সংবাদ :
জাতীয় : জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত- বাংলাদেশের আকাশে আজ পবিত্র জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা গেছে, ১০ জুলাই রবিবার সারাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে ইসলামিক বিশ্ব : আরাফাতে খুতবা দিবেন শায়খ ড. মুহাম্মাদ আবদুল করীম , হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার হবে বাংলাসহ ১৪ ভাষায় আন্তর্জাতিক : আন্তর্জাতিক কুরআন প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অর্জনকারী সালেহ আহমদ তাকরিমকে সংবর্ধনা প্রদান করল ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন

  • টেক্সট সাইজ
  • A
  • A
  • A
  • |
  • রং
  • C
  • A
  • A
  • A

পর্দা : সতীত্ব রক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায়
প্রিন্ট
প্রকাশঃ : বৃহস্পতিবার ২১/০১/২০২১

 یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ قُلْ لِّاَزْوَاجِكَ وَ بَنٰتِكَ وَ نِسَآءِ الْمُؤْمِنِیْنَ یُدْنِیْنَ عَلَیْهِنَّ مِنْ جَلَابِیْبِهِنَّ ؕ ذٰلِكَ اَدْنٰۤی اَنْ یُّعْرَفْنَ فَلَا یُؤْذَیْنَ ؕ وَ كَانَ اللّٰهُ غَفُوْرًا رَّحِیْمًا

সম্মানিত শ্রোতাবৃন্দ! ইনশাআল্লাহ আজ আপনাদের খেদমতে এ আয়াতের আলোকে পর্দার বিষয়ে সামান্য আলোচনা করব। যাতে পর্দার জরুরি মাসআলাগুলো নারীপুরুষ সকলেরই জানা হয়ে যায়।

নামায-রোযার মত পর্দাও ফরয

নারীদেরকে পর্দার আদেশ আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমের মাধ্যমে দিয়েছেন। আমি এখন যে আয়াতটি তিলাওয়াত করলাম তার মধ্যেও পর্দার আদেশ রয়েছে। এছাড়া আরো কয়েকটি আয়াতে পর্দার আদেশ পরিষ্কারভাবে আছে। আর শরীয়তের মূলনীতি হলআল্লাহ তাআলা যখন কোনো কাজের আদেশ দিয়ে দেনসেই কাজ ফরয হয়ে যায়। নামাযের আদেশ আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে দিয়েছেন তাই মুসলিম নর-নারীর উপর নামায পড়া ফরয। রমযান শরীফের রোযার হুকুম আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে দিয়েছেন। তাই রমযানের রোযা নারী-পুরুষ সকলের উপর ফরয। এমনিভাবে যাকাত ও হজ্বের হুকুমও কুরআনে কারীমে এসেছে। এ কারণে এ চারটি বিধানই ফারায়েযে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত। তো আল্লাহ তাআলা যেহেতু পর্দার আদেশ করেছেন তাই পর্দা করাও ফরয।

পর্দা না করার উপর কঠিন হুঁশিয়ারি

নামায না পড়ারমযানের রোযা না রাখাযাকাত ফরয হওয়া সত্তে¡ও আদায় না করাহজ্ব ফরয হওয়া সত্তে¡ও আদায় না করা যেমন অনেক বড় গুনাহতেমনি পর্দা লঙ্ঘন করাও অনেক বড় গুনাহ। এ কারণেই পর্দা না করার উপর হাদীস শরীফে ভয়াবহ শাস্তির হুঁশিয়ারি এসেছে।

পর্দা করতে পারলে শোকরিয়া অন্যথায় ইস্তেগফার

সুতরাং নামায-রোযার মত শরয়ী পর্দাও একজন মুসলিম নারীর জন্য অপরিহার্য। যারা শরয়ী পর্দা করছেন তারা আল্লাহ তাআলার শোকরিয়া আদায় করবেন। কারণতারা আল্লাহর একটি হুকুম মানার তাওফীক লাভ করেছেন। আর যে সকল নারী শরয়ী পর্দা করে না তাদের কর্তব্যশরয়ী পর্দায় এসে যাওয়া এবং একে অবশ্য-কর্তব্য মনে করা। এক্ষেত্রে যে ত্রুটি হচ্ছেএকে ত্রুটি মনে করা এবং নিজেকে গুনাহগার মনে করা। আর আল্লাহ তাআলার কাছে দুআ করাহে আল্লাহ! আমি আমার ভুল স্বীকার করছি এবং আপনার এ বিধান যথার্থ ও অবশ্য-পালনীয় বলে বিশ্বাস করছি। আপনি আমাকে সৎসাহস দান করুনযাতে আমি এই বিধান মেনে চলতে পারি।

