সময়টা তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রাক্কাল। গণিতের সূত্র-সমাধানের মার-প্যাচের ২টি বছর পেরিয়ে আমি তখন অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। বাবার কাছ থেকে প্রতিদিন শ খানেক টাকা নিয়ে কলেজ আসাটা ২২ বছরের এই আমার কাছে তখন ছিল খুব বিব্রতকর। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত আমি হীনতার ভূগতাম। ব্যাচের অনেক সহপাঠীর বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা দেখে আমার মাথায় বিদেশের ভূতটি ভর করলো। ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করলাম। আইসিটিতে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য একটি কোর্সও করলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে আমার বিদেশ যাওয়া হলো না। বাবার কাছ থেকে নেওয়া ১৫ লক্ষ টাকা গচ্ছা যাওয়ায় আমি মারাত্নকভাবে মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে যাই। কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। ঠিক ঐ সময়ে এক বন্ধুর মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদের ইউডিসির বিষয়ে জানতে পারলাম।
সম্ভবত দিনটি সোম বার ছিল। আমি ঐ দিন অলংকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করি। তখন পর্যন্ত কেউ ইউডিসিতে যোগদান করেনি। চেয়ারম্যান মহোদয়ের উৎসাহ আর উদ্দীপনায় আমি পরের দিনই ইউডিসিতে যোগদান করি। এভাবে কয়েকদিন পার করলাম। কিন্তু আমার কোন আয় হতো না। আমার মনে আছে প্রায়ই দিন নিজের পকেটের টাকা খরচ করে অফিসে যেতে হতো। কোন সেবা গ্রহীতার সেবা নিতে আসতো না। অফিসিয়াল ড্রেসআপের কারুকাজ আর টাকাহীন মানিব্যাগের তথ্য যখন বন্ধুবান্ধব ও আত্নীয় জানতো আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো। আমি কিন্তু ভেঙ্গে পড়িনি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও চেয়ারম্যান মহোদয়ের পরামর্শক্রমে আমি কি কি সেবা দেই তা সর্বত্র প্রচারের উদ্যোগ নিলাম। স্বপ্ন দেখতাম একদিন ঠিকই সাধারণ মানুষের দোরগড়ায় আমি ডিজিটাল পৌছে দেব। আমার এই সেন্টারটি একদিন বাংলাদেশের অন্যতম ডিজিটাল সেন্টার হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে। বর্তমানে ৮টি কম্পিউটার রয়েছে। মানুষকে অনেকভাবে ডিজিটাল সেন্টারে কাজের বিষয়ে প্রচার করতে থাকি। আমার ডিজিটাল সেন্টারটি যখন ধীরে ধীরে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ঠিক তখনই সেন্টারটি চুরি হয়ে যায়। চুরেরা সবকিছু নিয়ে গেলও আমার স্বপ্নকে চুরি করে নিয়ে যেতে পারেনি। তাই আমার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আবারও ডিজিটাল যুদ্ধে নামি। ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যান সাহেবসহ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় আমি আবারও আমার ডিজিটাল সেন্টারটিকে সমৃদ্ধ করে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। আমার সেন্টার থেকে বর্তমানে প্রায় ৬০ ধরনের সেবা প্রদান করা হয়। বর্তমানে এনআরবি ব্যাংক এর এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল গ্রহনের সেবাটি চালুর জন্য খুবই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি খুব শীঘ্রই এই সেবাটিও দিতে পারব। আমার ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে আমাদের ইউনিয়নের যাবতীয় সনদ (যেমন ওয়ারিশান সদন, ট্রেড লাইসেন্স, প্রত্যয়নপত্র, বহুবিবাহ সনদ, অবিবাহিত সনদ, ফ্যামিলি সনদ ইত্যাদি) অনলাইনে প্রদান শুরু হয়েছে। আমাদের ডিজিটাল সেন্টারে নামে ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ঘরে বসে যাবতীয় তথ্য ও সেবা পেয়ে থাকে। আমি ইতিমধ্যে সিলেট জেলার শ্রেষ্ট ডিজিটাল সেন্টারের পুরষ্কার পেয়েছি এবং বিশ্বনাথ উপজেলা পর্যায়ে পরপর তিনবার সেরা ডিজিটাল সেন্টারের পুরষ্কার পেয়েছি। আমার ইউনিয়ন তথা উপজেলার প্রতিটি মানুষ আমাকে এক নামে উদ্যোক্তা হিসাবে চিনে। আমি যেখানেই যাই সেখানেই সবাই খুবই সম্মান করে থাকে। আমার ইউনিয়নের প্রবাসীরাও আমাকে যেকোন প্রয়োজনে সরাসরি কথা বলে। আমাদের দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে এসব দেখে তারা মুগ্ধ, তারাও ডিজিটাল সেন্টারের কাজে সন্তুষ্ট। যুক্তরাজ্যে আমাদের ইউনিয়নের উন্নয়নের লক্ষে ট্রাষ্ট গঠন করা হয়েছে। আমাকে সেই ট্রাষ্টের সদস্য হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে। এই ট্রাষ্টের অর্থায়নে এবং ডিজিটাল সেন্টারের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমাদের ইউনিয়নের ৮০জন দুঃস্থ মহিলাদেরকে সেলাই প্রশিক্ষন দিয়ে সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। ১৫জন বেকার যুবককে কার ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে। আমি যদি ডিজিটাল সেন্টারে উদ্যোক্তা না হতাম তবে ইউনিয়নবাসীর জন্য কাজ করার সেই সুযোগ কোন দিনই পেতাম না। বর্তমানে আমার ডিজিটাল সেন্টারটি ইউনিয়নবাসীর কাছে সকল সমস্যার সমাধানের কেন্দ্র হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করেও শেষ হয় না। ইউনিয়বাসী তাদের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য অন্তত একবার হলেও ডিজিটাল সেন্টার থেকে তথ্য নিয়ে যায়। যে লোকজন একদিন ডিজিটাল শব্দটাকে নিয়ে হাসাহাসি করতো তাদের কাছে এখন আমি ভরসার জায়গা। আমি আশা করি সকলের সার্বিক সহযোগিতায় অলংকারী ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ডিজিটাল সেন্টারের ১ম স্থানে নিয়ে যাবো। অলংকারী ইউনিয়ন হবে ডিজিটাল বাংলাদেশের রোল মডেল।
৪০৫
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
আজ ইমাম বাতায়ন প্রশিক্ষণ জকিগঞ্জ উপজেলায় অনুষ্ঠিত। ...
সময়টা তখন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের প্রাক্কাল। গণিতের সূত্র-সমাধানের মার-প্যাচের ২টি......