পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান:
প্রিন্ট
প্রকাশঃ :
বৃহস্পতিবার ০৪/০২/২০২১
প্রশ্নঃ পাওনা ও আটকে পড়া সম্পদের পবিত্র যাকাত উনার বিধান:
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে-
“বিশিষ্ট তাবিয়ী হযরত হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যখন পবিত্র যাকাত প্রদানের সময় উপস্থিত হবে, তখন পবিত্র যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তি তার সকল সম্পদের উপর এবং সকল পাওনার উপর পবিত্র যাকাত দিবেন। তবে যে পাওনা সম্পদ আটকে রাখা হয়েছে এবং যা ফেরত পাওয়ার সে আশা করে না, সেই সম্পদের পবিত্র যাকাত দিতে হবে না। তবে যখন পাবে তখন (শুরু থেকে পাওয়া পর্যন্ত) তার পবিত্র যাকাত আদায় করবে।” (ইমাম হাসান বসরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এ মতটি হযরত আবূ উবায়দ কাসিম ইবনে সাল্লাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সংকলন করেছেন)
বিগত বছরের কাযা বা অনাদায়ী পবিত্র যাকাত প্রসঙ্গে:
যদি কারো অতীত যাকাত অনাদায়ী বা অবশিষ্ট থাকে, তাহলে তা ঋণের মধ্যে গণ্য হবে। চলতি বছরে যাকাত আদায়ের পূর্বেই অনাদায়ী কাযা যাকাত অবশ্যই আদায় করতে হবে। (ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ)
পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় প্রসঙ্গে: বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পবিত্র যাকাত উনার টাকা-পয়সা দিয়ে এমন নি¤œমানের শাড়ী-লুঙ্গি ক্রয় করে যা ব্যবহারের অযোগ্য। যা পবিত্র যাকাতদাতা ও তার পরিবার-পরিজন নিজেও সেটা পরিধান করবে না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِـمَّا تُـحِبُّونَ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রাস্তায় তোমরা তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কস্মিনকালেও কোন নেকী হাছিল করতে পারবে না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “নিজের জন্যে তোমরা যা পছন্দ করবেনা অন্যের জন্যেও তা পছন্দ করবে না।” (মিশকাত শরীফ)
অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত রয়েছে “সবচেয়ে উত্তম ও প্রিয় বস্তু মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান না করলে তা কবুল হয় না।” (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র যাকাত একটি শ্রেষ্ঠ মালি ইবাদত এবং পবিত্র ইসলাম উনার অন্যতম তৃতীয় রোকন। পবিত্র যাকাত উনার মাল তার হকদারকে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে ধনীদের জন্য ফরয কাজ, তা যত্রতত্র তাদের খেয়াল-খুশি মুতাবিক খরচ করতে পারবে না। সে অধিকারও তাদের নেই। পবিত্র যাকাত ধনী-গরীবদের মাঝে পার্থক্য করার জন্য আসেনি। তাহলে যাকাত উনার কাপড় বলতে আলাদা নাম থাকবে কেন? অতএব, বুঝা যাচ্ছে পবিত্র যাকাত উনাকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার জন্য ‘যাকাতের কাপড়’ নামে নামকরণ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই লোক প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নি¤œমানের অব্যবহার্য শাড়ী-লুঙ্গি পবিত্র যাকাত উনার টাকা দিয়ে ক্রয় করে পবিত্র যাকাত দিলে পবিত্র যাকাত উনাকে ইহানত বা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার শামিল। নাউযুবিল্লাহ! এতে পবিত্র যাকাততো কবুল হবেই না বরং পবিত্র ঈমান, আমল, আক্বীদা সব বরবাদ হয়ে যাবে। নাউযুবিল্লাহ! মুসলমান উনাদেরকে বেঈমান করার জন্য ইহুদী-নাছারাদের এক সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র। যা গাফিল মুসলমান উনাদের উপলব্ধিতেও নেই। এরূপ ইহানতপূর্ণ কাজ থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলাদের জন্য ফরয।
অবৈধ মালের পবিত্র যাকাত নেই:
হারাম কামাই দ্বারা অর্জিত মালের কোন পবিত্র যাকাত নেই। যদি কেউ পবিত্র যাকাত উনার নিয়ত করে পবিত্র যাকাত দেয় তাহলে তার কবীরা গুনাহ হবে। বৈধ মনে করলে কুফরী হবে। কাজেই অবৈধ মালের যেমন পবিত্র যাকাত নেই, তেমন তার মালিকের উপরও পবিত্র যাকাত নেই অর্থাৎ পবিত্র ইসলাম উনার পরিভাষায় সে ছাহিবে নিছাব হবে না। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
ঋণগ্রস্থদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়ার বিধান:
কোন ঋণদাতা-মালদার ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্তদের ঋণের বদলা হিসেবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয় তাহলে তার পবিত্র যাকাত আদায় হবে না। কেননা ফিকাহ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে যে, পবিত্র যাকাতদাতা পবিত্র যাকাত প্রদানের মাধ্যমে বাড়তি কোন ফায়দা লুটাতে পারবে না। এভাবে পবিত্র যাকাত উনার অর্থ কেটে নেয়া প্রকাশ্য ফায়দা হাছিলের শামিল। আর পবিত্র যাকাত উনার মাল বা অর্থ অবশ্যই পবিত্র যাকাত পাওয়ার হকদার ব্যক্তিদেরকে হস্তান্তর করতে হবে তথা তাদেরকে মালিক করে দিতে হবে। এরপর যদি তারা ঋণ প্রদানকারীকে হস্তান্তর করে তবে তাতে কোন অসুবিধা নেই। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে, যাকাত গ্রহণকারী তথা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদায় আক্বীদাভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় পবিত্র যাকাত এভাবে আদায়ে-আদায় হবে না। (ফিকাহ ও ফতোয়ার কিতাবসমূহ)