গুনাহগারের মাঝে পার্থক্য

দেখুনসব গুনাহগার এক প্রকারের নয়। এক প্রকারের লোক গুনাহ করে কিন্তু গুনাহকে গুনাহ মনে করেনিজের ভুল স্বীকার করে এবং আল্লাহ তাআলার দরবারে মাফ চেয়ে বলেআল্লাহ! আমাকে এই গুনাহ থেকে বাঁচার হিম্মত ও তাওফীক দান করুন। আরেক প্রকারের লোক যে গুনাহ করে কিন্তু গুনাহকে গুনাহ মনে করে নাবরং বলে যেএটা শরীয়তের বিধান নয়। এটা তো হুযুরদের বিধানহুযুররা বানিয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি। এই দুই লোকের মাঝে আসমান-যমীনের ব্যবধান। দ্বিতীয় ব্যক্তি শরীয়তের বিধান মানতে ও তার উপর আমল করতে অস্বীকার করছে এবং এ বিধানকে মনগড়া বলছে। এ লোকের তো ঈমানই যাওয়ার পথে। আর প্রথম ব্যক্তি যে গুনাহ স্বীকারকারী অপরাধী তার তো কমপক্ষে ঈমান ঠিক আছে। আর যেহেতু সে গুনাহের কথা স্বীকার করছে তো ইনশাআল্লাহ একদিন তার গুনাহ থেকে সাচ্চা তওবা করারও তাওফীক হয়ে যাবে।

এটা ভয়াবহ কথা

পর্দার বিষয়টিও এরকম। কিছু লোক তো এমন যারা কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফ মানে না। অথবা বিধান তো মানে কিন্তু স্পষ্টভাবে বলে দেয় যেআজকের যুগে এটার উপর আমল করা অসম্ভব। এরপর বিভিন্ন ধরনের অজুহাত খাড়া করে। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ প্রবণতা। এ থেকে সকল মুসলিম নারী- পুরুষের বেঁচে থাকা চাই।

পর্দাকে মেনে নিন এবং তাওবা করুন

হাঁযদি নিজের দুর্বলতা কিংবা পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে কোনো নারী শরয়ী পর্দা মেনে চলতে না পারে এবং তার জন্য একেবারে পুরোপুরি শরয়ী পর্দার উপর আমল করা কঠিন হয়ে যায়তখন তার কর্তব্যএ বিধানকে মনে প্রাণে মেনে নেওয়া এবং স্বীকার করা যেহে আল্লাহ! নিঃসন্দেহে এটা আপনার আদেশ। আর আপনার আদেশ আমি শিরোধার্য করছি। কিন্তু আমি অপরাধীগুনাহগার। হে আল্লাহএ মুহূর্তে এ বিধানের উপর আমল করা আমার জন্য কঠিন হচ্ছেকিন্তু আমি অঙ্গীকার করছিআমি এ বিধান মেনে চলব এবং মেনে চলার জন্য পুরোপুরি চেষ্টা করব। হে আল্লাহ! আমাকে সাহায্য করুন! আমার মনে সাহস দিনআমার ঈমানকে শক্তিশালী করে দিনযাতে আমি এ হুকুম পুরোপুরি মানতে পারি। অতপর যতদিন এ গুনাহ পুরোপুরি ছাড়তে পারছে না ততদিন বারবার তাওবা করতে থাকবে এবং ছাড়ার চেষ্টায় থাকবে। আর প্রতিজ্ঞা করতে থাকবে যেইনশাআল্লাহআমি আমার পরিবেশকে পরিবর্তন করব এবং  এ বিধানের উপর পুরোপুরি আমল করব।

ঘরের গাইরে মাহরামের সাথে পর্দা করার নিয়ম

কুরআন-হাদীসের আলোকে মুসলিম নারীদের জন্য মূল বিধান হল নিজের ঘরেই অবস্থান করা। তার ঘরে থাকাটাই পর্দার একটি প্রকার। তাই যথাসম্ভব মুসলিম নারীরা ঘরে থাকবেন এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন না।

এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যেঘরে যেসকল গাইরে মাহরাম (মাহরাম নয় এমন) পুরুষ থাকে তাদের সাথেও পর্দা করতে হবে। যেমন দেবরভাসুর ইত্যাদি। এমনিভাবে যে সকল গাইরে মাহরাম পুরুষ ঘরে আসা যাওয়া করে যেমন স্বামীর চাচাজ্যাঠামামাতাদের সাথেও পর্দা করতে হবে। এই আত্মীয়দের সাথে পর্দা করার পদ্ধতি হলনিজ কামরা থেকে বের হওয়ার সময় যদি মনে হয় কামরার বাইরে গাইরে মাহরাম কেউ আছে তখন কারো মাধ্যমে বা কোনো সংকেত ব্যবহার করে তাদেরকে সরতে অনুরোধ করবে। তা যদি সম্ভব না হয় আর তাৎক্ষণিক বের হওয়া জরুরি হয় তাহলে বড় ওড়না বা চাদর দিয়ে মাথার চুলঘাড়উভয় হাতের বাহু আবৃত করে নিবে। চেহারার উপরও নেকাব ফেলে নিবে। এভাবে জরুরতের সময় নিজ কামরা থেকে বের হওয়া যাবে।

বহিরাগত আত্মীয়দের সাথে পর্দার নিয়ম

কিছু গাইরে মাহরাম এমন আছেযারা ঘরের লোক না হলেও আত্মীয়তার কারণে ঘরে আসা যাওয়া করে। যেমন স্বামী বা স্ত্রীর চাচাতো ভাইজ্যাঠাতো ভাইফুফাতো ভাইমামাতো ভাইখালাতো ভাই ইত্যাদি। এদেরকে আত্মীয়ের ভাই বলে। অনেক ক্ষেত্রে এদের সাথে বিশেষ পর্দা মেনে চলা হয় না। অথচ এদের সাথেও পর্দা করা ফরয। এদের সাথে পর্দা রক্ষার উপায় এই যেঘরের কর্তাব্যক্তিরা সকলে একবার বসে স্থির করবে যেএখন থেকে ইনশাআল্লাহ আমাদের ঘরে পর্দা পালিত হবে। সুতরাং গাইরে মাহরাম আত্মীয়-স্বজন যারা আছেযারা ঘরে আসা যাওয়া করেসামনে থেকে তারা যখন আসবে তাদেরকে বৈঠকখানায় বসানো হবে। যারা এখন সোজা ঘরের ভিতরে চলে যায় তাদেরকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে যেন সামনে থেকে তারাও পর্দা রক্ষায় সচেতন হয়।

পুরুষদের পুরুষের কামরাতেই বসানো হবে

কোনো গাইরে মাহরাম পুরুষ ঘরে এলেতিনি আত্মীয় হোক বা অনাত্মীয়তিনি পুরুষের সাথেই সাক্ষাৎ করবেন। ঘরের গাইরে মাহরাম মহিলাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন না। হাঁযদি মাহরাম হয়ে থাকেন তাহলে তার মাহরাম মহিলাদের সাথেও সাক্ষাৎ করতে মানা নেই। তো এভাবে একবার সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাহলে মহিলাদের জন্য গাইরে মাহরাম পুরুষদের সাথে পর্দা করা সহজ হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর গাইরে মাহরাম আত্মীয়-স্বজনস্বামীর গাইরে মাহরাম আত্মীয় স্বজনযেমন স্বামীর চাচাজ্যাঠাখালুফুফামামা অথবা স্ত্রীর খালু-ফুফা খালাতো ভাইজ্যাঠাতো ভাইচাচাতো ভাইমামাতো ভাই প্রমুখ বেড়াতে এলে এদের সাথে শুধু ঘরের পুরুষরাই সাক্ষাত করবে এবং তাদেরকে পুরষদের কামরাতেই বসানো হবে। ঘরের মহিলাদের তাদের সাথে জরুরতবশত কথা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে কথা বলবে। অথবা ফোনে বা ইন্টারকমে কথা বলবে।

তুমিই যদি না চাও তবে বাহানা হাজার হাজার

এই পদ্ধতি কিছু দিন একটু আশ্চর্যের মনে হবে। কিন্তু ভিতরে আপনার কাছেও স্বস্তিকর মনে হবে। মহিলারাও এতে শান্তি ও তৃপ্তি পাবে। সবচে বড় কথা হলশরয়ী পর্দা পালিত হবে এবং বেপর্দার গুনাহ থেকে নারী-পুরুষ সকলেই রক্ষা পাবে। তাই এ জন্য নারীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে আর পুরুষদেরও তাদের সাহায্য করতে হবে। এভাবে পরস্পরের মাঝে সবকিছু সিদ্ধান্ত হয়ে জানাজানি হয়ে গেলে এরপর আর কোনো অসুবিধা থাকবে না। কিন্তু যদি নারী-পুরুষরা এ কাজের জন্য তৈরী না হয় তাহলে সারা জীবন পর্দালঙ্ঘনের গুনাহ হতে থাকবে।

تو ہی  اگر  نہ چاہے تو بہانہ  ہزار  ہیں

اے  خواجہ  درد  نیست  ورنہ  طبیب  ہست

তুমিই যদি না চাও তাহলে বাহানা তো হাজার হাজারহে খাজাব্যথাই তো নেইনতুবা চিকিৎসক তো প্রস্তুত

এখন যেহেতু গুনাহের অনুভতি নেই এবং ঐ গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা ও ফিকির নেই একারণে বাঁচাটা কঠিন মনে হয়। নতুবা গুনাহ থেকে বাঁচার সহজ উপায় তো আছে

২৯৫

কোন তথ্যসূত্র নেই

আপনার জন্য প্রস্তাবিত

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

To preach and propagate the values and ideals of Islam, the only complete code of life acceptable to the Almighty Allah, in its right perspective as a religion of humanity, tolerance and universal brotherhood and bring the majority people of Bangladesh under the banner of Islam

অফিসিয়াল ঠিকানা: অফিসিয়াল ঠিকানা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, আগারগাঁও, শের-এ- বাংলা নগর, ঢাকা -১২০৭