শাওয়াল হলো আরবি চান্দ্র বছরের দশম মাস। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) প্রথম মাস; এই মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদ। পয়লা শাওয়ালে সদকাতুল ফিতর বা ফিতরা আদায় করা এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। এই মাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে হজের, এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে ঈদের, এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে রোজা ও রমজানের এবং এর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সদকা ও জাকাতের। তাই এই মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত উর্বর ও উপযোগী।
শাওয়ালের অর্থ ও তাৎপর্য
‘শাওয়াল’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো উঁচু করা, উন্নতকরণ, উন্নত ভূমি, পূর্ণতা, ফলবতী, পাল্লা ভারী হওয়া, গৌরব করা, বিজয়ী হওয়া, প্রার্থনায় হস্ত উত্তোলন করা বা ভিক্ষায় হস্ত প্রসারিত করা, পাত্রে অবশিষ্ট সামান্য পানি, ফুরফুরে ভাব, দায়ভারমুক্ত ব্যক্তি, ক্রোধ প্রশমন ও নীরবতা পালন, সিজন করা কাঠ। এসব অর্থের প্রতিটির সঙ্গেই শাওয়ালের সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই মাসের আমলের দ্বারা উন্নতি লাভ হয়, পূর্ণতা ফল লাভ হয়, নেকির পাল্লা ভারী হয়, গৌরব অর্জন হয় ও সাফল্য আসে, ফলপ্রার্থী আল্লাহর কাছে হস্ত সম্প্রসারিত করে প্রার্থনা করে, পূর্ণ মাস রোজা পালনের পর আরও কয়েকটি রোজা রাখে, প্রাপ্তির আনন্দে বিভোর হয়, ফরজ রোজা পালন শেষে নফল রোজার প্রতি মনোনিবেশ করে, আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জন করে, পরিপক্বতা ও স্থিতি লাভ করে। এসবই হলো শাওয়াল মাসের নামের যথার্থতা।
শাওয়াল মাসের সুন্নত
হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত: শাওয়াল মাসে বিয়েশাদি সুন্নত, যেরূপ শুক্রবারে ও জামে মসজিদে ও বড় মজলিশে আক্দ অনুষ্ঠিত হওয়া সুন্নত। কারণ, মা আয়েশার বিয়ে শাওয়াল মাসের শুক্রবারে মসজিদে নববিতেই হয়েছিল। ছয় রোজা শাওয়াল মাসের বিশেষ সুন্নত। (সহিহ মুসলিম শরিফ)।
ছয়টি সুন্নত রোজা
এই মাসে ছয়টি নফল রোজা রাখা সুন্নত। রাসুল (সা.) বলেন: যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরও ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন সারা বছরই রোজা পালন করল। (মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪; আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৩৩; তিরমিজি, নাসায়ি, ইবনে মাজাহ, সহিহ-আলবানি)। শাওয়াল মাসের এ ছয়টি রোজা মূলত সুন্নত। যেহেতু রাসুল (সা.) নিজে তা আমল করেছেন এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পরিভাষায় এগুলোকে নফল রোজা বলা হয়। কারণ, এগুলো ফরজ ও ওয়াজিব নয়, অতিরিক্ত তথা নফল।
কাজা রোজা ও সুন্নত বা নফল রোজা
রমজান মাসের কাজা রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে সে (রমজানের পরে) অন্য দিনগুলোতে রোজা রাখতে পারবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। তাই যাঁরা সফরের ক্লান্তির কারণে কিংবা অসুস্থ থাকার কারণে রমজানে পূর্ণ রোজা রাখতে পারেননি, তাঁরা সেগুলো রমজানের পর অন্য সময়ে আদায় করে নেবেন। আর ওই অসুস্থতার মধ্যে মহিলাদের ঋতুমতী হওয়াও শামিল। এ বিষয়ে মা আয়েশা (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (সা.)-এর যুগে ঋতুমতী হতাম। তখন আমাদের এই রোজা পরে কাজা আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হতো; কিন্তু নামাজ কাজা আদায় করার কথা বলা হতো না। (অর্থাৎ ওই অবস্থায় নামাজ মাফ, কিন্তু রোজা মাফ নয়। তা পরে আদায় করে নিতে হবে)। (বুখারি ও মুসলিম; মিশকাত, হাদিস: ২০৩২)।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমার ওপর রমজানের যে কাজা রোজা বাকি থাকত, তা পরবর্তী শাবান মাস ব্যতীত আমি আদায় করতে পারতাম না। (বুখারি, হাদিস: ১৯৫০; মুসলিম, হাদিস: ১১৪৬)। এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, রমজানের ছুটে যাওয়া কাজা রোজা পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যেকোনো সময় আদায় করা যাবে। রমজানের কাজা রোজা রাখার জন্য সময় সংকীর্ণ না হলে তার আগে নফল রোজা রাখা বৈধ ও শুদ্ধ। অতএব সময় যথেষ্ট থাকলে ফরজ রোজা কাজা করার আগে নফল রোজা রাখতে পারবেন। যেমন, ফরজ নামাজ আদায় করার আগে সময় থাকলে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
তাই শাওয়ালের ছয়টি সুন্নত রোজা রমজানের কাজা রোজা আদায়ের আগেও রাখা যাবে। যেমন, হজরত আয়েশা (রা.) আমল করতেন। তবে সম্ভব হলে আগে ফরজ রোজার কাজা আদায় করাই উত্তম। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ১৬৬)।
৭০১
০
০
কোন তথ্যসূত্র নেই
শাওয়াল হলো আরবি চান্দ্র বছরের দশম মাস। এটি হজের তিন......
হালাল হারামের সুফল কুফল সমস্থ প্রসংশা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি......
বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত মহানবী (সা:) নবুওয়াত প্রাপ্তির পর তো বটেই......
মহান আল্লাহ তাআলার বাণী- “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মত......
কুরবানী আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে এক বিশেষ অনুগ্রহ। কেননা......
যাকাত এর সংজ্ঞা: যাকাত শব্দের অর্থ শুচিতা ও পবিত্রতা, শুদ্ধি......
নারীকে হাদীস শরীফে ‘আওরত’ বলা হয়। আওরত শব্দের অর্থ –......
আমাদের সমাজের সকল মানুষ এবং ইসলাম সম্পর্কে যাদের সামান্য জ্ঞানও......
বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে৷ গত ৩০ বছরের মধ্যে......
নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও গুণগান একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও প্রতিপালক......