল করোনা ভাইরাস নামে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমের......